Source : BBC NEWS

রাতভর রাস্তায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা

ছবির উৎস, Subham Dutta / BBC

সোমবার দুপুর থেকে মঙ্গলবার বিকেলে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতরের সামনে বসে আছেন শয়ে শয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা। সবাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়েছেন।

যদিও পরবর্তীতে শীর্ষ আদালত এদের মধ্যে যারা সৎপথে চাকরি পেয়েছেন, তাদের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে পড়ানোর কাজ করতে নির্দেশ দেয়।

তার আগে অবশ্য ২০১৬ সালে নিযুক্ত প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষা-কর্মীরই চাকরি বাতিল করে দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।

চাকরি হারা যে শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতরে অবস্থান করছেন, তাদের দাবি যে তারা নিজেদের যোগ্যতার ভিত্তিতেই চাকরি পেয়েছিলেন, তাই স্কুল সার্ভিস কমিশন যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই অনুযায়ী যোগ্য শিক্ষকদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

সোমবার স্কুল সার্ভিস কমিশন সেই তালিকা প্রকাশ না করায় তখন থেকেই কলকাতা লাগোয়া সল্ট লেকে কমিশনের দফতর ঘেরাও করে রেখেছেন শয়ে শয়ে শিক্ষক।

স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সহ কর্মীরাও দফতরে আটকে আছেন সোমবার থেকেই।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী মঙ্গলবার অনুরোধ করেছেন ওই সব শিক্ষকরা যেন স্কুলে ফিরে যান। তাদের বেতনের দায়িত্ব তার সরকার নিচ্ছে।

এরপরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন যে ১৭,২০৬ জনকে ‘অযোগ্য’দের তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন
পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতরের সামনে শয়ে শয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা ধর্নায় বসেছেন

ছবির উৎস, Subham Dutta / BBC

শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে যা বললেন মমতা ব্যানার্জী

মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ধর্নায় বসা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যেন আন্দোলন শেষ করে স্কুলে ফিরে যান।

তার কথায়, “শিক্ষক-শিক্ষিকা যাঁরা বসে আছেন কাল থেকে কষ্ট করে, এই গরমে কেন বসে আছেন! আপনারা স্কুলে যান, আমি তো আপনাদের বলেছি। সুপ্রিম কোর্ট আপনাদের চাকরি বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা তো রিভিউ পিটিশন করেছি, আমরা তো বলেছি আপনারা মাইনে পাবেন।”

তিনি এও বলেন যে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছে সরকার, প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টেই আবারও রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে সরকার।

“আমি কাল থেকে কম করে দশবার ফোনে কথা বলেছি। আমি কলকাতায় থাকলে হয়তো এক সেকেন্ডে মিটিয়ে দিতে পারতাম,” মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।

“কেউ কেউ রিজিড হয়ে আছে টেন্টেড আনটেন্টেড তালিকা দিতে হবে বলে। এটা তো আপনাদের দেখার দরকার নেই। সেটা দেখার জন্য রাজ্য সরকার আছে, কোর্ট আছে। আমরা প্রমাণ নেব, কোর্টের কথা শুনব। আপনার তো লিস্টের দরকার নেই। আপনার চাকরি করা ও মাইনে পাওয়া দরকার। বাকিটা আমাদের উপর ছেড়ে দিন,” মেদিনীপুরে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মমতা ব্যানার্জীর ওই ভাষণের পরে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এক সংবাদ সম্মেলন করেন।

সেখানে তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ”আপনারা আপনাদের কাজ করুন। কারও তো বেতন আটকায়নি। এইভাবে আন্দোলন করে এমন কোনও পরিস্থিতি তৈরি করবেন না যাতে আপনাদের রিভিউ পিটিশন দুর্বল হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অবমাননা হয় এমন কোনও কাজ করবেন না।”

মেদিনীপুরের সভায় মমতা ব্যানার্জী

ছবির উৎস, Mamata Banerjee / FB

রাতভর রাস্তায় শিক্ষকরা

এদিকে স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে জেলা স্কুল পরিদর্শকদের কাছে পাঠানো একটি চিঠি মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ মাধ্যমের হাতে এসেছে নির্ভরযোগ্য সূত্রে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে যে “যারা অযোগ্য বলে নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় নি” তাদের তালিকা পাঠানো হচ্ছে।

ওই তালিকা প্রকাশ্যে আনা হয় নি যদিও, তবে আন্দোলনরত চাকরি হারাদের প্রতিনিধি দলকে স্কুল সার্ভিস কমিশন ডেকে পাঠিয়ে সেই তালিকা দেখাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তালিকা প্রকাশিত হবে কি না, তাদের চাকরি থাকবে কি না, এই দোলাচলের মধ্যেই ২৬ ঘণ্টারও বেশি সময় হয়ে গেছে, শয়ে শয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা সল্ট লেকের রাস্তায় বসে আছেন।

তাদের জন্য খাবার এবং জল নিয়ে রাতেই পৌঁছেছিলেন আরজি করের ঘটনায় যে জুনিয়র ডাক্তাররা সামিল হয়েছিলেন, তাদের এক প্রতিনিধিদল।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও সকালে শুকনো খাবার ও জল নিয়ে সেখানে গেছে।

সল্ট লেকের রাস্তায় শয়ে শয়ে শিক্ষক শিক্ষিকা কেউ কাগজ পেতে, কেউ বা চাদর পেতে বসে আছেন।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:
স্কুল সার্ভিস কমিশনের গেটে শিক্ষকরা

ছবির উৎস, Subham Dutta / FB

কী কারণে চাকরি হারা?

পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালে যে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল, সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলে। গতবছরের ২২শে এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এক ধাক্কায় পুরো নিয়োগই বাতিল করে দেয়। ওই রায়ের কারণে হঠাৎ করেই চাকরি হারিয়ে পথে বসেছিলেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন।

এদের মধ্যে নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক যেমন ছিলেন, তেমনই ছিলেন শিক্ষাকর্মীরা।

ওই মামলাটিই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল আর ভারতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখে।

পরে অবশ্য, গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট রিভিউ পিটিশনের ভিত্তিতে জানায়, যে সব শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি পাওয়ার কোনও প্রমাণ নেই, তারা ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে পড়াতে পারবেন। ওই সময়ের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।

নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াতে চাকরি হারা শিক্ষকরাও অংশ নিতে পারবেন, অর্থাৎ তাদের আবারও পরীক্ষা দিতে হবে।

কিন্তু শিক্ষা-কর্মীদের ব্যাপারে নতুন কোনও নির্দেশ দেয় নি শীর্ষ আদালত।

এই শিক্ষা- দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েই পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জীসহ স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা এখন জেলে আছেন।

ওই ঘটনার তদন্তে নেমে পার্থ চ্যাটার্জীর এক বান্ধবী– অভিনেত্রী অর্পিতা মুখার্জীর ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি ভারতীয় রুপি নগদ এবং কয়েক কোটি টাকা মূল্যের গয়না উদ্ধার করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।