Source : BBC NEWS

ডোনাল্ড ট্রাম্প

ছবির উৎস, Getty Images

৪ মিনিট আগে

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের’ সুবিধা আর না রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কেউ জন্মগ্রহণ করলেই তিনি স্বয়ংস্ক্রিয়ভাবে দেশটির নাগরিকত্ব পেয়ে যান।

সোমবার একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যেখানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টিতে ফোকাস করা হয়েছে। যদিও এর বিস্তারিত এখনো পরিষ্কার জানা যায়নি।

জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে এসেছে, যাতে বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া সব ব্যক্তিই ‘যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক’।

যদিও ট্রাম্প এই সুযোগটির চর্চা বন্ধ করতে সোচ্চার হয়েছে কিন্তু তার এই উদ্যোগকে উল্লেখযোগ্য আইনি বাধা অতিক্রম করতে হবে।

দ্যা আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন এবং অন্য গ্রুপগুলো তাৎক্ষণিকভাবে এই নির্বাহী আদেশের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
অনেকগুলো নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

ছবির উৎস, EPA

‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব’ বিষয়টি কী

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর প্রথম বাক্যেই ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের’ নীতির বিষয়টি বলা হয়েছে।

“যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া বা নাগরিক অধিকার পাওয়া সব ব্যক্তিই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এবং রাষ্ট্রের যেখানেই তারা বাস করুন না কেন”।

অভিবাসন কট্টরপন্থীরা অনেক সময় বলে থাকেন যে এই নীতিই অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং এটিই গর্ভবতী নারীদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সন্তান জন্মদানে উৎসাহিত করে।

একে অনেক সময় ‘বার্থ ট্যুরিজম’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আর এভাবে জন্ম নেয়া শিশুকে ‘অ্যাংকর বেবি’ বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী আনা হয়েছিল ১৮৬৮ সালে

ছবির উৎস, HULTON ARCHIVE/GETTY IMAGES

এটি কিভাবে শুরু হয়েছিলো?

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী গৃহীত হয়েছিলো ১৮৬৮ সালে, গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর। এর আগে ত্রয়োদশ সংশোধনীতে দাস প্রথার বিলুপ্তি হয়েছিলো ১৮৬৫ সালে।

চতুর্দশ সংশোধনীতে আমেরিকায় জন্ম নেয়া, যারা আগে দাস ছিলো তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টির সমাধান করা হয়।

এর আগে ১৮৫৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিদ্ধান্ত হয়েছিলো যে আফ্রিকান আমেরিকানরা কখনো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারবে না, যা ১৪তম সংশোধনীতে বাতিল হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট পরে ‘ওয়াং কিম আর্ক বনাম যুক্তরাষ্ট্র’ মামলায় ১৮৯৮ সালে অভিবাসীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নীতির প্রয়োগ নিশ্চিত করে।

চব্বিশ বছর বয়সী ওয়াং চীনা অভিবাসীর সন্তান ছিলেন। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রেই জন্মেছিলেন। পরে চীন সফরে গিয়ে ফিরে আসার সময় তার পুনঃপ্রবেশে বাধা দেয়া হয়।

ওয়াং সফল ভাবে এটি তুলে ধরেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মেছিলেন বলে তার বাবা মায়ের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসের আবেদনে কোন প্রভাব ফেলবে না।

“ওয়াং কিম আর্ক বনাম যুক্তরাষ্ট্র মামলা নিশ্চিত করে যে বাবা মায়ের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস বা বর্ণ যাই হোক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া সব ব্যক্তিই নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য সব সুবিধা পাওয়ার দাবিদার,” লিখেছেন এরিকা লি। তিনি মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিগ্রেশন হিস্টরি রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর।

তার মতে, “আদালত এর পর আর বিষয়টি পুনরায় কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা করেনি”।

ওয়াং কিম আর্ক যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গেলে ফেরার সময় তাঁকে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়েছিল।

ছবির উৎস, Image copyright

ট্রাম্প এটি উল্টে দিতে পারেন?

বেশিরভাগ আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সুবিধার সমাপ্তি টানতে পারেন না।

“তিনি এমন কিছু করেছেন যা বহু মানুষকে হতাশ করতে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে আসলে সিদ্ধান্ত হবে আদালতে,” বলেছেন সাইকৃষ্ণ প্রকাশ।

তিনি ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ল স্কুলের অধ্যাপক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ। “এটা এমন কোন বিষয় নয় যে তিনি নিজের ইচ্ছেয় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন”।

মি. প্রকাশ বলেন প্রেসিডেন্ট ফেডারেল এজেন্সিকে নাগরিকত্বের বিষয়টি আরও সতর্কভাবে ব্যাখ্যা করতে আদেশ দিতে পারেন কিন্তু নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হলে যে কেউই আদালতে সেটি চ্যালেঞ্জ করবেন।

“এটি লম্বা আইনি লড়াইয়ের সূচনা করতে পারে যা শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে পারে”।

সংবিধানের একটি সংশোধনীর মাধ্যমে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুবিধা বাতিল করা যায়, কিন্তু তার জন্যও দরকার হবে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট এবং তিন চতুর্থাংশ রাজ্যকে সেটি অনুমোদন করতে হবে।

আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তাদের জন্য যে অনুষ্ঠান হয়, এর অংশ হিসেবে তাদের দেশটির পতাকা উড়াতে হয়।

ছবির উৎস, GettyImages

কত মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে?

পিউ রিসার্চ অনুযায়ী ২০১৬ সালে অবৈধ অভিবাসী বাবা মায়ের মোট সন্তান জন্ম নিয়েছিলো আড়াই লাখ, যা ২০০৭ সালের চেয়ে ৩৬ শতাংশ কম ছিলো।

কিন্তু ২০২২ সালে এমন ১২ লাখ মার্কিন নাগরিকের জন্ম হয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের ঘরে।

এসব সন্তানদের সন্তানও হবে মার্কিন নাগরিক। ২০৫০ সাল নাগাদ অবৈধ অভিবাসীদের সন্তান সংখ্যা ৪৭ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে দ্যা মাইগ্রেশন পলিসি ইন্সটিটিউট নামের একটি সংস্থা।

এনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেছেন অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের বাবা মায়ের সাথে ডিপোর্ট করা বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো উচিত, এমনকি তারা যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেও।

“আমি কোন পরিবার ভাঙ্গতে চাই না, “ট্রাম্প বলছিলেন গত ডিসেম্বরে। “সুতরাং পরিবার না ভেঙ্গে বা তাদের একসাথে রাখতে হলে তাদের সবাইকে একসাথে ফেরত পাঠাতে হবে”।

কোন কোন দেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আছে?

ত্রিশটিরও বেশি দেশে এই সুযোগ আছে। এর মধ্যে মেক্সিকো ও কানাডার মতো দেশও আছে।

অন্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় বাবা মায়ের একজন নাগরিক বা স্থায়ী অধিবাসী হলে তাদের সন্তানকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই নাগরিকত্ব দেয়া হয়।