Source : BBC NEWS

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের সমাবেশ

ছবির উৎস, Getty Images

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ দল হিসেবে নির্বাচন থেকে বাদ পড়ায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে রাজনীতিকদের অনেকে বলছেন। দলটি কার্যত নিষিদ্ধ হওয়ায় কার লাভ হলো কিংবা কার লোকসান হলো- এই হিসাবনিকাশও চলছে।

প্রশ্ন উঠছে, রাজনীতির মোড় কোন দিকে ঘুরছে বা কী ধরনের মেরুকরণ হচ্ছে?

লাভ-লোকসানের হিসাবনিকাশের আলোচনায় দেখা যাচ্ছে, বর্তমানে সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে লাভের খাতায় নাম আসছে বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনে নিয়ন্ত্রণ ছিল এনসিপি এবং জামায়াতসহ ইসলামপন্থী বিভিন্ন দল ও সংগঠনের হাতে।

অন্যতম প্রধান দল বিএনপি সেই আন্দোলনে অংশ নেয়নি।

যদিও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার যখন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে, এরপর সেই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, তারা আনন্দিত।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে বিভিন্ন সময় বিএনপি নেতাদের বক্তব্য ছিল, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নন। ফলে শেষ পর্যন্ত দলটির দোটানা অবস্থান ছিল বলে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন।

তবে রাজনীতির সমীকরণ, লাভ-ক্ষতির আলোচনা যাই হোক না কেন- এমন পটভূমিতে নির্বাচন কবে হবে, সেই প্রশ্নে সন্দেহ বেড়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলে।

এমনকি এই দলগুলোর নেতাদের অনেকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও বলছেন।

রাজনীতিকদের কেউ কেউ বলছেন, বিরাজনীতিকরণের কোনো চেষ্টা হচ্ছে কি না, তাদের মধ্যে এখন এই প্রশ্নেও আলোচনা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে প্রথমে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ কয়েকশো নেতা-কর্মী নিয়ে গত আটই মে বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন।

পরে এনসিপির অন্য শীর্ষ নেতারা এবং জামায়াতসহ ইসলামপন্থী বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

শুক্রবার সন্ধ্যার পর জায়গা পরিবর্তন করে তারা অবস্থান নেন ঢাকার শাহবাগ মোড়ে। সেই আন্দোলনের মুখে শনিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ জরুরি বৈঠক করে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের পর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন।

নিষিদ্ধ করার এই প্রক্রিয়া নিয়েও বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের প্রশ্ন রয়েছে।

হিসাবনিকাশ কার কেমন

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে বিএনপি অংশ নেয়নি; তবে এ নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিকে সমর্থন করেছে তারা।

নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগ যেহেতু নির্বাচন করতে পারবে না, সে প্রেক্ষাপটে বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী একজন কমলো। সেটিই বিএনপির জন্য লাভের বিষয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এনসিপি, এবং জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামপন্থীদের লাভের অঙ্ক ভারী হয়েছে।

কারণ এসব দল ও সংগঠন গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করে আসছিল। এখন তাদের আন্দোলনের মুখে দাবি পূরণ হলো।

এছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসব দলের প্রভাব নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আলোচনা ছিল।

এখন আওয়ামী লীগ কার্যত নিষিদ্ধ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার ও পরিস্থিতির ওপর এনসিপি এবং জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনের প্রভাবের বিষয়টা আবার সামনে এসেছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

তবে এসব দল ও সংগঠনের লাভের খতিয়ানেও তারতম্য আছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন। তাদের মতে, এই আন্দোলন শুরু করেছিল এনসিপি। কিন্তু জামায়াতসহ ইসলামপন্থীদের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল।

এর প্রমাণ হিসেবে শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচিতে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধা দেওয়া এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচার হওয়া জামায়াতের নেতা গোলাম আজম ও মতিউর রহমান নিজামীর নামে স্লোগান দেওয়ার ঘটনাগুলোও উল্লেখ করেন বিশ্লেষকেরা।

ওই ঘটনাগুলো এনসিপিকে বিতর্কের মুখে ফেলেছে। যদিও দলটি বিবৃতি দিয়ে এর দায় অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, যারা এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে দায় তাদের।

লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ লাভ-ক্ষতির হিসাবকে দেখছেন ভিন্নভাবে। তিনি বলছেন, সরকারও এখানে বড় অংশীজন।

এর কারণ ব্যাখ্যায় মি. আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে যেখানে কিছুদিন আগে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে আন্দোলনকারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। সরকারের প্রশ্রয় সেখানে স্পষ্ট হয়েছে।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ থাকতে পারে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় তা করা হলো বা ঘটনাপ্রবাহ যা দৃশ্যমান হয়েছে, সেটি সরকারের অবস্থানের বিষয়টি প্রমাণ করে বলে উল্লেখ করেন মি. আহমদ।

তবে সরকারের একজন উপদেষ্টা এসব বক্তব্য মানতে রাজি নন। তিনি বিবিসির সঙ্গে আলাপে দাবি করেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।

প্রধান উপদষ্টোর নেতৃত্ব উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠক।

ছবির উৎস, chief Adviser’s Press Wing

বিএনপি কেন দোটানায়?

কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার দায় নিতে চায়নি বিএনপি। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটা মনে হয়েছে।

সে কারণে এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবির ক্ষেত্রে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে বলে আসছিলেন, তারা দল নিষিদ্ধের পক্ষে নন।

তবে মানবতাবরিোধী অপরাধের যে বিচার হচ্ছে, সেই বিচারে বা আদালতের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে ছিল। এছাড়া জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে, দলটির নেতারা এমন বক্তব্যও দিয়ে আসছিলেন।

শেষপর্যন্ত এনসিপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের আন্দোলনের মুখে যে প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে, সেই প্রক্রিয়া নিয়েও বিএনপি নেতাদের অনেকে আপত্তি ছিল।

তারা মনে করেন, ওই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা বিতর্ক সৃষ্টির সুযোগ আছে।

তবে সেই আন্দোলনে অংশ না নিলেও বিএনপি পরে সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছে।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপিকে যাতে কোনঠাসা করার সুযোগ না থাাকে, এ ধরনের চিন্তা থেকে ওই সমর্থন দেওয়া হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক নেতা জানান।

তাদের এ অবস্থান নিয়েও অনেকে সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের দল দোটানায় ছিল না। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তারা পদক্ষেপ নিয়েছেন।

শেখ হাসিনা

ছবির উৎস, Getty Images

‘বিভক্তির জায়গায় পক্ষগুলো আবার এক হয়েছে’

ক্ষমতায় যাওয়া, বিরোধী দলের আসনে বসা বা ক্ষমতার সঙ্গে থাকার চিন্তা কাজ করছে যে দলগুলোর মধ্যে, এ দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় তাদের ভেতরে লাভ-ক্ষতির নানা সমীকরণ চলছে।

তবে দলগুলোর নেতারা আনুষ্ঠানিক কথায় তা স্বীকার করতে রাজি নন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, পরিস্থিতিটাকে তারা লাভ-ক্ষতির হিসাবে ফেলতে চান না। তারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চান, সেই অবস্থানেই তারা রয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রাখার বিষয়টি স্বীকার করে জামায়াতে ইসলামী। তবে দলটির আমির শফিকুর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, এখানে দলীয় লাভের বিষয় নেই। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ আদালতে এসেছে; জাতিসংঘও বলেছে। এছাড়া মানুষেরও আকাঙ্ক্ষা ছিল।

তিনি উল্লেখ করেন, এ কারণে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হয়েছে এবং সব দল তা সমর্থন করেছে। ফলে কারও একক লাভের বিষয় নেই বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে, সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের মধ্যে বিভক্তি দৃশ্যমান হচ্ছিল কিছুদিন ধরে। এখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে সেই বিভক্তির জায়গায় পক্ষগুলো আবার এক হয়েছে বলে দাবি করছে এনসিপি।

দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব অংশীজন বা সব দলের ঐক্য একটা পরিণতি পেলো আওয়ামী লীগ ইস্যুতে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একটা বার্তাও গেলো। এটিই লাভের বিষয় বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের ভোট কার বাক্সে

দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে।

এখন আগামী নির্বাচনে কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে এই ভোটাররা কী করবেন, ভোটকেন্দ্রে যাবেন কি না-সে বিষয়টিও আলোচনায় আসছে।

তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি ওই ভোটরদের দিকেও নজর রাখছে।

লেখক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও জেলে যাওয়া বা হয়রানির যে সব ঘটনা ঘটছে, এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে আলোচনা রয়েছে।

সে কারণে আওয়ামী লীগের ভোট বিএনপিকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো দলের পক্ষে যায় কি না, এটি বিএনপির জন্য চিন্তার বিষয় হতে পারে। আবার বিএনপির বাক্সেই ওই ভোট যায় কি না, জামায়াত ও এনসিপির এই বিপরীত চিন্তা রয়েছে বলে মি. আহমদ মনে করেন।

এছাড়া এই দলগুলো আওয়ামী লীগের ভোট নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করবে, তাদের দিক থেকেই এমন ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন।

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান।

ছবির উৎস, FACEBOOK/BANGLADESH JAMAAT-E-ISLAMI

রাজনীতি মোড় নেবে কোনদিকে

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই রাজনীতিতে নানা সমীকরণ বা মেরুকরণের কথা শোনা যাচ্ছিল।

এনসিপি, জামায়াত এবং ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোরই নানামুখী তৎপরতা বেশি দেখা গেছে।

এখন রাজনীতিতে এবং ভোটের মাঠেও আওয়ামী লীগের কোনো সুযোগ না থাকায় সক্রিয় দলগুলোর তৎপরতা বেড়েছে।

এসব দলের পক্ষ থেকে কখনো বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়াতে আলাদা নির্বাচনি জোট করার চেষ্টা আলোচনায় আসছে। আবার এনসিপিসহ এসব দল বিএনপির সঙ্গেই নির্বাচনে আসন সমঝোতার প্রশ্নে আলোচনা চালাচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে।

তবে রাজনীতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে- এই প্রশ্নের জবাব দৃশ্যমান হতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, নির্বাচন লক্ষ্য করে এখন দলগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। তবে কে কার সঙ্গে ঐক্য বা জোট করবে, তা এখনই বলা মুশকিল।

বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর বক্তব্যও একইরকম। তারা বলছে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা হলে সে পর্যায়ে দলগুলোর অবস্থান দৃশ্যমান হবে।

তবে অন্তর্বর্তী সরকার এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলে আসছে।

কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হবে কি না-এ প্রশ্নে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের মধ্যে নতুন করে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তারা সংস্কার ও নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও বলছেন।

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হােসেন

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা কেন আসছে?

বিএনপি এবং এর মিত্র বিভিন্ন দল ও জোট শুরু থেকেই নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে আসছে।

কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স নয় মাস পার হলেও কোনো রোডম্যাপ তারা দেয়নি। ফলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের মুখের কথাকে আস্থায় নিতে পারছে না দলগুলো।

এখন সেই আস্থার অভাব, সন্দেহ আরও বেড়েছে। জামায়াত ও বিভিন্ন ইসলামি দল অবশ্য সরকারের মুখের কথায় বিশ্বাস রাখার কথা বলছে।

আর এনসিপি সংস্কার না হলে নির্বাচন নয়, আগের এই অবস্থানের কথাই এখনো বলছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন দ্রুত করার জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি এখনই দৃশ্যমান করা প্রয়োজন, সে ধরনের কিছু তারা দেখছেন না। বরং এ সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার ইঙ্গিত প্রকাশ পাচ্ছে অনেক কর্মকাণ্ডে।

সে কারণে রাজনীতি বাদ দিয়ে বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে কি না, এমন সন্দেহও তৈরি হয়েছে বিএনপির নেতাদের অনেকের।

তাদের এ সন্দেহ বেড়েছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার ঘটনার প্রেক্ষাপটে।

কারণ বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের অনেকে বিশ্বাস করেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবিতে যে আন্দোলন করা হয়, এরসঙ্গে সরকারের সিদ্ধান্তের যোগসূত্র থাকতে পারে।

আর সেজন্যই নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিএনপি নেতাদের অনেকের।

বামপন্থী দলগুলার মধ্যে কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বিবিসি বাংলাক বলেন, তারাও মনে করেন, নির্বাচন কবে হবে, সেই প্রশ্নে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া এবং ঘটনাপ্রবাহসহ পরবর্তী পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক পরিস্থিতি বলেও বর্ণনা করছেন রাজনীতিকদের অনেকে।

আওয়ামী লীগের পতাকা

ছবির উৎস, Getty Images

সংকট বাড়লো আওয়ামী লীগের

আগামী নির্বাচন যখনই হোক না কেন, এই নির্বাচনে কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দলগতভাবে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিবন্ধন বাতিল করে আইনগতভাবে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

যদিও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে নেই। কারণ এখন সক্রিয় সব দলই তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এসব দলের পক্ষ থেকেও আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড চালানোর ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বা প্রশাসনের বাধা, গ্রেফতার অভিযান ও বিচারের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়তো রয়েছেই।

এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরকার বা প্রশাসনের অভিযান আরও বেড়েছে।

ফলে প্রকাশ্যে দলটির পক্ষে কর্মকাণ্ড চালানো বেশ কঠিন। এছাড়া শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতাদের বড় অংশ দেশ ছেড়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।

সারাদেশে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী পালিয়ে আছেন এবং অনেকে গ্রেফতার হয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিপর্যস্ত দলটির পতনের পর নয় মাসেও তারা সেভাবে বিতর্কিত নয়, এ রকম কোনো নেতাকে দিয়ে দেশের ভেতরে বিকল্প নেতৃত্ব দাঁড় করাতে পারেনি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন থেকে বাদ পড়েছে। এখন সহসাই রাজনীতিতে ফেরাটা বেশ কঠিন।