Source : BBC NEWS

গোল্ডেন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশ পথে আসা ‘পরবর্তী প্রজন্মের’ হুমকিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে বলে জানানো হয়েছে

ছবির উৎস, Chip Somodevilla via Getty Images

যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেমন হতে যাচ্ছে সেই বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য নকশা বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার মেয়াদের শেষের দিকে তা কার্যকর হবে।

জানুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের মাত্র কয়েকদিন পরই মি. ট্রাম্প জানিয়েছিলেন ওই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পেছনে তার উদ্দেশ্য হলো ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশপথে আসা সমস্ত ‘নেক্সট জেনারেশন থ্রেট’- এর সঙ্গে মোকাবিলা করা।

নতুন বাজেট বিলে প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। যদিও সরকার অনুমান করেছে যে কয়েক দশক ধরে এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় হবে।

এর আগে, কর্মকর্তারা সতর্ক করেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে ব্যবস্থা রয়েছে তা সম্ভাব্য প্রতিপক্ষের কাছে থাকা ক্রমবর্ধমান অত্যাধুনিক অস্ত্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলার মতো নয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন এই প্রকল্পের তদারকি করবেন স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গুয়েটলিন। বর্তমানে স্পেস ফোর্সের স্পেস অপারেশনের ভাইস চিফ জেনারেল গুয়েটলিন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার সাত দিনের মাথায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিরক্ষা বিভাগকে এমন এক ব্যবস্থার পরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন যা আকাশপথে চালানো হামলাকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, এই জাতীয় হামলা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘সবচেয়ে বিপর্যয়কর হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আরও পড়তে পারেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিষয়ে নজর দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ছবির উৎস, JIM WATSONAFP via Getty Images

মঙ্গলবার ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই সিস্টেমে ভূমি, সমুদ্র এবং মহাকাশে ‘পরবর্তী প্রজন্মের’ প্রযুক্তি থাকবে। এই তালিকায় রয়েছে মহাকাশ-ভিত্তিক সেন্সর এবং ইন্টারসেপ্টর। কানাডা এই ব্যবস্থার অংশ হতে চেয়েছিল বলেও তিনি জানিয়েছেন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন সফরের সময় কানাডার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিল ব্লেয়ার জানিয়েছিলেন যে, কানাডা ‘ডোম প্রজেক্ট’-এ অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে এর পেছনে যথার্থ ‘কারণ রয়েছে’ এবং এটা ‘দেশের স্বার্থে’।

তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, “ওই অঞ্চলে কী ঘটছে তা কানাডার জানা দরকার এবং আর্কটিকসহ আসন্ন হুমকি সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।”

গোল্ডেন ডোমের বিষয়ে মি. ট্রাম্প জানিয়েছেন যে ওই সিস্টেম ‘বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র বা মহাকাশ থেকে লঞ্চ করা ক্ষেপণাস্ত্রকেও বাধা দিতে পারবে।’

এই ব্যবস্থা কিছুটা ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ থেকে অনুপ্রাণিত। ইসরায়েল ২০১১ সাল থেকে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে আয়রন ডোম ব্যবহার করেছে।

তবে গোল্ডেন ডোম এর তুলনায় বহুগুণ বড় হবে এবং তা বিস্তৃত রেঞ্জের হুমকিকে মোকাবিলা করার জন্য ডিজাইন করা হবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

গোল্ডেন ডোম যে সমস্ত হুমকিকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবে তার মধ্যে রয়েছে হাইপারসনিক অস্ত্র, যা শব্দের গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম এবং ‘ফ্র্যাকশন্যাল অরবিটাল বোম্বার্ডমেন্ট সিস্টেম’ বা ফোবসও রয়েছে। ফ্র্যাকশন্যাল অরবিটাল বোম্বার্ডমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে মহাকাশ থেকে ওয়ারহেড নিক্ষেপ করা সম্ভব।

এই সমস্ত হুমকির দিকে ইঙ্গিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “এগুলো সব আকাশেই নিষ্ক্রিয় করা হবে। এর সাফল্যের হার ১০০% এর খুব কাছে।”

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর
মি. ট্রাম্প জানিয়েছেন, হাইপারসনিক অস্ত্রকেও রুখতে সক্ষম হবে গোল্ডেন ডোম

ছবির উৎস, Andrew HarnikGetty Images

এর আগে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গোল্ডেন ডোমের লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রকে এমন সুযোগ করে দেওয়া যেন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আগে, আকাশে থাকা অবস্থায়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে সেগুলোকে থামানো যায়।

এই বহুমুখী সিস্টেম কেন্দ্রীয় কমান্ডের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই কর্মসূচির জন্য প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোট অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ১৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারে।

প্রাথমিক আড়াই হাজার কোটি ডলার আসবে তার ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অন ট্যাক্স’ থেকে যদিও ওই বিল এখনও পাশ হয়নি।

কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস অবশ্য অনুমান করেছে যে ওই খরচ আরও অনেক বেশি হতে পারে। তাদের অনুমান গোল্ডেন ডোমের শুধুমাত্র মহাকাশ-ভিত্তিক অংশের জন্যই ২০ বছরে ৫৪ হাজার ২০০কোটি ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে সরকার।

পেন্টাগনের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে তা রাশিয়া ও চীনের ডিজাইন করা নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো নয়।

ওভাল অফিসে মি. ট্রাম্প বলেছেন, “বর্তমানে কোনও ব্যবস্থা নেই। আমাদের কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের ক্ষেপণাস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে- কিন্তু সেখানে কোনও ব্যবস্থাপনা নেই…এমনটা (গোল্ডেন ডোমের মতো) আগে কখনও হয়নি।”

প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক এক ব্রিফিংয়ের নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি “নিখুঁত ও পরিশীলিতভাবে বাড়বে” কারণ চীন ও রাশিয়া মার্কিন প্রতিরক্ষার “ফাঁকগুলো কাজে লাগাতে” নিজেদের সিস্টেমগুলোর ডিজাইন করতে তৎপর।