Source : BBC NEWS

প্রয়াত সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ।

ছবির উৎস, Getty Images

১১ মিনিট আগে

কাশ্মীরের পহেলগাম থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বৈসারণে এলাকায় বন্দুকধারীদের হামলায় মৃতদের মধ্যে একমাত্র কাশ্মীরি ব্যক্তি ছিলেন সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ।

ভারত শাসিত কাশ্মীরে মঙ্গলবারের ওই হামলায় কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

পহেলগাম তহসিলের অন্তর্গত হাপতনা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সৈয়দ আদিল হুসেন। সেই গ্রামে এখন শোকের ছায়া।

পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়ে পহেলগাম ঘুরিয়ে দেখানো ছিল তার পেশা। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তারই উপার্জনের উপর নির্ভর করে সংসার চলত।

জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ বলেন, “শুনেছি তার প্রাণ এমনি এমনি যায়নি। সাহসিকতার সঙ্গে এই হামলা ঠেকানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। সম্ভবত বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং তারপরেই তাকে নিশানা করা হয়।”

আরও পড়তে পারেন
মি. শাহের মা ও আত্মীয়।

ছবির উৎস, Getty Images

পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। তার পরিবারে রয়েছেন মা-বাবা, স্ত্রী এবং দু’জন ছোট ভাই।

তার এক পুত্র সন্তানও ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগেই তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে সৈয়দ আদিল হুসেন শাহের মা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।

তারপর মঙ্গলবার আরও একবার বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে শাহ পরিবারকে।

বার্তা সংস্থা এএনআই-কে তার মা কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেন, “বাড়ির সবচেয়ে বড় ছেলে ছিল। একমাত্র ওই উপার্জন করত।”

ঘটনার দিন বারবার চেষ্টা করেও ফোনে মি. শাহের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি তার পরিবার।

বাবা সৈয়দ হায়দার শাহ বলেছেন, “ও ঘোড়া নিয়ে পহেলগামে গিয়েছিল। বেলা তিনটার দিকে শুনতে পাই, ওখানে একটা ঘটনা ঘটেছে। ওকে যখন ফোন করি তখন ফোনটা বন্ধ ছিল। বিকেল চারটে থেকে সাড়ে চারটের মধ্যে ফোনটা চালু হয়। “

“আমরা ক্রমাগত ফোন করতে থাকি কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি। পরে জানতে পারি যে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপর সে যে হাসপাতালে ছিল, সেখানে আমাদের বাড়ির ছেলেরা যায়।”

শোকস্তব্ধ এই পিতা বলেছেন, “যার প্রাণ যাওয়ার ছিল, তার প্রাণ গিয়েছে কিন্তু যারা এই কাজ করেছে, তারা যেন শাস্তি পায়।”

জানাজার নামাজে গ্রামবাসীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আব্দুল্লাহ।

ছবির উৎস, Getty Images

জানাজার নামাজে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী

সৈয়দ আদিল হুসেন শাহের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় বুধবার। সেই সময় গোটা গ্রামের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। নিহত যুবকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, “এমন পরিস্থিতিতে কী-ই বা বলব!এই ঘটনার আমরা নিন্দা করছি এবং যাদের উপর আঘাত হানা হয়েছে তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের আমাদের সহানুভূতি রয়েছে।”

“এখানে আমাদের অতিথিরা বাইরে থেকে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন এবং দুর্ভাগ্যবশত তাদের কাফনে করে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।”

বার্তা সংস্থা এএনআইকে আদিল শাহের কাকা জানিয়েছেন, “ওর বাড়িতে আর এমন কেউ অবশিষ্ট নেই যে উপার্জন করতে পারে। ওরা খুবই দরিদ্র পরিবার। ছেলেটা নির্দোষ ছিল। এই অবস্থায় ওর পরিবারকে রক্ষা করতে হবে।”

কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওই পরিবারকে আশ্বাস দিয়েছেন। ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, “এই পরিবারের খেয়াল আমাদের রাখতে হবে। তাদের সাহায্য করতে হবে। আমি এখানে সবাইকে আশ্বস্ত করতে এসেছি যে সরকার তাদের পাশে আছে এবং আমরা যতটা সম্ভব করব।”

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মি. শাহের পরিবার।

ছবির উৎস, Getty Images

‘ষড়যন্ত্র উন্মোচন করা হোক’

পহেলগাম হামলাকে ঘিরে শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ সৈয়দ আদিল হুসেন শাহের আত্মীয় এবং তার গ্রামের বাসিন্দারা।

তার এক আত্মীয় মহিদিন শাহ বলেন, “এটা আমাদের কাছে একটা কলঙ্ক এবং এই দাগ মুছে ফেলা খুবই কঠিন। আমরা সকলে এই জঘন্য ষড়যন্ত্রের নিন্দা করছি। ভারতের এই শোকে আমরা সমান অংশীদার।”

“আমাদের অতিথিদের সঙ্গে যা ঘটেছে, এবং ঘোড়সওয়ারি করিয়ে এমন এক নিরীহ ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। এটা খুবই খারাপ হয়েছে।”

কারা এর নেপথ্যে রয়েছে তা খুঁজে বের করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

মহিদিন শাহ বলেন, “সরকারের কাছে আমাদের আবেদন এই ষড়যন্ত্র যেন উন্মোচন করা হয়, যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।”

“ও (সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ) দরিদ্র পরিবারের ছেলে। বাবা মায়ের একমাত্র অবলম্বন ছিল। এই দরিদ্র মানুষগুলো এখন কী করবে? “

হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী।

ছবির উৎস, Getty Images

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন

ক্ষতিপূরণের ঘোষণা

পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ওমর আবদুল্লাহ। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

ওমর আবদুল্লাহ বলেন, “পহেলগামের ঘৃণ্য সন্ত্রাসী হামলায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। কোনো অর্থই এই ক্ষতিকে পূরণ করতে পারবে না।”

“সমর্থন ও সংহতির নিদর্শন হিসেবে জম্মু ও কাশ্মীর সরকার নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা করছে।”

“আমাদের সমাজে নিরীহ মানুষের ওপর এমন বর্বরোচিত নৃশংসতার কোনও স্থান নেই। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”

কাশ্মীরের পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির নেত্রী মেহবুবা মুফতিও এই হামলার নিন্দা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটারে) তিনি লিখেছেন, “পহেলগামে এই কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা করছি। এই জাতীয় সহিংসতা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঐতিহাসিকভাবে, কাশ্মীর পর্যটকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে এসেছে। তাই হামলার এই বিরল ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক।”