Source : BBC NEWS

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

ছবির উৎস, Chief Adviser’s Press Wing

প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরে দাঁড়াতে চান- এমন খবরে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা রকম আলোচনা যখন দানা বেঁধে ওঠে, তার মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মি. ইউনূস স্বপদেই থাকছেন এবং বহাল থাকছেন তার উপদেষ্টারাও। শনিবার তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের নিজেদের মধ্যে বৈঠক হয় বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্য উপদেষ্টাদের দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান।

এ দিন সন্ধ্যায় উপদেষ্টা পরিষদের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, “যদি পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের উপর আরোপিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হয়, তবে সরকার সকল কারণ জনসমক্ষে উত্থাপন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।”

শনিবার রাতে তিনটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়, এখানেও মূলত নির্বাচনের ইস্যুটিই ঘুরে ফিরে এসেছে।

বিএনপি আবারও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চাওয়ার তথ্য জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী কিছুটা নরম সুরে হলেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণার বিষয়টি তুলে ধরেছে বলে জানিয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচনের রোডম্যাপ না চাইলেও কোনো প্রক্রিয়ায় সেদিকে আগানো যায় সেই আলাপ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, নির্বাচনের তারিখসহ রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি থেকে কীভাবে এখনকার পরিস্থিতিতে উপনীত হলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও তার নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার?

বিশ্লেষকরা বলছেন শুধু নির্বাচন ইস্যুই নয়, বরং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, সরকার পরিচালনায় নিজের ব্যক্তিগত লোকজনকে গুরুত্ব দেয়া এবং নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিতে না পারার পাশাপাশি করিডর, বন্দর ও নির্বাচন ইস্যুতে বিতর্ক সরকারকে সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

“নানা ইস্যুতে টানাপোড়েন, নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দূরত্বটাই তাকে (প্রধান উপদেষ্টা) এ জায়গায় দাঁড় করিয়েছে,” বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান।

আরেকজন বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীনও বলছেন, “নির্বাচন ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। তারা একাই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছিলো। ফলে অনাস্থার সংকট তীব্রতর হয়ে এ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।”

তবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, “বিএনপির মতো দল প্রধান উপদেষ্টার সময় চেয়ে পায় না, আর নতুন হওয়া দলের নেতারা হুটহাট তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন–– এটিই তো পরিস্থিতিকে বোঝার জন্য যথেষ্ট।”

তবে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলছেন, বিএনপির সাম্প্রতিক ভূমিকাই এবারের এ সংকট তৈরির পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে।

সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শুক্রবারই জানিয়েছেন, নির্বাচনই সরকারের একমাত্র দায়িত্ব নয়। তবে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন, তার একদিনও এদিক-সেদিক হওয়ার কোনো সুযোগ সরকারের পক্ষ থেকে নেই।

আর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আজ জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচন এবং একটি সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের ক্ষেত্র তৈরির বিষয়ে বাধাগুলো কোথা থেকে আসছে তারা তা চিহ্নিত করতে কাজ করছেন।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
গত বছর আটই অগাস্ট শপথ নেন অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

ছবির উৎস, Presidential Press Wing

সংকটের সূচনা কখন কীভাবে

গত বছর পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিন দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। আটই অগাস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণ করে।

তখন থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপির দিক থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি আসতে থাকে।

জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রথম ভাষণে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন যে কখন নির্বাচন হবে সেটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সেই ভাষণে নির্বাচনের রোডম্যাপ না আসায় হতাশা প্রকাশ করেছিল বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

কিন্তু এরপরই তোলপাড় সৃষ্টি হয় সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। গত বছর ২৪শে সেপ্টেম্বর রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই হওয়া উচিত।

মূলত এটিই ছিল সরকার সংশ্লিষ্ট কারও কাছ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে আসা প্রথম কোনো সময়সীমা।

এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে তার নিজস্ব মতামত হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি বলেন, “এটা (নির্বাচন) কবে হবে? ১৬ মাস পর নাকি ১২ কিংবা আট মাস পরে সেটা এখনই নির্ধারিত করা যাচ্ছে না। আর আমার মনে হয় যে, সেনাপ্রধান এখানে ওপিনিয়ন দিয়েছিলেন।”

এসব নিয়ে নানা বিতর্কের পর চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা জানান।

এর মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন কমিশন গঠন এবং জুলাই-অগাস্টের সময়কার হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর বিচারের জন্য কিছু উদ্যোগের পাশাপাশি সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠকও করেছেন মি. ইউনূস।

কিন্তু এসব কিছুর মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা বিশেষ করে ‘মব সন্ত্রাস’ নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ না নেয়া এবং জুলাই আন্দোলনের একাংশের গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের ‘বিএনপিকে আক্রমণ করে নানা মন্তব্যের’ বিষয়টিতে সরকারের ‘প্রশ্রয়ের’ অভিযোগ করেন অনেকে।

তবে এসব কিছু ছাপিয়ে সরকার নতুন করে আলোচনায় আসে রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মতে জাতিসংঘ শুধু ত্রাণ পাঠানোর চ্যানেল চেয়েছে), চট্টগ্রাম বন্দরের একটি টার্মিনালের দায়িত্ব বিদেশিদের দেয়ার প্রসঙ্গ এবং বিএনপির দিক থেকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে অব্যাহতি দেয়ার দাবি।

যদিও সরকারের তরফ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, করিডর নিয়ে কারও সাথে কোনো আলোচনাই তারা করেননি।

এমন পটভূমিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে শপথ নেয়ার জন্য বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকদের প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনায় সরকারের সাথে বিএনপি সম্পর্কের আরও অবনতির চিত্র প্রকাশ পায়।

মি. হোসেনই প্রথম দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন, যা পরে বিএনপির আনুষ্ঠানিক বক্তৃতাতেও এসেছে।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন যে ছাত্ররাই তার নিয়োগকর্তা, ছবিতে থাকা তখনকার ছাত্রনেতারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন

ছবির উৎস, Getty Images

কিন্তু হঠাৎ সংকট হলো কেন

বিশ্লেষকরা অনেকে মনে করছেন সেনাপ্রধান উদ্ধৃত করে গণমাধ্যমে আসা বক্তব্য এবং এরপর ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শহর অচলের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগের প্রসঙ্গটি এনে থাকতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা।

যদিও সেটি প্রকাশ করেছিলেন এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও এসব বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা পরে দেয়া হয়নি।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত বুধবার বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠকে নির্বাচন, রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর প্রসঙ্গ এবং মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিষয়সহ সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন, যা সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ হয়েছে।

আবার নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ দলগুলো ধারাবাহিকভাবে তুললেও এবার মূলত করিডর ও বন্দর ইস্যুতে নিজেদের বক্তব্য জানানোর জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাতের প্রস্তাব দেয়া হলেও দলটিকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সময় দেয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।

এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বিএনপি জানায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে তাদের পক্ষে সরকারকে সহযোগিতা করা কঠিন হবে। একই সাথে তারা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি করে। বিশেষ করে নতুন রাজনৈতিক দলের (এনসিপি) সাথে জড়িতদের অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানায় তারা।

এনসিপি অবশ্য আজ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ তাদের দলের কেউ নন।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলছেন, বিএনপির সাম্প্রতিক আচরণ, বিশেষ করে শহর অচল করে দাবি আদায়ের যে চেষ্টা সেটিই হয়তো প্রধান উপদেষ্টাকে অসন্তুষ্ট করেছে এবং সে কারণেই ‘পদত্যাগ পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছিলো বলে মনে করেন তিনি।

“বিএনপির এখন একমাত্র দাবি হয়ে গেছে নির্বাচন। তাদের সিনিয়র নেতারা নগ্নভাবে এনসিপিসহ অন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করছেন। গত ৫০ বছরে শক্তি বা ক্ষমতা দেখানোর যে রাজনীতি চলেছে সেটি গত এক সপ্তাহে আবার দেখা গেছে। ফলে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু করা সম্ভব হবে তা নিয়ে উদ্বেগ থেকেই হয়তো অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের চিন্তার বিষয়টি এসে থাকতে পারে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন, “শুরুতে এ সরকারের প্রতি একটা সর্বজনস্বীকৃতি সমর্থন ছিল এবং আলাদা সম্মান ছিল সরকার প্রধানেরও।”

“কিন্তু দশ মাস কেটে গেলো। না অর্থনীতি, না সংস্কার- কোন ভালোটা হয়েছে এই সময়ে? বরং নির্বাচনের কথা বললেই অসন্তুষ্টি দেখা যায়। প্রতিরক্ষা বাহিনীর দিক থেকে কথা এসেছে। সেগুলোও তো যৌক্তিক। বিএনপির মতো দলকে অবহেলা করা হয়, আর নতুন দলের নেতারা চাইলেই তার সাক্ষাত পান। এটাই তো হচ্ছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলছেন, অধিকাংশ দলের সাথেই অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে, কারণ নির্বাচন নিয়ে তারা অপ্রয়োজনীয় ধোঁয়াশা তৈরি করেছে।

“ফলে তারা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান কি-না সেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এখনকার সংকটের বড় কারণ সেটাই,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

মি. হক বলেছেন, “কোনো দল কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ এখনো দাবি করেনি, বরং সরকারই অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক তৈরি করেছে।”

“এ পরিস্থিতির দায় অন্তর্বর্তী সরকারের। তারা প্রধান এজেন্ডার বাইরে গিয়ে অনেক এজেন্ডা নিয়ে এসেছে। দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানিয়েছে,” বলছিলেন তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের শপথ (ফাইল ছবি)

ছবির উৎস, Presidential Press Wing

তিন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য

আজ শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় পরপর তিনটি বৈঠক হয়।

বৈঠকের পর বিএনপি জানায়, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি।

তারা জানায়, বাংলাদেশে গণতন্ত্র উত্তরণের লক্ষ্যে বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে “বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য দাবি” জানিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিয়েছেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, উনি স্পেসিফিক কিছু জানান নাই। আমরা দাবি জানিয়েছি।

“যেকোনো উছিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি, জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার ফিরে আসার ক্ষেত্রে প্রস্তুত হবে। এর দায়-দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও তাদের সাথে সংশ্লিষ্টদের ওপর বর্তাবে,” বলে বিএনপি।

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা কোনো সময় বেঁধে দেইনি। আমরা কমফোর্টেবল দুইটা টাইম জাতিকে জানিয়েছি। যদি সংস্কার শেষ হয়, তাহলে ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে এটা (নির্বাচন) হতে পারে। আর যদি আরেকটু সময় লাগে, তাহলে রোজার পরপর হতে হবে। তারপর এটাকে টেনে লম্বা করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।”

এনসিপি বলেছে, নির্বাচনের পরিবেশ বা লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে যেন সেটা তৈরি করা হয়।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের বিষয়ে কোনো অবস্থান জানানো হয়নি।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের বিষয় বেসামরিক সরকার হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য সবসময় ছিল অস্পষ্ট। এর বিপরীতে বরং সেনাপ্রধানের দিক থেকেই দুবার সুস্পষ্ট বক্তব্য এসেছে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে।

এছাড়া “সেনাবাহিনীকে অন্ধকারে রেখে সিদ্ধান্ত নেয়া” কিংবা “সংস্কার নিয়ে সামরিক বাহিনীর সাথে কোনো আলোচনা হয়নি” বলে সেনাপ্রধানকে উদ্ধৃত করে খবর আসাটাও সরকারের ভিত্তি দুর্বল করেছে বলে অনেকে মনে করেন।

যদিও পদত্যাগ পরিস্থিতি তৈরির জন্য শুধু নির্বাচন কিংবা নির্বাচনের দাবি থেকে এমন পরিস্থিতি উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করেন না বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন।

“বরং সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। স্পর্শকাতর কিছু ইস্যুতে তারা একাই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছিলো। আবার এনসিপি সরকারের চাওয়া পূরণ করেছে, যা কখনো হয়েছে মব তৈরি করে। আবার এনসিপি ভার্সেস বিএনপি ছায়া যুদ্ধ চলছে, যেখানে এনসিপি সরকারের আশীর্বাদ পাচ্ছে। এ সব কিছু মিলেই সংকট,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

আরেকজন বিশ্লেষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলছেন, “নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা ছাড়াও মব কালচার, অটো পাস, কাউকে ঠাণ্ডা পানি আবার কাউকে গরম পানি, আইনশৃঙ্খলায় ব্যর্থতা, বিচারপ্রক্রিয়া গতিশীল, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য করার প্রক্রিয়ায় ঘাটতি সরকারকে আজকের পর্যায়ে এনেছে।”

তার মতে, শুরুতে উপদেষ্টা পরিষদ গঠনে অঞ্চলপ্রীতি ও ব্যক্তিগত স্নেহধন্যদের অগ্রাধিকার দেয়ার প্রবণতা সরকারকে দুর্বল করেছে। যে কারণে প্রথম তিন মাসের সংস্কারের জন্য তৈরি হওয়া মোমেন্টাম প্রধান উপদেষ্টা কাজে লাগাতে পারেননি।

“দলগুলোকে বাদ দিয়ে তিনি সব সংস্কার একেবারে করে ফেলার ধারণা নিয়ে বসেছেন। আবার নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা। এক উপদেষ্টা বলেছেন জনগণ তাদের পাঁচ বছর চায়। প্রেস সেক্রেটারি বলেছেন সব কিছু করার ম্যান্ডেট তাদের আছে। এগুলো সরকারের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়িয়েছে,” বলছিলেন মি. রহমান।

দুই উপদেষ্টার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ চায় বিএনপি

ছবির উৎস, CA PRESS WING

পরিকল্পনা উপদেষ্টা যা বললেন

একনেক বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ জানান যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ উপদেষ্টারা তাদের দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন।

“উনি তো চলে যাবেন- বলেননি। উনি বলেছেন যে, ‘আমরা যে কাজ করছি, আমাদের উপরে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব পালনে অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে; কিন্তু আমরা সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমাদের অর্পিত দায়িত্ব, এটা তো বড় দায়িত্ব, এটার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ, বহুবছরের ভবিষ্যৎ, এ দায়িত্ব ছেড়ে তো আমরা যেতে পারব না’।”

তিনি বলেন,’বড় পরিসরে আগামী নির্বাচন এবং একটি সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের জন্য যে ধরনের ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার সেই কাজেও কী কী প্রতিবন্ধকতা কোথা থেকে আসছে সেগুলো আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।’

তবে বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না সরাসরি এমন প্রশ্নের কোনো জবাব তিনি দেননি।