Source : BBC NEWS
এক ঘন্টা আগে
বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্য, নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে ক্রিয়াশীল সব পক্ষকে যুক্ত করে প্রথমবারের মতো একটি জাতীয় সংলাপ শুরু হয়েছে।
দু’দিন ব্যাপী সংলাপের প্রথম দিনে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না।
আর, বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য, “সংস্কার নিয়ে যত বেশি সময় যাবে… সমস্যাগুলো তত বাড়বে।”
সংলাপে সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সংস্কার কমিশনের প্রধান, শিক্ষার্থী এবং জুলাই আন্দোলনে নিহতদের স্বজনরাও কথা বলেন।
ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক এই জাতীয় সংলাপের আয়োজন করে ফোরাম ফর বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা।
আলোচনায় সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়ার অভিযোগ তোলেন বক্তাদের কেউ কেউ।
নির্বাচন বা সংস্কার সম্পন্ন করার আগে দ্রব্যমূল্য, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তার মতো বিষয়ে মানুষকে স্বস্তি দেয়ার তাগিদও আসে।
‘ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ হওয়া উচিত’
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত ‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি আরো বলেন, সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য প্রয়োজন। ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন একটিকে ছাড়া অপরটি সফল হতে পারবে না।
“ঐক্যবিহীন সংস্কার কিংবা সংস্কারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না,” যোগ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে উল্লেখ করে মি. ইউনূস বলেন, “নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ মূলত নির্বাচন কমিশনের। নাগরিকদের নির্বাচনের তারিখ না পাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় সময় দিতে হয় না। কিন্তু সংস্কারের কাজে সকল নাগরিককে অংশগ্রহণ করতে হবে।”
“সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করলেই তা মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এজন্য সর্বশেষ পর্যায়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন গঠন করা হয়েছে,” বলেন তিনি।
‘বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায় এ কথা সঠিক নয়’
বিএনপি প্রথম থেকেই সংস্কারের পক্ষে বলে মন্তব্য করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “দুর্ভাগ্য আমাদের, এখন কিছু কিছু বক্তব্য আসছে যে বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়। এ কথাটা সঠিক নয়।”
‘ঐক্য কোন পথে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
“আমরা একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য ন্যূনতম যে সংস্কার প্রয়োজন, সেই সংস্কারটুকু করে নির্বাচনে যেতে চাই,’ যোগ করেন মি. আলমগীর।
তিনি বলেন, দল হিসেবে বিএনপি ভিশন ২০৩০ ও ৩১ দফা প্রস্তাবনার মতো বিষয় নিয়ে আগে থেকেই উদ্যোগী হয়েছে।
“গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন হচ্ছে প্রধান ফটক,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তার অভিমত, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি, চর্চা ছাড়া এই সংস্কৃতি গড়ে উঠবে না।
যুক্তিসঙ্গত সময় দিতে প্রস্তুত জামায়াত
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছরে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সবকিছু সংস্কার করা সম্ভব নয়। তার জন্য সময় লাগবে। কিন্তু, একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে সংস্কারগুলো ন্যূনতম প্রয়োজন সেগুলো সম্পন্ন করতে সুযোগ দিতে হবে।
“তারপরই একটা অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। সেই নির্বাচন করতে যুক্তিসঙ্গত সময় যতটুকু লাগে আমরা জামায়াতে ইসলামী অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই সময়টুকু দিতে প্রস্তুত আছি,” যোগ করেন মি. পরওয়ার।
তিনি তাগিদ দেন, জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন নির্বাচনের আগেই একটি পর্যায়ে পৌঁছায়।
কমিশনগুলো যেসব সংস্কার প্রস্তাব দেবে তা নিয়ে পাবলিক ডায়লগ (গণসংলাপ) আয়োজন করার কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল।
সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধানরা যা বলছেন
সংলাপে সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর প্রধানরাও তাদের মতামত তুলে ধরেন।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, জনগণ চায় এমন একটি নির্বাচনি ব্যবস্থা যেখানে তার ভোট দেবার অধিকার থাকবে এবং সেই ভোট (ক্ষমতার) নির্ধারক হবে।
“তারা চান জবাবদিহি ব্যবস্থা থাকবে। সর্বোপরি তারা যেটা চান, ক্ষমতার যেন এককেন্দ্রীকরণ না ঘটে,” বলেন অধ্যাপক রীয়াজ।
তিনি বলেন, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদা অর্জন কখনোই সম্ভব নয়।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মনোনয়ন বাণিজ্য হলে রাজনীতি ব্যবসায় রূপান্তরিত হয়।
“এটি বন্ধ না হলে সবকিছুই পণ্ডশ্রম হবে। আইন করে এই মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করা সম্ভব নয়। রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে,” বলেন মি. মজুমদার।
অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, উপরিকাঠামো নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে কিন্তু সমাজের ভিত্তি নিয়ে আলোচনা হয় না।
“কর্মসংস্থান কেমন করে হবে এই আলোচনাও হচ্ছে না। আসল ক্ষমতায়ন রুটি-রুজির ক্ষমতায়ন।”
“আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না, কী ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক অবস্থা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। এটা ঠিক করতে হবে। কিন্তু ঠিক করার সময় কি জনগণ আমাদের দেবে?… নিরাপত্তা না থাকলে মানুষ কতক্ষণ সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে?” বলেন মি. ভট্টাচার্য।
যোগ করেন, “সংস্কার খুব বড় স্বপ্ন, ঐক্য তার জন্য দরকার, নির্বাচনে যেতে হবে। কিন্তু তার আগে মানুষকে স্বস্তি দিতে হবে।”
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সংস্কারের বিষয়ে একমত হলে একে অন্যকে প্রতিপক্ষ ভাবার কোনো কারণ নাই। কী কী সংস্কার প্রয়োজন, কে করবে, কত দিনে করবে, কীভাবে তা কার্যকরী হবে, আগামী দিনগুলোতে সে সিদ্ধান্ত আমাদের নিতে হবে।”
মিজ হাসান আরো বলেন, “এবার সংস্কারে পিছপা হলে চলবে না। আমাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন হবে, যাতে সংস্কারে জনমতের প্রতিফলন দেখতে পাই। জনমতের প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও কঠিন হবে। কারণ মানুষের প্রত্যাশার সাথে আমাদের যদি গ্যাপ (ফারাক) থেকে যায় তাহলে বারে বারেই আমরা রাজনৈতিক অস্বস্তি ও জটিলতার মধ্যে পড়বো।”