Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Getty Images
৩১ মিনিট আগে
পহেলগামের হামলার পর পাকিস্তানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই বুধবার ভারতের সব রাজ্যে ‘মক ড্রিল’ বা আপৎকালীন অথবা যুদ্ধ পরিস্থিতির মহড়া হবে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশে দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিতে ‘সিভিল ডিফেন্স’ বা বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগগুলি এই ‘মক ড্রিল’ বা যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রস্তুতির মহড়া পরিচালনা করবে।
হঠাৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বা বিমান হানা বা বন্দুকধারীদের হামলা হলে সাধারণ নাগরিকদের করণীয় কী হবে, তারই মহড়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলছিলেন, “যদি যুদ্ধ বাঁধে তাহলে সামরিক বাহিনী তো থাকবেই, কিন্তু সাধারণ মানুষ তো বসে বসে দেখবে না, তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। সেইসব দায়িত্বই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে এই মহড়ার মাধ্যমে।”
মহড়ার জন্য কতটা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট সচিব গোভিন্দ মোহন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন মঙ্গলবার দুপুরে।

ছবির উৎস, Getty Images
মহড়ায় কী হবে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, তাতে দেশের ২৪৪ বেসামরিক প্রতিরক্ষা জেলার শহর থেকে গ্রাম – সব এলাকাতেই বুধবার মহড়া চলবে।
বিমান হামলা হলে ঠিকমতো সাইরেন বাজিয়ে সঙ্কেত দেওয়া যাচ্ছে কি না, কন্ট্রোল রুমে কীভাবে কাজ হবে – সবই মহড়ার সময়ে খতিয়ে দেখা হবে। বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হবে বুধবার।
আবার সাধারণ মানুষের কী করণীয় হবে, সেটাও বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বেছে নেওয়া হচ্ছে।
বিমান হামলা হলে ‘ব্ল্যাক আউট’ বা সব আলো নিভিয়ে দেওয়ার মহড়াও হবে।
অন্যদিকে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীরা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশিক্ষণ ঠিক মতো আছে কি না, আগুন লাগলে তা নেভানোর ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে কি না অথবা উদ্ধারকাজ ঠিক মতো করা যাচ্ছে কি না, সেটাও দেখে নেবে সরকার।
গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলিকে অতি দ্রুত রং করে ‘কেমোফ্লেজ’ করে দেওয়ার মহড়াও হবে বুধবার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলার সরকারি কর্মকর্তা, বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ড, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা এনসিসি-র ছাত্রছাত্রীসহ নেহরু যুব কেন্দ্র এবং স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মহড়ায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানাচ্ছে, বুধবার মহড়ার দিন নির্ধারিত হলেও মঙ্গলবার থেকেই ভারতের নানা এলাকায় মহড়া শুরু হয়েছে।
কোথাও আগুন নেভানো ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কোথাও উদ্ধারকারী দল বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বিমান হামলার সাইরেন বাজলেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের টেবিলের নীচে চলে যেতে বলা হচ্ছে – এমন নানা তথ্য দিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।

ছবির উৎস, Getty Images
নাগরিকদের যে বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে
যুদ্ধকালীন মহড়ার দিনে কোথাও বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠতে পারে, কোথাও বন্দুকধারীদের সাজানো হামলার মতো পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
সরকার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, শুধুমাত্র সরকারি ঘোষণার দিকেই যেন মানুষ নজর রাখেন। আতঙ্কিত না হতেও বলা হয়েছে মানুষকে। পুলিশ, বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশ মেনে চলতে বলা হচ্ছে।
কিছু এলাকায় যান চলাচল নিষিদ্ধ করে দেওয়া হতে পারে। সেই সব এলাকার দিকে না যেতে বলা হয়েছে।
কিছু ওষুধ, টর্চ, জলের বোতল এবং ফার্স্ট এইড কিট হাতের কাছে রাখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ছবির উৎস, Getty Images
মহড়া কেন দরকার?
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলছেন যে, এই ধরনের যুদ্ধকালীন মহড়ার দুটো মূল উদ্দেশ্য আছে।
“এক তো পাকিস্তানের ওপরে একটা মানসিক চাপ তৈরি করা যে ভারতে মক ড্রিল হচ্ছে – তার মানে ভারত কোনও একটা সামরিক পদক্ষেপ হয়তো নেবে। দ্বিতীয়ত কোনও হামলা হলে সাধারণ মানুষ যাতে সতর্ক থাকতে পারেন, তাদের কর্তব্যগুলো কী, সেটা অবহিত করিয়ে দেওয়া।”
“একমাত্র ইসরায়েলে এধরনের মক ড্রিল হয় অনেক দশক ধরেই। এটা ভারতের নাগরিকদের জন্য খুবই জরুরি ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোতে নিয়মিত ড্রিল হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষকেও আপৎকালীন পরিস্থিতির সঙ্গে একাত্ম করিয়ে নেওয়া হবে এই মহড়ার মাধ্যমে,” বলছিলেন মি. চক্রবর্তী।
তার কথায়, “কোনও যুদ্ধ হলে আমাদের সামরিক বাহিনীগুলো তো লড়বেই, কিন্তু সাধারণ মানুষ কি চা খেতে খেতে সেই যুদ্ধের ছবি দেখবে টেলিভিশনে? তাদেরও তো কর্তব্য আছে, সতর্কতা নেওয়ার দরকার আছে। তবে তার অর্থ এটা নয় যে সব মানুষ বাড়িতে বাঙ্কার বানাবে।”
এর আগে সর্বশেষ যে যুদ্ধ হয়েছিল ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে, সেই কারগিল যুদ্ধের সময়ে এ ধরনের যুদ্ধকালীন মহড়া দেওয়া হয় নি।
তবে ১৯৬৫ এবং ১৯৭১-এর যুদ্ধের সময়ে ব্ল্যাক আউট করে দেওয়া হত এবং বিমান হামলার সঙ্কেত দিয়ে সাইরেন বাজানো হত।

ছবির উৎস, Getty Images
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে
পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে পৌঁছেছে। দুই দেশ থেকেই লাগাতার বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রবিবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বলেন যে “আপনারা যেরকম চাইছেন, সেটাই করা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে।”
রবিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে সনাতন সংস্কৃতি জাগরণ মহোৎসবের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাজনাথ সিং। সেখানে তিনি পহেলগাম হামলা বা পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি, কিন্তু নানা ইঙ্গিত দিয়েছেন ভাষণে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ সেদেশের অনেক রাজনীতিবিদ আশঙ্কা করছেন যে ভারত হয়তো কোনও সামরিক পদক্ষেপ নেবে।
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ একটি বেসরকারি সংবাদ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “পাকিস্তানের জল বন্ধ করে দেওয়া বা অন্য খাতে বইয়ে দেওয়ার জন্য কোনও অবকাঠামো যদি তৈরি করা হয়, তাহলে সেটা ধ্বংস করে দেওয়া হবে।”
পহেলগামের হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে আছে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করে দেওয়া এবং পাকিস্তান থেকে সবধরনের রফতানি বন্ধ করে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা।
অন্যদিকে জাহাজ চলাচল দফতরের মহানির্দেশক নির্দেশ দিয়েছেন যে পাকিস্তানের কোনও জাহাজ ভারতের কোনও বন্দরে ঢুকতে পারবে না।