Source : BBC NEWS
৪৪ মিনিট আগে
রাশিয়া ইউক্রেন পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ শুরুর প্রথম বছর ইউক্রেনীয় স্নাইপার ওলেক্সান্ডার মাতসিয়েভস্কি রুশ সেনাদের হাতে বন্দি হয়েছিলেন। পরে একটি ভিডিওতে দেখা যায় জঙ্গলে কবরের পাশে বসে তিনি তার জীবনের শেষ সিগারেটটি খাচ্ছেন, যেটি তাকে খনন করতে বাধ্য করা হয়েছিল।
যারা তাকে আটক করেছিলেন তাদেরকে ওলেক্সান্ডার বলছিলেন ‘তিনি ইউক্রেনের গৌরব’। এর কিছুক্ষণ পর গুলির শব্দ বেজে ওঠে এবং সে মারা যায়।
তার এই মৃত্যুদণ্ড অনেকগুলো ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনা।
চলতি বছরের অক্টোবরে রাশিয়ার কুর্স্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনীর হাতে আটক নয়জন ইউক্রেনীয় সৈন্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
একটি অর্ধ নগ্ন দেহ মাটিতে পড়ে আছে এমন একটি ছবির ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ইউক্রেনের প্রসিকিউটররা। ওই মৃতদেহটি ড্রোন অপারেটর রুসলান হোলুবেনকোরের। ছবি দেখে তার বাবা মা-ই পরিচয় নিশ্চিত করেছে।
“আমি তার অর্ন্তবাস দেখেই চিনতে পেরেছি,” বিচলিত অবস্থায় স্থানীয় সম্প্রচার মাধ্যম সাসপিলনে চেরহনিহিভকে বলছিলেন তার মা।
“আমি সমুদ্র ভ্রমণে যাওয়ার আগে তার জন্য এটি কিনেছিলাম। আমি এটিও জানতাম যে তার কাঁধ বরাবর গুলি করা হয়েছেন। নিশ্চয়ই আপনারা ছবিতেও এটি দেখতে পাচ্ছেন।”
ইউক্রেনীয় বন্দিদের এমন মৃত্যুর ঘটনা চলছেই। ইউক্রেনের প্রসিকিউটররা পেছনে হাত বাধা অবস্থায় একজন ইউক্রেনীয় সেনাকে তরবারি দিয়ে শিরচ্ছেদের মাধ্যমে হত্যার ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় ১৬ জন ইউক্রেনীয় সৈন্যকে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে। এবং একটি জঙ্গলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তাদেরকে ব্রাশফায়ার করে করা হচ্ছে।
এই মৃত্যু নিয়ে যে সব ভিডিও ছড়িয়েছে তার মধ্যে কিছু ভিডিও রুশ সৈন্যরা নিজেরাই করেছে। আর অন্যগুলি নেয়া হয়েছে ইউক্রেনীয় ড্রোনের সাহায্যে।
যে সব ভিডিওতে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দেখা যাচ্ছিলো তার বেশিরভাগই সাধারণত জঙ্গল এলাকা ছিল। যে কারণে অনেকগুলোর সঠিক অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়নি।
বিবিসি ভেরিফাই অবশ্য এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ও স্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। যেমন শিরচ্ছেদের ঘটনা ও ইউক্রেনীয় ইউনিফর্ম পরা ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক।
হত্যার ঘটনা বেড়েই চলছে
ইউক্রেনীয় প্রসিকিউশন সার্ভিস বলছে যে রুশ বাহিনী পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর করার পর থেকে কমপক্ষে ১৪৭ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। যার মধ্যে ১২৭টিই চলতি বছরের।
ইউক্রেনীয় প্রসিকিউটর-জেনারেল অফিসের ও যুদ্ধ বিভাগীয় প্রধান ইউরি বেলোসভ বলেছেন, “এটি যে বেড়েই চলছে, সেটি খুবই স্পষ্ট।”
“গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে এ বছর জুড়ে মৃত্যুদণ্ড অব্যহত রয়েছে। দুঃখজনকভাবে এই শীতে ও গ্রীষ্মে এটি আরও বেড়েছে”।
আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুযায়ী, বিশেষ করে তৃতীয় জেনেভা কনভেনশনে যুদ্ধবন্দিদের সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা আছে। এক্ষেত্রে যুদ্ধবন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা একটি যুদ্ধাপরাধ।
দায়মুক্তি
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর রাচেল ডেনবার বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দিদের রুশ সেনাদের হাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অভিযোগের পক্ষে প্রমাণের অভাব নেই।
তার মতে, এক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো দায়মুক্তি। রাশিয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে। যেগুলোর উত্তর তাদের দেয়া উচিত।
“এই ইউনিটগুলিকে তাদের কমান্ডারদের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বা অনানুষ্ঠানিকভাবে কী নির্দেশনা পেয়েছে? তাদের কমান্ডাররা কি জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধবন্দিদের সাথে কী আচরণ করা উচিত সেটি সম্পর্কে জানে? রাশিয়ান সামরিক কমান্ডাররা তাদের আচরণ সম্পর্কে তাদের ইউনিটগুলিকে কী বলছেন? কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? চেইন অফ কমান্ড কী? কিংবা এই ঘটনাগুলি কী তারা তদন্ত করছে?”
“এবং যদি উচ্চতর ব্যক্তিরা এটি তদন্ত না করে বা পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তারা কি জানে যে তারাও অপরাধীর তালিকায় যুক্ত হতে পারেন এবং তাদেরকেও আটক করা যেতে পারে?” প্রশ্ন রাখেন ডেনবার।
এখন পর্যন্ত, রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে এমন দাবির তদন্ত করছে বলেও কোনো খবর মেলেনি।
ভ্লাদিমির পুতিনের মতে, রাশিয়ান বাহিনী সর্বদা ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিদের সাথে আন্তর্জাতিক আইন ও কনভেনশন মেনেই আচরণ করছে।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধবন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অভিযোগও রয়েছে, তবে সেটি সংখ্যায় অনেক কম।
ইউরি বেলোসভ বলেছেন যে, ইউক্রেনীয় প্রসিকিউশন সার্ভিস এই ধরনের অভিযোগগুলিকে “খুবই গুরুত্ব সহকারে” বিবেচনা করে এবং সেগুলো তদন্ত করছে। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি সে সব ঘটনায়৷
হিউম্যান রাইট ওয়াচের মতে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন শুরুর পর থেকে রাশিয়ান বাহিনী যে সব ‘যুদ্ধাপরাধ’ বা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে তার তদন্ত করা উচিত।