Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Getty Images
পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে যে নয়টি জায়গায় মঙ্গল ও বুধবার মধ্য রাতে হামলা চালানোর দাবি করেছে ভারত, তাতে ঠিক কোন ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা জানায়নি দিল্লি।
তবে পাকিস্তানের তরফে প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে যে, ‘সুপারসনিক’ অর্থাৎ শব্দের থেকেও দ্রুত গতিতে আঘাত করতে পারে, এমন ক্রুজ মিসাইল ব্যবহার করেছিল ভারত।
এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শব্দের থেকে তিনগুণ বেশি গতিতে উড়ে আসে এবং তিন মিনিট ৪৪ সেকেন্ড ধরে পাকিস্তানের আকাশে সেগুলো উড়েছিল।
পাকিস্তানের সামরিক সূত্রগুলো দাবি করছে, ভারতীয় শহর সিরসা থেকে ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোঁড়ার পর থেকেই পাকিস্তানের বিমান-হামলা প্রতিরোধের ব্যবস্থাপনা সেগুলোর ওপরে নজরদারি শুরু করেছিল এবং পাকিস্তানের মাটিতে হামলা পর্যন্ত নজর রেখেছিল।

ছবির উৎস, Getty Images
এরকম মিসাইল আটকানোর প্রযুক্তি নেই পাকিস্তানে
পাকিস্তানের ওপরে ভারতের সাম্প্রতিকতম হামলার পরে প্রশ্ন উঠেছে যে, পাকিস্তানের বিমান-হামলা রোধী ব্যবস্থা কী আদৌ ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে সক্ষম?
একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, ভারতীয় মিসাইলগুলো লক্ষ্যে আঘাত করার আগে কেন পাকিস্তান সেগুলো ধ্বংস করতে পারল না।?
রাশিয়ার কাছ থেকে ভারত ২০১৯ সালে এস-৪০০ বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কেনে, আবার চীনের কাছ থেকে পাকিস্তান কিনেছে এইচকিউ-৯ বিমান হামলা-রোধী ব্যবস্থা।
রেডিও পাকিস্তানে সম্প্রচারিত পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এক সাম্প্রতিক বিবৃতিতে জানা যায়, দেশটির বিমান হামলা-রোধী ব্যবস্থাপনায় এখন রয়েছে সুউচ্চ থেকে মাঝারি উচ্চতার বিমান হামলা রোধ ব্যবস্থা, চালক-বিহীন আকাশ-যুদ্ধ চালানোর বিমান, মহাকাশ, সাইবার এবং বৈদ্যুতিক যুদ্ধ চালানোর প্রকৌশল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রাক্তন ভাইস এয়ার মার্শাল ইক্রামাতুল্লা ভাট্টি বিবিসিকে বলেছেন, পাকিস্তানের বিমান-হামলা রোধ ব্যবস্থা দিয়ে স্বল্প, মাঝারি এবং দীর্ঘ দূরতের ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল আটকানোর ক্ষমতা আছে, যদি তা ভূমি থেকে ভূমিতে ছোঁড়া হয়।
তার কথায়, চীনে তৈরি এইচকিউ – ১৬ এফইর মতো বিমান হামলা-রোধী ব্যবস্থা পাকিস্তানের আছে, কিন্তু সেটা ভূমি থেকে ভূমিতে ছোঁড়া মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল এবং যুদ্ধ জাহাজ আটকাতে পারে।
আকাশ থেকে মাটির দিকে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর ক্ষমতা নেই পাকিস্তানের।
প্রাক্তন এয়ার কমোডর আদিল সুলতান বিবিসিকে বলেছেন, বিশ্বের কোনো দেশেই হামলা আটকানোর ‘ফুল-প্রুফ’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই, বিশেষত যেখানে ভারত আর পাকিস্তানের মতো দুটি দেশে – যাদের সীমান্ত একটাই।
তিনি বলছেন, একই সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে যদি বিভিন্ন দিকে নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়, তাহলে যে কোনো বিমান হামলা রোধী ব্যবস্থারই কিছু সীমাবদ্ধতা তো থাকেই।
তার কথায়, “বালাকোটের ঘটনার পরে পাকিস্তান বেশ কিছু উন্নত মানের ক্ষেপণাস্ত্র এবং রেডার ব্যবস্থা বসিয়েছে। কিন্তু এই উন্নতমানের হামলা-রোধী ব্যবস্থাপনা তো আড়াই হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত জুড়েই বসানো যাবে না, যাতে ওদিক থেকে কোনও ক্ষেপণাস্ত্র না ঢুকতে পারে!”
এর জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ হবে, কিন্তু তাতেও কাজ খুব একটা হবে না। কারণ দুই দেশের সীমান্ত তো একটাই, মন্তব্য আদিল সুলতানের।
অবশ্য ভারতেরও এই হামলা-রোধী ব্যবস্থাপনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

ছবির উৎস, Getty Images
ঘন্টায় ১১০২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত গতিবেগ
ইক্রামুাতুল্লাহ ভাট্টি বলছিলেন, সর্বশেষ হামলার ঘটনার ব্যাখ্যা করতে গেলে কয়েকটি বিষয় বোঝা প্রয়োজন।
“সম্ভবত এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভারত আকাশ থেকে ভূমিতে ফেলেছিল, আর এধরনের মিসাইলগুলো ইদানিং খুবই উন্নত হয়ে গেছে, বলছিলেন মি. ভাট্টি।
তার কথায়, “এই মিসাইলগুলো অত্যন্ত দ্রুত গতির – ‘মাখ তিন (৩৬৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়) থেকে মাখ নয় (১১০২৫ কিলোমিটার প্রতিঘন্টায়) পর্যন্ত এগুলোর গতিবেগ। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনেরও এত দ্রুত গতির মিসাইল আটকানোর প্রযুক্তি নেই।”
‘মাখ’ হলো ক্ষেপণাস্ত্রের গতি মাপার একক।
তিনি ব্যাখ্যা করছিলেন যে, আকাশ থেকে ভূমিতে ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর আরেকটা প্রতিবন্ধকতা হলো এগুলো ধেয়ে আসার সময় যেহেতু খুব কম, তাই প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্যও সময় খুব কম পাওয়া যায়। যেহেতু ভূমি থেকে ভূমিতে ছোঁড়া হলে ক্ষেপণাস্ত্রের ওড়ার সময় বেশি পাওয়া যায়, তাই সেগুলো আটকানো সহজ।
প্রাক্তন এয়ার ভাইস মার্শালের কথায়, “তবে ভারতেরও কিন্তু এধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আটকানোর প্রযুক্তি নেই। যদি পাকিস্তান আকাশ থেকে ভূমিতে কোনো মিসাইল ছোঁড়ে, তারাও আটকাতে পারবে না।”

ছবির উৎস, Getty Images
আকাশ পথে কে কতটা শক্তিশালী?
ভারতের বিমানবাহিনীর অধীনে রয়েছে ৩১টি স্কোয়াড্রন, যেখানে প্রতিটি স্কোয়াড্রনে ১৭ থেকে ১৮টি যুদ্ধবিমান থাকে। অপরদিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর রয়েছে ১১টি স্কোয়াড্রন।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের কাছে মোট ২ হাজার ২২৯টি বিমান রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের আছে ১ হাজার ৩৯৯টি।
পাকিস্তানের কাছে আছে ৪১৮টি যুদ্ধবিমান- যার মধ্যে ৯০টি বোমারু বিমান। বিপরীতে ভারতের রয়েছে ৬৪৩টি যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে ১৩০টি বোমারু বিমান।
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সবচেয়ে কার্যকর দুটি অস্ত্র হলো—যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা এফ-১৬ এবং চীনের সহায়তায় তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার। জেএফ-১৭ হলো হালকা, সব আবহাওয়ায় দিন-রাত ব্যবহারের উপযোগী যুদ্ধবিমান, যা পাকিস্তানের কামরায় অবস্থিত পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স এবং চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রির যৌথ উদ্যোগে তৈরি।
গত কয়েক বছরে ভারতের বিমানবাহিনীতে বড় সংযোজন হিসেবে যুক্ত হয়েছে ফ্রান্স থেকে আনা রাফাল যুদ্ধবিমান। এই বিমান পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং আকাশে ১৫০ কি.মি. দূরত্বে এবং আকাশ থেকে ভূমিতে ৩০০ কি.মি দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে সক্ষম।
এটি ভারতীয় বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত মিরাজ ২০০০-এর আধুনিক সংস্করণ এবং বর্তমানে ভারতের কাছে ৫১টি মিরাজ ২০০০ বিমান রয়েছে।
যুদ্ধবিমানের বাইরেও ভারতের রয়েছে ২৭০টি পরিবহন বিমান, ৩৫১টি প্রশিক্ষণ বিমান, ৬টি রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার এবং ৯৭৯টি হেলিকপ্টার, যার মধ্যে ৮০টি আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার।
পাকিস্তানের রয়েছে ৬৪টি পরিবহন বিমান, ৫৬৫টি প্রশিক্ষণ বিমান, ৪টি রিফুয়েলিং ট্যাঙ্কার এবং ৪৩০টি হেলিকপ্টার, যার মধ্যে ৫৭টি আক্রমণাত্মক হেলিকপ্টার।
ভারতের সক্রিয় সামরিক বিমানঘাঁটির সংখ্যা ৩১১টি আর পাকিস্তানের ১১৬টি।