Source : BBC NEWS

এক ঘন্টা আগে
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় পূজা উদযাপন পরিষদের একজন নেতার মৃত্যুর ঘটনায় ভারত ও বাংলাদেশের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এটিকে ‘পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করলেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্র তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ভারতের দাবি এ ঘটনার সাথে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের যোগসূত্র আছে। বাংলাদেশ বরাবরই এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন বলেছেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নেতার ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ হয়েছে।
তবে নিহতের ছেলে বিবিসিকে বলেছেন, তার বাবাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মারা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। এ নিয়ে তারা মামলারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে ভবেশ চন্দ্র রায় নামে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তিনি বিরল উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন।
ওই পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবল রায় বিবিসিকে বলেছেন, ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃতদেহ বাড়িতে আনার পর তারা এবং পরিবারের সদস্যরা তার গলায় ও ঘাড়ে আঘাতের চিহ্ন দেখেছেন।
প্রসঙ্গত, গত বছর অগাস্টে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের নানা অভিযোগ আসতে থাকে। ভারত সরকারের দিক থেকেও এ বিষয়ে একাধিকবার বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
তবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই ধর্মীয় কারণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বা নির্যাতনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

ছবির উৎস, X
ঘটনা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে
দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, তারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন যে মি. রায় তার পরিচিতদের সঙ্গে বাইরে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং তার স্বাভাবিক মৃত্যুই হয়েছে।
কিন্তু নিহতের ছেলে স্বপন চন্দ্র রায় এবং স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ভবেশ চন্দ্র রায়কে স্থানীয় চার জন ব্যক্তি বৃহস্পতিবার বিকেলে দুটি মটর সাইকেলে করে তার বাড়িতে এসে ডেকে নিয়ে যায়।
এর প্রায় দু’ঘণ্টা পর তাদেরই একজন তখন দিনাজপুর শহরে থাকা স্বপন চন্দ্র রায়কে ফোন করে জানান, তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসতে বলা হয়।
“আমি তখন বলি আপনারা বাড়িতে নিয়ে যান, আমি আসছি। তারা তখন বলে যে না, এখনি আসতে হবে চিকিৎসার জন্য নিতে হবে। আমি বললাম তাহলে হাসপাতালে নিয়ে যান। তারা এরপরেও আমাকে জোর করলে আমি অ্যাম্বুলেন্স খবর দিয়ে সেখানে যাই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন স্বপন চন্দ্র রায়।
মি. রায় বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন তার বাবাকে একটি ভ্যানে রাখা হয়েছে এবং তার কোন চেতনা নেই।
“এরপর হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান, আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। এটি অবশ্যই হত্যাকাণ্ড,” বলছিলেন তিনি।
কেন তারা হত্যাকাণ্ড বলছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা একজন সুস্থ মানুষকে ঘর থেকে নিয়ে গেলো আর দু’ঘণ্টার মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন।
“এমনি অসুস্থ হলে তো তারা নিজেরাই হাসপাতালে নিয়ে যেতো, আমার জন্য ফেলে রেখে যেতো না। কিছু ঘটেছে বলেই তারা ওই অবস্থায় রেখে চলে গেছে,” বলছিলেন তিনি।
স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, যে চার জন মোটর সাইকেলে করে এসে ভবেশ চন্দ্র রায়কে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের একজনের বাড়ি মি. রায়ের বাড়ির কাছেই। তাদেরকে এ ঘটনার পর থেকে আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

ছবির উৎস, Getty Images
তবে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন বলছেন, রবিবার দুপুর পর্যন্ত পরিবারের কেউ এ ঘটনা নিয়ে থানায় কোন অভিযোগ করেনি।
“তারপরেও নানা আলোচনার কারণে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি যে, এটি একটি স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। সুরতহাল রিপোর্টেও কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি”।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুর ঘটনা শুনে তিনি কখন বের হয়েছেন, কোথায় গেছেন, কার সাথে গেছেন, কী করেছেন সব কিছু দেখে ও সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জেনেছে পুলিশ।
“আমরা তাতে ভিন্ন কিছু পাইনি। এরপরেও অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেহেতু এটা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে, তাই পুলিশের দিক থেকে আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আবার পরিবার মামলা করলেও আমরা তদন্ত করবো,” বলছিলেন তিনি।
মি. হুসাইন বলেন, ঘটনাটি এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক মৃত্যু হলেও পরে অস্বাভাবিক কোন কিছু পেলে, পরিবার মামলা না করলেও পুলিশ নিজেরাই মামলা করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিবে।

ছবির উৎস, Getty Images
বাংলাদেশ-ভারত বিতর্ক
ভবেশ চন্দ্র রায়ের ঘটনাটি নতুন করে আলোচনায় আসে শনিবার, সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল এর একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে।
ওই পোস্টে মি. জয়সওয়াল অভিযোগ করেন যে, বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নেতার ‘অপহরণ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড’ তাদের দৃষ্টিতে এসেছে।
তিনি দাবি করেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর পদ্ধতিগত নির্যাতনের যে প্যাটার্ন, সেটিকে অনুসরণ করেই এ ঘটনা ঘটেছে। এমনকি আগের এ ধরনের ঘটনায় অপরাধীরা দায়মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে”।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, কোন ক্ষমা বা অজুহাত ছাড়াই হিন্দুসহ সব সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার দায়িত্ব সম্পর্কে তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
ভারত সরকারের দিক থেকে এ ধরনের অভিযোগ আসার পরপরই তা প্রত্যাখ্যান করে প্রতিক্রিয়া আসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে। তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা বাসসকে জানান “আমরা এই ভিত্তিহীন দাবিকে প্রত্যাখ্যান করছি”।
শফিকুল আলম জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে (ভবেশ চন্দ্র রায়ের) শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
তবুও, মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে ভিসেরা বিশ্লেষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
মি.আলম বলেছেন, ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
“দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ভবেশ চন্দ্র রায়ের মৃত্যুকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর ‘সংগঠিত নিপীড়নের ধারাবাহিকতার’ অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে,” বাসসকে বলেছেন মি. আলম।
এ ঘটনা নিয়ে ‘বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক’ বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকার জন্য তিনি সবার প্রতি আহবান জানিয়েছেন।