Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Getty Images
ভারতের অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করার কথা জানিয়েছে পাকিস্তান। ভারত এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও বিবিসি ভেরিফাই তার প্রমাণ পেয়েছে ভারতের পাঞ্জাবের একটি কৃষিক্ষেতে রাফাল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়েছিল এবং সেনা সদস্যরা সেগুলো সরানোর কাজে যুক্ত ছিলেন।
পাকিস্তান বলেছে, ভূপাতিত করা বিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল, একটি সুখোই ও একটি মিগ-২৯। এই বিমানগুলোসহ দেশদুটোর সামরিক বিমান নিয়ে এই প্রতিবেদন।
সক্ষমতার তফাৎ
ভারতের বিমানবাহিনীর অধীনে রয়েছে ৩১টি স্কোয়াড্রন, যেখানে প্রতিটি স্কোয়াড্রনে ১৭ থেকে ১৮টি যুদ্ধবিমান থাকে। অপরদিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর রয়েছে ১১টি স্কোয়াড্রন।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের কাছে মোট ২ হাজার ২২৯টি বিমান রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের আছে ১ হাজার ৩৯৯টি।

ছবির উৎস, Getty Images

ছবির উৎস, Getty Images
তবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এস.এইচ. পানাগ ‘দ্য প্রিন্ট’-এর এক প্রবন্ধে লিখেছিলেন, পাকিস্তান একটি পরমাণু অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সীমিত সামরিক পদক্ষেপের জবাব দেওয়ার জন্য তাদের যথেষ্ট প্রচলিত সামরিক শক্তি রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেছিলেন, “ভারতের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন বা বিমানবাহিনীর ক্ষেত্রে যতই সক্ষমতা থাকুক, প্রযুক্তিগতভাবে ভারত এখনো এতটা এগিয়ে নেই যে কোনো পাল্টা ক্ষতি ছাড়াই পাল্টা সার্জিকাল স্ট্রাইক চালাতে পারবে। পাকিস্তানের পাল্টা জবাব দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এবং আমাদের সে প্রস্তুতি থাকা উচিত।”
রাফাল ও মিরাজ

ছবির উৎস, Reuters
ভারতের বিমানবাহিনীর বহরে সবচেয়ে বড় সংযোজন ফ্রান্স থেকে আনা রাফাল যুদ্ধবিমান। ভারত এর আগে ৩৬টি রাফাল বিমান কেনার কথা জানিয়েছিলো।
সবশেষ পহেলগাম হামলার পর নৌবাহিনীর জন্য আরও ২৬টি রাফাল বিমান কেনার চুক্তি হয়েছে যেগুলো ২০২৮ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে সরবরাহ করার কথা।
এই চুক্তি ৬৪ হাজার কোটি রুপির অর্থাৎ প্রায় ৭৫০ কোটি ডলার মূল্যের বলে জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি বিমানের জন্য গড়ে ২৮.৮৫ কোটি ডলার খরচ করতে হবে ভারতকে।
২০১৬ সালের চুক্তির ৩৬টি বিমান নিয়েও ভারতে বেশ বিতর্ক হয়েছিল। বিদেশি কোম্পানিগুলোকে সাধারণত ভারতে ব্যবসা করতে ভারতীয় কোম্পানির সাথে অন্তত ৩০% বিনিয়োগ করে পার্টনারশিপে যেতে হয়।
২০১৮ সালে তৎকালীন ফ্রেঞ্চ প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে নরেন্দ্র মোদী ফ্রান্সের ডিসল্ট এভিয়েশনকে ভারতের অনিল আমবানির রিলায়েন্স ডিফেন্স কোম্পানির সাথে পার্টনারশিপে চাপ দিয়েছেন। ডিসল্ট তৎকালীন প্রায় ৮৭০ কোটি ডলারের ৫০% বিনিয়োগে সম্মত হয়।
সেসময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও আদালত তা খারিজ করে দেয়।

ছবির উৎস, Reuters
সক্ষমতার দিকে দেখলে আকাশে ১৫০ কি.মি. দূরত্বে এবং আকাশ থেকে ভূমিতে ৩০০ কি.মি দূরত্বের লক্ষ্যবস্তুতেও ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানতে সক্ষম রাফাল। দুই ইঞ্জিনের এই বিমান পারমাণবিক অস্ত্রও বহন করতে পারে।
রাফাল মূলত একই কোম্পানির তৈরি মিরাজ ২০০০-এর আধুনিক সংস্করণ এবং বর্তমানে ভারতের কাছে ৫১টি মিরাজ ২০০০ বিমান রয়েছে।
এই বিমানগুলো ৫ থেকে ৬ টন পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে। ভারতে যে ড্রপ ট্যাংকের একটি টুকরোর ছবি প্রকাশিত হয়েছে সেটি মিরাজ ২০০০-এরও হতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। মিরাজ সিরিজের কিছু বিমান পাকিস্তানেরও আছে বলে জানা যায়, যদিও সেগুলো প্রায় অকেজো।
সুখোই ও মিগ ২৯

ছবির উৎস, Reuters
ভারত পাকিস্তানের উত্তেজনায় আলোচনায় আসা অন্য দুই যুদ্ধবিমান সুখোই ও মিগ ২৯। দুটোই মূলত রাশিয়ার বিমান। ভারতের বিমান বহরের ৩১টি স্কোয়াড্রনের বড় অংশই রাশিয়ার এবং সোভিয়েত আমলের বিমান।
পুরানো মডেলের সেসব বিমান ধীরে ধীরে বাদ দেয়া অথবা আপগ্রেড করার প্রক্রিয়ায় আছে ভারত। মিগ ও সুখোই দুই সিরিজেরই পুরনো বেশ কিছু বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর ভারতে সেগুলোকে উড়ন্ত কফিন হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।
সুখোই সিরিজ ভারতের সাথে সম্মিলিতভাবে তৈরি করা হয়। সুখোই-৩০ বিমান দূরপাল্লার ফাইটার ও বোমারু বিমান হিসেবে ব্যবহার হয়।
এটিকে ভারী ক্ষেপণাস্ত্র বহনযোগ্য মাল্টি রোল এয়ার সুপেরিয়োরিটি এয়ারক্র্যাফট হিসেবে উল্লেখ করছে ভারতের দিকের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিন্দুস্তান এয়ারোনটিকস লিমিটেড।

ছবির উৎস, Getty Images
এদিকে, ৮০র দশকে থেকে মিগ সিরিজের বিমান তৈরি করা হয়েছিল মূলত আমেরিকার এফ-১৬ ও এফ-১৭ কে পাল্লা দেয়ার জন্য।
এটি মূলত আকাশে বিমানযুদ্ধের জন্য নির্মিত। মিগ এবং সুখোই, দুই সিরিজেরই সুপারসনিক গতির বিমান রয়েছে অর্থাৎ সেগুলো শব্দের চেয়ে দ্বিগুণ গতিতে পথ পাড়ি দিতে সক্ষম।
তেজাস

ছবির উৎস, Getty Images
ভারতের আরও বেশ কয়েক ধরনের বিমানের মধ্যে রয়েছে। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য নিজস্ব যুদ্ধবিমান হিন্দুস্তান এয়ারোনটিকস লিমিটেডের এলসিএ তেজাস।
ছোট ও হালকা ধরনের হলেও এটি ৪.৫ জেনারেশনের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান।
আকাশ ও ভূমিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম এসব বিমানে শত্রু শনাক্ত ও জ্যামিং এর প্রযুক্তিও রয়েছে।

ছবির উৎস, Getty Images
পাকিস্তানের বিমান
দুই মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বুধবার চীনের তৈরি একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান কমপক্ষে দুটি ভারতীয় সামরিক বিমানকে ভূপাতিত করেছে, যা বেইজিংয়ের উন্নত যুদ্ধবিমানের জন্য একটি বড় সক্ষমতার প্রমাণ।
তবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন মুখপাত্র রয়টার্সের প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করে ভারতীয় যুদ্ধবিমানে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে – যার ফলে কমপক্ষে দুটি ভূপাতিত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ছবির উৎস, Getty Images
আরেকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্তত একটি ভারতীয় জেট যেটি গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে তা ছিল ফ্রান্সের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফও উল্লেখ করেছেন জে-১০ ব্যবহার করে তিনটি ফরাসি তৈরি রাফাল বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে, যেগুলো ভারত নতুনভাবে অধিগ্রহণ করেছে।
চীনের জে-১০সি বিমানও বেশ আলোচিত যেটি ভারতের রাফালকে মোকাবেলার জন্য কেনা হয়েছিল বলে জানা যায়।
তবে জে-১০ ছাড়াও আরও শক্তিশালী বিমান রয়েছে পাকিস্তানের বহরে।

ছবির উৎস, Getty Images
পাকিস্তানের আমেরিকান ও চীনা যুদ্ধবিমান
পাকিস্তান বিমানবাহিনীর সবচেয়ে কার্যকর দুটি অস্ত্র হলো—যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা এফ-১৬ এবং চীনের সহায়তায় তৈরি জেএফ-১৭ থান্ডার।
যুক্তরাষ্ট্রের এফ-১৬ বিশ্বের বহু দেশে নির্ভরযোগ্য ও অত্যাধুনিক বিমান হিসেবে পরিচিত যেটি নেটোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানের একটি।
মাটিতে আক্রমণ চালানো, জাহাজবিধ্বংসী মিশন, ছবি তোলা, এমনকি শত্রুদের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকারী খোঁজার মতো বিভিন্ন দিকে এই সুপারসনিক বিমান পারদর্শী।

ছবির উৎস, Reuters
পাকিস্তানের বহরে রয়েছে, এরকম আরও কিছু বিমানের কথা শোনা যায় যা আমেরিকা থেকে আনা মধ্যে সি-১৩০ হারকিউলিজ সিরিজের কিছু বিমান রয়েছে। অবশ্য ভারতের বিমানবহরেও আছে এই মডেলের বিমান।
আর পাকিস্তানের বহরে থাকা জেএফ-১৭ বিমান তুলনামূলক হালকা এবং সব আবহাওয়ায় দিন-রাত ব্যবহারের উপযোগী।
পাকিস্তানের কামরায় অবস্থিত পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স এবং চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রির যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এই বিমান।