Source : BBC NEWS

দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে

ছবির উৎস, Getty Images

৪১ মিনিট আগে

যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলসের দাবানল শহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এলাকায় ছড়ানোর হুমকির মধ্যেই দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য মরিয়া চেষ্টা করছে।

আগুন লাগা পাহাড় গুলোতে হেলিকপ্টার থেকে পানি ছোড়া হচ্ছে এবং অগ্নিপ্রতিরোধক দিয়ে পালিসেইডসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হচ্ছে, যেখানে আগুন এর মধ্যেই আরও প্রায় এক হাজার একর জায়গায় ছড়িয়েছে।

ওদিকে দ্রুত গতির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফায়ার হাইড্রেন্টগুলোতে পানি না থাকা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে ও কর্মকর্তারা চাপের মুখে পড়েছেন।

রাতে বাতাস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তাহলে আগুনও বেড়ে যেতে পারে। এর মধ্যেই ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

“লস এঞ্জেলস কাউন্টি আরও একটি ভয়ার্ত ও হৃদয়বিদারক রাত পার করেছে,” বলেছেন ওই কাউন্টির সুপারভাইজার লিন্ডসে হোরভাথ।

তবে ভয়াবহ এই দাবানলের বিরুদ্ধে দমকলকর্মীরা ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে। পালিসেইডসের অন্তত ২৩ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
বহু ঘরবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে

মান্ডেভিলে ক্যানিয়ন পর্যন্ত ছড়িয়েছে এই আগুন। ফলে ব্রেন্টউডের বিভিন্ন এলাকায় লোকজনকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই এলাকায় প্রখ্যাত অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ের্জনিগার, ডিজনির প্রধান নির্বাহী বব ইগার ও এনবিএ তারকা লেবরন জেমসের বাড়ি রয়েছে।

এছাড়া যেসব এলাকা থেকে লোকজনকে সরতে বলা হয়েছে সেখানে গেটি সেন্টারও আছে। এটি একটি হিলটপ মিউজিয়াম। সেখানে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার শিল্পকর্ম আছে। এর মধ্যে ভ্যান গঁগ, রুবেনস, মনেট ও ডেগাসের শিল্পকর্মও আছে। তবে এখন পর্যন্ত সেই ভবনের কোন ক্ষতি হয়নি।

পালিসেইডসের পর সবচেয়ে বেশি আগুন লেগেছে ইটন এলাকায়। সেখানে ১৪ হাজার একর এলাকা পুড়ে গেছে। অন্যদিকে কেনেথ ও হার্স্ট এর ছোট দুটি আগুন দমকল কর্মীরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে।

ওদিকে আবহাওয়া বিভাগ শনিবার ও রবিবার বাতাস বাড়তে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিলো।

ক্যালিফোর্নিয়ার কাছাকাছি সাতটি রাজ্য, ফেডারেল সরকার, কানাডা ও মেক্সিকো প্রয়োজনীয় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।

আগুনের কোন কারণ এখনো জানা যায়নি। যে দুটি এলাকায় বড় ধরনের আগুন লেগেছে তা এক করলে ম্যানহাটনের দ্বিগুণ হবে।

প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার অধিবাসীকে ঘরবাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ১ লাখ ৬৬ হাজারকেও সতর্ক করে বলা হয়েছে যে তারা নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে পারে।

বহু মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে

ছবির উৎস, Getty Images

এ ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে।

শুক্রবার গভর্নর গেভিন নিউসন গুরুত্বপূর্ণ পানি সংরক্ষণাগার কাজ না করা এবং ফায়ার হাইড্রেন্টে পানি না থাকার বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। গেভিন নিউসন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

লস এঞ্জেলস ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ক্রিস্টিন ক্রাউলি এ পানি সংকটের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন।

“দমকল কর্মীরা ফায়ার হাইড্রেন্টের কাছে চলে আসার পর আমরা আশা করি সেখানে পানি থাকবে,” বলেছেন তিনি।

তিনি তার বিভাগের অর্থ বরাদ্দ কমানোরও সমালোচনা করেছেন। এর ফলে শতাধিক অগ্নিনির্বাপক অকেজো হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

ওদিকে মঙ্গলবার লস এঞ্জেলসে যখন আগুন ছড়াচ্ছিলো তখন ঘানায় অবস্থানের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েছেন মেয়র কারেন ব্যাস।

তিনি অবশ্য এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন ‘ফায়ার বিভাগের প্রধান ও আমি আগুন প্রতিরোধ ও জীবন বাঁচানোর ওপর জোর দিয়েছি। আমাদের মধ্যকার মতবিরোধ আমরা ব্যক্তিগতভাবে সমাধান করতে পারি’।

পুড়ে ছাই হওয়া একটি স্কুল

ছবির উৎস, Getty Images

ইতোমধ্যেই মেয়রের পদত্যাগ দাবি করে প্রায় সত্তর হাজার মানুষ একটি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

ওদিকে লুটপাট হতে পারে এই ভয়ে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে আক্রান্ত এলাকায়।

কমিউনিটিকে নিরাপদ রাখার জন্য গভর্নর আগেই ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য সংখ্যা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

লুটপাট ও কারফিউ ভঙ্গের জন্য এর মধ্যে অন্তত দুই ডজন মানুষকে আটক করা হয়েছে।

এছাড়া প্রতিটি ঘরে তল্লাশি হলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

রিয়াল এস্টেট এজেন্ট রিক ম্যাকগিয়াগ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন যে প্যাসিফিক পালিসেইডসে তাদের ৬০ টি বাড়ির মধ্যে মাত্র ছয়টি টিকে আছে।

“বাকীসব পুড়ে ছাই বা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে,” বলেছেন তিনি।