Source : BBC NEWS

বুধবার ভারতের জম্মু অঞ্চলে কামানের গোলা আঘাতের পর ধোঁয়া উড়ছে

ছবির উৎস, AFP via Getty Images

এক ঘন্টা আগে

ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষ যখন চতুর্থ দিন পার করছে, তার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন এই দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তিনি এটি জানানোর পরই ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পোস্টে লিখেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এক দীর্ঘ রাতের আলোচনার পর আমি আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে ভারত ও পাকিস্তান একটি পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।”

এই ঘোষণার পরই ভারতের স্থানীয় সময় শনিবার বিকাল ৫টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে দুই দেশই।

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সন্ধ্যায় বিকেলে এক ব্রিফিংয়ে জানান, শনিবার বিকেল পাঁচটা থেকে স্থল, বিমান ও নৌ বাহিনী পাকিস্তানের দিকে সব ধরনের গুলি চালানো বন্ধ রাখছে।

একই সময় পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসাক দারও টুইট বার্তায় জানান, পাকিস্তান ও ভারত তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

এ নিয়ে আগামী সোমবার দুই দেশ আবারো আলোচনায় বসবে বলেও জানিয়েছেন বিক্রম মিশ্রি।

এই যুদ্ধবিরতি আলোচনায় যুক্তরাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। পাকিস্তানের একটি টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই দাবি করেন।

গত এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলাকে ঘিরে উত্তেজনা চলছিল টানা দুই সপ্তাহ ধরে।

এর মধ্যেই গত মঙ্গলবার রাতে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে বিমান ও ড্রোন হামলা চালালে সংষর্ঘে জড়ায় পরমাণু শক্তিধর ও প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুটি দেশ।

এরপর থেকেই এই সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানানোসহ কূটনীতিক তৎপরতা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ।

অবশেষে চার দিনের মাথায় ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে।

এ নিয়ে আরো পড়তে পারেন
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ

ছবির উৎস, Getty Images

প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

গত মঙ্গলবার দিন শেষে মধ্যরাত থেকে দুই দেশই পাল্টাপাল্টি সামরিক হামলার দাবি করেছে।

শনিবার সকালেও ভারত-পাকিস্তান দুটি দেশই দাবি করেছে, শুক্রবার দিবাগত রাতে তাদের ওপর অপর দেশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।

ভারত-পাকিস্তানের চার দিনের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত দুই দেশের কয়েক ডজন মানুষ হতাহত ও বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব সামনে এসেছে। কোনো দেশই নিজেদের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য জানায়নি।

এর মধ্যেই শনিবার বিকেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রুথ স্পেশালে যুদ্ধবিরতির এই ঘোষণা দেন।

তিনি এই পোস্টে বলেন, “বিবেচনা বোধ ও দুর্দান্ত বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য উভয় দেশকে অভিনন্দন। এই বিষয়ে আপনার মনোযোগের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ!”

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নিজের এক্স (সাবেক টুইটারে) অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন।

সেখানে তিনি বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান “তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে এবং একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।”

সেখানে তিনি আরো লিখেন, “শান্তির পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদী (নরেন্দ্র মোদী) এবং শরিফের (শাহবাজ শরিফ) প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও রাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করি।”

কীভাবে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছালো দুই দেশ তার একটি ধারণা পাওয়া যায় মি. রুবিও এই ঘোষণায়, যেখানে তিনি লিখেছেন, তিনি ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গত ৪৮ ঘণ্টা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ ঊর্ধ্বতন ভারতীয় ও পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।

ভারতের পক্ষে যুদ্ধবিরতির তথ্য জানান পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি

ছবির উৎস, MEA India

শুক্রবার থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত কী ঘটেছিল?

গত কয়েকদিন ধরেই উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার ক্রমাগত লঙ্ঘনের অভিযোগ করে আসছে।

শনিবার ভোরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারতীয় হামলার জবাবে পাল্টা আক্রমণ শুরুর ঘোষণাও দেয়। ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুরে’র বিপরীতে পাকিস্তানের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বানিয়ান মারসুস’।

বিবিসি উর্দুর খবরে বলা হয়, শনিবার ভোরে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসীম মুনিরের সাথে যোগাযোগ করেন।

মি. রুবিও এসময় দুই দেশকেই উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজে বের করার আহ্বান জানান। একই সাথে ভবিষ্যতের সংঘাত এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় আলোচনা শুরুর প্রস্তাবও দেন।

মি. রুবিও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথেও আলোচনা করেন।

দুই দেশের উত্তেজনার মধ্যেই চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ভারত-পাকিস্তানকে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানানো হয়েছিল।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, তারা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে চলমান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং এই দুই দেশের উত্তেজনা নিয়ে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

এক্ষেত্রে চীন গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত বলেও জানানো হয়।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর
শুক্রবার রাতে জম্মু শহরের রেহারি কলোনিতে পাকিস্তান হামলা চালায়

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা যেভাবে এলো

ভারতীয় স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা ও পাকিস্তানের সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় বলে জানানো হয়।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, শনিবার বিকেলে পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের মহাপরিচালক (ডিজিএমও) ভারতীয় ডিজিএমও-কে ফোন করেন।

ওই আলোচনার পর উভয় পক্ষ ভারতের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা (বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা) থেকে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সব ধরনের গুলিবিনিময় বন্ধ রাখতে সম্মত হয়।

শনিবার সন্ধ্যায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নয়াদিল্লিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির নৌবাহিনীর কমোডর রঘু নায়ার বলেন, “ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী আজকের চুক্তি বাস্তবায়ন করবে, তবে বাহিনী ভারতের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য সজাগ থাকবে”।

শনিবার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক্স পোস্টে লিখেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে গুলিবর্ষণ এবং সামরিক পদক্ষেপ বন্ধের জন্য একটি চুক্তি হয়েছে।

“ভারত সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে দৃঢ় এবং অটল অবস্থান বজায় রেখেছে। এবং এটি অব্যাহত রাখবে।”

এই ঘোষণার পর পাকিস্তান বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (পিএএ) জানিয়েছে, সব ধরনের ফ্লাইটের জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে।