Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Getty Images
এক ঘন্টা আগে
ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হওয়ার পর গত তিনদিনে নিয়ন্ত্রণ রেখার দুই পাশের গ্রাম-শহরগুলোতে যে সাধারণ মানুষরা থাকেন, বা বলা ভাল থাকতেন, তাদের দিন-রাত কাটছে আতঙ্কে।
বহু মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। বিবিসির সংবাদদাতারা দুই দেশের গ্রাম-শহরগুলোতে দেখেছেন বসতবাড়ির মধ্যে গোলা পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক বাড়ি। কোথাও আবার গোটা শহরই প্রায় খালি করে মানুষ পালিয়েছে।
ভারতের দিক থেকে ডেভিনা গুপ্তা, আমীর পীরজাদা আর পাকিস্তানের দিক থেকে তাবান্ডা কোকাব ও ফারহাত জাভেদের প্রতিবেদন:
ভারত শাসিত কাশ্মীরের উরি আর কুপওয়ারায় গিয়েছিলেন বিবিসির আমীর পীরজাদা।
ওই অঞ্চলের স্থানীয় মানুষ সীমান্তের অপর দিক থেকে গোলাগুলির ঘটনায় অভ্যস্ত।
তবে কুপওয়ারা ক্রালপোরা গ্রামের মানুষ কখনও দেখেন নি যে তাদের গ্রামে গোলা এসে পড়েছে।
“জীবনে এই প্রথম আমাদের গ্রামে গোলা এসে পড়ল,” বিবিসিকে বলেছেন গ্রামটির বাসিন্দা তনভির আহমেদ।
শুক্রবার ভোর পাঁচটা নাগাদ তার বাড়িতে একটা গোলা এসে পড়ে। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার একটা ট্রাক ও মাটি কাটার যন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে।
তবে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন, কারণ পরিবারের সবাই মাত্র ৫০০ মিটার দূরে একটা আশ্রয় কেন্দ্রে চলে গিয়েছিলেন। তাদের গ্রামে বেসামরিক নাগরিকদের জন্য কোনো বাঙ্কার বানানো হয় নি।

উরি যেন এক ভূতুরে শহর
উরি শহরের বাসিন্দারাও বলছেন, এত বেশি সংখ্যায় গোলা পড়তে তারা কখনও দেখেন নি।
বিবিসিকে পাঠানো এক টেলিফোন ভয়েস মেসেজে উরির বাসিন্দা নিসার হুসেইন বলছেন, “আমরা একটা মসজিদের বেসমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এটা বছর দশেক আগে বানানো হয়েছে। সকালে যখন বাড়ির দিকে যাই দেখতে পাই আমার বাড়ির আশপাশেই তিনটে গোলা পড়েছে। বাড়ির কিছুটা অংশ ভেঙ্গে গেছে।”
একই দৃশ্য দেখেছেন বিবিসির আরেক সংবাদদাতা ডেভিনা গুপ্তা।
তিনি ভারত শাসিত কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার সুরানকোটে গিয়েছিলেন।
তিনি বলছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে পুঞ্চ জেলার বহু মানুষ এখন ঘরছাড়া।
বুধবার মাঝরাতের পরে পাকিস্তানে ভারতীয় হামলার পর থেকে গোলাবর্ষণ বহুগুণ বেড়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
সোবিয়া নামের এক বাসিন্দা বিবিসিকে বলেছেন, “হঠাৎ একটা বিস্ফোরণের শব্দ শুনে একমাসের বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে দৌড়াই আমি।”
সুরফিন আখতারের বাড়ির সামনেই একটা গোলা এসে পড়েছিল। তারপরেই ঘর থেকে পালিয়েছেন তারা।
“একটাও গাড়ি পাওয়া যায় নি। বহুদূর পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়েছে। এত গোলাবর্ষণ হচ্ছিল যে পুরো রাস্তা আমি ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে হেঁটেছি,” বলছিলেন মিজ আখতার।

ছবির উৎস, Getty Images / BBC
অন্য প্রান্তেও একই চিত্র
নিয়ন্ত্রণ রেখার ভারতীয় অংশে যেমন সুরফিন আখতার সারা রাস্তা কেঁদেছেন, পাকিস্তানের দিকে চাকোঠি গ্রামের বেশির ভাগ কমবয়সী নারী আর বাচ্চারা সারা রাত কেঁদেছেন।
“ওরা তো জীবনে এত বেশি গোলাবর্ষণ দেখেন নি। এর আগে এত বেশী গোলাবর্ষণ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে, তখন তো বাচ্চারা কেউ জন্মায় নি,” বিবিসির তাবান্ডা কোকাবকে বলছিলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা কিফায়াত হুসেইন।
ছয় তারিখ রাতটা তিনি পরিবারকে নিয়ে একটা সিমেন্ট ঢালাই করা বাথরুমে বসে কাটিয়েছেন।
চাকোঠি সহ পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের বেশিরভাগ গ্রামের বাড়িতে ২০০৫ সালে ভূমিকম্পর পর থেকেই টিনের ছাদ দেওয়া হয়। ওই সব ছাদ গোলাগুলি একেবারেই আটকাতে সক্ষম নয়।
মি. হুসেইন বলছিলেন, “গোলাগুলি শুরু হতেই সব বাসন আর অন্যান্য জিনিষপত্র মাটিতে আছড়িয়ে পড়তে শুরু করল আর বাচ্চারা খুব জোরে কাঁদতে শুরু করল।

ছবির উৎস, Getty Images
‘বাজারেও যাচ্ছি না’
পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্ফরাবাদে রয়েছেন বিবিসির ফারহাত জাভেদ।
নিয়ন্ত্রণ রেখার ধারে নীলম উপত্যকা থেকে সম্প্রতি মুজফ্ফরাবাদ শহরে পরিবার নিয়ে চলে এসেছেন মুহাম্মদ শাগির। বাড়ির সামনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়ার পরেই তিনি পরিবারকে সরিয়ে নিয়ে আসেন।
তিনি বলছিলেন, “বাচ্চারা, বিশেষ করে ছোটগুলো ব্যাপক ভয় পেয়ে গিয়েছিল।
“আমরা ওদের শুধু বোঝাচ্ছিলাম যে একটা নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাব। রাতটা খুব ভয়াবহ ছিল। পরের দিন সকালেই আমি বাচ্চাদের নিয়ে পাশের শহরে বোনের বাড়িতে চলে যাই,” জানিয়েছেন মি. শাগির।
মি. শাহরিয়ার অবশ্য এখনও শহর ছেড়ে যান নি, তবে তার পরিবার ব্যাগপত্র গুছিয়ে রেখেছে, যদি কিছু হয় তাহলে যাতে সঙ্গে সঙ্গেই পালাতে পারেন তারা।
তার কথায়, “আগে থেকে তো বলা যায় না কখন কী হয়। আমরা শহরে থাকি আর চারদিকে প্রচুর সামরিক স্থাপনা রয়েছে। আমরা তো বাড়ি থেকে বেরচ্ছি না, এমনকি বাজারেও যাচ্ছি না।”