Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Andriy Yermak/Telegram
এক ঘন্টা আগে
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে এক বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ভ্লাদিমির পুতিনের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে তারা ওই বৈঠক করেছেন।
রোম ছাড়ার পর সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ট্রাম্প বলেন, চলতি সপ্তাহে কিয়েভে মস্কোর হামলার পর তার মনে হচ্ছিলো যে পুতিন তাকেও ঘোরাচ্ছেন। “না হলে বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার কোন কারণ ছিলো না”।
ট্রাম্প ও জেলেনস্কিকে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় পোপের শেষকৃত্যানুষ্ঠান শুরুর আগে গভীর আলোচনায় মগ্ন দেখা গেছে।
হোয়াইট হাউজ পনের মিনিটের ওই বৈঠককে খুবই ফলপ্রসূ হিসেবে উল্লেখ করেছে। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এটি ঐতিহাসিক হবার মতো।
ফেব্রুয়ারিতে ওভাল অফিসে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের ঘটনার পর এটাই ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মুখোমুখি বৈঠক।
ট্রাম্প লিখেছেন, ইউক্রেনের শহরগুলোতে রাশিয়ার হামলার ঘটনায় তার মনে হয়েছে “তিনি (পুতিন) হয়তো যুদ্ধ বন্ধ চান না, তিনি শুধু আমাকে ঘোরাতে চান। এটা ভিন্নভাবে মোকাবেলা করতে হবে, ব্যাংকিং বা নিষেধাজ্ঞার সম্প্রসারণ?”
এর আগে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন চুক্তির খুবই কাছে পৌঁছেছে।
ক্রেমলিন শনিবার বলেছে, ইউক্রেনের সাথে কোন পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনায় বসার বিষয়টি উইটকফকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে হোয়াইট হাউজের বৈঠকে ট্রাম্প জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন ‘ আপনার হাতে কোন কার্ড নেই’ এবং তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারবেন না।

ছবির উৎস, Andriy Yermak/Telegram
এর আগে ট্রাম্প যুদ্ধ শুরুর জন্য ইউক্রেনকে দোষারোপ করেছেন এবং অনেকবারই শান্তি আলোচনায় বাধা হওয়ার জন্য জেলেনস্কিকে অভিযুক্ত করেছেন।
তবে শনিবারের বৈঠক নিয়ে হোয়াইট হাউজের দিক থেকে ইতিবাচক সুর পাওয়া গেছে। আর জেলেনস্কি বলেছেন ‘যৌথভাবে ফল পাওয়া গেলে এই বৈঠকের ঐতিহাসিক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে’।
বৈঠকের দুটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে তারা দুজন গভীর আলোচনায় মগ্ন আছেন।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহাও সামাজিক মাধ্যম এক্স এ ছবি পোস্ট করেছেন। ক্যাপশন লিখেছেন ‘ঐতিহাসিক এ বৈঠকের গুরুত্ব বর্ণনায় কোন শব্দের প্রয়োজন নেই। দুই নেতা সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় শান্তির জন্য কাজ করছেন’।
ইউক্রেনের প্রতিনিধিদলের পোস্ট করা আরেক ছবিতে দেখা যাচ্ছে দুই নেতার সাথে দাঁড়িয়ে আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ।
এতে মনে হচ্ছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ফরাসী প্রেসিডেন্ট দুই নেতাকে কাছে আনতে সহায়তা করছেন।
বৈঠকের পর ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ব্যাসিলিকায় শেষকৃত্যানুষ্ঠানের সামনের সারিতে তাদের নির্ধারিত জায়গায় আসেন। জেলেনস্কি যখন আসেন তখন অনেকে হাততালি দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানের সময় তারা পরস্পরের অল্প দূরত্বেই অবস্থান করেন। একই সাথে ফরাসি প্রেসিডেন্ট সহ অন্যরাও ছিলেন।

ছবির উৎস, PA Media
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দ্বিতীয় আরেকটি বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেছেন কিন্তু অনুষ্ঠানের পরপরই দ্রুত সময়ের মধ্যে রোম ছেড়ে যান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
জেলেনস্কি পরে ফরাসি দূতাবাসে গিয়ে ম্যাঁক্রর সাথে সাক্ষাত করেন। এছাড়া ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের বাসায় তার সাক্ষাত হয় কিয়ের স্টারমারের সাথে। এছাড়া আলাদা করে আলোচনা করেছেন ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েনের সাথে।
সামাজিক মাধ্যম এক্স এ দেওয়া পোস্টে ম্যাঁক্র লিখেছেন যে’ ইউক্রেন যুদ্ধ অবসান একটি লক্ষ্য, যা আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে শেয়ার করেছি’। তিনি লিখেছেন ইউক্রেন নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত।
ওদিকে ডাউনিং স্ট্রিটের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইউক্রেনে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য যে সব ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে তা নিয়ে স্টারমার ও জেলেনস্কি আলোচনা করেছেন এবং তারা সুযোগ পেলেই আবারো কথা বলবেন।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউজের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের সময় ট্রাম্প ওয়াশিংটনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব গ্রহণ না করায় জেলেনস্কির বিরুদ্ধে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগ করেছিলেন।
পরে ট্রাম্পের ক্রমাগত চাপের মুখে কিয়েভ যুদ্ধ অবসানে মস্কোর সাথে ভূখণ্ড ছাড় দিয়েও সমঝোতায় পৌঁছানোর বিষয়টি গ্রহণ করে।
এই ছাড় দেয়ার মধ্যে একটি বড় অংশের ভূমি এবং ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ক্রাইমিয়া উপত্যকার বিষয়টিও রয়েছে।
জেলেনস্কি এর আগে এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন। তিনি শুক্রবার বিবিসিকে বলেছেন, একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি সবকিছু নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা উন্মোচন করবে।