Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Getty Images
ভারতের সংবিধানের একটি ধারা বিলুপ্ত করে দেশটির শাসিত জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের আধিকার বাতিল করার পরই গঠিত হয়েছিল ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)। সংগঠনটি ২০২০ সালের গোড়ার দিকে জম্মু ও কাশ্মীরে বেশ কয়েকজন হিন্দুকে ‘টার্গেট কিলিং’ (নিশানা করে হত্যার)-এর দায় স্বীকার করে আলোচনায় আসে।
কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির কর্মী এবং তাদের মিত্রদেরও নিশানা করেছে এই গোষ্ঠী।
টিআরএফ কথিত পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) সঙ্গে যুক্ত এবং এই গোষ্ঠিটি এলইটি’র ‘শাখা’ বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে টিআরএফকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের (ইউএপিএ) অধীনে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবেও ঘোষণা করে।
একই আইনের আওতায় ‘টিআরএফ’-এর কথিত কমান্ডার শেখ সাজ্জাদ গুলকেও ‘সন্ত্রাসী’ বলে ঘোষণা করা হয়।
ভারত শাসিত কাশ্মীরে গত ২২শে এপ্রিল পর্যটকদের লক্ষ্য করে যে হামলা চালানো হয়েছিল, সেই ঘটনায় এই সংগঠনটি জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই হামলায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকার ২০১৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে। ওই ধারা জম্মু ও কাশ্মীরকে উল্লেখযোগ্য স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিয়েছিল। ৩৭০ বাতিলের বিল পাশের ফলে ‘বিশেষ’ মর্যাদা হারায় ওই অঞ্চল।
এর পরই গঠিত হয় টিআরএফ।

ছবির উৎস, Getty Images
পহেলগাম হামলা নিয়ে কী বলেছে টিআরএফ?
টিআরএফ পহেলগাম হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
হামলার তিন দিন পর, অর্থাৎ ২৫শে এপ্রিল জারি করা এক বিবৃতিতে টিআরএফ জানায়, ওই হামলার দায় স্বীকার করে তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যে ‘অনধিকৃত’ পোস্ট করা হয়েছিল, তার নেপথ্যে রয়েছে ‘কোঅর্ডিনেটেড সাইবার ইন্ট্রুশন’ বা ‘সমন্বিত সাইবার অনুপ্রবেশ’।
এর জন্য ভারতের সাইবার পেশাদারদের দিকে অভিযোগ তুলে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ পাল্টা অভিযোগ করেছে যে, পহেলগাম হামলায় তাদের (টিআরএফ) জড়িত থাকার ‘দায় স্বীকার’ করা পোস্ট, “মিথ্যা এবং কাশ্মীরের প্রতিরোধের বিরুদ্ধে প্রচারণার একটা অংশ।”
“অভ্যন্তরীণ তদন্তের পর আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, এটা (ওই দায় স্বীকার করা পোস্ট) একটা সমন্বিত সাইবার অনুপ্রবেশের ফল। আমরা এই সাইবার লঙ্ঘন সম্পর্কে তথ্য খুঁজে বের করতে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চালাচ্ছি এবং প্রাথমিক সংকেতগুলো ইঙ্গিত করছে যে এতে ভারতীয় সাইবার গোয়েন্দা অপারেটিভদের হাত রয়েছে।”
‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট জে অ্যান্ড কে’-এর তরফে এই বিবৃতি টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা হয়েছিল। পাশাপাশি ওই গোষ্ঠী দাবি করেছে, ওই প্লাটফর্মই তাদের একমাত্র ‘অফিসিয়াল প্ল্যাটফর্ম’ (আনুষ্ঠানিক প্লাটফর্ম)।
প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য গত ২৫শে এপ্রিল এই টেলিগ্রাম চ্যানেল তৈরি করা হয়েছিল এবং এর আগে সেখানে কোনও পোস্ট করা হয়নি।
টিআরএফ-এর এই পাল্টা দাবিকে ভারতীয় কোনো কর্মকর্তা নিশ্চিত বা অস্বীকার করেননি। তবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি গত সাতই মে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই সংগঠনটিকে পহেলগাম হামলার জন্য সরাসরি দায়ী করেন এবং তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্রের প্রসঙ্গও টেনে আনেন।
অন্যদিকে, টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত এক পোস্টে টিআরএফ এর তরফে উল্লেখ করা হয়েছে, “আমরা নীতিগত ভিত্তিতে প্রতিরোধ করি, নাটকীয় বর্বরতার মাধ্যমে নয়। আমরা দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করি, বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নয়।”
পাশাপাশি পহেলগামে পর্যটকদের আক্রমণের নিশানা করার প্রসঙ্গ টেনে ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “এই রক্তপাতে টিআরএফ-এর কোনো হাত ছিল না।”
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে পহেলগাম হামলার জন্য এই সংগঠনটিকে দায়ী করা হচ্ছে।

ছবির উৎস, Getty Images
ভারতের অভিযোগ টিআরএফ এর বিরুদ্ধে
ভারতের তরফে ‘অপারেশন সিন্দুর’ শুরু করা হয় গভীর রাতে। সরকারের তরফে জানানো হয়, পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো’ কে লক্ষ্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। এই অভিযানের পরপরই বিক্রম মিশ্রি প্রেস ব্রিফিং করেন।
সেখানে তিনি বলেছিলেন, “দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামে একটা গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই গোষ্ঠী জাতিসংঘ কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত পাকিস্তানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার একটা ফ্রন্ট।”
“এটা লক্ষণীয় যে ভারত ২০২৪ সালের মে মাসে ও নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা কমিটির পর্যবেক্ষণ দলকে অর্ধ-বার্ষিক প্রতিবেদনে এই গোষ্ঠীর বিষয়ে ব্রিফ করেছিল এবং পাকিস্তান ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের হতে তাদের (টিআরএফ-এর) ভূমিকা তুলে ধরেছিল।”
তিনি বলেন, “ভারত এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে মনিটরিং টিমকে (নজরদারি দলকে) লস্কর এবং জয়শ-ই-মোহাম্মদ সম্পর্কে তথ্য দিয়েছিল, যারা টিআরএফের মতো ছোট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে কাজ করছে।”
“২৫শে এপ্রিলের নিরাপত্তা পরিষদের প্রেস বিবৃতিতে টিআরএফ-এর নাম অপসারণের জন্য চাপ দেওয়ার বিষয়টা এক্ষেত্রে লক্ষণীয়।”
পাশাপাশি অন্য অভিযোগও তুলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।
মি. মিশ্রি বলেছেন, “সন্ত্রাসী হামলার তদন্তে পাকিস্তানের ভিতরে এবং তাদের পক্ষে যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বেরিয়ে এসেছে। দ্য রেজিস্টেন্স ফোর্স-এর দাবি এবং লস্করে-তৈয়বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সেটা রিপোস্ট করে নিজেই বিষয়টাকে স্পষ্ট করে দেয়।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে আবারও পহেলগাম হামলার জন্য টিআরএফ গোষ্ঠীকে দোষারোপ করেছেন তিনি।