Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Getty Images
২ ঘন্টা আগে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে বুধবার টেলিফোনে এক আলোচনা হয়েছে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিফ মুনিরের মি. ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাত করার আগে মোদীর সাথে তার এ আলোচনাটি হলো।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে, মি. ট্রাম্প ও মি. মোদী তাদের আলোচনার সময়ে ইরান-ইসরায়েল চলমান সংঘর্ষ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন।
তবে দুই নেতার মধ্যে প্রায় ৩৫ মিনিট আলোচনা হয় মূলত ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে।
বুধবারই ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় দুপুরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন পাকিস্তানের সেনা প্রধান জেনারেল আসিম মুনির।
এর আগে কাশ্মীরের পহেলগামে ২২শে এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলার পরে সমবেদনা জানাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
“সেদিন তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সমর্থনের কথাও জানিয়েছিলেন। তারপরে দুই নেতার মধ্যে এই প্রথম কথা হল,” বিবৃতিতে বলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।
এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী মোদী তাদের ফোনালাপের সময় মি. ট্রাম্পকে অপারেশন সিন্দুর নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বলে জানান মি. মিশ্রি।
তার কথায়, “প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্পষ্ট ভাষায় বলেন যে, ২২শে এপ্রিলের পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পের কথা গোটা বিশ্বের কাছে জানিয়ে দিয়েছিল ভারত”।
উল্লেখ্য, গত ২২শে এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পহেলগামের হামলায় ২৬ জন নিহত হয়েছিলো।
ওই হামলার জন্য পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছিল ভারত। তার ঠিক ১৫ দিন পরে এক মধ্যরাতে ২৫ মিনিট ধরে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু স্থাপনা লক্ষ্য করে আকাশ পথে হামলা চালায় ভারত।
ভারত তাদের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নাম দিয়েছিলো ‘অপারেশন সিন্দুর’।
বিপরীতে ‘বানিয়ান মারসুস’ নাম দিয়ে পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান।

ছবির উৎস, Getty Images
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব তার বিবৃতিতে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছেন যে গত ছয়-সাতই মে রাতে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটি ও গোপন আস্তানাগুলিকেই নিশানা করেছিল ভারত ।
“পরিমিত, সুনির্দিষ্ট এবং উত্তেজনা যাতে প্রশমিত না হয়, সেরকমই পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারত। ভারত এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যে কোনও আগ্রাসনের কঠোর জবাব দেওয়া হবে,” বলেছেন তিনি
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বিক্রম মিশ্রির যে ভিডিও বার্তাটি শেয়ার করেছেন, তাতে সচিব বলছেন, “গত নয়ই মে রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। ভাইস প্রেসিডেন্ট ভান্স জানিয়েছিলেন যে, পাকিস্তান ভারতে বড়সড় হামলা চালাতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিলেন, যদি এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তাহলে ভারত আরও কড়া প্রত্যুত্তর দেবে”।
“ভারত নয়-দশই মে রাতে পাকিস্তানের হামলার কঠিন জবাব দেয় এবং পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করে। তাদের সামরিক বিমানঘাঁটিগুলো অকেজো করে দেওয়া হয়। ভারতের দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে পাকিস্তান সামরিক অভিযান বন্ধের অনুরোধ করতে বাধ্য হয়,” মি. মোদী ও মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফোনালাপের বিষয়ে জানিয়েছেন বিক্রম মিশ্রি।
বিবৃতিতে তিনি এও বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, এই গোটা ঘটনাক্রমে কোনো সময়েই ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা বা যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয় নি।”
বিক্রম মিশ্রির কথায়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের প্রতি তাঁর সমর্থন ব্যক্ত করেন।”
মি. মিশ্রি জানিয়েছেন যে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন মি. ট্রাম্প আর মি. মোদীর মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তাড়াতাড়ি ফিরে যাওয়ায় ওই আলোচনা হতে পারে নি।
পররাষ্ট্র সচিবের কথায়, এরপরে মি. ট্রাম্পের আগ্রহেই দুই নেতা টেলিফোনে কথা বলেন ভারতীয় সময় বুধবার সকালে।

ছবির উৎস, Getty Images