Source : BBC NEWS

রোববার সচিবালয়ে অবস্থান নেয় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা

৩৪ মিনিট আগে

পদোন্নতিতে কোটা কমানোর হতে পারে এমন শঙ্কার জায়গা থেকে ক্ষোভ বাড়ছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের। পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য বিদ্যমান কোটা বহাল রাখার দাবিতে তারা জনপ্রশাসন সচিবের সাথে বৈঠক করেছেন।

অন্যদিকে, পাল্টা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’।

উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের কোটা ৭৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫০ শতাংশ করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের প্রতিবাদে রোববার সচিবালয়ে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন কর্মকর্তারা।

একই সাথে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারকে আলাদা করে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস প্রতিষ্ঠার দাবিতেও সরব হয়েছেন এই কর্মকর্তারা।

এই দাবির পক্ষে প্রশাসন কর্মকর্তাদের একক লোগো বানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করতেও দেখা গেছে।

এই দাবি নিয়ে রোববার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন সচিব ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব মো. মোখলেস উর রহমানের সাথে বৈঠক করেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বা বিএএসএ।

বিএএসএ সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “উচ্চ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। এটি একটি মীমাংসিত বিষয়ে। এ বিষয়ে নতুন করে ভিন্ন সুপারিশ প্রস্তাবের বিষয়টি আমাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে।”

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যদি তাদের এই দাবি মেনে না নেয় তাহলে নতুন করে কর্মসূচি দেয়ার কথাও ভাবছে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে কয়েকটা মৌলিক বিষয় নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি বা দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। চূড়ান্তভাবে সুপারিশ দেয়ার আগে আমরা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেবো।”

তবে, প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে বাকি ২৫টি ক্যাডার ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ পাল্টা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এ নিয়ে আরো পড়তে পারেন
সচিবালয়ের এই ভবনে জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়

যে কারণে প্রশাসন ক্যাডারদের ক্ষোভ

গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।

এসময় কমিশনের সম্ভাব্য সুপারিশের কিছু বিষয় তুলে ধরেন তারা।

সেখানে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেছিলেন, “উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে।”

এছাড়াও তিনি জানিয়েছিলেন “ডেপুটি সেক্রেটারি লেভেলে পরীক্ষা হবে, সেখানে সবাই পরীক্ষা দিতে পারবে।”

একইসঙ্গে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যেখানে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারের জন্য ২৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়, তা বদলে এই অনুপাত প্রশাসনের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ক্যাডারদের জন্য ৫০ শতাংশ করা হবে বলেও জানান তিনি।

একই সভায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারে না রেখে আলাদা কমিশন করার কথা জানান সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান।

তবে সংস্কার কমিশন প্রধান ও সদস্য সচিবের এসব বক্তব্য ইতিবাচকভাবে নেননি ক্যাডারদের কোনো পক্ষই।

গণমাধ্যমে এসব খবর আসার পর থেকেই সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া জানায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

এরপরই বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে কমিশন প্রধানের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

একই ঘটনা দেখা যায় বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতেও।

কোনো রকম আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বৈঠক

ছবির উৎস, channel I

জনপ্রশাসন কর্মকর্তাদের অবস্থান

রোববার সকাল এগারোটার দিক থেকেই সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকশ কর্মকর্তা।

সচিবালয়ের বাইরে যারা ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কর্মরত, তাদের অনেকেই যোগ দেন সচিবালয়ের এই কর্মসূচিতে। ঢাকার বাইরে থেকেও কেউ কেউ এসেছিলেন সচিবালয়ে।

ফেনীর একটি উপজেলা থেকে আসা প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সংস্কার কমিশন এখন যে প্রস্তাব করছে তাতে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অন্য ২৬টি ক্যাডারের কারোরই পরীক্ষা দিতে হবে না। উল্টো নিজ ক্যাডারে প্রমোশনের জন্য আমাদের পরীক্ষাও দিতে হবে আবার সেখানে কোটাও থাকবে। এটা কেমন বৈষম্য নিরসন হলো?”

তিনি জানান, এই বৈষম্য দূর করার জন্য তিনিসহ তার সহকর্মীরা সচিবালয়ে এসেছেন। তারা তাদের দাবির পক্ষে অনড় থাকবেন বলেও জানান বিবিসি বাংলাকে।

রোববার বেলা পৌনে ১২টার দিকে প্রশাসন ক্যাডারের কয়েকশ কর্মকর্তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে অবস্থান নেন। তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে দেখা করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।

বেলা ১২টার দিকে ওই কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় তলায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন।

সেখান থেকে বের হয়ে হয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো নিয়ে জনপ্রশাসন কমিশনকে জানিয়েছি। আমাদের সাথে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে বসার জন্য বলেছি। এখন তাদের সাথে বসে আলোচনা হতে পারে”।

এ সময় তারা সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি ও এর পক্ষে তাদের যুক্তি এবং এই বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়গুলোও তুলে ধরেন জনপ্রশাসন সচিবের কাছে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী (ডানে) এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান (বামে)

দাবি না মানলে কর্মসূচির ইঙ্গিত

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সচিবের সাথে দেখা করে আটটি দাবি তুলে ধরেন।

চট্টগ্রামের বিভাগের একটি জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে বলেন, একদিকে বলা হচ্ছে মেধার মূল্যায়ন করতে হবে। অপরদিক মেধার পরিবর্তে কোটাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। অধিক নম্বরপ্রাপ্ত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণকে তাদের পদোন্নতিযোগ্য পদ হতে আরো একবার বঞ্চিত করে তুলবে যদি সংস্কার কমিশনের এই প্রস্তাব পাশ করা হয়।”

এরই মধ্যে সারাদেশের ৬৪ জেলায় প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে একটি নেটওয়ার্ক করে নিজেদের এই দাবিগুলোর ব্যাপারে সরব হচ্ছে।

সেখানে বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি যুগোপযোগী সিভিল প্রশাসন হিসেবে ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়।

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এ দাবিতে আলাদা লোগো তৈরি করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করছেন।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “প্রত্যেকটি জেলা পর্যায় থেকে আলাদা আলাদাভাবে এই দাবি উঠেছে। আমরা আমাদের তাদের এই দাবি নিয়ে কথা বলার পর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনকে সময় দিয়েছি।”

তিনি জানিয়েছেন, জনপ্রশাসন সচিব তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন যে শিগগিরই তাদের সাথে এ নিয়ে বসবে সংস্কার কমিশন।

মি. উল্ল্যাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা আপাতত তিন চারদিন কোনো কর্মসূচির পথে যাচ্ছি না। এর মধ্যে যদি সমাধান না হয়, তাহলে পরবর্তীতে কি কর্মসূচি হতে পারে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিবো।”

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর
বৃহষ্পতিবার আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের বিবৃতি

পাল্টা আন্দোলনে অন্যরাও

প্রশাসন ক্যাডার বাদে বাকি ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত হয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।

গত মঙ্গলবার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধানের বক্তব্যের পর বৃহস্পতিবার সংগঠনটি থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ না করেই ডিএস পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ ও অন্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস থেকে আলাদা করার প্রতিবাদ জানানো হয়।

পরদিন এ নিয়ে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, “জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের আটজনের মধ্যে ছয়জনই প্রশাসন ক্যাডার থেকে। বাকি ২৫টি ক্যাডারের কোনো প্রতিনিধিই সেখানে নেই।”

ফলে নীতিনির্ধারনের ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারই গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

শনিবার নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।

সেখানে তারা কিছু কর্মসূচি নিয়েছে যেমন- সোমবার প্রতিটি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে বিবৃতি দেবে। পরদিন মঙ্গলবার কলমবিরতি এবং ২৬শে ডিসেম্বর সব অফিসের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি।

এই দাবির পক্ষে আগামী আগামী চৌঠা জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ কর্মসূচির কথাও জানিয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।

তবে অন্য ক্যাডার সার্ভিসের এই কর্মসূচি ঘিরে কিছুটা উত্তেজনাও তৈরি হচ্ছে প্রশাসনিক খাতে।

বিএএসএ সভাপতি মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “হঠাৎই অন্য ক্যাডার সার্ভিসগুলো যে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এটিকে আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। এর পেছনে কারণ কী সেটাও আমরা জানতে চাই।”

যদিও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এই মুহূর্তে তারা যে খসড়া করেছে সেটা কিছু মতামতের ভিত্তিতে করা হয়েছে। তবে এটি চূড়ান্ত কিছু নয়।

রোববার জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্য সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, “সংস্কার কমিশনের সুপারিশ এখনো কোনো শেপ নেয়নি। কোনো শেপ নেয়ার আগে আমরা সব পক্ষের সাথে বসে আলাপ করে একটা সিদ্ধান্ত নেবো।”

আগামী ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ জমা দেয়ার কথা বলছে কমিশন।