Source : BBC NEWS
ছবির উৎস, CA PRESS WING
৯ মিনিট আগে
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ওসমান হাদির ওপর হামলার পর দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এই বৈঠকে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় শনিবার দুপুরে আয়োজিত এই বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহও বৈঠকে অংশ নেন।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলও বৈঠকে ছিলেন।
বৈঠক থেকে ওসমান হাদীর ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে দলগুলো। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ঐক্য ধরে রাখার কথাও বলেছেন তারা।
রাজনৈতিক কথার লড়াই আওয়ামী লীগকে যেন সুযোগ করে না দেয় এই বিষয়ে একমত হয়েছে দলগুলো।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে “জুলাই অভ্যুত্থান নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রের অংশ” উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দুপুরে গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদিকে বর্তমানে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি ‘শঙ্কামুক্ত নন’ বলে সর্বশেষ শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে, মি. হাদির ওপর গুলি চালানো ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ছবির উৎস, PID
বৈঠক শেষে নেতারা যা বলছেন
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে রাজনৈতিক দলের নেতারা গণমাধ্যমকে জানান, দেশের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলো যেন ঐকবদ্ধ থাকে সেই বার্তাই তাদের দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকে জানান, ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানাতেই এই বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কথার লড়াই হতে পারে, তবে সেটি এমন পর্যায়ে নেওয়া যাবে না যাতে কোনো অপশক্তি তার সুযোগ নিতে পারে।
“ওসমান হাদির ওপর হামলা মূলত বাংলাদেশের ওপরই হামলা। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু আমরা ওই পর্যায়ে বিতর্ক করবো না যাতে করে আমাদের ঐক্য বিনষ্ট হয়,” বলেন মি. আহমদ।
ওসমান হাদির ওপর হামলা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, যারা বাংলাদেশে নির্বাচন চায় না, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ধরনের হামলা করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মি. আহমদ বলেন, “এই শক্তি দেশের ভেতরেও সক্রিয়, দেশের বাইরেও সক্রিয়। দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে পতিত ফ্যাসিবাদ যদি মনে করে দেশের নির্বাচন রুখে দিতে পারবে এটি তাদের ভুল ধারণা।”
এছাড়া আগামী ২৫শে ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি। তারেক রহমানের নিরাপত্তা দলের কাছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, তার নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের কাছে সেই আহ্বানও জানিয়েছে বিএনপি।
ছবির উৎস, Osman Hadi/facebook
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচনের আগে এই ধরনের পরিবেশ কীভাবে মোকাবিলা করা যায় এ নিয়ে আলোচনা করতেই রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা।
“এই ঘটনা শুধুমাত্র একজন ব্যাক্তির সঙ্গে বা একজন প্রার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাই না, এটা আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে ঘিরে যে ষড়যন্ত্রের ছক আঁকছে সেটার একটা শুরু বলা যেতে পারে,” বলেন তিনি।
এছাড়া জুলাই নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে পুনর্বাসিত করার প্রস্তুতি চলছে বলেও দাবি করেন মি. ইসলাম।
“জয় বাংলা স্লোগান হচ্ছে, মিডিয়ায় আসছে আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবীরা, ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টিকে প্রস্তুত করা হচ্ছে এগুলো পরিকল্পিত আয়োজন,” বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম দাবি করেন, “ভারতের প্রশ্রয় ছাড়া আওয়ামী লীগ এই পরিকল্পনা করতে পারতো না, ভারত সরকারকেও এর জন্য কঠোরভাবে বলতে হবে।”
এছাড়া ভোটের মাঠে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের ভোট নিজেদের পক্ষে আনার একটি প্রতিযোগিতা চলছে বলেও মন্তব্য করেন মি. ইসলাম। তিনি বলেন, এ নিয়ে সতর্ক না হলে ওসমান হাদির সঙ্গে যা ঘটেছে সেটির পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
ওসমান হাদির এই ঘটনায় তার পরিবারের ডাকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সর্বদলীয় কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানান মি. ইসলাম।
বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলছে।”
নিজেদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয় এমন কথা বলা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানান মি. পরওয়ার।
“সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধিরা সুযোগ পেয়েছে। আমাদের পূর্বের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে,” বলেন তিনি।
সন্দেহভাজন একজনের ছবি দিয়ে তথ্য চেয়েছে পুলিশ
ওসমান হাদির ওপর হামলাকারী সন্দেহে একজন ব্যক্তির ছবি প্রকাশ করে তার সম্পর্কে তথ্য দিতে জনসাধারণের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ তালেবুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় শুক্রবার মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একজন ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে।
ওই ব্যক্তির বিষয়ে কোনো তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত ডিসি মতিঝিলের মোবাইল নম্বর ০১৩২০০৪০০৮০, ওসি পল্টনের মোবাইল নম্বর ০১৩২০০৪০১৩২ অথবা জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ যোগাযোগ করে পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং উপযুক্ত পুরস্কার দেওয়া হবে।
এদিকে, ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানো ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। শনিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।







