Source : BBC NEWS

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের প্রচ্ছদ

ছবির উৎস, SHAFIQUL ALAM/FACEBOOK

বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ডালপালা মেলেছে।

সামাজিক মাধ্যমে এর পক্ষে বিপক্ষে কথা বলছেন অনেকে।

বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে বলা হয়েছে- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

এগুলোর পরিবর্তে নতুন মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র’র কথা সুপারিশ করা হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বুধবার প্রতিবেদন দেয়ার পর কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান আদর্শ এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের যে জনআকাঙ্ক্ষা, তার প্রতিফলন হিসেবে আমরা রাষ্ট্রের পাঁচটি মূলনীতি সুপারিশ করছি।”

এরপর থেকে মূলনীতি সংক্রান্ত আলোচনা গতি পায়।

যদিও, সংসদের কলেবর ও সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতার রাশ টানতে ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ এর মতো কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব আনা হয়েছে যা শাসন কাঠামোকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বদলে দিতে পারে বলে দাবি কমিশনের।

মূলনীতিগুলোর মধ্যে বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল এবং বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টির পাশাপাশি ‘রাষ্ট্রধর্ম’ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে কৌতূহল প্রকাশ করেছেন।

ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করার কথাও বলছেন কেউ কেউ।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কারণে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ ধারণাটি আলোচিত হলেও সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবে এই বিষয়ে কোনো উল্লেখ কেন নেই, তা নিয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

বিবিসি বাংলার আরো খবর:
পাঁচই অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দখল নেয় আন্দোলনকারীরা

ছবির উৎস, BBC/MUKIMUL AHSAN

মূলনীতি নিয়ে প্রস্তাবনায় যা বলা হয়েছে

প্রস্তাবনার প্রথম অনুচ্ছেদটিকে ‘নাগরিকতন্ত্র’ নামে বর্ণনা করেছে সংবিধান সংস্কার কমিশন।

এর ক্রমতালিকার পাঁচ নম্বরে রাখা হয়েছে সংবিধানের মূলনীতি সংক্রান্ত দুটি ধারা।

প্রথমটিতে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্রকে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

দ্বিতীয় ধারায় বলা হয়েছে, “বাংলাদেশের সমাজের বহুত্ববাদী চরিত্রকে ধারণ করে এমন একটি বিধান সংবিধানে যুক্ত করা সমীচীন।”

সে কারণে, “বাংলাদেশ একটি বহুত্ববাদী, বহু-জাতি, বহু-ধর্মী, বহু-ভাষী ও বহু-সংস্কৃতির দেশ যেখানে সকল সম্প্রদায়ের সহাবস্থান ও যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে,” এই বিধান অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়েছে কমিশনের তরফে।

আর প্রস্তাবনার ‘রাষ্ট্রের মূলনীতি’ নামক অংশে বলা হয়েছে, “কমিশন সংবিধানের মূলনীতি এবং রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদ এবং এ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৮, ৯, ১০ ও ১২ অনুচ্ছেদগুলি বাদ দেয়ার সুপারিশ করছে।”

প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় সংবিধান সংস্কার কমিশন

ছবির উৎস, CA PRESS WING

প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতিগুলো রাষ্ট্র পরিচালনায় কতটা অনুসরণ করা হয় তা নিয়ে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন ওঠে।

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ৫৩ বছর ধরে ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে আছে কিন্তু এর তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই।

তবুও, মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার উপস্থিতি একটি ‘রক্ষাকবচ’ ও ‘শক্তি’ হিসেবে কাজ করে বলে অভিমত তার।

অন্যদিকে, ধর্মনিরপেক্ষতার তুলনায় বহুত্ববাদকে অনেক বড় ‘ক্যানভাস’ বলে মানছেন মি. দেবনাথ। কিন্তু, সেটিকে দেখছেন সংশয়ের চোখে।

“তবে মুখের কথা বললেই তো হবে না। যেদিন প্রস্তাবনা দিল, সেদিনই আদিবাসী সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। প্লুরালিজম কী হতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া গেলো। এই বহুত্ববাদ একটি আইওয়াশ (ধোঁকা),” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মি. দেবনাথ।

ধর্ম নিরপেক্ষতা বাতিলের প্রস্তাবের সমালোচনায় সামাজিক মাধ্যমেও সরব হয়েছেন অনেকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কাবেরী গায়েন রাষ্ট্রধর্ম বহাল রেখে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিলের সুপারিশকে সমালোচনা করে লেখেন, “ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দেয়া এই নয়া সংবিধান প্রত্যাখ্যান করলাম।”

অন্যদিকে, ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ যাওয়ার প্রস্তাব আসায় সন্তোষ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে অনেককে।

আরো পড়তে পারেন:
অধ্যাপক আলী রীয়াজ

সুপারিশের ব্যাপারে কমিশনের যুক্তি

বাংলাদেশের সংবিধান এ পর্যন্ত মোট ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে।

এর মধ্যে ১৯৭৯ সালে পঞ্চম সংশোধনীতে ১৯৭৭ সালের জিয়াউর রহমানের সামরিক আদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যাতে সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসকে’ রাষ্ট্রীয় ‘সকল কাজের ভিত্তি’ বলা হয়েছিল।

এছাড়া, সমাজতন্ত্রকে ব্যাখ্যা করা হয় ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার’ হিসেবে।

পরবর্তীতে ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আবার ধর্মনিরপেক্ষতাসহ মূলনীতিগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়।

২০২৪ সালে সরকার পতনের পর থেকে মূলনীতিসহ পুরো সংবিধানের সমালোচনা করে সংস্কারের দাবি জানাতে শুরু করেন অনেকে।

“এই মূলনীতিগুলো দিয়ে মুজিববাদ নামে একটি আদর্শ তৈরি করা হয়েছিল যার মাধ্যমে ব্যক্তিতান্ত্রিক শাসন ও স্বৈরতন্ত্র জন্ম নেয়,” বলছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ।

১৯৭২ সালের সংবিধানকে মুক্তিযুদ্ধের ফলশ্রুতি হিসেবে গণ্য করেন অনেকে।

অধ্যাপক রীয়াজ বলছেন, সেই সময়কার মূলনীতির জায়গায় তারা বরং সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে অনুসরণ করেছেন।

১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারি করা ঘোষণাপত্রে বলা হয়, “সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করছি।”

২০২৪ সালের ‘জনআকাঙ্ক্ষার’ প্রতিফলন ‘সাম্য’ ও ‘গণতন্ত্র’ মূলনীতি দুটির মধ্যে ঘটবে বলে দাবি মি. রীয়াজের।

“সাম্য শব্দটিই বৈষম্যহীনতার কথা বলে। আর, দীর্ঘদিন ধরে গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার একটি পুনর্জাগরণ ঘটেছে,” বলছিলেন তিনি।

আর, কেবল ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক পরিচয়ের নয় বাংলাদেশের সব বর্গের মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেই ‘বহুত্ববাদ’ বেছে নেয়া হয়েছে বলে দাবি তার।

২০১২ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে কক্সবাজারের রামুর ১২টি বৌদ্ধ বিহারে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ

ছবির উৎস, Getty Images

ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদ

ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া এবং বহুত্ববাদের সুপারিশের খবর প্রকাশের পর সামাজিক মাধ্যমে অনেকেই এই বিষয়গুলো নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করেছেন।

ধারণা দুটির মধ্যে সাদৃশ্য কিংবা ফারাক কোথায় তা নিয়েও কাউকে কাউকে প্রশ্ন করতে দেখা গেছে।

“বহুত্ববাদের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজমের চেয়ে বৃহত্তর মূল্যবোধ অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছি আমরা,” বলছিলেন সংস্কার কমিশন প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

“যেখানে দলিতদের জায়গা হবে, থার্ড জেন্ডার, এথনিক মাইনরিটি (জাতিগত সংখ্যালঘু), রিলিজিয়াস মাইনরিটি (ধর্মীয় সংখ্যালঘু) সবার জায়গা হবে। দলিত, থার্ড জেন্ডার থেকে শুরু করে সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি,” যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার অঙ্গীকার বহাল থাকা সত্ত্বেও ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের নির্যাতন বা তাদের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ নতুন নয়।

এমনকি বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনের আগে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীদের মনোনয়ন না দেয়ার জন্যও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি দাবি জানাতে দেখা গেছে।

“পরিসংখ্যান বলছে, ইতিহাস বলছে সেক্যুলারিজম সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে পারেনি,” বলছিলেন অধ্যাপক রীয়াজ; বরং বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় মাইনরিটি পারসিকিউশন (সংখ্যালঘু নিপীড়ন) হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ধর্মীয় সহনশীলতা ধ্বংস করে ফেলা হবে, কেউ কেউ এমন একটা বার্তা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

যোগ করেন, “বরং, অপেক্ষাকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক করার চেষ্টা করছি আমরা।”

বহুত্ববাদের মধ্যে পরিচয়গত বৈচিত্রগুলোকে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনার আহ্বানও জানান তিনি।

আরো পড়তে পারেন:

রাষ্ট্রধর্ম প্রসঙ্গ

১৯৮৮ সালে ইসলামকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ করে বাংলাদেশের সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী আনা হয়েছিল।

প্রবর্তনের সময় প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির উভয়েই এর বিরোধিতা করেছিল। কিন্তু পরে কোনো দলই আর এর পরিবর্তন করেনি।

ইস্যুটিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রমশ স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে।

২০১১ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় পঞ্চদশ সংশোধনীতে অন্যান্য ধর্মের সমঅধিকারের কথা বলা হলেও ইসলামকেই রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহাল রাখা হয়।

ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম একসঙ্গে থাকতে পারে কি না তা নিয়ে বিতর্কও হয়েছে বিস্তর।

বহুত্ববাদকে প্রাধান্য দেয়া প্রস্তাবের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রধর্মের বিষয়টি নিয়ে সংস্কার কমিশনে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, তারা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে আলোচনা করেছেন।

“কিন্তু, ১৯৮৮ সালের পর রাষ্ট্রধর্মের বিষয়ে ব্যাপক বিরোধিতা কখনোই দেখা যায়নি। আমরা যেসব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছি তাদের প্রায় কেউই এ বিষয়ে কোনো আপত্তি জানায়নি,” বলছিলেন অধ্যাপক রীয়াজ।

“হাজার হাজার লোক বলছে এটা রাখতে হবে। অর্থাৎ এর পক্ষে জনমত আছে। আমরা এই ফ্যাক্টগুলো বিবেচনায় নিয়েছি,” যোগ করেন তিনি।

রাষ্ট্রধর্ম স্পর্শকাতর বিষয় বলে কোনো ভীতি বা চাপ বোধ করেছেন কি না এমন প্রশ্নে কমিশনের প্রধান বলেন, “কোনোরকম ভীতি নিয়ে কাজ করিনি। আমার কোনো শঙ্কা নেই।”

“আমাদের কারো কোনো ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক

সংবিধান বিশেষজ্ঞের মন্তব্য

সংবিধান সংস্কার কমিশনের নেতৃত্বে প্রথমে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করেছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু, এ ব্যাপারে মি. মালিকের পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা দেখা না যাওয়ায় তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়।

পরবর্তীতে অধ্যাপক আলী রীয়াজকে প্রধান করে কমিশনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা নাম ঘোষণার আগে বিবিসি বাংলাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই ইস্যুতে শাহদীন মালিক বলেছিলেন, “বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে যা যা দরকার তা বর্তমান সংবিধানেই আছে। বিদ্যমান সংবিধান দিয়েই চাইলেই সংকটের সমাধান সম্ভব।”

তিন মাসের মেয়াদ শেষে সংস্কার কমিশন প্রস্তাব জমা দেয়ার পর শাহদীন মালিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, প্রস্তাবনাকে আলোচনা শুরুর ‘পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন তিনি।

“আমি দেখছি একটা খসড়া প্রস্তাবনা হিসেবে। ওনারা কিছু সুপারিশ করেছেন। এটা নিয়ে আলোচনা হবে, রাজনৈতিক দল কথা বলবে, আমরাও কথা বলবো। শেষে গিয়ে এটা সংসদে পাশ করতে হবে,” বলেন মি. মালিক।

শাহদীন মালিক আরো বলেন “সময়ের সঙ্গে ভাষা ও শব্দগত ধারণার পরিবর্তন হয়ে থাকে। শব্দের অর্থের পরিবর্তন হলে যদি বারবার আপনাকে আইন পরিবর্তন করতে হয়… এইটা তো হয় না কোথাও দুনিয়াতে।”

উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের কথা বলেন তিনি। ১৭৮৯ সালে দেশটির সংবিধান গৃহীত হয়।

“প্রায় আড়াইশো বছরে তো ভাষার পরিবর্তন হয়েছে” যোগ করে এর জন্য সংবিধান পাল্টানো প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

শাহদীন মালিক আরেকটি উদাহরণ টানেন, “সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার সংবিধানে ভালো ভালো কথা লেখা হয়েছিল। কিন্তু, ৩০ বছরে ফলাফল কী… পুতিন।”

বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আলী রীয়াজ অবশ্য বলছেন, সুপারিশগুলোর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একনায়কতন্ত্রের পথ বন্ধ করার প্রয়াস নিয়েছেন তারা।

“যে সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায় না, সেটা একনায়কতন্ত্রের জন্ম দেয়। সাংবিধানিক কাউন্সিলেরর মাধ্যমে সেই পথটা বন্ধ করার কথা বলেছি আমরা,” বলেন অধ্যাপক রীয়াজ।