Source : BBC NEWS

সীমান্তে প্রহরারত বিএসএফ সদস্য, বেড়ার বাইরে খাল আর তার পিছনে বিজিবির শিবির

ভারতের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার দুটি অঞ্চলে সীমান্ত প্রহরায় নতুন বেশ কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এই অঞ্চলের একটির বিপরীতে আছে বাংলাদেশের যশোর, আরেকটির উল্টোদিকে সাতক্ষীরা জেলা।

বিএসএফের দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের প্রায় ৩৬৩ কিলোমিটার নদী সীমান্ত। ফ্রন্টিয়ারের নয়শো কিলোমিটারেরও বেশি এলাকার মধ্যে প্রায় চারশো কিলোমিটারে চিরাচরিত কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া গেছে, বাকি প্রায় অর্ধেক এলাকায় এখনও কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে বিএসএফ জানাচ্ছে।

কিন্তু এই এলাকায় বেশ কিছু অরক্ষিত বা ভালনারেবল জায়গা চিহ্নিত করেছে বিএসএফ যেগুলি দিয়ে সীমান্ত-অপরাধ হচ্ছে। চিহ্নিত জায়গাগুলোতে প্রহরীরা তো থাকবেনই আগের মতো, কিন্তু তার সঙ্গে সমন্বিত একগুচ্ছ অন্য ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।

নতুন সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় একসারি কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হবে এবং একই সঙ্গে নজরদারির জন্য একাধিক বৈদ্যুতিক যন্ত্র এবং অত্যাধুনিক ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। সঙ্গে প্রহরীদের সতর্ক করার জন্যও কিছু যন্ত্র লাগানো হয়েছে।

নতুন এই সমন্বিত ব্যবস্থাপনাকে বিএসএফ বলছে ‘ইলেকট্রনিক সারভেইল্যান্স অ্যাট ভালনারাবেল প্যাচেস– ইএসভিপি’ বা ‘অসুরক্ষিত এলাকাগুলির জন্য বৈদ্যুতিক নজরদারি’ ব্যবস্থা।

আবার সীমান্ত লাগোয়া ১৫০ মিটার বসতি খালি করে দিয়ে সেখানকার মানুষদের অন্যত্র জমি দেওয়ার জন্য আলোচনাও চলছে। সীমান্ত লাগোয়া এলাকা খালি করে দেওয়ার পরেই সেখানে ইএসভিপি ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন
এপাড়ে ভারতের তারালি গ্রাম, মাঝে সোনাই নদী, অন্যদিকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার কাকডাঙ্গা গ্রাম

মাঝে সোনাই নদী, দুই দিকে দুই দেশ

সাতক্ষীরার বিপরীতে উত্তর ২৪ পরগণার স্বরূপনগর থানার অধীন একটি গ্রাম তারালি। উল্টোদিকে সাতক্ষীরা জেলার কাকডাঙ্গা গ্রাম। মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে সোনাই নদী।

এখানে কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। তাই এই অঞ্চলে সীমান্ত পাহারা দেওয়া কতটা কঠিন, সেটা বলতে বলতে নদীর ধার দিয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়ে হাঁটছিলেন বিএসএফের কর্মকর্তারা।

শীতের বিকেল, তাই সূর্য ডুবে আসছে প্রায়। তারালি গ্রামের শ্মশানের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে এক কর্মকর্তা বললেন, “আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চারদিক পুরো অন্ধকার হয়ে যাবে। এক পা দূরের পথও দেখা যায় না, এরমধ্যেই আমাদের প্রহরীদের নজর রাখতে হয় যাতে সীমান্ত দিয়ে কোনও অবৈধ কাজ না হয়।”

“অথচ এই জায়গাটা খুবই অপরাধপ্রবণ। একটা সময়ে এই অঞ্চল দিয়ে প্রচুর গরু পাচার হতো। এখন সেটা বন্ধ। তবে সীমান্তের ওদিক থেকে মানুষ আসা এবং সোনা পাচার চলে আর এদিক থেকে বাংলাদেশের দিকে পাঠানো হয় রূপা, গাঁজা, পোশাক এবং দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিষপত্র,” জানাচ্ছিলেন ওই বিএসএফ কর্মকর্তা।

তিনি বলছিলেন, “স্থানীয় কালোরা বাজার, হাকিমপুরের বাজারগুলোতে খোঁজ নিলে দেখবেন প্রয়োজনের তুলনায় প্রচুর বেশি সামগ্রী তারা মজুত করে। এতই বেশি খাদ্যসামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এমনকি বিড়ি মজুত থাকে, যা এই গ্রামের মানুষের দরকারের থেকে বহু গুণ বেশি। এইসবই রাতের অন্ধকারে অন্যদিকে পাচারের জন্য রাখা থাকে। আমরা সবটাই জানি কে কোথায় কী সামগ্রী মজুত করছে।”

গ্রামের ভেতরে সবসময়ই বিএসএফের সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা ঘুরতে থাকেন, নজরদারি চলে প্রতিটি গ্রামবাসীর ওপরেই।

ওদিকে তখনও দিনের আলো সামান্য ছিল। বিএসএফের স্পিড বোটে চেপে সোনাই নদীর মাঝ বরাবর তখন আমরা।

তিনি দেখাচ্ছিলেন, “সোনাই নদীর ঠিক মাঝ বরাবর হলো আন্তর্জাতিক সীমান্ত।”

বেশ কিছু বাংলাদেশি গ্রামবাসীকে দেখছিলাম নদীর পাড়ে, তাদের দেশের দিকেই দাঁড়িয়েছিলেন।

দিনের বেলা এই সোনাই নদীর ঘাটগুলিতে ভারত আর বাংলাদেশের মানুষ সবাই স্নান করেন, এপার থেকে ওপারে চেঁচিয়ে কথা বললে সাড়াও দেন ওদিকের মানুষ।

যেখানে চিরাচরিত কাঁটাতারের বেড়া (বাঁয়ে) দেওয়া যাচ্ছে না, সেখানে একসারি বেড়া (ডানে) দেওয়া হচ্ছে

২২ হাজার মানুষকে সরাতে হবে

কথা বলতে বলতেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে এলো। কোথাও কোনো আলো নেই। স্পিড বোট যখন ফিরছে আবার গ্রামের দিকে, তখন ভারতের দিকে প্রহরারত বিএসএফ রক্ষীরা জোরালো টর্চের আলো ফেলছিলেন চারদিকে।

“এটা এমন এক অঞ্চল, প্রায় সবারই আত্মীয় স্বজন দুদিকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এরা একই সময়ে নদীতে স্নান করেন, গল্পও করেন। আবার রাতে পাচারও হয় এখান দিয়েই,” বলছিলেন আরেক সিনিয়র বিএসএফ অফিসার।

তার কথায়, “এজন্যই এই গ্রামটি অত্যন্ত অরক্ষিত সীমান্ত। তাই এই নদীর ধারেও আমাদের নতুন প্রহরার কথা ভাবা হয়েছে। এর জন্য নদী এবং সীমান্ত লাগোয়া জায়গা থেকে ১৫০ মিটার দূরে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। যদি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে স্থানীয় প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করতে পারে, তাহলে প্রায় ২২ হাজার মানুষকে সরতে হবে বলে জানালেন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এক অফিসার।”

“স্থানীয় প্রশাসন আইন অনুযায়ী বাসিন্দাদের জমির দাম ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিতে চেয়েছে। তবে এখানকার মানুষ বলছেন, শুধু জমি দিলে কী করে হবে, তাদের বাড়ি ঘরও তো ছাড়তে হবে, তার ক্ষতিপূরণও করা হোক,” বলছিলেন ওই অফিসার।

তিনি বললেন, “প্রায় রোজই গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। যদি প্রশাসন রাজি করাতে পারে, তাহলে এই তারালি গ্রামেরই প্রায় ২২ হাজার মানুষকে সীমান্ত লাগোয়া এলাকা থেকে সরানো হবে। তারপরে এখানে চালু হবে নতুন পদ্ধতিতে সীমান্ত প্রহরার ব্যবস্থাপনা।”

যখন বিএসএফের ঘাটে ফিরলাম, তখন টর্চের আলো ছাড়া এক পা-ও ফেলা যাচ্ছে না।

ওই ঘাটেই অন্ধকারের মধ্যে এক বয়স্ক মানুষ বলছিলেন, “সীমান্তে বেড়া দেওয়া হবে শুনছি। হলে তো ভালোই হয়, আমরাও চাই সেটা। কিন্তু আমাদের ঘর ছেড়ে যে চলে যেতে হবে, তার জন্য তো সরকারকে ব্যবস্থা করতে হবে!”

বেশ কয়েকবছর আগে থেকেই অবশ্য সীমান্ত লাগোয়া অঞ্চলের বাসিন্দাদের একাংশ ক্ষতিপূরণ নিয়ে সরে যাওয়ার পক্ষেই কথা বলেছিলেন।

সীমান্ত লাগোয়া লোকালয়ের বাইরে ফটক রয়েছে, সেখানে টহলরত  বিএসএফের এক নারী সদস্য

‘হ্যালো এক্সেলেন্সি, অল গুড?’

বিএসএফ নতুন যে সীমান্ত পাহারার ব্যবস্থা করেছে, সেটা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে ওই উত্তর ২৪ পরগণারই আরেকটি সীমান্তে। সেই ব্যবস্থা হাতে কলমে দেখাচ্ছিলেন বিএসএফ রক্ষীরা।

জায়গাটা পেট্রাপোল সীমান্ত ফটকের একেবারে গায়েই।

একটা মনসা মন্দিরের চাতালে দাঁড়িয়ে বিএসএফের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বললেন, “আমাদের যেমন সীমান্ত পাহারা দিতে হয়, তেমনই আবার এই মন্দিরে বিশাল জনসমাগমের ব্যবস্থাও করতে হয়। তার জন্য আলাদা একটা গেট করতে হয়েছে আমাদের।”

মন্দিরের পিছনেই কচুরিপানায় ভরা একটা খাল। তার ওপারে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসের ক্যাম্প।

খালের ধার দিয়ে মাটির এবড়ো খেবড়ো পথে হাঁটতে হাঁটতে বিএসএফের এক কর্মকর্তা বলছিলেন, “খালের ঠিক ওপারে দেখুন মাঝে মাঝে সাদা পতাকা লাগানো আছে। ওই পর্যন্ত ভারতের এলাকা। তারপরেই বাংলাদেশের এলাকা শুরু।”

বাংলাদেশের এক রক্ষীকে দেখে এদিক থেকে বিএসএফ অফিসার হাত তুলে চেঁচিয়ে বললেন, “হ্যালো এক্সেলেন্সি। অল গুড?”

ওদিক থেকেই হাত তুলে অভিবাদন ফিরিয়ে দিলেন বিজিবির অফিসার।

বিএসএফের ওই অফিসার বলছিলেন, “এটা আমাদের মধ্যে সবসময়ে চলতে থাকে। একে অপরকে আমরা এক্সেলেন্সি বলে সম্বোধন করি।”

সীমান্তে বসেছে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি (বাঁয়ে), তার ছবি দেখা যাচ্ছে কন্ট্রোল রুমে (ডানে)

কাঁটাতারের কাছে যেতেই যা ঘটল

খালের পাড় দিয়েই একসারি দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া।

চিরাচরিতভাবে সীমান্তে যে কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হয়, এটা সেরকম নয়।

“এলাকা অনুযায়ী আমাদের বিভিন্ন ব্যবস্থা উদ্ভাবন করতে হয়েছে। যেমন এই বাঁশের খুঁটির গায়ে একসারি দিয়ে কাঁটাতার। এগুলোকে আমরা বলছি সিঙ্গল রো ফেন্সিং,” জানালেন সেখানকার এক বিএসএফ কর্মকর্তা।

তবে এটাই স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। বাঁশের খুঁটিতে সাধারণ মানুষ যেমন কাঁটাতার বেঁধে বেড়া দেন, এটা অনেকটা সেরকম। তবে জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেছে এখানে। স্থানীয় প্রশাসন খুঁটি পুঁতে দিয়ে জায়গা চিহ্নিত করে গেছে।

এবার সিঙ্গল রো ফেন্সিং বসলে সেটা হবে স্থায়ী ব্যবস্থা– সিমেন্ট ঢালাই করে খুঁটি পুঁতে একসারির বেড়া দেওয়া হবে এই জায়গায়।

কর্মকর্তারা দেখাচ্ছিলেন এলাকা অনুযায়ী নানা ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন করে যে সমন্বিত প্রহরা চালু করেছেন, সেটা ঠিক কী।

ঠিক তখনই কারও একটা পা পড়েছিল বেড়ার একেবারে পাশে থাকা একটা শুকনো গাছের ডালে। হঠাৎই সবাইকে চমকে দিয়ে সাইরেন বেজে উঠল!

হতচকিত হয়ে সেখানে যে প্রহরী ছিলেন, তিনি দ্রুত নিচু হয়ে শুকনো গাছের পাতার তলায় হাত দিয়ে একটা সুইচ বন্ধ করে দিলেন, থামল তারস্বরে বাজতে থাকা সাইরেন।

বিএসএফের এক কর্মকর্তা বললেন, “এটা আমাদের একটা উদ্ভাবন – ইন্ট্রুডার অ্যালার্ম। শুকনো গাছের পাতার তলায় লুকোনো আছে এই বাক্সটা। ওখানে পা পড়লেই সাইরেন বেজে উঠে কাছাকাছি থাকা প্রহরীদের সতর্ক করে দেবে।”

এছাড়াও পুরো এলাকায় খুঁটির মাথায় জোরালো আলো লাগানো হয়েছে, বসানো হয়েছে অতি উচ্চমানের সিসিটিভি।

“এইসব ক্যামেরা প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত স্পষ্ট ছবি তুলতে পারে। কিছু ক্যামেরা আছে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ পাওয়া যায়, আর কিছু ক্যামেরা ফিক্সড। সব ক্যামেরার ছবি সীমান্ত চৌকির কন্ট্রোল রুমে বসে দেখা যায়,” জানালেন এক অফিসার।

কাঁটাতারে ছোঁয়া লাগতেই জ্বলে উঠল ট্রিপ ফ্লেয়ার

হঠাৎই তুবড়ি জ্বলে উঠল

আরও কয়েকজন সাংবাদিক যখন এগোচ্ছি সীমান্তের আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে, কথা বলতে বলতেই দেখছিলাম কাঁটাতারের পাশে জমিতে কিছু পুঁতে রাখা আছে। এক কর্মকর্তা বলছিলেন, ” এগুলো ট্রিপ ফ্লেয়ার”।

কেউ যদি কাঁটাতার ছুঁয়ে ফেলে, সঙ্গে সঙ্গেই তুবড়ির মতো আলো জ্বলে উঠবে।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে একজন কেউ কাঁটাতারের একেবারে কাছে চলে গিয়েছিলেন, সঙ্গে সঙ্গেই হুশ করে শব্দ আর পাশে রাখা ট্রিপ ফ্লেয়ার জ্বলে উঠল।

“ভেতরে ফসফরাস ভরা থাকে। অনেকটা বাজির মতো, তবে সেন্সর লাগানো। কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গেলেই এটা জ্বলে উঠে প্রহরীদের সতর্ক করে দেবে। এটাও আমাদের একটা উদ্ভাবন,” জানালেন এক কর্মকর্তা।

ওই যে সিসিটিভি দেখানো হয়েছিল, তারই কন্ট্রোল রুমে আমাদের প্রবেশাধিকার তো দিল বিএসএফ, তবে ভিডিও করা যাবে না, শুধু স্টিল ছবি তুলতে পারেন।

দেওয়ালে বড় বড় মনিটরে ১৪-১৫টি সিসিটিভির ফুটেজ দেখা যাচ্ছে। সীমান্তের পাশ দিয়ে কোনও মানুষ যেতে দেখলেই মনিটরের ছবিতে লাল বাক্সে তাকে চিহ্নিত করা হয়ে যাচ্ছে। আবার কাঁটাতারের বেড়ার কাছে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে হলুদ রেখা টানা। ওই রেখার কাছে কোনও মানুষকে দেখা গেলেই সতর্ক করবে মনিটরিং সিস্টেম।

“অপারেটর এই মনিটরগুলোর ওপরে চোখ রাখেন সবসময়ে। সন্দেহজনক কিছু দেখলেই সংশ্লিষ্ট প্রহরীকে ওয়াকিটকির মাধ্যমে সতর্ক করা হবে,” জানালেন সেখানকার এক অফিসার।

এছাড়াও রাতের অন্ধকারে নজরদারির জন্য নাইট ভিশন দূরবীন এবং থার্মাল ইমেজ ধরা পড়ে, এমন ক্যামেরাও আছে সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায়।

ভারত থেকে ফেনসিডিল আর বাংলাদেশের দিক থেকে সোনা  -এই দুই পাচারই বিএসএফের কাছে চিন্তার বিষয়

ফেনসিডিল, সোনা পাচার চিন্তার বিষয়

বিএসএফ দাবি করছে গত বছর তিনেকে দক্ষিণ বঙ্গ সীমান্ত অঞ্চলে গরু পাচার বহুলাংশে বন্ধই হয়ে গেছে।

“আমাদের এখন বড় চিন্তা ফেনসিডিল পাচার। এমন একটা দিনও যায় না, যেদিন পাঁচ-ছয় এমনকি সাতটি জায়গা থেকেও আমরা বহু ফেনসিডিল পাচার ধরছি। এর অর্থই হলো পাচারের চেষ্টা চলছেই নিয়মিত এবং এটা বাড়ছে,” জানাচ্ছিলেন এক বিএসএফ কর্মকর্তা।

এছাড়া সোনা পাচারও বাড়ছে এই সীমান্ত দিয়ে, জানাচ্ছিলেন ওই কর্মকর্তা।

“বছর দুয়েক আগেও পাচার হওয়ার সময়ে তেমন একটা সোনা আমাদের হাতে আটক হতো না। কিন্তু এখন ব্যাপক ভাবেই বাংলাদেশ থেকে পাচার করে আনা সোনা আমাদের হাতে ধরা পড়ছে। পুরো ফ্রন্টিয়ারে ২০২৩ সালে ১৬০ কেজিরও বেশি সোনা ধরা পড়েছিল, সেটা ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ১৭৬ কেজিরও বেশি,” বলছিলেন ওই কর্মকর্তা।

ফেনসিডিল, বা অন্য যে কোনও জিনিষ পাচারের একটা কৌশল অনেক বছর ধরেই পাচারকারীরা ব্যবহার করতেন– কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে প্যাকেট ‘টপকিয়ে’ দেওয়া।

“সীমান্তের এদিকে গাছপালা–জঙ্গল, ওদিকে চাষের ক্ষেত আর জঙ্গল। এর মধ্যে পাচারকারীরা লুকিয়ে বসে থাকে দীর্ঘক্ষণ – নজর রাখে কখন বিএসএফ প্রহরীর চোখ অন্যদিকে ঘুরেছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে প্যাকেট টপকিয়ে দেওয়া হয় – ওদিকের পাচারকারী জিনিষ নিয়ে চলে যায়,” জানাচ্ছিলেন এক বিএসএফ অফিসার।

সীমান্ত চৌকি জয়ন্তীপুরে প্রহরারত এক নারী প্রহরী বলছিলেন, “আমি একদিন রাতের ডিউটি করছিলাম। বেড়ার ওদিক থেকে একটা প্যাকেট উড়ে এসে এই সামনের বাড়িতে এসে পড়েছিল। এখন আর সেই সুযোগ নেই– কাঁটাতারের বেড়ারও ওপরে উঁচু নাইলন জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।”