Source : BBC NEWS

কেরালার বাসিন্দা ১৮ বছরের এক কিশোরী অভিযোগ করেছে গত পাঁচ বছর ধরে ৬৪ জন ব্যক্তির হাতে সে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে - প্রতীকী ছবি

ছবির উৎস, Getty Images

৪৫ মিনিট আগে

দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কেরালার বাসিন্দা এক ১৮ বছর বয়সী দলিত কিশোরীকে গত পাঁচ বছর ধরে ৬৪ জন পুরুষ যৌন নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। তার বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর ছিল, তখন থেকেই সে যৌন নিগ্রহের শিকার হতে শুরু করে।

পুলিশ এখনও পর্যন্ত ২৮ জনকে গ্রেফতার করতে পেরেছে। তারা পুলিশ হেফাজতে থাকায় তাদের কোনও বক্তব্য প্রকাশ্যে আসে নি।

পুলিশ বলছে, অভিযুক্তদের বয়স ১৭ বছর থেকে ৪৭ বছর পর্যন্ত এবং এদের মধ্যে যেমন রয়েছে ওই কিশোরীর প্রতিবেশীরা, তার খেলার প্রশিক্ষক এবং বাবার বন্ধুরাও। অভিযুক্তদের মধ্যে প্রথম নামটি ওই কিশোরীর প্রতিবেশী এবং তার ছোটবেলার বন্ধুর।

এক সরকারি কর্মসূচীর অধীনে কয়েকজন মনোবিদ ওই কিশোরীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তখনই গোটা ঘটনা জানা যায়।

পতনমথিট্টা জেলার পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট নন্দকুমার এস বিবিসিকে জানিয়েছেন যে এখনও পর্যন্ত ১৮টি মামলা দায়ের হয়েছে, এগুলির মধ্যে রয়েছে দলিত শ্রেণীর মানুষের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধ-রোধী আইন এবং শিশু-কিশোরদের ওপরে যৌন নিগ্রহ রোধ আইন।

পুলিশী তদন্ত এখনও চলছে, তাই পরবর্তী সময়ে আরও নতুন মামলা দায়ের করা হবে বলে পুলিশ জানাচ্ছে। গোটা ঘটনার তদন্তে ২৫ সদস্যের একটি দল গঠন করেছে সেরাজ্যের সরকার।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন
তার ওপরে প্রথম যৌন নির্যাতন চলে তার যখন ১৩ বছর বয়স ছিল - প্রতীকী ছবি

ছবির উৎস, Getty Images

ছোটবেলার বন্ধুই প্রথম নির্যাতন চালায়

সংবাদ পোর্টাল ‘নিউজ মিনিট’ জানাচ্ছে ওই কিশোরী যখন ১৩ বছর বয়সী ছিল, তখনই প্রথমবার সে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়। তার পাড়ার ছোটবেলার এক বন্ধুই তাকে প্রথম যৌন নিগ্রহ করে এবং সেই ঘটনার কিছু ছবিও তুলে রাখে সে। এই বন্ধুর নামই অভিযুক্তদের তালিকায় এক নম্বরে আছে।

পতনমথিট্টা জেলার ক্রাইম ব্রাঞ্চের মুখপাত্র সঞ্জীব এম বিবিসিকে বলেন, “প্রথম অভিযুক্তের মোবাইলে যৌন নিগ্রহের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই ভিডিও দেখিয়েই সে কিশোরীকে ব্ল্যাকমেইল করে যৌন নিগ্রহ চালাত। আবার তার বন্ধুদের কাছেও নিয়ে যেত কিশোরীটিকে।”

পরবর্তীতে ওই কিশোরীর ১৬ বছর বয়সে সেই বন্ধুই আবারও যৌন নিগ্রহ করে। এবার সেই যৌন নিগ্রহের ভিডিও করে সেটা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে শেয়ার করে দেয় ওই প্রতিবেশী। সেইসব ব্যক্তিরা পরবর্তী কয়েক বছর ধরে যৌন নিগ্রহ চালাতে থাকে।

ওই কিশোরী অ্যাথলেট। ক্রীড়া প্রশিক্ষকও যৌন নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে - প্রতীকী ছবি

ছবির উৎস, Getty Images

ক্রীড়া প্রশিক্ষকও যৌন নিগ্রহ চালায়

জেলা শিশু-কিশোর কল্যাণ কমিটির প্রধান, আইনজীবী এন রাজীব বিবিসিকে বলেছেন যে যৌন নিগ্রহের শিকার হওয়া ওই কিশোরী একজন অ্যাথলেট। খেলার জন্য নানা শিবিরে তাকে যেতে হত। সেখানেও যৌন নিগ্রহের শিকার হতে হয় তাকে।

পুলিশ বলছে গত পাঁচ বছরে ওই কিশোরীকে অন্তত তিনবার গণ-ধর্ষণের অভিযোগ সামনে এসেছে। তদন্তকারীরা বলছেন, ওই কিশোরীর ছোটবেলার যে বন্ধু প্রথমবার তাকে যৌন নিগ্রহ করেছিল, সে অন্তত একবার গণ-ধর্ষণেও হাজির ছিল।

অভিযোগ, ওই কিশোরী প্রথমবার গণ-ধর্ষণের শিকার হন তার বাড়ির পাশেই।

পতনমথিট্টা জেলা ক্রাইম ব্রাঞ্চের মুখপাত্র সঞ্জীব এম বিবিসিকে বলেছেন, “অভিযুক্তরা ওই কিশোরীর বাবার ফোন নম্বরে কল করত এবং সে তাদের সবার নম্বর ওই ফোনেই সেভ করে রেখেছিল। বাবার ফোনে আসা এরকম ৪০ জন অভিযুক্তদের কল সে সেভ করে রেখেছিল। ওই ফোন থেকে তথ্য যোগাড় করেই পুলিশ এখন বাকি অভিযুক্তদের সন্ধান করছে।

তার বাড়িতে কয়েকজন মনোবিদ-কাউন্সেলর গিয়ে ঘটনার কথা প্রথম জানতে পারেন - প্রতীকী ছবি

ছবির উৎস, Getty Images

যেভাবে ঘটনা জানা গেল

ওই কিশোরীর পরিবার অবশ্য গোটা ঘটনার কিছুই জানত না।

গত মাসে যখন ওই কিশোরীর বাড়িতে কয়েকজন মনোবিদ যান, তখনই ব্যাপারটা জানা যায়। ওই মনোবিদরা শিশু-কিশোর কল্যাণ কমিটিকে জানায় ঘটনাটি।

শিশু-কিশোর কল্যাণ কমিটির প্রধান, আইনজীবী এন রাজীব বলছিলেন, “কুটুম্বশ্রী স্নেহিতা নামের একটি সরকারি কর্মসূচীর অধীনের কয়েকজন কাউন্সেলর বিস্তারিত পারিবারিক তথ্য যোগাড় করছিলেন। পরিবারগুলিকে পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে যে নিজেদের সমস্যাগুলির কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

“যৌন নিগ্রহের শিকার এই কিশোরী যখন তার স্কুলের কথা বলতে চাইছিল, কিন্তু সে জেদ ধরে যে কোনও একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবে। ওই মনোবিদ-কাউন্সেলর সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

“তার মানসিক কাউন্সেলিং করা হচ্ছে এখন। সে মনোবিদের সামনে মুখ খুলছে, ১৩ বছর বয়স থেকে কীভাবে সে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে, তা জানাচ্ছে,” বলছিলেন মি. রাজীব।

তিনি এও বলছিলেন যে কিশোরীটি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলছিল, তখন তার মা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন।

সাধারণত শিশু-কিশোর কল্যাণ কমিটিগুলি স্থানীয় থানায় এধরণের ঘটনার খবর জানিয়ে দেয়। তবে মি. রাজীব বলছিলেন, “আমাদের মনে হয়েছিল যে এটা অনেক গুরুতর ঘটনা। তাই আমি সরাসরি জেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।

তার নিরাপত্তার খাতিরে একটি শিশু-কিশোর হোমে তাকে এবং তার মাকে রাখা হয়েছে।

শিশু-কিশোরীদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে শুধু আইনই যথেষ্ট নয় - প্রতীকী ছবি

ছবির উৎস, Getty Images

নারী অধিকার সংগঠনগুলি কী বলছে?

নারী অধিকার সংগঠন ‘সখী’র আইনজীবী সন্ধ্যা জনার্দন পিল্লাই বিবিসিকে বলেছেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে দিল যে শিশু-কিশোরীদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য শুধু আইন করা যথেষ্ট নয়।”

তার কথায়, “শিশু-কিশোরীদের নিরাপদে রাখার গোটা ব্যবস্থাতেই যে গলদ আছে, সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা। এছাড়াও, যৌন নির্যাতনের শিকার কিশোরীটি গরীব এবং দলিত পরিবারের সদস্য। সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে এই কিশোরীটি তাই সবথেকে ঝুঁকির মুখে রয়েছে।”