Source : BBC NEWS

৪৮ মিনিট আগে
ফেনীর পাটগাছিয়ায় দুই ছেলের মুরগি ও কবুতর চুরির অভিযোগে তাদের মায়েদের নাকে খত দিতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে চুরির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
পহেলা মে বৃহস্পতিবারের ঘটনা হলেও দুইদিন পরে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সবার নজরে আসে।
ফেনীর পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় তাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। মামলা হলে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে দাবি করেছেন।
এদিকে, নাকে খত দেয়ার ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে নেতৃত্বে থাকা স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের দাবি, চুরির ঘটনায় জনরোষ থেকে বাঁচাতে উপস্থিত কয়েকজনের দাবির প্রেক্ষিতেই দুই অভিযুক্তের মায়েদের নাকে খত দিতে বলেছিলেন তিনি।
এ ঘটনার পর বিএনপির দলীয় পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মি. দেলোয়ার।
ভুক্তভোগি পরিবারগুলো বলছে, কোন রকম প্রমাণ ছাড়াই তাদের সন্তানদের ফাঁসানো হয়েছে।

ছবির উৎস, Getty Images
আসলে কী ঘটেছিল?
ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামে পহেলা মে রাতে কবুতর ও মুরগি চুরির অভিযোগে গ্রাম্য সালিশি বৈঠক বসে।
যেখানে চুরির অভিযোগ আনেন কবুতর ও মুরগির মালিক ওই গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর। সালিশে উপস্থিত দুই কিশোরকে এ জন্য দায়ী করা হয়।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চুরির বিষয়টি সনাক্ত করা হয়েছে এমন দাবিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন অভিযোগকারী।
পরে সেই সালিশ বৈঠকের একটি ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক মাধ্যমে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে দুইজন মহিলা মাটিতে নাকে খত দিচ্ছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, সেখানে লাঠি হাতে নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন।
তবে সন্তানের বিরুদ্ধে আনা চুরির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এক অভিযুক্তের বাবা মইনউদ্দিন। বিবিসি বাংলাকে তিনি জানিয়েছেন, কোনো প্রমাণ ছাড়াই ফাঁসানো হয়েছে তার সন্তানকে। এই ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, একই গ্রামের কয়েকজন উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ও পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ঘটনাটি শোনার পর শুরুতেই থানায় অভিযোগ করতে বলেছিলেন তিনি। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে সালিশি বৈঠকে অংশ নেন।
মি. দেলোয়ার দাবি করছেন, সালিশের সময় অতি উৎসাহী একটি দল নানাভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তোলে এবং অভিযুক্তদের মারধরের হুমকি দেয়।
এমন পরিস্থিতিতে, জনরোষ থেকে বাঁচাতে উপস্থিত কয়েকজনের দাবির প্রেক্ষিতে মায়েদের নাকে খত দিতে বলেন তিনি।
পরিবেশ–পরিস্থিতির কারণেই এমনটি করতে হয়েছে বলে দাবি তার। যদিও এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন বলেও স্বীকার করছেন মি. দেলোয়ার।

ছবির উৎস, Getty Images
পুলিশ যা বলছে
দুই নারীর নাকে খত দেয়ার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর এ নিয়ে তৈরি হয় সমালোচনা ও বিতর্ক।
বিষয়টি তদন্তে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফেনী পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর ওলী আহাদ বিবিসি বাংলাকে জানান, ভুক্তভোগী দুই মহিলা ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও ওই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।
যদিও এলাকায় এই পরিবারের দুই ছেলের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ রয়েছে বলেও জানান।
তিনি জানান, সালিশি বৈঠকের সময় স্থানীয়দের ক্ষোভ থেকে বাঁচতে ওই মহিলা নিজেই ক্ষমা চেয়ে নাকে খত দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তাদেরকে কেউ জোর করেনি।
এছাড়া বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দুই পক্ষ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা মি. আহাদ।