Source : BBC NEWS
আইসল্যান্ডের উত্তর উপকূল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গ্রিমসে নামের এই ছোট্ট দ্বীপ ইউরোপের অন্যতম প্রত্যন্ত বসতি। এটা সামুদ্রিক পাখির সমৃদ্ধ আবাসস্থলও বটে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই দ্বীপে হাতে গোনা মানুষের বাস। বাসিন্দাদের সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে যায় গ্রিমসের সামুদ্রিক পাখির সংখ্যা। এখানে হাসপাতাল নেই, পুলিশ স্টেশনও নেই। তিন সপ্তাহে একবার ডাক্তার আসেন বিমানে চেপে।
বাতাসের দাপট এই অঞ্চলে প্রবল। অগাস্টের শেষের দিকে রৌদ্রোজ্জ্বল দিনেও, গ্রিমসে দ্বীপে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট আমাদের ওয়াটারপ্রুফ জামা কাপড় ভেদ করে যেন কেটে বসছিল। এক সময় মনে হচ্ছিল একটা দমকা হাওয়া হয়তো আমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে।
আমি আর আমার স্বামী ঝোড়ো বাতাসে ঘেরা এই সুন্দর দ্বীপের তীরে এসেছি গুটি কয়েক কাঠের লাঠি হাতে নিয়ে। হাঁটার সময় এই লাঠিগুলো ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে তেমনটা ঠিক নয় বরং আর্কটিক টার্ন (এক ধরনের পরিযায়ী পাখি)-এর হাত থেকে বাঁচার জন্যই এই পন্থা নিতে হয়েছিল আমাদের।
পরিযায়ী পাখির বাসা সম্পর্কে না জেনে বন্ধুর উপকূলরেখা বরাবর ঘুরে বেড়ানো পর্যটকদের প্রায়ই (এই পাখিদের) আর্কটিক টার্নের আক্রমণের শিকার হতে হয়। তাদের আচমকা ঝাপটায় উপকূলের কাছ ঘেঁষা উঁচু খাড়া পাথুরে প্রান্ত থেকে পর্যটকদের পড়ে যাওয়ার ঘটনা কিন্তু বিরল নয়।
ধীরে ধীরে এই দ্বীপের ‘ব্যাসল্ট ক্লিফ’ (ব্যাসল্ট দিয়ে তৈরি উঁচু পাথুরে প্রান্ত)- এর চারপাশে হাঁটছিলাম আমরা। সেই সময় কয়েকটা দলছুট পাফিন (এক প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি) চোখে পড়েছে আমাদের। তখনও সমুদ্রের দিকে চলে যায়নি তারা। আগামী এপ্রিল মাসে পূর্ণ শক্তিতে আবার গ্রিমসে দ্বীপে ফিরে আসার কথা তাদের।
এই দ্বীপ ৬.৫ বর্গ কিলোমিটার দীর্ঘ। গ্রিমসে কিন্তু দেশের উত্তরের শেষপ্রান্তে অবস্থিত এমন একটি দ্বীপ যেখানে জনবসতি রয়েছে। এটি আর্কটিক সার্কেলের মধ্যে অবস্থিত আইসল্যান্ডের একমাত্র অংশও বটে। বলতে গেলে অনেক দিক থেকেই এই হিমশীতল দূরবর্তী দ্বীপ ‘অধরা’ এবং চরম পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু এটাই বোধহয় এই দ্বীপকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়ও করে তোলে।
গ্রিমসেতে পৌঁছানোর জন্য ১৯৩১ সাল পর্যন্ত একমাত্র উপায় ছিল একটা ছোট নৌকায় সফর করা যা বছরে দু’বার ওই দ্বীপে চিঠি সরবরাহ করতো। আজকাল অবশ্য আকুরেইরি শহর থেকে ২০ মিনিটের বিমান যাত্রা এবং ডালভিক (আইসল্যান্ডের পৌরসভার অন্তর্গত গ্রাম) থেকে তিন ঘন্টা ফেরি সফর করে এই দূরবর্তী বন্ধুর দ্বীপে পৌঁছানো যায়। ইউরোপের সবচেয়ে দুর্গম জনবসতি, সামুদ্রিক পাখি আর বন্যপ্রাণীর বৈচিত্রে ঘেরা এই দ্বীপ।
আর্কটিক টার্ন এবং সমৃদ্ধ জনসংখ্যাযুক্ত পাফিনের মতো পাখি ছাড়াও, কালো পা-ওয়ালা কিটিওয়েকস (সামুদ্রিক প্রজাতির পাখি), রেজরবিল (উত্তর আটলান্টিকের ঔপনিবেশিক সামুদ্রিক পাখি যার মুখসহ শরীরের উপরের অংশ কালো এবং নিচের অংশ সাদা) এবং গিলেমটস (সামুদ্রিক পাখি) অবাধে ঘুরে বেড়ায় গ্রিমসে দ্বীপে। আইসল্যান্ডের ঘোড়া ও ভেড়ার বিচরণও এই দ্বীপে অবাধ।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই দ্বীপের বাসিন্দাদের সংখ্যাকে ছাপিয়ে গিয়েছে এখানকার সামুদ্রিক পাখির সংখ্যা, যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর গ্রিমসেকেই নিজেদের ঠিকানা করেছে। দ্বীপে বসবাসরত পাখি ও মানুষের অনুপাত ৫০,০০০ এর তুলনায় এক।
স্থানীয় ট্যুর গাইড এবং আর্কটিক ট্রিপ সংস্থার মালিক হাল্লা ইনগলফসডট্টির বলছিলেন, “আপনি বললে বিশ্বাস করবেন না, তবে এখানে আমাদের মধ্যে মাত্র ২০ জনই পুরো সময় বাস করেন।”
মিজ ইনগলফসডট্টিরের জন্ম আইসল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর রেইকেভিকে, বেড়ে উঠেছেন দক্ষিণ-পূর্ব আইসল্যান্ডে। তার বোন গ্রিমসের এক মৎস্যজীবীকে বিয়ে করেন। বোনের সঙ্গে দেখা করতে আসতেন মিজ ইনগলফসডট্টির। সেই সূত্রে এই দ্বীপে বর্ধিত সময় কাটাতে শুরু করেন তিনি।
প্রায় ২০ বছর ধরে আংশিকভাবে গ্রিমসেতে বসবাসের পরে, সিদ্ধান্ত নেন সেখানে পাকাপাকিভাবে থেকে যাওয়ার। এই দ্বীপে ২০১৯ সাল থেকে পাকাপাকি বাসিন্দা মিজ ইনগলফসডট্টির। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাননি।
তার কথায়, “লোকে ভাবে আমি ভালবাসার জন্য এখানে এসেছিলাম, সত্যিটা হলো এই দ্বীপের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।”
গ্রিমসের সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করেছে। মিজ ইনগলফসডট্টির বলছিলেন, “এখানে কিন্তু যাদু আছে। এখানে মানুষের বসবাসের শৈলী, দ্বীপবাসী আর প্রকৃতির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম আমি।”
“প্রকৃতি এখানে খুব শক্তিশালী। এখানে শীতকালে প্রাকৃতিক শক্তি ভিন্ন। অন্ধকারের সঙ্গে আসে নর্দার্ন লাইটস, নক্ষত্র ও ঝড়। বসন্তে আলো আসে, পাখি আসে। প্রতিটা ঋতুই কিন্তু এখানে বিশেষ।”
পর্যটন সংস্থা চালানোর পাশাপাশি ইনগলফসডট্টির নয়-কক্ষের একটা গেস্ট হাউজেরও মালিক। তার বাড়ি থেকেই সেই গেস্ট হাউস পরিচালনা করেন তিনি।
যখন পর্যটকদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন না, তখন তার ফোকাস থাকে গ্রিমসের পাওয়ার স্টেশনে। প্রতিদিন একবার সেখানে গিয়ে তিনি পর্যবেক্ষণ করেন দ্বীপের নিত্য প্রয়োজনীয় কার্যকলাপ চালু রাখার জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে কি না সেখানে।
যদিও আইসল্যান্ডের মূল ভূখণ্ড ব্যাপকভাবে নির্ভর করে ভূ-তাপীয় এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উপর। কিন্তু গ্রিমসে এতটাই দূরে অবস্থিত যে এই দ্বীপ জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের আওতার বাইরে। পুরো দ্বীপ নির্ভর করে সিঙ্গল-ডিজেল চালিত একটি জেনারেটরের উপর।
মিজ ইনগলফসডট্টির বলছিলেন, “প্রায়শই পর্যটকরা প্রশ্ন করেন এখানে আমার একঘেয়ে লাগে কি না। আমরা কিন্তু সেই সবই করি যা মূল ভূখণ্ডে থাকা মানুষরা করে থাকেন- আমরা কাজ-কর্ম করি, জিমে যাই, শরীরচর্চা করি। কিন্তু এই দ্বীপের সঙ্গে আমাকে যা জুড়ে রাখে তা হলো প্রকৃতি।”
প্রসঙ্গত, গ্রিমসেতে কিন্তু কোনও হাসপাতাল, ডাক্তার বা পুলিশ স্টেশন নেই। জরুরী পরিস্থিতিতে ভরসা দ্বীপের বাসিন্দারাই।
মিজ ইনগলফসডট্টির জানিয়েছেন জরুরি পরিস্থিতিতে কী করণীয় সে বিষয়ে দ্বীপের বাসিন্দাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন কোস্ট গার্ড এবং জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। সেখানকার বাসিন্দাদের শেখানো হয়েছে জরুরি পরিস্থিতিতে কীভাবে সামাল দিতে হবে।
হাল্লা ইনগলফসডট্টিরের কথায়, “আপনি যদি এখানে থাকতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই নমনীয় হতে হবে, শিখতে হবে কীভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়।”
“আমরা সবকিছুর জন্য প্রস্তুত। জরুরি পরিস্থিতিতে, প্রথম প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে আমাদের। প্রতি তিন সপ্তাহে একজন ডাক্তার এখানে আসেন বিমানে সফর করে।”
দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কয়েকটা বাড়ি রয়েছে। স্যান্ডভিক নামে পরিচিত এই বসতিতে একটা স্কুলঘরও রয়েছে যা এখন কমিউনিটি সেন্টার হিসাবে কাজ করে। এর পাশাপাশি সেটা ক্যাফে ও হস্তশিল্প গ্যালারিও বটে, যেখানে আইসল্যান্ডের উলের তৈরি জিনিসসহ ছোটখাটো সামগ্রী বিক্রি হয়।
এখানে ছোট দোকান রয়েছে যা প্রতিদিন প্রায় এক ঘন্টার জন্য খোলা থাকে। একটি রেস্টুরেন্ট ও বার, একটি সুইমিং পুল, গ্রন্থাগার, গির্জা আর বিমান ওঠা নামা করার জন্য এয়ারস্ট্রিপও আছে যেখানে পাখিদের অবাধ বিচরণ।
আইসল্যান্ডের অনেক ছোট শহর ও গ্রামের মতো, গ্রিমসের ইতিহাসেরও খোঁজ মেলে স্থানীয় লোককাহিনীতে। সেই কাহিনী অনুযায়ী, গ্রিমার নামে বসতি স্থাপনকারী ব্যক্তির নামের সঙ্গে গ্রিমসে দ্বীপের যোগ রয়েছে। গ্রিমার পশ্চিম নরওয়ের সন জেলা থেকে যাত্রা করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
গ্রিমসে দ্বীপের প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া যায় ১০২৪ সালে। ‘হেইমসক্রিংলা- এ হিস্ট্রি অফ দ্য নর্স কিংস’-এ প্রাচীন আইসল্যান্ডীয় কাহিনীর উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে নরওয়ের রাজা ওলাফুর বন্ধুত্বের চিহ্ন হিসাবে গ্রিমসে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় নেতারা সেই আর্জি প্রত্যাখ্যান করেন। মাছ ও পাখির প্রাচুর্যের কারণে ওই দ্বীপকে মূল্যবান বলে মনে করতেন সেখানকার মানুষ, তাই এই সিদ্ধান্ত।
আঠারো শতকের শেষের দিকে, নিউমোনিয়া ছাড়াও মাছ ধরতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় গ্রিমসের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এবং প্রাকৃতিক বন্দরের অভাবে এখানে অবতরণ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
মূল ভূখণ্ড থেকে আসা মৎস্যজীবীদের অবিচ্ছিন্ন স্রোত এবং হোসাভিকের (আইসল্যান্ডের উত্তর উপকূলে অবস্থিত) কাছে বসতি স্থাপনকারী ব্যক্তিদের (যারা গ্রিমসের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন) কারণে এই দ্বীপের বাসিন্দারা টিকে থাকতে পেরেছিলেন।
গ্রিমসে ২০০৯ সালে আকুরেইরি পৌরসভার অংশ হয়ে ওঠে। কিন্তু দ্বীপের অনেক স্থানীয় বাসিন্দারাই নিজেদের অনন্য পরিচয় নিয়ে আজও গর্ব বোধ করেন।
গ্রিমসে পর্যটনের প্রজেক্ট ম্যানেজার মারিয়া এইচ ট্রিগভেডট্টির বলেন, “আজ গ্রিমসের জমির মালিক তথা সেখানকার বাসিন্দারা আকুরেইরি শহর ও আইসল্যান্ডের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং দ্বীপের উত্তরাধিকার সংরক্ষণের জন্য কাজ করে চলেছেন।”
অনেকের মতো তার এই দ্বীপের সঙ্গে একটা নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
তার কথায়, “গ্রিমসে সম্পর্কে আমাকে যা সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করে তা হলো এর প্রান্তিক অবস্থান, অনন্য আলো ও পাখি।”
“সবুজ ঘাসে ঘেরা এই দ্বীপের খাড়া পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানো, গভীর প্রশান্তি অনুভব করা, হাজার হাজার সামুদ্রিক পাখি দ্বারা বেষ্টিত হওয়ার মধ্যে সত্যিই একটা ব্যতিক্রমী ব্যাপার রয়েছে। তবে এখানকার বাসিন্দাদের আন্তরিকতা আর উষ্ণ অভ্যর্থনা গ্রিমসেকে সত্যিই অনন্য করে তুলেছে।”
সামুদ্রিক পাখি পাফিন ছাড়াও, এই দ্বীপের পর্যটকদের আকর্ষণ হলো এর ভৌগলিক অবস্থান। আর্কটিক সার্কেলে অবস্থিত আইসল্যান্ডের একমাত্র অংশ গ্রিমসের দু’টো বিশেষ ল্যান্ডমার্ক রয়েছে। আর্কটিক সার্কেল ও গ্রিমসে যেখানে একে অপরকে ছেদ করে সেই কাল্পনিক রেখা চিহ্নিত করার জন্য দ্বীপের উত্তরের সর্বোচ্চ অংশে ২০১৭ সালে ৩৪৪৭ কেজি ওজনের একটা কংক্রিট আর্ট ইনস্টল করা হয়। ‘অরবিস এট গ্লোবাস’ নামে পরিচিত এই গোলাকৃতির শিল্পকর্ম।
মিজ ইনগলফসডট্টিরের কথায়, “এই দ্বীপের জন্য এটা (অরবিস এট গ্লোবাস) একটা দুর্দান্ত বিপণন সরঞ্জাম কিন্তু তাকে এক জায়গা থেকে অন্যত্র সরানো অসম্ভব। এটা সরানোর জন্য আমাদের মূল ভূখণ্ড থেকে বিশেষ সরঞ্জাম আনতে হয়েছিল।”
“আর্কটিক সার্কেলের জন্য আমাদের আরও একটি বিশেষ স্তম্ভ রয়েছে যা ১৯৭০ সাল থেকে এখানে রয়েছে। আশা করি আপনি এটি দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন।”
যেহেতু পৃথিবী ২৩.৫ ডিগ্রিতে হেলে পড়া অক্ষের উপর ঘোরে, তাই আর্কটিক সার্কেলের অক্ষাংশরেখার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই গোলককেও স্থানান্তর করতে হয়। সাধারণত প্রতি বছর প্রায় ১৪ মিটার এই গোলককে সরানো হয়। সেই অনুযায়ী এই গোলককে ইতিমধ্যে ১৩০ মিটার দক্ষিণে সরানো হয়েছে। ২০৪৭ সালে দ্বীপ প্রযুক্তিগত দিক থেকে আর আর্কটিক সার্কেলের মধ্যে পড়বে না। তখন গ্রিমসের ল্যান্ডমার্ক ওই গোলককে পাহাড় থেকে গড়িয়ে সমুদ্রের দিকে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
গ্রিমসের সুদূর উত্তরে অবস্থানের কারণে সেখানে মেরুরাত্রি দেখা যায়। ডিসেম্বরের শুরু থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দারা এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতার সাক্ষী থাকেন যা পর্যটকদের কাছে একটা বড় আকর্ষণ।
মিজ ইনগলফসডট্টির বলেছেন, “আমার ক্ষেত্রে বলতে পারি, অন্ধকারে আমার বিরক্ত লাগে না। একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর অনেকে হয়তো এতে বিরক্ত বোধ করেন, তবে আমরা জানি যে আবার আলো আসবে। তাই এটা আমার ক্ষেত্রে বিরক্তি জাগায় না।”
এই সময় অন্ধকারের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য নিজেরাই একটা বিশেষ পন্থা বের করেছেন এই দ্বীপের বাসিন্দারা।
“ক্রিসমাস উপলক্ষে সাজানোর ব্যাপারটা আমরা একটু আগেই শুরু করি কারণ আমরা অন্ধকারকে আলোকিত করতে চাই। আমরা ক্রিসমাস লাইট দিয়ে অনেক কিছু সাজাই। একটা ছোট্ট ক্রিসমাস শহরে পরিণত হয় এই দ্বীপ। ফেব্রুয়ারির আগে আমরা ওই আলো সরাই না,” বলেছেন তিনি।
গ্রিমসের ভবিষ্যত সম্পর্কে বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মিজ ইনগলফসডট্টির । আগামী গ্রীষ্মে সেই কাজ শুরু করার কথাও জানিয়েছেন তিনি। সেই তালিকায় রয়েছে লেখকসহ অন্যান্য সৃজনশীল মানুষদের গ্রিমসেতে থাকার বিশেষ ব্যবস্থা করা। এই দ্বীপের বেশ কিছু বাড়ি সংস্কার করে তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হয়েছে যাতে নিরিবিলিতে নিজেদের সৃজনশীল কাজে মগ্ন হতে পারেন তারা (লেখক ও অন্যান্য সৃজনশীল কাজের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা)।
তবে এই দ্বীপে বিপুল পরিমাণে পর্যটক আসুক তেমনটা চান না তিনি।
হাল্লা ইনগলফসডট্টির বলেছিলেন, “এই দ্বীপে গণ পর্যটন হোক তা আমি চাই না।”
এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
তার কথায়, “এই দ্বীপের যে বিষয়গুলো আমাকে আকর্ষণ করে তার মধ্যে একটা হলো, এখানকার ব্যক্তিগত দিকটা। পর্যটনের জন্য এখানে কত লোক আসতে পারে তার একটা সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকেই এই বিষয়টা দ্বীপের জন্য ইতিবাচক বলেও প্রমাণিত হয়েছে। খুব বেশি দেরি হওয়ার আগে আইসল্যান্ডের বাকী অংশেরও এই দিকে নজর দেওয়া উচিৎ বলে আমার মনে হয়।”
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে প্রথমে বলি, সফরের সময় টার্নদের আক্রমণের শিকার হতে হয়নি আমাদের। তবে গ্রিমসে দ্বীপে স্বল্পসময়ের জন্য এই যাত্রায় কমিউনিটির (সম্প্রদায়ের) গুরুত্ব সম্পর্কে আমার গভীর উপলব্ধি হয়েছে। একই সঙ্গে জন্ম দিয়েছে দীর্ঘমেয়াদে গ্রিমসেতে ফিরে আসার একটা গভীর আকাঙ্ক্ষারও।