Source : BBC NEWS

 ভারত থেকে জোর করে পাঠানোর পর কুড়িগ্রাম সীমান্তে আটকদের বেশিরভাগ নারী

ছবির উৎস, Ahsan Habib Nilu

১৮ মিনিট আগে

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও উত্তরাঞ্চলীয় জেলা কুড়িগ্রামের সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ‘পুশ-ইন’ বা জোর করে প্রবেশ করানোর পর ১১৬ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বুধবার এই আটকদের মধ্যে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা, শান্তিপুর ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে মোট ৭২ জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করানো হয়েছে অর্থাৎ, তাদেরকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে।

বাকি ৪৪ জনকে বাংলাদেশে পুশ- ইন করানো হয়েছে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও ভুরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে। তবে তাদের কেউ কেউ বাংলা ভাষী। বাকিদের কেউ কেউ রোহিঙ্গা বলে ধারণা করছে বিজিবি। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) খবর অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম থেকে আটককৃতরা বুধবার ভোররাতে জেলার রৌমারী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে।এরপর তারা সেখানে ঘোরাঘুরি করার সময় স্থানীয়রা তাদেরকে আটকিয়ে রেখে বিজিবি’র হাতে তুলে দেয়।

তবে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফএরএকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “তাদের ‘পুশব্যাক’, অর্থাৎ বাংলাদেশে যেটি ‘পুশ ইন’ তা নতুন কোনও ঘটনা নয়।”

বিবিসি বাংলা’র সাম্প্রতিক খবর:
ত্রিপুরা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে তৈরি 'বর্ডার রোড' ধরে টহল দিচ্ছে বিএসএফ (ফাইল ছবি)

ছবির উৎস, Getty Images

‘গুজরাট থেকে বিমানে ত্রিপুরায় এনে এ পারে পাঠানো হয়’

গতকাল বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা, শান্তিপুর ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে সর্বমোট ৭২ জনকে বাংলাদেশে পুশ-ইন করানো হয়েছে বলে বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাজমুল আরা সুলতানা।

এর মধ্যে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার শান্তিপুর সীমান্ত দিয়ে ২৭ জন, তাইন্দ সীমান্ত দিয়ে ১৫ জন ও পানছড়ির লোগাং দিয়ে ৩০ জনকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানো হয়।

স্থানীয় প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, এদের বেশিরভাগই ভারতীয় নাগরিক।

খাগড়াছড়ির স্থানীয় সাংবাদিক সমির মল্লিক বিবিসি বাংলাকে জানান, যাদেরকে আটক করা হয়েছে, তাদের অনেকেই বাংলায় কথা বলতে পারেন।

“আটকদের কাছ থেকে গতকাল জানা গেছে যে, ওনাদের গুজরাট থেকে বিমানে করে ত্রিপুরায় নিয়ে আসে বিএসএফ সদস্যরা। তারপর এক ঘণ্টা হাঁটিয়ে এনে বিএসএফ সীমান্ত দিয়ে এ পারে পাঠিয়ে দেয়।”

আটকদের বর্তমানে বিজিবি’র তত্ত্বাবধায়নে সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বাড়িতে রাখা হয়েছে।

তাদেরকে নিয়ে এখন কী করা হবে, জানতে চাইলে নাজমুল আরা সুলতানা বলেন, এ নিয়ে বিজিবি-প্রশাসন একযোগে কাজ করছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে, ভারতের গুজরাত রাজ্য পুলিশের সূত্রগুলো জানিয়েছিল, গুজরাত রাজ্যে সম্প্রতি পুলিশি অভিযানে যে অনেক বাংলাদেশী নাগরিককে ধরা হয়েছে অবৈধভাবে ভারতে বসবাসের অভিযোগে, তাদেরও ভারত থেকে ‘পুশ ব্যাক’ করা হবে।

বিএসএফেরএকজন কর্মকর্তা বলেন, “যাদের সম্প্রতি পুশব্যাক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছেন, যারা গুজরাতে ছিলেন।”

সীমান্তে আটকদের কাছ থেকে তাদের বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করছে বিজিবি

ছবির উৎস, Getty Images

এদিকে, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও ভূরুঙ্গামারী সীমান্তে অবৈধভাবে বাংলাদেশে পুশইন করা ৪৪ জনও এখন আটক অবস্থায় বিজিবি’র তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন।

কুড়িগ্রামে জামালপুর বিজিবি ৩৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসানুর রহমান বিবিসিকে বলেন, আটককৃতদের ৩২ জন তাদের ব্যাটালিয়নের জিম্মায় আছে। বাকিরা রয়েছে কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবি ব্যাটারিয়নের জিম্মায়।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের জিম্মায় যারা আছে, তাদের নয় জন বাংলায় কথা বলে। আর ২৩ জন কথা বলে রোহিঙ্গাদের ভাষায়। এখন তারা বাংলাদেশি নাকি রোহিঙ্গা, নাকি ভারতীয়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কাজ চলছে।”

কী কারণে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এগুলোর উত্তরই খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি আমরা। যাচাই-বাছাই চলছে।”

এরা ভারত থেকেই এসেছে কিনা,এ প্রশ্নের জবাবে বিজিবি’র ওই কর্মকর্তা বলেন, জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে, কুড়িগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক আহসান হাবীব নীলু বিবিসিকে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, বুধবার সকালে অনেককে সীমান্ত এলাকার বাজারে ঘোরাঘুরির সময় তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক হলে তাদের আটক করে বিজিবি ও রৌমারী থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

যে ঘটনাগুলির কথা বিজিবি উল্লেখ করেছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও বিএসএফ এর একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, “বাংলাদেশের নাগরিক যারা ভারত থেকে আবার নিজের দেশে ফিরতে গিয়ে আমাদের হাতে ধরা পড়ে যান, তাদের আমরা সেদেশেই পাঠিয়ে দেই।”

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন:
বাংলাদেশ সীমান্তে বেড়া বসাতে যে ধরনের কাঁটাতার ব্যবহার করে ভারত। প্রতীকী ছবি

ছবির উৎস, ANI

‘সীমান্ত দিয়ে মানুষ প্রবেশ করানো গ্রহণযোগ্য নয়’

সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করানোর খবর প্রকাশের পর গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের কাছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, ভারত বাংলাদেশে মানুষ “পুশ-ইন” করার চেষ্টা করেছে।

সীমান্ত দিয়ে এভাবে মানুষ প্রবেশ করানোর বিষয়টি “গ্রহণযোগ্য” নয় বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে ভারতের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রতিটি পুশ-ইনের ঘটনা বাংলাদেশ আলাদাভাবে যাচাই করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তবে তিনিএ-ও বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে কেউ যদি বাংলাদেশি হিসাবে প্রতীয়মান হয়, তাহলে বাংলাদেশ তাদেরকে গ্রহণ করবে। তবে তা “আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায়।”