Source : BBC NEWS

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির লোগো

এক ঘন্টা আগে

এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করলেও দাবি আদায় হওয়ার পরপরই প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এই দুটি দল হঠাৎ কেন এই দ্বন্দ্বে জড়ালো সেই প্রশ্নও সামনে আসছে।

সম্প্রতি এই দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্য হয়ে ওঠে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের দুইটি স্ট্যাটাস ঘিরে।

ওই দুইটি স্ট্যাটাসের মধ্যে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে সেটি ‘সরিয়ে ফেললেও’ অনলাইনে তার স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। ।

উপদেষ্টা মাহফুজের পোস্টের পর এ নিয়ে এনসিপি ও তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতাদের অনেককে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিতে দেখা গেছে।

একই সাথে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কর্মসূচিতে গোলাম আযমের নামে স্লোগান দেওয়া নিয়ে সমালোচনা করতেও দেখা গেছে।

একই মঞ্চে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করা দুটি দল হঠাৎ কেন প্রকাশ্যে বিরোধে জড়ালো; কিংবা এটি বিরোধ নাকি রাজনৈতিক কোনো কৌশল সেই সব প্রশ্ন উঠেছে।

এ নিয়ে আরো পড়তে পারেন
শুক্রবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে এনসিপি-শিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অবস্থান

ঘটনাটি শুরু হলো যেভাবে

গত বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয় প্রধান উপদেষ্টার বাস ভবনের সামনে।

ওই রাতেই একে একে আন্দোলনে যুক্ত হয় ছাত্র শিবির, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠন।

আন্দোলনের পরিসর রাতেই বড় হলে গভীর রাতে যোগ দেয় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ দলটির শীর্ষ নেতারা।

এই কর্মসূচিতে জনসমাগম বাড়তে শুরু করলে পরদিন শুক্রবার বিকেলে অবস্থান কর্মসূচির স্থান পরিবর্তন করে শাহবাগে নিয়ে যাওয়া হয়।

এনসিপির একজন শীর্ষ নেতা বিবিসি বাংলাকে জানান, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জমায়েত কর্মসূচি শাহবাগে স্থানান্তর হওয়ার পর সেখানে ইসলামী ছাত্র শিবির, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কিছু সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বেশি ছিল।

এনসিপির ওই নেতা জানান, শাহবাগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমসহ বেশ কয়েকজন নেতার নাম ধরে বিতর্কিত কিছু স্লোগান ও জাতীয় সংগীত গাওয়ার সময় বাঁধা দেয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে সেই বিষয়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।

যেহেতু এই আন্দোলনটি এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহর নেতৃত্বেই শুরু হয়েছিল। ওইসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সমালোচিত হয়।

এনসিপির কেন্দ্রীয় একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এনসিপি মধ্যপন্থার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু যখন অন্য কোন সংগঠনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের দায় এসে এনসিপির ওপর পড়ে তখন সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়”।

এ নিয়ে এনসিপির নেতাকর্মীদের অনেকেই এক ধরনের সংকটের মধ্যেও পড়ে।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “গণতন্ত্রে মত পার্থক্য থাকবে, কিন্তু সেগুলো কোনভাবেই দেশের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর না হয় সেটা নিশ্চিত করাটা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্তব্য”।

তিনি বলেন, “একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী বয়ান থেকে যেমন নিস্তার চাই, একই সাথে সেই সময়ের জামায়াতের নেতৃবৃন্দ ও দলগতভাবে জামায়াতের যে অবস্থান সেটার স্পষ্টও ব্যাখ্যা আমরা চাই”।

ফেসবুকে মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাস

মাহফুজের স্ট্যাটাস ঘিরে আলোচনা-বিতর্ক

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে টানা আন্দোলনের মুখে শনিবার রাতেই জরুরি বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

বৈঠকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের কথা জানানো হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তার নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাস দেন।

সেখানে তিনি লিখেন, “৭১র প্রশ্ন মীমাংসা করতেই হবে। যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। পাকিস্তান এ দেশে গণহত্যা চালিয়েছে। সহযোগীদের ইনিয়ে বিনিয়ে গণহত্যার পক্ষে বয়ান উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। জুলাইয়ের শক্তির মধ্যে ঢুকে স্যাবোটাজ করা বন্ধ করতে হবে। সাফ দিলে আসতে হবে”।

একই স্ট্যাটাসে আরেকটি প্রসঙ্গ টেনে লিখেন, “মুজিববাদী বামদের ক্ষমা নেই। লীগের গুম-খুন আর শাপলায় মোদিবিরোধী আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞের মস্তিষ্ক এরা। এরা থার্টিসিক্সথ ডিভিশন। জুলাইয়ের সময়ে এরা নিকৃষ্ট দালালি করেও এখন বহাল তবিয়তে আছে। আজ পর্যন্ত মুজিববাদী বামেরা কালচারালি ও ইন্টেলেকচুয়ালি জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি করে যাচ্ছে। দেশে বসে জুলাইয়ের পক্ষের শক্তির বিরুদ্ধে এরা চক্রান্ত করেই যাচ্ছে। লীগের এসব বি-টিমও শিগগিরই পরাজিত হবে। অন্য কারও কাঁধে ভর করে লাভ নেই।’

মূলত মাহফুজের ওই স্ট্যাটাস ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়।

এ নিয়ে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের অনেককেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলমকে জড়িয়ে নেতিবাচক পোস্ট করতে দেখা যায়।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা মনে করি যে রাজনৈতিক শুদ্ধিতার আলাপ যিনি দিয়েছেন, একাত্তর প্রশ্নে সেই প্রশ্নের আসলেই মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন”।

“আওয়ামী লীগ একাত্তেরর চেতনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে এবং জামাতের একাত্তরের যে ভূমিকা, জামায়াতও তাদের রাজনৈতিক অবস্থানকে ধোঁয়াশার মধ্যে রেখেছেন। এ কারণে একাত্তর ইস্যু বারবার ঘুরে ফিরে আসে”, যোগ করেন তিনি।

এরপরদিন মাহফুজ আলম আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়ে লেখেন, “আমাকে নিয়ে নোংরামি করতেসো, ঝামেলা নাই। ফ্যামিলি টাইনো না, যুদ্ধাপরাধের সহযোগী রাজাকারেরা। এটা লাস্ট ওয়ার্নিং। আর যে চুপা শিবিররা এ সরকারে পদ বাগাইসো আর বিভিন্ন সুশীল ব্যানার খুলে পাকিস্তানপন্থা জারি রাখসো, তোমারা তোমাদের পূর্বপুরুষ রাজাকার আর দালালদের তুলনায় আরো বেশি ভুগবা”।

এই পোস্ট দেয়ার কিছুক্ষণ পরে অবশ্য স্ট্যাটাসটি নিজের ফেসবুক থেকে সরিয়ে ফেলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তবে স্ট্যাটাসের স্কিনশট দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায়।

এসব বিষয় নিয়ে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে উপদেষ্টা মি. আলমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি।

শাহবাগে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এনসিপি-শিবিরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ

ছবির উৎস, MOMINUL ISLAM MOMIN

ক্ষুব্ধ জামায়াত-শিবির

জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি গঠনের পর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে জামায়াত শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে অনেককেই সমালোচনা করতে দেখা গেছে।

যদিও গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের এই সংগঠনটি বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছিল।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে হাসনাত আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার যে অবস্থান কর্মসূচিতে ডাক দিয়েছিল সেখানে জামায়াত শিবিরের অনেক নেতাকর্মীকেই অংশ নিতে দেখা যায়।

একই মঞ্চে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সফলতা আসার পর কেন হঠাৎ জামায়াত শিবিরকে ইঙ্গিত করে এই ধরনের পোস্ট দিয়েছে মাহফুজ আলম, সেটি নিয়েও প্রশ্ন জামায়াত ও শিবিরের শীর্ষ নেতাদেরও।

শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে হাসনাত আব্দুল্লাহ অগ্রসর ভূমিকা পালন করছে। হাসনাত প্রশংসায় ভাসছে। সেখান থেকে দৃষ্টি তার (মাহফুজ আলম) দিকে ফেরাতে হয়তো এমনভাবে লিখেছে। সে জানে এতে বিতর্ক তৈরি হবে, ইন্টেনশনালি সেইদিকে ইন্ডিকেট করছে”।

“অনলাইনে সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য করা হচ্ছে। এই জাতীয় কর্মকাণ্ডগুলো বিগত আওয়ামী লীগ সরকার করেছে”, যোগ করেন তিনি।

শাহবাগে গোলাম আযমকে নিয়ে শ্লোগান কিংবা জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধার বিষয়গুলো নিয়েও শিবির সেক্রেটারিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “ফেসবুকে স্ট্যাটাস না দিয়ে যারা জাতীয় সংগীতে বাধা দিয়েছে বা অন্য বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করেছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত ছিল”।

দলটির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বিবিসি বাংলার কাছে প্রশ্ন রাখেন একজন উপদেষ্টা কী একটি রাজনৈতিক দলকে উদ্দেশ্য করে এই কথা বলেছেন সেটা কী তিনি বলতে পারেন?

তিনি বলেন, “তিনি (মাহফুজ) উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়ে রাগ বিরাগের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি। এটা তার শপথের সাথে সাংঘর্ষিক। কেউ যদি রাজনীতি করতে চায় তার উপদেষ্টা পদ থেকে সরে এসে রাজনীতি করা উচিত”।

এ নিয়ে জামায়াত ও শিবির নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠকও করেছে। সেখানে কেউ কেউ মাহফুজ আলমের পদত্যাগের দাবিও তুলেছেন।

যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দাবি তুলবে কী-না সেই সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয় নি বলে জামায়াত ও শিবিরের নেতারা জানান।

এর আগে গত মার্চে জামায়াত নিয়ে মাহফুজ আলমের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে নানা বিতর্ক দেখা গেছে। সে সময় জামায়াত নিন্দা জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছিল।

আরও পড়তে পারেন
নাগরিক পার্টির সচিব আখতার হোসেন

অস্বস্তিতে নাগরিক পার্টিও

জুলাই অগাস্টের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি দলটি গঠনের পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্র শিবিরের সাথে এক ধরনের রাজনৈতিক মিত্রতাও ছিল।

আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের দাবিতে একসাথে আন্দোলনও করেছে জামায়াত শিবির। এছাড়াও শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এই দুটি রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের মিত্রতাও ছিল।

শনিবার জামায়াত ইস্যু ঘিরে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাস ঘিরে দল দুটির মধ্যে এক ধরনের টানাপড়েনও তৈরি হয়।

এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ কেউ জামায়াত ইস্যুতে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের স্ট্যাটাস ঘিরে যে সমালোচনা তৈরি হয়েছে তা নিয়ে অস্বস্তির কথাও বিবিসি বাংলাকে বলেছেন।

সোমবার এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ তার ভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্টে লিখেন, “এমন বিভাজন আর বিভক্তি কারো জন্যেই কল্যাণ বয়ে আনবে না। ফেসবুকে পোস্টিয়ে যে বিভক্তি কিংবা বিভাজনকে আপনারা উস্কে দিচ্ছেন, এর পরিণতি পুরো জাতিকেই ভোগাবে। শুধুই বলবো আপনারা ফাঁদে পড়েছেন, অথবা অজান্তে নিজেরাই নিজেদের জন্যে ফাঁদ তৈরি করছেন”।

এনসিপির পক্ষ থেকে সোমবার একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। সেখানে জামায়াত ইসলামীর নাম অন্তর্ভুক্ত না হলেও মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যারা ১৯৭১ সালে এই জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, আমরা চাই তারা নিজেদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান জাতির সামনে ব্যাখ্যা করে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করবে এবং চব্বিশের অভ্যুত্থানের জনআকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নে সহযোগী হবে।’

এনসিপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপদেষ্টা পরিষদে থাকলেও দলের নেতাদের ওপর মাহফুজ আলমের প্রভাব রয়েছে।

যে কারণে তার ওই ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতিও দেয়া হয়েছে।

দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “জুলাইতে আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদ বিরোধী সবার মধ্যে যে ঐক্য হয়েছিল সেই ঐক্য চলমান অবস্থাতেই আছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার নিজস্ব মতাদর্শ, নিজস্ব রাজনীতি ও মত ভিন্নতা সেটা গণতন্ত্রের চর্চার জন্য সুস্থভাবে যদি হয় তাহলে সেটাকে সাধুবাদ জানানো উচিত”।

তবে, এটিও বলেছেন যে, এর অর্থ এই নয় যে সকল রাজনৈতিক বিতর্ক ও প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দলকে একই সুরে কথা বলতে হবে।

গণ আন্দোলনের মুখে গত বছরের অগাস্ট মাসে পতন ঘটে হাসিনা সরকারের

ছবির উৎস, Getty Images

রাজনৈতিক কৌশল নাকি দ্বন্দ্ব

গত বছরের জুলাই অগাস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অংশ হন ছাত্র প্রতিনিধিরাও।

প্রথমে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও পরবর্তীতে গত ফেব্রুয়ারি নাগরিক পার্টি বা এনসিপি নামে রাজনৈতিক দল হিসেবে যাত্রা শুরু করে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।

দল গঠনের পর থেকেই কয়েকজন নেতার নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ঘিরে শুরুতে কিছু সমালোচনা তৈরিও হয়।

বিএনপির সাথে এনসিপির অনেকটা প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব দেখা গেছে গত তিন মাসে। তবে বিভিন্ন ইস্যুতে এনসিপি ও জামায়াত-শিবিরের সাথে রাজনৈতিক মিত্রতাও ছিল।

এমনকি এনসিপি নেতাদের ডাকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শিবিরের নেতাকর্মীরা ছিল। নিষিদ্ধের ঘোষণার পরপরই হঠাৎ দ্বন্দ্ব কতটা স্বাভাবিক?

এই প্রশ্নে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুটি ব্যাখা দিচ্ছেন। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন সফল। সেটির কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব হতে পারে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে এটা একটি কৌশলও হতে পারে।

বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনের কর্তৃত্ব নিয়ে জামায়াত শিবির ও এনসিপির মধ্যে রশি টানাটানি ছিল। সেখানে দুই দলের থেকে কিছু মতপার্থক্য হয়েছে”।

মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুতে দুই দলের অবস্থানগত কারণে এই দ্বন্দ্ব হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

তবে তিনি এটিও বলছেন যে, জুলাই অগাস্টের আন্দোলন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল গঠনে এনসিপির সাথে জামায়াত-শিবিরের একটি সখ্যতা ছিল। সেই দিক বিবেচনায় এটি কৌশলের অংশ কী-না সেই প্রশ্নও করেছেন মি. আহমদ।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, “বিএনপির সাথে এক ধরনের রাজনৈতিক বিরোধ রয়েছে এনসিপির। সেখান থেকে জামায়াতের সাথে এক ধরনের সখ্যতা রয়েছে দলটির। সেদিক বিবেচনায় আপাত দৃষ্টিতে এটিকে দ্বন্দ্ব মনে হলেও হতে পারে এটি কৌশলগত পাতানো খেলা”।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, সামনের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধ ও রাজাকার ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামীর সাথে এনসিপির দূরত্ব প্রকাশের একটি চেষ্টা হতে পারে।

শেষপর্যন্ত এই বিরোধের ফলাফল কি দাঁড়াবে, এটি কি আরো বিস্তৃত হবে নাকি সামনে আবার কোনো ইস্যুতে দুই দলকে একই ছাতার তলে দেখা যাবে, সেটা দেখার জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।