Source : BBC NEWS

বুধবার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে

ছবির উৎস, Mahmud Zaman Ovi

বাংলাদেশে পাঠ্যবইয়ের প্রচ্ছদ থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি প্রত্যাহার, নৃগোষ্ঠীভুক্ত শিক্ষার্থী ও ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের এক সংগঠনের বিক্ষোভ চলাকালে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনা চলছে।

এরই মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার আরেক দল শিক্ষার্থী বুধবারের হামলার প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এই আন্দোলনের সাথে জড়িত কয়েকজন জানান, বৃহস্পতিবার অন্তত তিন থেকে চার জন আহত হওয়ার খবর পেয়েছেন তারা।

এদিকে, বুধবারের হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত একজন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য জানিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হামলায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনায় বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর
আহত একজন

ছবির উৎস, Dr. Asif Nazrul/FACEBOOK

কেন আন্দোলন?

নবম ও দশম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি’ বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ থাকা একটি গ্রাফিতি যুক্ত করা হয়েছিল।

কিন্তু ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামে একটি একটি সংগঠন এর প্রতিবাদ জানিয়ে বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। পরে সরকার সেটি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপর পাঠ্যবইয়ের পিডিএফ সংস্করণ থেকে সেটি সরিয়ে নতুন একটি গ্রাফিতি সংযুক্ত করা হয়। এই পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানায় ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম।

বুধবার হামলা নিয়ে যা বলছে শিক্ষার্থীরা

পাঠ্যবই থেকে গ্রাফিতি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ এই ব্যানারে শিক্ষার্থীরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দুপুরে এনসিটিবির সামনে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপস্থিত হন।

তবে তারা সেখানে পৌঁছানোর আগেই ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামে আরেকটি গ্রুপ সেখানে অবস্থান করছিল বলে জানান কয়েকজন শিক্ষার্থী।

আন্দোলনে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ববি বিশ্বাস বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওইখানে আমাদের আগেই তারা অবস্থান করছিল স্ট্যাম্প, লাঠি এসব নিয়ে। স্ট্যাম্পের মাথায় বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা গিয়ে পৌঁছানোর পর তারা আক্রমণাত্মক স্লোগান দেয়া শুরু করে। আমাদের দিকে তেড়ে আসতে শুরু করে।”

মি. বিশ্বাসের দাবি, প্রথমে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও কয়েক মিনিটের মাথায় তারা একজনের দিকে হাতে থাকা স্ট্যাম্প ছুড়ে মারে। এরপরও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান তারা।

“তখনও আমরা কোনো ধরনের উত্তেজনা দেখাইনি। কিছুক্ষণ পরে আমরা সিদ্ধান্ত নিই ওইখানে বসে পড়বো। আমরা বসার পরে পুলিশদের সরিয়ে ওরা এসে আমাদের আক্রমণ শুরু করলো, যাকে যেভাবে পেরেছে হামলা করে মেরেছে,” বলেন এই শিক্ষার্থী।

ওই সংগঠনের ব্যক্তিদের বয়স পঞ্চাশ বা তারও বেশি বলে মনে হয়েছে মি. বিশ্বাসের।

তিনি দাবি করেন, যারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে তাদের কেউই শিক্ষার্থী নয়।

বুধবার হামলার ঘটনায় তাদের অন্তত দশ জন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন মি. বিশ্বাস।

'স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি' নামের সংগঠনটির কর্মীরা প্রতিবাদকারী নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ

ছবির উৎস, Mahmud Zaman Ovi

‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র দাবি

মতিঝিলে নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে। যারা বুধবার ওই একই সময়ে এনসিটিবির সামনে সমাবেশ-আন্দোলন করছিলেন।

তবে তারা পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ দেয়া এবং জুলাই গণ অভ্যুত্থান-বিরোধী অখণ্ড ভারতের কল্পিত গ্রাফিতি সংযোজনের অভিযোগে পাঠ্যপুস্তক কমিটির সদস্য রাখাল রাহার অপসারণ এবং জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে তদন্ত কমিটি গঠন না হওয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ ইয়াকুব মজুমদার বিবিসি বাংলাকে জানান, বুধবারের এনসিটিবি ঘেরাও ও বিক্ষোভ কর্মসূচি তাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি।

গত ১২ই জানুয়ারিতে এ সংগঠনটি পাঁচ দফা দাবিতে মতিঝিলে এনসিটিবি ঘেরাও ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল।

ওইদিন এনসিটিবি তাদের দাবি মেনে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয় বলে জানান মি. মজুমদার।

পরে ওইদিন রাতেই পাঠ্যবইয়ের কভার পৃষ্ঠা থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতিটি বাদ দেয়া হয়।

মি. মজুমদারের দাবি এর মাধ্যমে তাদের আংশিক দাবি পূরণ করে এনসিটিবি।

পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটিতে থাকা রাখাল রাহাকে অপসারণ ও তদন্ত কমিটির দাবি পূরণ না হওয়ায় তিন দিন আগেই বুধবারের কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয় বলে জানান মি. মজুমদার।

বুধবার সকালে এনসিটিবির সামনে শান্তিপূর্ণভাবে এ সংগঠনের কর্মীরা অবস্থান নেয় বলে দাবি করেন মি. মজুমদার।

তাদের সমাবেশ শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে আনুমানিক ১২টার দিকে এনসিটিবির কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে সময়ক্ষেপণ করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

“আমরা যখন ভেতরে যাই, ভেতরে আমাদের কালক্ষেপণ করানো হয়। উনাদের মিস ম্যানেজমেন্টের জন্য এটা হয়। আমরা জানি যে ওই সময় উপজাতি ওরা আসতেছে। পুলিশকে বলা ছিল আমাদের ১৫ মিনিট সময় দেন। আমরা কথা বলবো, কথা বলে আমরা আমাদের সমাবেশ সরিয়ে নেব। তখন উনারা এসে উনাদের সমাবেশ করতে পারবেন। পুলিশের সাথে এটা কথাই ছিল,” বলেন মি. মজুমদার।

কিন্তু এনসিটিবির ভবনে যাওয়ার পর একবার চেয়ারম্যান, পরে সচিবের কথা বলে তাদের সময় নষ্ট করা হয় বলে অভিযোগ করেন মি. মজুমদার।

প্রথমে পাঁচতলায় তাদের নেয়ার পর আবার ছয় তলায় তাদের এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন দুই জন কর্মকর্তা এবং রাখাল রাহার সাথে আলোচনায় বসানো হয় এবং তারা এর প্রতিবাদ করেছেন বলে দাবি করেন ইয়াকুব মজুমদার।

মি. মজুমদার জানান তারা মোট ছয় জন এনসিটিবি ভবনে যান।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর হামলা

ছবির উৎস, Dr. Asif Nazrul/FACEBOOK

এক পর্যায়ে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা নিচে নামি। নিচে নামার সাথে সাথেই কিন্তু আমরা আমাদের ‘ইয়েটাকে’ (সমাবেশ) সংযত করি এবং শাপলা চত্বরের দিকে নিয়ে যাই। এর মধ্যে যে কী হয়েছে ওই সময়ে এক্সাক্টলি জানতাম না,” দাবি করেন মি. মজুমদার।

এই সংগঠনের কেউ হামলার সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।

মি. মজুমদার বলেন, “এরপরে দেখলাম হামলার ঘটনাটা আসলো। বিশেষ করে একজন মেয়ে শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে, এটাতো কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা বলেছিলাম নেতৃত্ব থেকে যাতে কোনো ধরনের সহিংসতা না হয়। সহিংসতা করতে আসলে এনসিটিবির সাথে কথা বলতাম না।”

“আমরা যদি খুব তাড়াতাড়ি করে আসতে পারতাম তাহলে হয়তোবা এই সংঘর্ষটা এই দিকে কখনোই যাইতে পারতো না,” বলেন তিনি।

যারাই এ হামলা করেছে তাদের শাস্তি দাবি করে মি. মজুমদার বলেন, “এখানে ভিডিও ফুটেজগুলো স্পষ্ট, যারাই এটা করুক এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে আমরা মনে করি।”

হামলায় জড়িতদের যেসব ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে তাদের চেনেন না বলে দাবি করেন তিনি।

“পত্রিকায় যাদের আমি দেখেছি ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে আমি চিনতে পারতেছি না। ওইখান থেকে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুবই ফ্রাস্ট্রেটেড,” বলেন মি. মজুমদার।

হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিজেদের সংগঠনের অনেক নেতাও আহত হয়েছে বলে দাবি তার।

‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ কারা?

কবে এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠা এমন প্রশ্নে যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াকুব মজুমদার জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর অধ্যাপক ইউনূস জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণ দেন। ওই ভাষণে তিনি ‘আদিবাসী’ শব্দটি উচ্চারণ করার প্রেক্ষাপটেই এ সংগঠনের উৎপত্তি।

মি. মজুমদার বলেন, “এর ঠিক পরের দিনই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন মহল একটা প্রতিবাদ জানাই। ওইটার থেকেই আসলে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি ব্যাপারটা উঠে আসে।”

অর্থাৎ মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। যদিও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কোথাও দেয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইয়াকুব মজুমদার জানান সংগঠনের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

সংগঠনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তবে তিনি এখন শিক্ষার্থী না হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট বলে জানান যুগ্ম আহ্বায়ক।

সংগঠনের কমিটির সদস্য সংখ্যা কত জন সেটি এখনো সুনির্দিষ্ট করা হয়নি বলে জানান তিনি।

“আমাদের কমিটির সদস্যটা আসলে এখনো ফাইনালাইজ করা হয়নি। আমরা চাচ্ছিলাম কয়েক দিনের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন করে কমিটিটা ফাইনালাইজ করবো। এখনো করা হয় নাই।”

আহ্বায়কসহ কতজন সদস্য সেটিও সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি। বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে জানান, আরও কয়েকজনকে রাখার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।

এটি “রাজনৈতিক সংগঠন নয়” দাবি করেন তিনি বলেন, “স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি মানেই তো বুঝতে পারছেন, মানে সর্বভৌমত্বের ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করা হয়। এর আগে যেমন সেন্টমার্টিন নিয়ে কাজ করেছিলাম।”

বিবিসি বাংলার যত খবর
হামলায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে।

ছবির উৎস, Mahmud Zaman Ovi

হামলায় অভিযুক্ত একজন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য

এনসিটিবির সামনে হামলায় আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গা।

তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গাসহ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির ধানমন্ডি থানার প্রতিনিধি শাহাদাৎ ফরাজী সাকিবের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

ভিডিও ফুটেজ এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির সোশাল মিডিয়া কার্যক্রমে সেটি স্পষ্ট বলে দাবি করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির একজন প্রতিনিধির জাতিগত বিভাজন জিইয়ে রাখা ও ন্যক্কারজনক হামলায় জড়িত থাকা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয় দাবি করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত শাহাদাৎ ফরাজী সাকিবের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটিকে অতি দ্রুত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান করা হয়েছে।

এদিকে, এ বিষয়ে কথা বলতে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীকে মোবাইলে ফোন করলেও রিসিভ করেননি তিনি।

সদস্য সচিব আখতার হোসেনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের অ্যাকশন

ছবির উৎস, TV GRAB

বৃহস্পতিবার আবার সংঘর্ষ

বৃহস্পতিবার ঢাকায় হাইকোর্ট মাজার ও শিক্ষা ভবনের সামনে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে এবার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘাত তৈরি হয় পুলিশের।

শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমবেত হয়ে সচিবালয়ের দিকে এগোতে গেলে সেখানেই তাদের বাধা দেয় পুলিশ।

‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র–জনতা’ র ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, জল-কামান ছুড়ে এবং তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চার্জ করে।

পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার মাসুদ আলম ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের জানান, শুরুতে আন্দোলনকারীদেরকে অনুরোধ করা হয়েছিলো।

কিন্তু শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলায় ছত্রভঙ্গ করতে জল কামান ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান মি. আলম।

“যখনই ভেঙে ফেলছে, তখন আমরা জল-কামান ব্যবহার করছি, যাতে না যেতে পারে। তাদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য হালকা হাওয়া দিছি। সাউন্ড গ্রেনেড দেওয়া হইছে, যাতে ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যায়,” বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে দ্বিমত নাই উল্লেখ করে মি. আলম বলেন, “এইটুকুই আমাদের উদ্দেশ্য। আমাদের উদ্দেশ্য কাউরে মারা না, কারো ক্ষতি করা না, কোনো কিছু না। বরঞ্চ ওদের দাবির সাথে আমাদের কোনো দ্বিমত নাই।”

সরকারের পদক্ষেপ কী?

বুধবার দুপুরে হামলার ঘটনার পর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে।

এরই মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকার এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতি দিয়েছে।

বেলা সাড়ে বারোটায় প্রেস উইং থেকে পাঠানো এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সামনে বুধবার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার এই হামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং ইতোমধ্যেই এ ঘটনায় দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

সরকারের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, “অন্য অপরাধীদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে এবং শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে। সকল অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।”

প্রেস উইং এর পাঠানো বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সরকার দ্যর্থহীন ভাষায় পুনর্ব্যক্ত করে যে বাংলাদেশে সহিংসতা, জাতিগত বিদ্বেষ এবং ধর্মান্ধতার কোনো স্থান নেই।”

এ ঘটনার পর রাতেই অন্তর্বর্তী সরকারের দুই জন উপদেষ্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জানান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর হামলার ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বুধবার রাতে এক পোস্টে এ কথা জানান।

মি. নজরুল আহত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের ছবি শেয়ার করে পোস্টে লিখেছেন, “এই ঘটনার অবশ্যই বিচার হবে। দুইজন ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে”।

আরেকজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফেসবুকের একটি পোস্টে জানিয়েছেন ঘটনার তদন্ত করা হবে।