Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Mamata Banerjee / FB
৫৯ মিনিট আগে
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের যে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী চাকরি হারিয়েছেন, তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
সুপ্রিম কোর্টের কাছে তাদের গত সপ্তাহের ওই নির্দেশের ব্যাখ্যাও চাইবে রাজ্য সরকার, এমনটাও জানিয়েছেন মিজ ব্যানার্জী।
যেসব শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ২০১৬ সালে নিযুক্ত হয়েছিলেন, সেই প্রক্রিয়ায় এতই দুর্নীতি হয়েছিল যে ভারতের শীর্ষ আদালত পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করে দেয়।
কারা নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন আর কারা ঘুস দিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, সেটা পৃথক করা যায়নি।
মমতা ব্যানার্জী কয়েক হাজার চাকরি হারা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর সঙ্গে সোমবার কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক বৈঠকে বসেছিলেন।

কী বললেন মমতা?
ওই বৈঠকে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের প্রতিনিধিরা প্রথমে একটি দাবি সনদ পেশ করে।
এর পরে ভাষণ দিতে উঠে মমতা ব্যানার্জী বলেন যে সুপ্রিম কোর্টের ব্যাখ্যা পাওয়ার পরে তিনি আগে ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের বিকল্প ব্যবস্থা করবেন।
তার কথায়, ”আমি বেঁচে থাকতে যোগ্যদের চাকরি কেড়ে নিতে দেব না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ। শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। যারা যোগ্য, তাদের চাকরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।”
”আমরা দু’মাসের মধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব। যোগ্যদের কারও চাকরি বাতিল হবে না। মানবিকতার খাতিরে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের হাতে যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা তুলে দিক,” ওই বৈঠকে মন্তব্য করেন মমতা ব্যানার্জী।
যতদিন না সরকার বরখাস্তের নোটিশ পাঠাচ্ছে, ততদিন কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে চাকরিহারা শিক্ষকদের অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
তারা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী ‘ললিপপ’ দেখিয়েছেন।

হাজার হাজার শিক্ষকের লাইন
মুখ্যমন্ত্রী তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, এই কথা জেনে রবিবার থেকেই অসংখ্য শিক্ষক কলকাতার শহীদ মিনারের সামনে জড়ো হন।
সেখান থেকে বৈঠকে প্রবেশের জন্য পাশ দেওয়া হয়।
পাশ বিলিবণ্টনের সময়ে বলে দেওয়া হয়েছিল যে ‘অযোগ্য’ শিক্ষক, অর্থাৎ যারা কথিতভাবে ঘুস দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাদের ওই বৈঠকে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না।
ওই পাশ নিয়ে হাজার হাজার শিক্ষক সোমবার সকাল থেকেই জড়ো হন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে।

কারা চাকরি হারিয়েছিলেন?
পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালে যে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল, সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলে এবং গতবছরের ২২শে এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এক ধাক্কায় পুরো নিয়োগই বাতিল করে দেয়। ওই রায়ের কারণে হঠাৎ করেই চাকরি হারিয়ে পথে বসেছিলেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন।
এদের মধ্যে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন শিক্ষাকর্মীরা।
ওই মামলাটিই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল আর ভারতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে গত বৃহস্পতিবার।
ওই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েই পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জীসহ স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা এখন জেলে আছেন।
ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পার্থ চ্যাটার্জীর এক বান্ধবী– অভিনেত্রী অর্পিতা মুখার্জীর ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি ভারতীয় রুপি নগদ এবং কয়েক কোটি টাকা মূল্যের গয়না উদ্ধার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।