Source : BBC NEWS
পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের সুপারসহ ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, কাজে গাফিলতি, সরকারি হাসপাতালে না এসে বেসরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া, সিনিয়র চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে জুনিয়র ডাক্তারদের দিয়ে সার্জারি করানোর মতো অভিযোগ তোলা হয়েছে।
অভিযোগ ওঠে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে পাঁচ জন প্রসূতি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাদের বিতর্কিত একটি স্যালাইন ও ওষুধ দেওয়া হয়েছিল।
রিঙ্গারস ল্যাকটেট (আরএল) দ্রবণ বা চলতি কথায় বলতে গেলে স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত।
ওই স্যালাইনের বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছিল কর্ণাটক সরকার এবং প্রস্তুরকারক সেই কম্পানিকে নিষিদ্ধ তালিকায় রাখা হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তা ব্যবহার করা হচ্ছিল।
এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিবের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। ড্রাগ কন্ট্রোলার জানানো সত্ত্বেও “এই স্যালাইন ব্যবহার বন্ধ করতে ১০ দিনেরও বেশি সময় কেন লাগল” সে বিষয়ে রাজ্যকে প্রশ্ন করেছে আদালত।
অন্যদিকে, সাম্প্রতিক ঘটনার জন্য চিকিৎসকদেরই দায়ী করেছে রাজ্য সরকার।
নবান্নে আয়োজিত এক বৈঠকে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, “যাদের কাছে মানুষের ভাগ্য বাঁধা থাকে, যাদের হাতে সন্তানের জন্ম হয়, তারা যদি নিজেদের দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না।”
নবান্নে বৈঠকের পর থেকেই তৃণমূলের সমালোচনা করছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
অন্যদিকে, আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় বিচার ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিসহ অন্যান্য দাবি নিয়ে আন্দোলনে সামিলদের ‘নিশানা’ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রতিবাদী জুনিয়র ডাক্তাররা।
তাদের অভিযোগ, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ঘটনায় তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।
প্রসূতির মৃত্যু
গত ৮ জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিজারের পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন পাঁচজন প্রসূতি। এদের মধ্যে মামনি রুই দাস নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয় গত সপ্তাহে। ক্রমে বাকিদের অবস্থারও অবনতি হয়।
মৃত নারীর পোস্টমর্টেম রিপোর্টে কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ।
তবে স্বজনদের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ ওঠে, স্যালাইনের কারণে এই ঘটনা। পাশাপাশি প্রসূতিদের যে ওষুধ দেওয়া হয়েছিল সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে থাকে।
তবে এই অভিযোগের পক্ষে এখনও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অসুস্থ ওই প্রসূতিদের মধ্যে তিনজনকে কলকাতায় আনা হয়। রেখা সাউ নামে এক প্রসূতির চিকিৎসা চলছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজেই। তার সদ্যজাত সন্তানের মৃত্যু হয় গতকাল বৃহস্পতিবার।
এই ঘটনাকে ঘিরে বিভিন্ন মহল থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। কেন ওই স্যালাইন ব্যবহার করা হচ্ছে সে নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। শুরু হয় রাজনৈতিক আক্রমণ।
এদিকে, ঘটনা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করে রাজ্য সরকার। সেই রিপোর্ট বৃহস্পতিবার প্রকাশ্যে আনেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছেন
নবান্নে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে জানানো হয়, প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় ১৩ সদস্যের এক কমিটি এবং সিআইডি তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
দু’পক্ষের রিপোর্টেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে জানান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ।
অভিযোগ, আরএমও এবং সিনিয়র চিকিৎসকরা অনুপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে একজন ওই একই সময়ে বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনে অংশ নিয়েছেন। তবে প্রসূতিদের অপারেশনের সময় উপস্থিত ছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা, তারাই সার্জারি করেছেন।
এমন একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সুপার, দুই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রধান, সিনিয়র রেসিডেন্ট ডাক্তার এবং ছয়জন জুনিয়র ডাক্তারকে সাসপেন্ড করা হয়।
মমতা ব্যানার্জী জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দফতরের অভিযোগকে এফআইআর হিসাবে মান্যতা দিয়ে এই চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করা হবে। সিআইডি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “চিকিৎসা শাস্ত্রে যারা জয়েন করেছেন তাদের (কাছে) সেবাটা মূল কাজ। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা। চিকিৎসা এক মিনিটও ওয়েট করে না কারও জন্য। সিজার করেন সিনিয়র ডাক্তারা। এত স্টাফ, এত নতুন নতুন বিল্ডিং, এত টাকা বাড়ানো হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজ বাড়ানো হয়েছে…রোগী যাতে পরিষেবা পায় সেটা দেখতে হবে।”
চিকিৎসকদের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকারের একটি পলিসি আছে। সিনিয়র চিকিৎসকদের ৮ ঘণ্টা ডিউটি করার কথা। সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং পরিষেবা দিতে হবে।”
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ
মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় একাধিক চিকিৎসক সংগঠনকে।
জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর থেকে বরখাস্তের আদেশ তুলে নেওয়ার দাবিতে পূর্ণ কর্মবিরতির কথা ঘোষণা করেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা।
চিকিৎসকদের পাল্টা দাবি, যে স্যালাইন ও ওষুধ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সে বিষয়ে আগেই স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের তরফে ড. অনিকেত মাহাত বিবিসি বাংলাকে বলেন, “সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করতেই পারেন। কিন্তু প্রধান প্রশ্ন হলো প্রসূতি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী? সবার আগে এটা খুঁজে বের করা দরকার।”
“২০১৫ সালে একজন চিকিৎসক চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন আরএল থেকে সমস্যা হচ্ছে। তারপরও কেন তা ব্যবহার করা হয়েছে সেটা নিয়ে তদন্ত হোক।”
তার অভিযোগ, বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা স্যালাইন ও ওষুধের ব্যবহারের কারণে এর আগেও প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
“২০২২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে আরএল এবং কিছু ওষুধ ব্যবহারের পর প্রসূতিদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে একই প্যাটার্ন লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সেটা কেন হয়েছিল? আর পিজিটিরা কী দোষ করল, তারা তো ট্রেইনি। আসলে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অব্যবস্থা ঢাকতে কিছু জুনিয়র চিকিৎসককে নিশানা করা হচ্ছে।”
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত ড. সোহম পালের অভিযোগ, ওই হাসপাতালের ছয়জন জুনিয়র চিকিৎসককে ‘বলির পাঁঠা’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তার কথায়, “প্রসূতি মৃত্যুর দায় যে জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপরও চাপানো হচ্ছে, সেটা লজ্জাজনক। বিষয়টা নিয়ে ভালোভাবে তদন্ত হোক। আরএল নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তারও তদন্ত হোক। এরপর সিদ্ধান্ত নিক। তড়িঘড়ি এই জুনিয়র ডাক্তারদের সাসপেন্ড করার বিষয় নিয়ে আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
প্রসঙ্গত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন হয়েছিল, সেই সময় থেকেই ডাক্তারদের একাংশের সঙ্গে রাজ্য সরকারের ‘সংঘাত’ বাঁধে।
আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা পুলিশ ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরব হন।
সরকারি কলেজে কর্তব্যরত জুনিয়র চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা, তথ্য গোপন, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি, পরিকাঠামোর অবনতির অভিযোগ তোলেন তারা।
সেই সময় আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কর্মবিরতি তুলে নিয়ে কাজে যোগ দেওয়ানোর বিষয়ে রাজি করাতে ‘বেগ পেতে’ হয়েছিল রাজ্যকে। মুখ্যমন্ত্রীকেও একাধিকবার মধ্যস্থতা করতে হয়।
এদিকে আরজি কর মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা শনিবার। তার আগে মেদিনীপুরের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে আবার সংঘাতের বাঁধছে কি না সে বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
‘অভিযোগ’ আগেও ছিল
সরকারি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে গাফিলতি এবং হাসপাতালে পরিষেবা না দিয়ে প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে মুখ্যমন্ত্রীসহ প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় অনেকেই এই বিষয়ে সোচ্চারও হয়েছেন।
দায়িত্বে ‘অবহেলা’ করে বেসরকারি হাসপাতালে প্র্যাক্টিসসহ একাধিক অনিয়ম রুখতে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও অতীতে দিতে দেখা গিয়েছিল রাজ্য সরকারকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতার এক সরকারি মেডিক্যেল কলেজ থেকে সদ্য পাশ হওয়া চিকিৎসক বলেছেন, “জুনিয়র ডাক্তারদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে তো হাসপাতালের সিংহভাগ কাজ চলে। সিনিয়র ডাক্তাররা ক’বার রাউন্ডে আসেন? এখানেও জুনিয়র চিকিৎসকরাই সমস্যায় পড়েছে।”
একই অভিযোগ শোনা গেছে রোগীর পরিবারের সদস্যদের দিক থেকেও।
“বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পসরা বাড়াতে ব্যস্ত থাকেন ডাক্তাররা। সরকারি হাসপাতালে রোগীদের দেখার সময় কোথায় তাদের?” প্রশ্ন তুলেছেন পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর এক স্বজন।
শুধু তাই নয়, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহার নিয়েও অভিযোগ নতুন নয়। সেই বিষয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও।
চিকিৎসকরা কী বলছেন?
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় নিজের ‘দায় এড়াতে’ জুনিয়র চিকিৎসকদের নিশানা করা হচ্ছে বলে মনে করেন চিকিৎসকদের অনেকে।
ড. অনিকেত মাহাত বিবিসি বাংলাকে বলেন, “যদি চিকিৎসকদের গাফিলতিই হয় তাহলে মামনি রুইদাসের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে সার্জিকাল প্রসিডিওরে কোনো ত্রুটির কথা উল্লেখ নেই কেন। সেখানে লেখা রয়েছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ। সেটা কোনো অ্যালাৰ্জিক অ্যান্টিবডি রিঅ্যাকশন থেকে হয়েছে। “
“আরএল-এর কারণে প্রসূতির মৃত্যু নতুন ঘটনা নয়। আমরা চিকিৎসকরা এটা প্রত্যক্ষ করেছি। আর যদি সাম্প্রতিক ঘটনা ডাক্তারদের গাফিলতিতেই হয় তাহলে গত কয়েক বছরে যে প্রসূতি মৃত্যু দেখা গিয়েছে সেটা কেন? আরএল ব্যবহারের পর এই একই প্যাটার্নে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে,” যুক্ত করেন তিনি।
জুনিয়র চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করছেন তারা। ড. মাহাত বলেছেন, “পিজিটিদের কী দোষ ছিল? তারা তো ট্রেইনি, তারা তো সিনিয়রদের বলতে পারে না যে আপনারা থাকুন। সেটা দেখার দায়িত্ব তো কর্তৃপক্ষের। সেটা তারা করেনি কেন? এখন দোষ দেওয়া হচ্ছে জুনিয়র চিকিৎসকদের।”
ড. সোহম পাল জানিয়েছেন, রোগীদের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা অটুট রয়েছে।
তার কথায়, “জুনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যে কর্তব্যে গাফিলতির কথা বলা হয়েছে, কিন্তু আমরা পূর্ণ কর্মবিরতির কথা ঘোষণা করেও পিছিয়ে এসে আংশিকভাবে পালন করছি। তার একটাই কারণ, রোগীদের পরিষেবা। আমরা জরুরি পরিষেবা বন্ধ করিনি।”
সংঘাতের সূত্রপাত?
সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে চিকিৎসক সমাজ ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংঘাতের আবহ তৈরি হচ্ছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আন্দোলনের অন্যতম মুখ আসফাকুল্লা নাইয়াকে শোকজ় করেছে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, পিজিটি (পোস্ট গ্যাজুয়েট ট্রেনি) হয়েও ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করেছেন তিনি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে তার কাকদ্বীপের বাড়িতে হানা দেয় বিধাননগর পুলিশ।
ড. আসফাকুল্লা বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ”ভয় দেখানোর জন্যই এ সব করা হচ্ছে। প্রথমে সই-তারিখ ছাড়া রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের নোটিস। এর পর বাড়িতে পুলিশের তল্লাশি।”
তবে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রাজ্য যে কড়া অবস্থান নিতে চলেছে তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগে থেকেই। একাধিকবার তাকে উল্লেখ করতে শোনা গিয়েছিল সেই সমস্ত চিকিৎসকদের বিষয়ে যারা সরকারি হাসপাতালে ‘দায়িত্ব এড়িয়ে’ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করছেন। গত বছর অক্টোবর মাসে বৈঠকেও কড়া অবস্থান নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে আরজি কর আন্দোলনের সময় জুনিয়র ডাক্তাররা যে দুর্নীতি, হুমকি, অব্যবস্থার মতো অভিযোগ তুলেছিলেন, সেগুলো সঠিক। আর সেগুলো প্রকাশ্যে চলে আসছে বলে তড়িঘড়ি জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়া হলো।”
“শুধু এটা নয়, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটনাবলীর দিকে নজর দিলেই বোঝা যাবে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি প্রতিশোধ নিতে তাদের সাসপেন্ড করা হয়েছে। ওই স্যালাইন বা ওষুধ তো জুনিয়র ডাক্তাররা কেনেনি।”
চিকিৎসক সৌরিন ঘোষ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ছিলেন। বর্তমানে তিনি আরজি কর হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট। তার কথায়, “পুরো বিষয়টাই কিন্তু খুব লজ্জাজনক। সার্জারির সময় সিনিয়রদের থাকার কথা। সিনিয়র চিকিৎসকরা যদি না থাকেন তাহলে তারা কী করবে?”
আরজি করের ঘটনায় আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কড়া মনোভাবের কারণেই রাজ্য সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কেউ এটা ভাবলে ভুল নাও হতে পারে– এমনটা জানিয়ে ড. পাল বলেন, “সরাসরি বলা সম্ভব নয়। তবে শুভবুদ্ধি ও বিবেচনা সম্পন্ন মানুষেরা ঠিক এটাই মনে করবেন।”