Source : BBC NEWS

পহেলগামের নিরাপত্তা বাহিনীর টহল চলছে

ছবির উৎস, Getty Images

২৯ মিনিট আগে

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে ভারত।

দেশের নিরাপত্তা বিষয়ক সর্বোচ্চ কমিটি – ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিওরিটি বা সিসিএস বুধবার বৈঠকে বসে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে ওই বৈঠক হয়।

ওই বৈঠকের পর জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, ওই বৈঠকে “সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সীমান্ত পারের যোগসাজস তুলে ধরা হয়”।

তার কথায়, “কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরে সাফল্যের সঙ্গে নির্বাচন হওয়ার পরেই এই আক্রমণ হলো। এমন একটা সময়ে হামলা হলো যখন সেখানে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।”

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন
নিরাপত্তা বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির বৈঠক

ছবির উৎস, ANI

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচ সিদ্ধান্ত

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে হওয়া ওই বৈঠকে অতি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।

বুধবার রাতে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে মি. মিশ্রি ঘোষণা করেন, “সন্ত্রাসী হামলার গুরুত্ব অনুধাবন করে” নিচের সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে :

১. ১৯৬০ সালের সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করা হচ্ছে যতক্ষণ না পাকিস্তান বিশ্বাসযোগ্যভাবে এবং পাকাপাকিভাবে সীমান্ত পারের সন্ত্রাসের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে।

২. (পাঞ্জাবে অবস্থিত) সমন্বিত আটারি চেকপোস্ট অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ওই পথ দিয়ে যারা বৈধভাবে পারাপার করেছেন তারা পয়লা মে-র আগেই ফিরতে পারবেন।

৩. সার্ক দেশগুলোর জন্য ‘বিনা ভিসা প্রকল্প’-এর অধীন বিশেষ ভিসা নিয়ে পাকিস্তানের নাগরিকরা ভারতে ভ্রমণ করতে পারবেন না। যে পাকিস্তানি নাগরিকদের আগেই ওই ভিসা দেওয়া হয়েছে, তা বাতিল করা হলো। ওই বিশেষ ভিসা নিয়ে ইতিমধ্যেই ভারতে রয়েছেন যে পাকিস্তানের নাগরিকরা, তাদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।

৪. দিল্লিতে পাকিস্তানি দূতাবাসে সেদেশের প্রতিরক্ষা, সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর যে ‘পরামর্শদাতারা’ রয়েছেন, তাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’, (অর্থাৎ অবাঞ্ছিত) বলে ঘোষণা করছে ভারত। তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে।

ভারতও ইসলামাবাদে তাদের দূতাবাস থেকে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর পরামর্শদাতাদের ফিরিয়ে আনবে।

দুই দেশের দূতাবাসগুলোতে এই পদগুলো বিলুপ্ত করা হলো।

দুই দেশের দূতাবাসেরই সামরিক পরামর্শদাতাদের পাঁচজন করে কর্মীকেও নিজের দেশে চলে যেতে হবে।

৫. দুই দেশের রাজধানীতে অবস্থিত কর্মী সংখ্যা বর্তমানের ৫৫ থেকে কমিয়ে পয়লা মের মধ্যে ৩০ এ নিয়ে আসতে হবে।

বিক্রম মিশ্রি এই বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নেননি।

ভারতের মুম্বাইয়ে বুধবার পাকিস্তানের পতাকায় আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে ভারতীয়রা

ছবির উৎস, Getty Images

পহেলগামের ঘটনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা নিন্দা জানানোর পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পাকিস্তানও।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “ভারতের অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলায় হামলায় পর্যটকদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।”

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, “এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের কোনো সম্পর্ক নেই। এগুলো সবই তাদের দেশীয় বিদ্রোহ। তাদের বিভিন্ন রাজ্যে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ চলছে। একটা নয়, দুটো নয় কয়েক ডজন রাজ্যে- নাগাল্যান্ড থেকে কাশ্মীর, দক্ষিণে, ছত্তিশগড়ে, মণিপুরে।”

তবে তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তান ‘সন্ত্রাসের’ বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, “পাকিস্তান সব সময় যে কোনো ধরনের সন্ত্রান্সের বিরুদ্ধে।”

অন্যদিকে, ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক হাই কমিশনার আব্দুল বাসিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন , “আমি আত্মবিশ্বাসী যে ভারতের যেকোনো ধরনের দুঃসাহসিক কাজ ব্যর্থ করতে পাকিস্তান সবভাবে প্রস্তুত। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে এবার পাকিস্তানের তরফে যথাযোগ্য জবাব দেওয়া হবে।”

সন্ত্রাসী হামলার পর কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে

ছবির উৎস, Getty Images

মঙ্গলবার কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন স্পট পহেলগামে পর্যটকদের একটি গ্রুপের ওপর বন্দুকধারীরা গুলি চালায়। এতে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন অনেকে।

পহেলগাম এলাকাটি ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত। হামলার ঘটনা ঘটেছে বাইসরনে। এটি পহেলগাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পর্বতের মাঝে একটি জায়গা।

জম্ম ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার যেসব ঘটনা সাম্প্রতিক ঘটেছে তার মধ্যেই এটিই সবচেয়ে বড় হামলা।

এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

তবে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ নামক একটি সশস্ত্র সংগঠন এর পেছনে থাকতে পারে।

টিআরএফ পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন লস্কর-ই-তাইবা’র ছায়া সংগঠন হিসেবে পরিচিত।

এদিকে পহেলগামে হামলার পর অনেক পর্যটকই কাশ্মীর ছাড়ার চেষ্টা করছেন।

শ্রীনগর বিমানবন্দরের ট্যুর অপারেটররা জানিয়েছেন, পহেলগাম হামলার পর দেশি পর্যটকরা কাশ্মীর ছাড়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন। অনেক গাড়ি এখন বিমানবন্দরের দিকে আসছে।