Source : BBC NEWS

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই বিক্ষোভ করছেন তার সমর্থকরা

ছবির উৎস, SHAFIQUL ISLAM SABUJ

৯ মিনিট আগে

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে বেশ কয়েকদিন ধরে রাস্তা আটকে আন্দোলন চলার পর তা ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ দেখে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানিয়েছেন মি.ইশরাক।

একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দুইজন ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে আবার আন্দোলন কর্মসূচি দেয়ার কথাও জানিয়েছেন মি. হোসেন।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় একদিকে শাহবাগ মোড় এবং অন্যদিকে মৎস্য ভবন মোড় অবরোধ ছিল সারাদিন। এর প্রভাবে সপ্তাহের শেষ দিনে তীব্র যানজটের মুখে পড়েছেন মানুষ।

গত কয়েক দিনের মতো আজও ইশরাক হোসেনের কর্মী-সমর্থকরা মৎস্য ভবন মোড় ও কাকরাইলের মুখে অবস্থান নিয়েছিলেন।

বিএনপি নেতা মি. হোসেনকে শপথ পড়াতে বাধা নেই–– দুপুরে আদালতের এমন রায়ের পরও তার কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ সমাবেশ চালিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের রাস্তা না ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন মি. ইশরাক।

পরে বিকালে সেখানে উপস্থিত হয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, আন্দোলন-সমাবেশের কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগের কারণে তিনি দুঃখ প্রকাশ করছেন। একইসঙ্গে এটাও জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপাতত বিক্ষোভ কর্মসূচি ৪৮ ঘণ্টার জন্য স্থগিত করা হচ্ছে।

মি. হোসেন বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, আজ হাইকোর্টের আদেশের পর আমাদের দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে আপাতত আমরা আন্দোলন স্থগিত রাখবো। সরকারকে আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা হবে তারা কী করে। এরপরে তার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী নির্দেশনা আসবে।”

আইনের শাসনের বিজয় হয়েছে উল্লেখ করে অবিলম্বে রায় বাস্তবায়ন করা না হলে আবারও যমুনা ঘেরাও করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মি. হোসেন।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর
ইশরাক হোসেন

ছবির উৎস, Ishraque Hossain/Facebook

দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি বহাল

তবে সরকারের দুইজন উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি বহাল থাকবে বলেও জানান তিনি।

কাকরাইল মসজিদের সামনে ওই সমাবেশে মি. হোসেন বলেন, “গতকাল (বুধবার) বর্তমান সরকারের দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের যে দাবি জানিয়েছি, সেই দাবিতে আমরা অনড় থাকব।”

সরকারকে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এর মধ্যে দুই ছাত্র উপদেষ্টা পদত্যাগ না করলে আমরা আবারও মাঠে নামব।”

কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমাদের একটি দাবি আদায় হয়েছে। কিন্তু বাকি যে দাবি দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের, সেটি পরিবর্তন হবে না।”

এর আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মি. হোসেন কর্মী সমর্থকদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

আদালতের রায়ে মেয়র পদে শপথ গ্রহণে বাধা না থাকার খবর আসার পরে ওই স্ট্যাটাসে তিনি আন্দোলনকারীদের রাস্তা না ছাড়ার আহ্বান জানান।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পদত্যাগ না করা পর্যন্ত নেতাকর্মীদেরকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেন তিনি।

ওই পোস্টে তিনি লেখেন, “আন্দোলনকারী ভাইদের বলবো এইসব মূলা দিয়ে গাধা বস করা যায় আমাদের না। দুই ছাত্র প্রতিনিধি উপদেষ্টাদের পদত্যাগের খবর না আশা পর্যন্ত চলেছে লড়াই চলবে। রাস্তা তো ছাড়বেন না, আরও বিস্তৃত করতে হবে।”

এদিকে, আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগে সকাল ১০টা থেকে থেকে সড়ক অবরোধ করেছিল ছাত্রদল। বিকেলে তারা দিনের কর্মসূচি স্থগিত করে।

ফলে সকাল থেকে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো আটকে থাকায় তীব্র ভোগান্তি হয় মানুষের।

শাহবাগের দুটি হাসপাতালে আসা রোগীরাও তীব্র ভোগান্তির মুখোমুখি হয়েছেন।

ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের আন্দোলন

ছবির উৎস, Ishraque Hossain/Facebook

আদালতের আদেশ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।

এই রায়ের ফলে ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়তে কোনো বাধা নেই। হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ইশরাক হোসেনের আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ নিতে আর কোনো বাধা নেই। যদি শপথ না পড়ানো হয়, সেটা হবে আদালত অবমাননা।

মি. উদ্দিন জানান এই রিট খারিজ করার মূল কারণ হিসেবে হাইকোর্ট উল্লেখ করেছে, কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করতে পারেন।

কিন্তু রিটকারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা হিসেবে কোনো কারণে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে আদালতে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

এর আগে, বুধবার রিট আবেদনের ওপর দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হয়।

এ দিন আদেশ দেয়ার কথা থাকলেও দুই পক্ষের পুনরায় শুনানি হয়। এরপর আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করে হাইকোর্ট।

তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী।

গত ১৪ই মে বিএনপির এই নেতাকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়।

গত পাঁচই অগাস্ট সরকার পতনের পর দেশের সব সিটি মেয়রকে অপসারণ করা হয়।

এমন অবস্থায় গেল ২৭শে মার্চ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল।

এরপর ২৭শে এপ্রিল ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি।

একইদিন ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে লিগ্যাল নোটিশ দেন দুই ব্যক্তি।

নোটিশে গেজেট প্রকাশ ও ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।

এরপরই মূলত ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ পালন শুরু করেন তার সমর্থকরা।