Source : BBC NEWS

টিকটক ইউজাররা একটা বড় সংখ্যায় রেডনোট অ্যাপে যোগ দিয়েছেন।

ছবির উৎস, Getty Images

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টিকটক ব্যবহারকারীরা এখন রেডনোট নামে অন্য একটি চীনা অ্যাপের দিকে ঝুঁকেছেন। নিজেদের ‘টিকটক রিফিউজি’ বলে পরিচয় দেওয়া ওই ইউজাররা ব্যাপক পরিমাণে রেডনোট ডাউনলোড করেছেন।

এর ফলে সোমবার অ্যাপলের মার্কিন অ্যাপ স্টোরে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপের তালিকায় চলে এসেছে রেডনোট।

চীন, তাইওয়ান এবং অন্যান্য ম্যান্ডারিন-ভাষী জনগোষ্ঠীর তরুণদের কাছে আগে থেকেই জনপ্রিয় এই অ্যাপ কিন্তু টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বী।

বলা যেতে পারে টিকটক আর ইনস্টাগ্রামের মিশেল হলো রেডনোট। এর ইউজার সংখ্যা মাসে প্রায় ৩০ কোটি।

এই অ্যাপের মাধ্যমে এর ব্যবহারকারীরা, মূলত শহর-কেন্দ্রিক তরুণীরা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ আদানপ্রদান করে থাকেন – তা সে প্রেম সম্পর্কিত বিষয়ই হোক বা ফ্যাশন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে টিকটকের উপর একটা মামলা চলছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নকক্ষ পরিষদ ‘হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস’-এ টিকটকের বিরুদ্ধে বিল পাশ করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে, হয় টিকটককে যুক্তরাষ্ট্রে সঞ্চালনার জন্য ওই প্ল্যাটফর্ম বিক্রি করতে হবে বা মার্কিন দেশে ওই অ্যাপের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। এর জন্য টিকটককে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

এই বিলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে টিকটক। শীঘ্রই এই মামলায় রায় জানাবেন সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা।

অন্যদিকে, টিকটকের তরফে বারবার জানানো হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের যে ব্যবসা রয়েছে সেটা কোনও মতেই ওই দেশের কাছে তারা বিক্রি করবে না।

তাদের আইনজীবীরা মার্কিন সরকাররা সতর্ক করে পাল্টা জানিয়েছেন যে টিকটকের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তা যুক্তরাষ্ট্রে ওই প্ল্যাটফর্মের যে ১৭ কোটি ইউজার রয়েছে তাদের বাকস্বাধীনতার সুরক্ষার লঙ্ঘন করা হবে।

বিবিসি বাংলায় অন্যান্য খবর
১৫ জানুয়ারিও রেডনোট সর্বাধিক ডাউনলোড করা অ্যাপের তালিকায় রয়েছে।

ছবির উৎস, Getty Images

এই সমস্ত কিছুর মাঝে নতুন ইউজারদের স্বাগত জানিয়েছে রেডনোট।

“টিকটক রিফিউজি”দের বিষয়ে ইতিমধ্যে ৬৩হাজার পোস্ট আছে। সেখানে নতুন ইউজারদের শেখানো হয়েছে কীভাবে রেডনোট ব্যবহার করতে হয়। পাশাপাশি শেখানো হয়েছে কীভাবে প্রচলিত চীনা বাক্যাংশের ব্যবহার করতে হয়।

একজন মার্কিন ইউজার লিখেছেন, “চীনা হোস্টদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমাদের গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ। বিশৃঙ্খলার জন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করছি।”

তবে টিকটকের মতো রেডনোটের ক্ষেত্রেও ‘কণ্ঠস্বর রোধের’ অভিযোগ রয়েছে। ওই প্ল্যাটফর্মে চীনা সরকারের সমালোচনা হলে সেখানে ‘সেন্সরশিপ’ আরোপ করা হয় বলে জানা গিয়েছে।

চীনা সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকির কারণে তাইওয়ানের সরকারি কর্মকর্তাদের রেডনোট ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আরও বেশি পরিমাণে মার্কিন ইউজাররা রেডনোট প্ল্যাটফর্মে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন চীনা ইউজার মজা করে নিজেদেরকে ‘চীনা গুপ্তচর’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

তাদের ইঙ্গিত মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্বেগের দিকে, যেখানে বলা হয়েছিল চীন গুপ্তচরবৃত্তি এবং পলিটিক্যাল ম্যানিপুলেশন (রাজনৈতিক দিক থেকে নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করার জন্য নিয়ন্ত্রণ করা)-এর সরঞ্জাম হিসাবে টিকটককে ব্যবহার করা হতে পারে।

রেডনোটের চীনা নাম ‘শিয়াওহংশু’। এর অনুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘লিটল রেড বুক’।

কিন্তু এই অ্যাপের দাবি চীনা কমিউনিস্ট নেতা মাও সে তুং-য়ের বিখ্যাত বইয়ের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।

সরকারের তরফে টিকটকের বিষয়ে একাধিক উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

ছবির উৎস, Getty Images

তবে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ কিন্তু ইউজারদের রেডনোট ব্যবহার করা থেকে আটকাতে পারেনি।

বছর ৩৭-এর সারাহ ফদারিংহাম যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ-র একটা স্কুলের ক্যান্টিনে কাজ করেন। তার মতে রেডনোট অ্যাপের দিকে ঝোঁকার বিষয়টা মার্কিন সরকারকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখানোর মতো।

রেডনোটের মাধ্যমে বিবিসিকে পাঠানো বার্তায় মিজ ফদারিংহাম বলেছেন, “আমি একজন সাধারণ মানুষ, সাধারণ জীবনযাপন করছি।”

“আমার কাছে এমন কিছু নেই যা চীনে নেই। আর তারা যদি আমার ডেটা নিতে এটাই আগ্রহী হয়ে থাকে, তাহলে সেটা তারা নিতে পারে।”

ভার্জিনিয়ার ফ্যাশন ডিজাইনার মার্কাস রবিনসন সপ্তাহান্তে নিজের রেডনোট অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছেন।

তার তৈরি পোশাকের ব্র্যান্ডের বিষয়ে শেয়ার করতে এবং “অন্যান্যদের চাইতে এগিয়ে থাকতেই” এই অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছেন তিনি।

বিবিসিকে তিনি জানিয়েছেন অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে গিয়ে সেখানে, ম্যান্ডারিন ভাষায় লেখা রেডনোট ব্যবহারের শর্তাবলী মেনে নেওয়ার সময় ‘কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত’ ছিলেন তিনি।

তার কথায়, “আমি আসলে লেখা পড়তে পারছিলাম না এবং সেই কারণে একটু চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু শেষপর্যন্ত আমি এটা ব্যবহার করছি।”

তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে টিকটক যে সেই মুহূর্তে অদৃশ্য হয়ে যাবে, তেমনটা নয়।

অ্যাপ স্টোরগুলোকে টিকটক সরবরাহ করা বন্ধ করতে হবে। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই অ্যাপ আর পাওয়া যাবে না। তবে কোনওক্রমে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে গেলেও ইউজাররা বিকল্প প্ল্যাটফর্মে যোগ দেওয়ার ফলে টিকটকের অবস্থা ‘অসহায়’ হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

টিকটকের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন ইউজাররা।

ছবির উৎস, Getty Images

আরও পড়তে পারেন

কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইউজার বিবিসিকে জানিয়েছেন যে তারা টিকটকের তুলনায় রেডনোটে বেশি পরিমাণে ‘স্ক্রোল’ করেন।

টেনেসির প্রযুক্তিকর্মী সিডনি ক্রাওলি বিবিসিকে বলেছেন, “টিকটক থেকে গেলেও আমি রেডনোট প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা জারি রাখব।”

মিজ ক্রাওলি জানিয়েছেন রেডনোট-এ অ্যাকাউন্ট তৈরির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি ছয় হাজারের বেশি ফলোয়ার পেয়েছেন।

“আমি সেখানে আমার ফলোয়ার তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাব এবং লক্ষ্য রাখব যে এটা আমাকে কী ধরনের নতুন সংযোগ, বন্ধুত্ব বা সুযোগ এনে দিতে পারে।”

ক্যান্টিন কর্মী মিস ফদারিংহামও রেডনোট ব্যবহারের বিষয়ে বেশ উৎসাহী।

তিনি বলেন, “রেডনোট চীন এবং সেখানকার মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমার পৃথিবীকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।”

“আমি এখন এমন অনেক কিছুই দেখতে পাচ্ছি, যা আগে কখনও পাইনি। চীনের সাধারণ লোকজন, তাদের সংস্কৃতি, জীবন, স্কুল – এই সবকিছু সম্পর্কে জানতে পেরে বেশ ভাল লেগেছে।”

ডিজাইনার মি. রবিনসন বলেছেন, রেডনোটের কমিউনিটি তাকে উষ্ণতার সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছে।

তার কথায়, “এখনও পর্যন্ত রেডনোট ব্যবহার করতে বেশ ভালই লাগছে।। এখন শুধু আমায় ম্যান্ডারিন বলা শিখতে হবে!”