Source : BBC NEWS

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

ছবির উৎস, Getty Images

এক ঘন্টা আগে

প্রতি বছর ২২শে এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস পালিত হয়। কিন্তু ধরিত্রী বা আমাদের এই পৃথিবী সম্পর্কে আমরা আসলে কতটুকু জানি?

মানুষের কার্যকলাপ ক্রমাগত পরিবেশের ক্ষতি করছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান শহরগুলোয় প্রায় দুই কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন ১৯৭০ সালেই এই ২২শে এপ্রিল তারিখেই।

সেই প্রতিবাদের কথা স্মরণে রেখেই আজকের দিনটিকে বিশ্ব ধরিত্রী দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছে জাতিসংঘ।

দেখে নেওয়া যাক আমাদের বাসভূমি এই পৃথিবীর সম্বন্ধে ১০টি তথ্য––

১. পৃথিবী কিন্তু গোল নয়

আমাদের এই পৃথিবীকে অনেক সময়েই গোল বলা হয়ে থাকে। তবে আসলে কিন্তু পৃথিবীর আকৃতি সম্পূর্ণ গোল নয়।

দুই মেরুতে সমতল আকৃতির গ্রহ এই পৃথিবী। সঠিকভাবে বলতে গেলে এই আকৃতি ‘উপগোলক’ ধরনের।

অন্যান্য গ্রহের মতোই মহাকর্ষীয় বল এবং অক্ষরেখার ওপরে ভর করে ঘূর্ণনের ফলে যে কেন্দ্রাতিগ শক্তি উৎপাদিত হয়, তারই প্রভাবে মেরু অঞ্চল দুটি সমতল এবং নিরক্ষ রেখার কাছে চওড়া হয়ে গেছে পৃথিবী।

এ কারণেই দুই মেরুর ব্যাসের তুলনায় নিরক্ষরেখায় পৃথিবীর ব্যাস প্রায় ৪৩ কিলোমিটার বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই কোটি মানুষ ১৯৭০ সালের ২২শে এপ্রিল রাস্তায় নেমেছিলেন পৃথিবীকে বাঁচাতে - ফাইল ছবি

ছবির উৎস, Getty Images

২. পৃথিবীর ৭০ শতাংশই পানি

ভূপৃষ্ঠের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই পানি। হিমবাহ, জলাভূমি, হ্রদ, নদী, সাগর প্রভৃতি এই পানির উৎস।

কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থাতেও পানি পাওয়া যায়, তবে পৃথিবীর ৯৭ শতাংশ পানিই সমুদ্রের লবণাক্ত জল।

পৃথিবীর প্রায় ৭০ শতাংশই পানি

ছবির উৎস, Getty Images

৩. ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১০০ কিলোমিটার ওপরে মহাকাশ

বায়ুমণ্ডল ও মহাকাশের মধ্যের সীমানা, যা কারমান লাইন নামে পরিচিত, সেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ওপরে।

বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের প্রায় ৭৫ শতাংশই সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রথম ১১ কিলোমিটার উচ্চতার মধ্যেই পাওয়া যায়।

পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে রয়েছে এক বিরাট বল - যার সিংহভাগই লোহা

ছবির উৎস, Getty Images

৪. পৃথিবীর কেন্দ্রে রয়েছে লোহা

সৌরমণ্ডলের গ্রহগুলির মধ্যে ঘনত্বের দিক দিয়ে প্রথম এবং আকারের দিকে পৃথিবী পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ।

পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে ১২শো কিলোমিটার ব্যাসের গোলাকৃতির একটি বল।

ধারণা করা হয় যে ওই বলটির ৮৫ শতাংশই লোহা আর ১০ শতাংশ আছে নিকেল।

৫. পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যাতে প্রাণ আছে

মহাবিশ্বে শুধু পৃথিবীতেই প্রাণ আছে বলে এখন পর্যন্ত প্রমাণ করা গেছে।

পৃথিবীর বুকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ২০ হাজার প্রজাতির প্রাণীর তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। তবে এই সংখ্যা মোট প্রাণীর প্রজাতির একটা ছোট অংশ।

বিজ্ঞানীরা ২০১১ সালে একটা ধারণা করেছিলেন যে পৃথিবীর প্রকৃতিতে সম্ভবত ৮০ লাখ ৭০ হাজারের মতো প্রজাতি থাকতে পারে।

প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল এবং পৃথিবীর গঠন, তার ভূবৈজ্ঞানিক ইতিহাস এবং অক্ষের কারণে কয়েক লাখ, এমনকি কোটি বছর ধরেই এই গ্রহে প্রাণের সঞ্চার রয়েছে।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন
পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ, যেখানে প্রাণ আছে বলে ধরে নেওয়া হয়, দক্ষিণ মেরুর পেঙ্গুইন

ছবির উৎস, Getty Images

৬. পৃথিবীর সব জায়গায় মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এক নয়

যেহেতু পৃথিবী পুরোপুরি গোল নয় এবং এর ভর সব জায়গায় সমানভাবে বিস্তৃত নয়, তাই মাধ্যাকর্ষণ শক্তির তারতম্য ঘটে।

যেমন, নিরক্ষরেখা থেকে যত মেরুর দিকে যাওয়া যাবে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ধীরে ধীর বাড়তে থাকবে।, যদিও মানবদেহে সেই তারতম্য বিশেষ অনুভব করা যায় না।

বৈপরীত্যে ভরা পৃথিবী : দক্ষিণ মেরুর 'ভস্তক' গবেণষা কেন্দ্র (বাঁয়ে), যুক্তরাষ্ট্রের 'ডেথ ভ্যালি' (ডাইনে)

ছবির উৎস, Getty Images

৭. বৈপরীত্যে ভরা এই পৃথিবী

আমাদের এই গ্রহটিতে চরম বৈপরীত্য রয়েছে। ভৌগোলিক এলাকার তারতম্যে একেক এলাকার আবহাওয়াতেও রয়েছে ব্যাপক ফারাক। বলতে গেলে প্রতিটি এলাকারই নিজস্বতা আছে।

পৃথিবীর উষ্ণতম স্থান বলে বেশ কয়েকটি জায়গার নাম উঠে আসে, কিন্তু এযাবতকালে সব থেকে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডেথ ভ্যালি’তে। সেখানে ১৯১৩ সালের ১০ই জুলাই থার্মোমিটারের পারদ ছুঁয়েছিল ৫৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আরেক চরম আবহাওয়া দক্ষিণ মেরুতে। সেখানকার ‘ভস্তক’ গবেষণা স্টেশনে ১৯৮৩ সালের ৩১শে জুলাই তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল মাইনাস ৮৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে 'দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ'

ছবির উৎস, Getty Images

৮. বিশ্বের সব থেকে বড় জীবন্ত কাঠামো

অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে অবস্থিত ‘দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ’ই পৃথিবীর সবথেকে বড় জীবন্ত কাঠামো যেটি বিকশিত হয় এমন অসংখ্য জীবসত্তার সমন্বয়ে গঠিত।

এটি এতই বড় যে মহাকাশ থেকেও চোখে পড়ে।

প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে হাজার হাজার প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে।

ইউনেস্কো ১৯৮১ সালে এটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি দেয়।

টেকটনিক প্লেট চলাচল করে বলেই ভূমিকম্প বা অগ্ন্যুৎপাত ঘটে

ছবির উৎস, Getty Images

৯. পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে সক্রিয় টেকটনিক প্লেট আছে

টেকটনিক প্লেট, অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠের কঠিন আবরণের খণ্ডাংশ এখনও স্থির নয়। এর অর্থ হলো আমাদের এই গ্রহ এখনও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

এই প্লেট বা খণ্ডাংশগুলো সরে যাওয়ার ফলেই পর্বতমালা যেমন তৈরি হয়, তেমনই ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতও হয়।

টেকটনিক প্লেট কতদিন পরপর সরে যাবে, তা পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আবার সমুদ্রতলে স্থায়ী পরিবর্তনের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাসের পুনর্ব্যবহারেও সহায়তা করে টেকটনিক প্লেটের এই সরে যাওয়া।

পৃথিবীর চারদিকে আছে চৌম্বক ক্ষেত্র

ছবির উৎস, Getty Images

১০. পৃথিবীর চারপাশে রয়েছে প্রতিরোধী প্রাচীর

সূর্য থেকে সমানে ধেয়ে আসা অতি শক্তিশালী কণাসমূহকে আটকে দেয় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র।

পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্রস্থল থেকে শুরু হয়ে যেখান দিয়ে সৌর বাতাস বয় সেই সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত এই চৌম্বক ক্ষেত্র।

আবার কিছু প্রাণী এই চৌম্বক ক্ষেত্রের সাহায্যেই পথ খুঁজে পায়। আমরা যখন কম্পাস ব্যবহার করি, তখনও এই চৌম্বক ক্ষেত্রই ব্যবহার করা হয়।