Source : BBC NEWS

সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনের আগুন

ছবির উৎস, SCREEN GRAB

২৪ মিনিট আগে

বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ের বুধবার দিবাগত রাতে লাগা আগুন ছয় ঘণ্টার বেশি সময় পরে বৃহস্পতিবার সকাল আটটার পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

বুধবার রাত একটার পর সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লাগে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ওই ভবনটিতে ডাক-টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ অবস্থিত বলে জানা যাচ্ছে।

তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে কিছু জানাতে পারে নি ফায়ার সার্ভিস।

ফায়ার সার্ভিস থেকে বলা হয়েছে, রাত পৌনে দুইটার দিকে আগুন লাগার খবর পায় সংস্থাটি। শুরুতে আটটি ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে একে একে মোট ১৯টি ইউনিট পাঠানো হয়।

তবে, বাহিনীটির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল জানিয়েছেন, স্থান স্বল্পতার কারণে ১০ টি ইউনিট কাজ করতে সক্ষম হয়।

মি. কামাল জানান, ওই ভবনের ছয় থেকে নয় তলা পর্যন্ত আগুন বিস্তৃত হয়ে পড়ায়।

এদিকে, আগুন নেভানোর প্রস্তুতি নেয়ার সময় একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী মারা গেছেন।

তার নাম সোহানুর জামান নয়ন। রংপুরের মিঠাপুকুরের নয়ন ২০২২ সালে কর্মজীবন শুরু করেন।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, পানির পাম্প থেকে লাইনের সংযোগ স্থাপন করছিলেন ওই কর্মী। সেসময় রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি দ্রুতগামী ট্রাক তাকে চাপা দেয়।

আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়তে পারেন:
আগুন নেভাতে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

এছাড়া, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আর কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান মি. কামাল।

রাতের বেলা হওয়ায় ভেতরে কেউ ছিলেন না।

তবে এখন আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে জানালেও সচিবালয়ে এখনও বিপুল সংখ্যক ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিবিসি সরেজমিনে যা দেখেছে

সকাল সাড়ে ছয়টায় বিবিসি সংবাদদাতা সৌমিত্র শুভ্র ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান আগুন লাগা ভবনটির বিভিন্ন জানালা দিয়ে তখনো গলগল করে ধোঁয়া বের হচ্ছে।

দমকল বাহিনীর কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন, পানির বড় পাইপ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিয়ে ছোটাছুটি করছেন।

সেসময় দুইটি বড় ল্যাডার দিয়ে পানি ছেটানো হচ্ছিল।

সকাল হতেই আস্তে আস্তে কর্মস্থলে যোগ দিতে সচিবালয়ের কর্মীরা অফিসে আসতে থাকেন।

সচিবালয়ের চারপাশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের ভিড় দেখা গেছে, আশপাশ থেকে অনেকে আগুন লাগার খবর পেয়ে এসেছেন।

যদিও নিরাপত্তা কর্মীরা বাইরের কাউকে সচিবালয় প্রাঙ্গনে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। সচিবালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি সচিবালয়ের কর্মীদেরও ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না।

নিরাপত্তার কারণে সচিবালয় সংলগ্ন সড়কটি আটকে দেয়া হয়েছিল।

ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে।

নিহত ফায়ার ফাইটার সোহানুর জামান নয়ন

ছবির উৎস, FIRE SERVICE AND CIVIL DEFENCE

আগত কর্মকর্তাদের কয়েকজনের সাথে কথা হয় বিবিসি বাংলার। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল হওয়ায় এই অগ্নিকাণ্ডের ফলে সচিবালয়ের সার্বিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হতে পারে বলে উদ্বেগ জানাচ্ছিলেন তাদের কেউ কেউ।

সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে কর্মকর্তা কর্মচারীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুুক কেউ কেউ, এ ঘটনায় সঠিক তদন্তের দাবি জানান।

“রাষ্ট্রীয়ভাবে তদন্ত করলেই শর্ট সার্কিট, না, ষড়যন্ত্র তা জানা যাবে,” বলছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা।

ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

আগুন নেভাতে এত সময় লাগলো কেন?

রাত পৌনে দুইটায় লাগা আগুন নেভাতে ছয় ঘণ্টার বেশি সময় লাগা এবং আগুন নেভাতে এতোগুলো ইউনিটের এত সময় কেন লেগেছে – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেছেন, “জায়গাটা কনফাইনড (আবদ্ধ)।”

“সব কক্ষ ভেতর থেকে আটকানো থাকায় গ্লাস বা দরজা ভেঙে পানি দিতে হয়েছে। এতে সময় লেগেছে। ভবনজুড়ে বিদ্যুতের তারের সংযোগের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় নেভাতে বেগ পেতে হয়,” যোগ করেন তিনি।

এছাড়া রুমগুলোতে ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হয় বলে জানান তিনি।

বিবিসি বাংলার আরও খবর:

এছাড়া, ১৮ ইউনিট নিয়োজিত হলেও সবগুলো ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিতে পারেনি।

তবে, পানির সংকট ছিলো না বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ডিজি।

তিনি বলেন, “আমাদের চেষ্টা ছিল আগুন যেন ছয় তলার নিচে আসতে না পারে।”

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সাত নম্বর ভবন ছাড়া অন্য কোনো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পরিদর্শন

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর সচিবালয় পরিদর্শন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

এ ঘটনাকে নাশকতা মনে করছেন কী না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “এ আগুনের ঘটনাটি ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা, কিংবা এর পেছনে নাশকতা আছে কী-না – তা তদন্তের পর বলা যাবে। এজন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশে দেয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, ছয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। এরপর আগুন ওপরের দিকে যায়।

দুর্ঘটনা যেকোন জায়গায়ই হতে পারে, বলেও মন্তব্য করেন মি. চৌধুরী।