Source : BBC NEWS

বিবিসি ভেরিভাই যে ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করেছে তার একটি থেকে পাওয়া স্ক্রিনগ্র্যাব

ছবির উৎস, X/@DEFENCE_PK99

৫২ মিনিট আগে

ভারতের পাঞ্জাবের একটি কৃষিক্ষেতে রাফাল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়েছিল এবং সেনা সদস্যরা সেগুলো সরানোর কাজে যুক্ত ছিলেন, বিবিসি ভেরিফাই তার প্রমাণ পেয়েছে।

ফ্রান্সের ডাসোঁ এভিয়েশনের তৈরি রাফাল হলো ভারতীয় বিমানবাহিনীর সম্ভারে সবচেয়ে আধুনিক ও বিধ্বংসী যুদ্ধবিমান।

এর আগে বুধবার পাকিস্তানের তরফে দাবি করা হয়েছিল, ভারতের সামরিক অভিযানের সময় তারা অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে অন্তত তিনটি রাফাল আছে বলেও বলা হয়েছিল।

যদিও সেই দাবির পক্ষে কোনো ছবি বা ভিডিও পেশ করা হয়নি, ভারতও সে কথা স্বীকার করেনি। ফলে বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতা ও সংশয় ছিলই।

তবে বিবিসির তথ্য ও খবর যাচাই করার বিভাগ ‘বিবিসি ভেরিফাই’ তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানে এমন তিনটি ভিডিও ‘অথেন্টিকেট’ করতে পেরেছে বা সত্যতা যাচাই করতে পেরেছে – যাতে ফ্রান্সের নির্মিত রাফাল বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে, যেগুলো ভারতের বিমানবাহিনী ব্যবহার করে থাকে।

এই তিনটি ভিডিও ক্লিপের একটিকে ‘জিওলোকেট’ করে সেটি ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের ভাতিন্ডার কাছের একটি জায়গা বলেও চিহ্নিত করা হয়েছে।

সম্পর্কিত খবর :
সোশ্যাল মিডিয়াতে এই বিমানের টেইলফিনের ছবিও ঘুরছে

ছবির উৎস, X/Jim Sciutto

ওই ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে সেনা সদস্যরা বিধ্বস্ত বিমানটির ধ্বংসস্তূপ থেকে বিভিন্ন অংশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার কাহ করছেন।

সেই একই লোকেশনে আরও দুটি ভিডিও বিবিসি ভেরিফাই-এর হাতে এসেছে, যে ছবিগুলো রাতের অন্ধকারে তোলা হয়েছে।

এর একটি ভিডিওতে কৃষিক্ষেতে ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অন্যটিতে দেখা গেছে মাঝআকাশে একটি প্রোজেক্টাইলে আগুন ধরে যাচ্ছে, তারপর ক্ষেতের মাঝখানে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।

ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমানে একটি রিস্ক ইনটেলিজেন্স সংস্থার কর্ণধার জাস্টিন ক্রাম্প বিবিসি ভেরিফাই-কে বলেছেন, তিনি ধারণা করছেন ওই ধ্বংসাবশেষ একটি ফরাসি এয়ার-টু-এয়ার মিসাইলের, যে ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মিরাজ-২০০০ ও রাফাল উভয় যুদ্ধবিমানেই ব্যবহার করা হয়।

সোশ্যাল মিডিয়াতে আরও একটি ছবিও ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাতে একটি বিমানের ‘টেইল ফিন’ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে – যার গায়ে ‘বিএস০০১’ ও ‘রাফাল’ ইংরেজিতে লেখা আছে।

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় বুধবার সকালে একটি অজানা বিমানের ভেঙে পড়া অংশ

ছবির উৎস, Getty Images

গুগলে ‘রিভার্স ইমেজ সার্চ’ করেও এই ছবির কোনো পুরনো সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, যা থেকে মনে করা যেতে পারে এই ছবিটিও একেবারেই নতুন ও সাম্প্রতিক।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য

পাকিস্তান সত্যিই ভারতের কোনও যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে কি না, ভারত আজও এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো ‘অপারেশন সিন্দুর’ নিয়ে দিল্লিতে সংবাদমাধ্যমকে ব্রিফ করতে উপস্থিত হয়েছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি।

তার সঙ্গে গত দিনের মতোই ছিলেন দু’জন নারী সামরিক কর্মকর্তা – স্থলবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং।

গতকাল বুধবার ব্রিফিংয়ে কোনো প্রশ্ন না নেওয়া হলেও এদিন অবশ্য তারা কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন – তবে সামরিক অভিযান সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য বা ‘অপারেশনাল ডিটেলস’ প্রকাশ করা হবে না বলেও জানানো হয়েছিল।

ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার পাকিস্তানি দাবি সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হলে বিক্রম মিশ্রি বলেন, “সঠিক সময় এলে এ ব্যাপারে সরকারি তথ্য আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে।”

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি

ছবির উৎস, Getty Images

একই সঙ্গে তিনি মন্তব্য করেন, পাকিস্তান ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে’ অসত্য কথা বলে আসছে বছরের পর বছর ধরে – আর এই প্রবণতা জাতিসংঘে ১৯৪৮ সালে তাদের বক্তব্য থেকেই শুরু হয়েছে।

সংঘাতের দ্বিতীয় দিনটি যেভাবে কাটল

এদিকে পাকিস্তান ও পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে বুধবার গভীর রাতে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মধ্যে দিয়ে দুই দেশের ভেতরে যে সামরিক উত্তেজনা ও যুদ্ধের আবহ সৃষ্টি হয়েছে, তা বৃহস্পতিবারেও পুরো দিন ধরে অব্যাহত ছিল।

সামরিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে যেমন নানা অভিযোগ এনেছে ও প্রতিপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি করার দাবি করেছে – তেমনি আবার অনেক বিষয়েই দিল্লি বা ইসলামাবাদ কেউই স্পষ্ট জবাব দেয়নি। ফলে এই সংঘাতে ঠিক কী কী ঘটছে, তা নিয়ে বিভ্রান্তিও বাড়ছে।

পাকিস্তান যেমন এদিন দাবি করেছে তারা গত রাত থেকে সকালের মধ্যে মোট ২৫টি ভারতীয় ড্রোনকে ভূপাতিত করেছে। কিন্তু পাকিস্তানের দিক থেকে ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালানো হয়েছে বলে ভারত যে দাবি করেছে, সে ব্যাপারে ইসলামাবাদ কোনও মন্তব্য করেনি।

আবার অন্য দিকে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুরে’ পাঁচটি ভারতীয় ফাইটার জেটকে ভূপাতিত করার যে দাবি পাকিস্তান করেছিল, ভারত সেটা নিয়ে আজও কোনও স্পষ্ট উত্তর দেয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন।

ভারত এদিন এটাও দাবি করেছে যে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি জায়গায় বিমান প্রতিরক্ষা রাডার এবং ব্যবস্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ

ছবির উৎস, Getty Images

ভারত সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “এটা নির্ভরযোগ্যভাবে জানা গেছে যে লাহোরে একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম) নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।” পাকিস্তান এই দাবি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।

অন্যদিকে দু’পক্ষের সংঘাতে প্রাণহানির সংখ্যাও ক্রমশ বাড়ছে বলে দুই দেশের বক্তব্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতের হামলায় বুধবার সকাল থেকে মোট প্রাণহানির সংখ্যা ৩১ ও আহতের সংখ্যা ৫৭-তে পৌঁছেছে – যারা সবাই বেসামরিক নাগরিক।

ভারত আবার জানিয়েছে, কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে পাকিস্তানের শেলিং ও গোলাবর্ষণে ভারতীয় নাগরিক অন্তত ১৬জন বেসামরিক নারী-পুরুষ নিহত হয়েছেন। এদের অনেকেই আবার শিখ সম্প্রদায়ের বলেও জানানো হয়েছে।

উত্তর ও পশ্চিম ভারতের বহু বিমানবন্দরে আজ দ্বিতীয় দিনের মতো বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।

সংঘাতের জেরে রাওয়ালপিন্ডিতে এদিন রাতের পিএসএল ম্যাচ যেমন পিছিয়ে দিতে হয়েছে, তেমনি ভারতের ধরমশালা থেকে রবিবারের আইপিএল ম্যাচও অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

‘শতাধিক সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে’ বলে ভারতের দাবি

ভারতের চালানো অপারেশন সিন্দুরে “শতাধিক সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়েছে” বলে বিরোধী দলের নেতাদের জানিয়েছেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি সরকারের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য তুলে ধরেন।

বার্তা সংস্থা পিটিআই ও ভারতের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলো বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলোকে উদ্ধৃত করে এ কথা জানিয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং

ছবির উৎস, Getty Images

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন :

প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে আরও জানানো হয়েছে, তিনি পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন তারা যদি এই পর্যায় থেকে সংঘাত আরও বাড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

অপারেশন সিন্দুরকে একটি ‘চলমান অভিযান’ বলে বর্ণনা করে বৈঠকে রাজনাথ সিং আরও জানান, ভারত এখন আর নতুন করে কোনও হামলা চালাতে চায় না – কিন্তু পাকিস্তানি সেনা ভারতে আঘাত হানলে অবশ্যই তার জবাব দেওয়া হবে।

কিন্তু ভারতের হামলায় ঠিক কত প্রাণহানি হয়েছে, দিনের আরও পরের দিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে চাননি।