Source : BBC NEWS

এক ঘন্টা আগে
কয়েকদিন ধরেই অস্থিরতা চলছিল ঢাকার দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ চার দফা দাবীতে আন্দোলনে নামেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
অবশেষে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে আপাতত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বৃদ্ধি এবং অস্থায়ী আবাসন ব্যবস্থার দাবি মেনে নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।এই আশ্বাসের পর প্রায় তিনদিন ধরে চলা কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়ান আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তবে, শিক্ষার্থী হত্যার বিচার, নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং উপাচার্যের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে উত্তেজনা আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য হত্যার বিচার এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তার প্রশাসন কাজ করছে।
পদত্যাগের দাবির প্রসঙ্গে ঢাবি উপাচার্য বিবিসি বাংলাকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অংশীজনেরা চাইলে পদত্যাগ করতে রাজি আছেন তিনি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার
তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসের পর গণঅনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় কাকরাইল মসজিদের সামনে আন্দোলনস্থলে এই ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের টানা তিন দিন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার রাস্তায় অবস্থানের কর্মসূচির পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত চার দফা দাবি মেনে নিয়েছে সরকার”।
জবি উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, আবাসন সংকট নিরসনে অস্থায়ী হল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, কাজ শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তের কথাও জানান তিনি।
এসময় ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, “আমরা সারাদিন এটা নিয়ে কাজ করেছি। ইউজিসি একটি পরিবার হিসেবে সবাই মিলে সমাধান করতে পারব। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি একসঙ্গে বসে সব সমাধান করব। আপনাদের সব দাবি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি”।
এসময় পানি পান করিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গণঅনশন ভাঙান ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ।।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ভবনে দুই দফা বৈঠকে বসেন শিক্ষা উপদেষ্টা, ইউজিসি চেয়ারম্যানসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা।
অন্যদিকে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিকেল ৪টা নাগাদ শুরু হয় গণঅনশন কর্মসূচি। যার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র ও ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মঞ্জুর মোর্শেদ ভূইঁয়া। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে না ফেরার ঘোষণাও দেন আন্দোলনকারীরা।

ঘটনার শুরু যেভাবে
গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি ও আবাসন সংকট নিরসনসহ তিন দফা দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে যান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল। যেখানে দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস না পেয়ে পরদিন “লংমার্চ টু যমুনা” কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের উদ্দেশ্যে লংমার্চ শুরু করলে বাঁধা দেয় পুলিশ। পরে ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করলে এতে প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন বলে জানান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
পরে দাবি আদায়ে কাকরাইল মোড়েই অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
এসময় আন্দোলনকারীরা “ভুয়া ভুয়া” বলে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে একটি পানির বোতল ছুড়ে মারা হয়। যা নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা।
তবে বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে ‘জবি ঐক্যের’ পক্ষ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাকরাইল মোড়েই অবস্থানের ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছউদ্দীন।
চার দফা দাবিতে কাকরাইল মোড়ে জুমার নামাজের পর তৃতীয় দিনের মতো সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে দুপুর ২টার দিকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
পরে সরকারের আশ্বাসে তারা আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

উত্তেজনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনা ঘিরে অস্থিরতা বিরাজ করছে ঢাবি ক্যাম্পাসে।
গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই শিক্ষার্থী।
এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে শুক্রবারও বিক্ষোভ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। সাম্য হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটামও দিয়েছেন তারা।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ‘বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্রসমাজ’ ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন একদল শিক্ষার্থী। দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন।
এর আগে বৃহস্পতিবারও শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। সেদিন প্রশাসনের ডাকা আধাবেলা শোক পালন কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে পূর্ণ দিবস ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ধর্মঘট পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থী’র ব্যানারে আয়োজিত ওই কর্মসূচির কারণে অচলবস্থা তৈরী হলে পূর্ণ দিবস ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছাত্রদল। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ পরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন এবং সব প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। পরে কলাভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা।
উপাচার্যের বাসভবনের সামনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর, ঢাবি শাখাসহ রাজধানীর বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদেরও অংশ নিতে দেখা যায়।
শুক্রবার বিকেলেও সাম্য হত্যার বিচার, নিরাপদ ক্যাম্পাস, উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী।

অংশীজনরা চাইলে পদত্যাগে রাজি ঢাবি উপাচার্য
সাম্য হত্যার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাস সহ শিক্ষার্থীদের দাবি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপরাধীদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়মিত তদারকি করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এছাড়া ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতেও প্রক্টরিয়াল টিমের টহল বৃদ্ধি, বহিরাগত প্রবেশ ও অবস্থানে সতর্কতাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও জানান মি. নিয়াজ।
মি. নিয়াজ দাবি করেন, অস্বাভাবিক কম সম্পদ দিয়ে চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়। বাজেট ঘাটতি ও জনবল সংকট থাকায় বহুমুখী সমস্যা হচ্ছে।
পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে ঢাবি উপাচার্য বিবিসি বাংলাকে বলেন, “চাকরি করতে আসিনি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অংশীজনেরা চাইলে পদত্যাগ করতে রাজি আছি”।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথা উল্লেখ করে মি. নিয়াজ বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ষড়যন্ত্র আছে, এটি পরিক্ষিত”।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছেন বলেও জানান তিনি।