Source : BBC NEWS

শরীফ ওসমান হাদি

ছবির উৎস, Osman Hadi/facebook

৪৯ মিনিট আগে

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আশঙ্কাজনক ও তার মস্তিষ্কের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বেধে আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তার মস্তিষ্কের ফোলা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে, যা উদ্বেগজনক বলে তারা বলছেন।

এদিকে মি. হাদির চিকিৎসার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে নেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে তার পরিবার। আজ রবিবার মেডিকেল বোর্ডে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।

“বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে তার পরিবার আর মেডিকেল বোর্ড দেখবে সেটি ফিজিবল কি-না। এটি আমরা তার পরিবারের ওপর ছেড়ে দিয়েছি,” এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ।

তিনি ওসমান হাদির চিকিৎসা বোর্ডের সদস্য ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের রেসিডেন্ট চিকিৎসক।

অন্যদিকে পুলিশ জানিয়েছে, যে মোটরবাইকে এসে দুর্বৃত্তরা মি. হাদিকে গুলি করেছিলো সেই মোটরবাইকের প্রকৃত মালিক আব্দুল হান্নানকে আটকের পর ঘটনার সাথে তার সংশ্লিষ্টতা আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অভিযুক্ত দুইজনের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই বলে জানালেও, শেরপুরে সীমান্তে লোক পারাপার করে, এমন দুইজনকে আটক করেছে ঢাকার পুলিশ।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি শুক্রবার বিজয়নগর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের সময় গুলিবিদ্ধ হন।

এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর এখন বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের ২০২৪ সালের অগাস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিজের বক্তব্য আর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনায় এসে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন শরিফ ওসমান হাদি।

ইনকিলাব মঞ্চ নামে একটি ‘রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম’ তৈরির মাধ্যমে নিজের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিলেন তিনি।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
শুক্রবার দুপুরে গুলিবিদ্ধ হন শরীফ ওসমান হাদি

ছবির উৎস, Osman Hadi/facebook

সর্বশেষ পরিস্থিতি কেমন

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে তার মস্তিষ্কে একটি অপারেশন করা হয়।

এরপর উন্নত আইসিইউ সাপোর্টের জন্য তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে।

চিকিৎসকরা তখন থেকেই বলে আসছেন যে তার অবস্থা ‘অত্যন্ত সংকটজনক’ তার অবস্থা।

এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার পর তার চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়।

এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কো-অর্ডিনেটর আইসিইউ ও এইচডিইউ ডা: মো: জাফর ইকবাল রোববার বিকালে একটি বার্তায় জানিয়েছেন, আজ সকালে পুনরায় করা সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, মস্তিষ্কের ফোলা (Cerebral Edema) পূর্বের তুলনায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি নির্দেশ করে।

এছাড়া ফুসফুসের কার্যকারিতা স্থিতিশীল রয়েছে, উল্লেখযোগ্য উন্নতি বা অবনতি হয়নি। তবে ব্রেন ইনজুরির কারণে শরীরের কিছু হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে, যা প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে।

ব্রেন স্টেমে আঘাত ও মস্তিষ্কের অতিরিক্ত ফোলাজনিত চাপের কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা দেখা যাচ্ছে।

রোগীর সার্বিক অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত আশঙ্কাজনক বলে বর্ণনা করেছেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, ওসমান হাদির মাথার বাম পাশের খুলি খুলে মস্তিষ্কের জন্য জায়গা করে দেয়া হয়েছে, তবে যে পাশে অপারেশন হয়েছে সেই পাশের মস্তিষ্ক চাপ দিয়ে অন্য পাশে ঠেলে দিতে দেখা যাচ্ছে।

ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারীদের খুঁজছে পুলিশ

ওদিকে মি. হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা ফিরে এলেও ফুসফুসের অবস্থা আগের মতোই আছে এবং শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ লাইফ সাপোর্টের মাধ্যমে অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ।

“এক্সপার্ট শুটার দিয়ে হেডশ্যুট করা হয়েছে। এতে করে টেম্পরাল বোন ভেদ করে ব্রেনের যে মেইন অংশ যেখানে হৃদযন্ত্র ও শ্বাসপ্রশ্বাসের সেন্টার আছে এবং সেখানে বেশি রক্তনালী থাকে। তার সামনে দিয়ে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেছে,” জানিয়েছেন তিনি।

তিনি জানান যে, বুলেট ওসমান হাদির মাথার ডান সাইড দিয়ে ঢুকে বাম সাইড দিয়ে বের হয়ে গেছে।

“বুলেটের ফ্রেগমেন্ট কাভার অপারেশনের সময় আমরা পেয়েছি। একটা অংশ বের হয়ে গেছে। আর আরেকটা অংশ মস্তিষ্কের ভেতরে রয়ে গেছে। যে জায়গায় আটকে আছে সেটি খুবই গভীরে। তার কনজারভেটিভ ম্যানেজমেন্ট চলছে। বিশ্বমানের চিকিৎসা তার চলছে”।

নতুন করে মি. হাদির এখন সার্জারি লাগবে না বলে মনে করছেন মেডিকেল বোর্ড। তবে পরবর্তী কোনো পদক্ষেপে যাওয়া প্রয়োজন মনে করলে সেটি করা হবে বলে বলছেন চিকিৎসকরা।

এর আগে ওসমান হাদিকে যখন হাসপাতালে নেওয়া হয় তখন তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিলো।

“তখন আমরা সিপিআর দেয়ার পর সে কামব্যাক করে। তার পালস ও রক্তচাপ এখনো স্টেবল আছে,” বলছিলেন চিকিৎসক আব্দুল আহাদ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ওসমান হাদির চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে এবং সেখানকার চিকিৎসকরা সেগুলো পর্যালোচনা করছেন।

“তার পরিবার যদি চিন্তা করে ও বোর্ড যদি ফিজিবল মনে করে তাহলে সেই সিদ্ধান্ত পরিবার নিতে পারে। এটা আমরা পরিবারের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি,” বিদেশে নেওয়ার প্রসঙ্গে বলছিলেন মি. আহাদ।

ঢাকা-৮ সংসদীয় আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন শরীফ ওসমান হাদি

ছবির উৎস, Osman Hadi/facebook

মোটর সাইকেল মালিক আটক

ঢাকা মহানগর পুলিশ বা ডিএমপি জানিয়েছে, শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির প্রকৃত মালিক সন্দেহে আব্দুল হান্নানকে আটক করে পল্টন থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব জানিয়েছে, হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির নম্বরের সূত্র ধরে এর মালিক হান্নানকে আটক করে পল্টন থানায় দেওয়া হয়েছে। এখন মি. হাদিকে গুলি করা ব্যক্তি হিসেবে সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদকে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে র‍্যাব।

মি. হান্নান অবশ্য পুলিশকে জানিয়েছেন যে তিনি আগেই তার বাইকটি বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।

“এ ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। হত্যা চেষ্টায় আব্দুল হান্নান জড়িত কি-না সেটি তদন্ত করে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে শুটারকে শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের সব সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে,” প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন ডিসি (মিডিয়া) তালেবুর রহমান।

মি. রহমান বলেন, “ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজগুলো বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ আরম্ভ করছি। বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে একজনের ছবি প্রচার করেছি। তাকে গ্রেফতারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলছে”।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ডিএমপির পক্ষ থেকে বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এবং সে আলোকেই পুলিশ এখন কাজ করছে।

ওদিকে মি. হাদিকে হত্যাচেষ্টাকারীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে বা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে এমন প্রচার দেখা যাচ্ছে।

এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান বলেন, “অপরাধীরা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে কি না, এমন কোনো তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। কেন তাঁকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে, তা তদন্তে উঠে আসবে”।

বিকালে একটি সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, ওসমান হাদিকে গুলির সাথে জড়িত দুইজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার হলেন ফয়সাল করিম মাসুদ ও মো. আলমগীর শেখ।

তিনি বলেন, “ঘটনার তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা হেলমেট পরিহিত অবস্থায় ওসমান হাদিকে খুব কাছ থেকে গুলি করে”।

পুলিশ বলছে, ”অভিযুক্তদের গ্রেফতারে ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং অভিযান চলমান রয়েছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা যাতে সীমান্ত পার না হতে পারে সেজন্য তাদের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে পাসপোর্ট ব্লক করে দেওয়া হয়েছে”।

অতিরিক্ত কমিশনার মি. ইসলাম বলেন, “শেরপুরের নলিতাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে লোক পারাপার করে এমন জড়িত সন্দেহ দুইজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি”।

তবে অভিযুক্তদের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত কমিশনার মি. ইসলাম।

ওদিকে মি. হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন মি. মাসুদের সব ব্যাংক হিসাব এবং তাঁর আইটি প্রতিষ্ঠান অ্যাপল সফট আইটি লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর।

এর আগে ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।