Source : BBC NEWS
ছবির উৎস, DESHAKALYAN CHOWDHURY/AFP via Getty Images
বাংলাদেশে সদ্য ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত এবং দেশটিতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ। ‘নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে’ নির্বাচন আয়োজনের জন্য দলটি দাবি জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ”দেশের জনগণের বৃহত্তম অংশের প্রতিনিধিত্বকারীদের বাইরে রেখে ঘোষিত নির্বাচনী তফসিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করছে”।
ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনকে “একটি অসাংবিধানিক সরকারের অধীনে অবৈধ নির্বাচন” বলে মন্তব্য করেছেন ভারতে অবস্থানরত দলটির নেতারা।
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হবার পর থেকে দলটির প্রধান শেখ হাসিনাসহ অনেক শীর্ষ নেতা ভারতে অবস্থান করছেন।
তবে নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করলেও দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন বয়কটের মতো কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
তবে গত অক্টোবর মাসে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক ইমেইল সাক্ষাৎকারে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, আওয়ামী লীগকে আগামী বছরের নির্বাচনে অংশ নিতে না দেওয়া হলে দলটির লাখ লাখ সমর্থক এই নির্বাচন বয়কট করবে।
গত ১১ই ডিসেম্বর ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, ১২ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়ায় এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না আওয়ামী লীগ।
ছবির উৎস, Munir UZ ZAMAN / AFP via Getty Images
‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের’ দাবি
বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়া আওয়ামী লীগের ভারতে অবস্থানরত যে কয়েকজন নেতার সঙ্গে বিবিসি বাংলা কথা বলেছে, তারা সকলেই ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এটা তো অসাংবিধানিক সরকারের অবৈধ নির্বাচন। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনও সুযোগ আওয়ামী লীগের নেই”।
‘নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের’ দাবি জানিয়েছে দলটি।
নির্বাচন কমিশন গত মে মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে। ফলে আওয়ামী লীগের দলীয় ব্যানারে বা প্রতীকে কারো এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই।
এর আগে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা সহ শীর্ষ স্তরের বহু নেতা, সাবেক সংসদ সদস্য, সহযোগী সংগঠনগুলির শীর্ষ নেতৃত্ব এখন ভারতে অবস্থান করেন। অনেকে আবার বিভিন্ন পশ্চিমা দেশেও চলে গিয়েছেন।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রবাসে থেকেই দলীয় কাজকর্ম পরিচালনা করেন ভার্চুয়াল মাধ্যমে।
“গণতান্ত্রিক নির্বাচন সেটাকেই বলা হয়, যা অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার পাশাপাশি সেই ভোট অন্তর্ভুক্তিমূলকও হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ – যে দলকে বাংলাদেশের অর্ধেকেরও বেশি ভোটার সমর্থন করেন, তাদের বাদ দিয়ে কোনও নির্বাচন তো প্রহসন ছাড়া কিছু না,” বলছিলেন ওবায়েদুল কাদের।
তিনি বলেন যে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে কোনও নির্বাচন হলে তা জনগণই প্রত্যাখ্যান করবে, প্রতিহত করবে।
মি. কাদের এও বলেন, “এই একতরফা নির্বাচনের ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত।”
এক্ষেত্রে জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বললেও তিনি ভারতের নাম নেননি।
ছবির উৎস, Sazzad Hossain/SOPA Images/LightRocket via Getty Images
নির্বাচনে থাকতে চায় আওয়ামী লীগ
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দুটি বাদে (১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি) বাকি সব জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
এবারের নির্বাচনেও অংশ নিতে চায় দলটি। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সুযোগ নেই বলেও জানেন দলটির নেতারা।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলছিলেন, “আমরা নির্বাচনমুখী দল, নির্বাচনে বিশ্বাসী। সবসময়েই মোটামুটিভাবে ৪০ শতাংশ ভোটারের সমর্থন আমাদের থেকেছে। সহযোগী দলগুলির ভোট একত্র করলে সেটা প্রায় ৫০ শতাংশ”।
“ষড়যন্ত্র করে আমাদের নির্বাচনের বাইরে রেখে দেওয়া হলে তা তো কোনও অর্থবহ নির্বাচন হল না। হাজার হাজার নেতা কর্মীকে জেলে আটকিয়ে রেখে, আমাদের নিবন্ধন বাতিল করে দিয়ে নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা হয়েছে, তা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।”
আওয়ামী লীগের টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে তারা দলীয় সরকারের অধীনে তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠান করেছিল। প্রধান বিরোধী দলের বর্জনের কারণে দুটি নির্বাচন হয়েছিল একতরফা, এবং অপরটিতে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ছিল।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলেও তাদের যে ভোট ব্যাংক আছে, সেই নৌকার সমর্থক ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন দলের মাঠপর্যায়ে জোর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে।
এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে নৌকা সমর্থকদের নিরাপত্তার আশ্বাস, মামলা, হামলা বা হয়রানি থেকে রক্ষারও নানারকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকার ফলে দলটির ভোটারদের সমর্থন আদায়ে নানা কৌশল ও তৎপরতা দেখা যাচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের প্রার্থীদের। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ নিয়ে জামাত ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে।
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে নৌকার সমর্থক এবং ভোটব্যাংক নিয়ে অবশ্য অন্যরকম মূল্যায়ন করেছে।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বিবিসি বাংলাকে বলেন, ”নৌকার ‘ভোটব্যাংক’ সেভাবে নেই, বর্তমানে এটি কমবেশি দশ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে”।
ছবির উৎস, MD Abu Sufian Jewel/NurPhoto via Getty Images
নির্বাচন ‘বয়কট’ করবে আওয়ামী লীগ?
নির্বাচনী তফসিল প্রত্যাখ্যান করা এবং প্রতিহত করার কথা বললেও আওয়ামী লীগ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বয়কট করার পথে হাঁটবে না বলেই একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালে টানা চতুর্থবারের মতো সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল।
ওই নির্বাচন বিরোধী দলগুলোকে বর্জন করেছিল। তাদের শীর্ষ নেতারা হয় জেলে বা নির্বাসনে ছিলেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম যেমন বলছিলেন যে তাদের দল নির্বাচনে বিশ্বাসী, তাই নির্বাচন থেকে সরে থাকতে তারা চান না।
“আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, নির্বাচনে বিশ্বাসী। জনমতের ওপরে আমাদের আস্থা আছে। যখন মানুষ আমাদের ভোট দিয়েছে, তখন আমরা শাসনক্ষমতা পেয়েছি, অথবা যাকেই মানুষ ভোট দেবেন, তারা শাসন করবেন। এই নির্বাচনেও আমরা অংশ নিতে চাই, যদি দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ভোট হয়। কিন্তু যেভাবে আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন করা হলে মানুষই তাতে অংশগ্রহণ করবে না,” বলছিলেন মি. নাছিম।
আবার বাংলাদেশে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ বলছিলেন যে “দল নির্বাচনে বিশ্বাস করে। আমরা চাই না নির্বাচন থেকে সরে থাকতে। কিন্তু আমাদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দিয়ে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে দিয়ে নির্বাচন থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে একটি অবৈধ সরকার”।
“আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি বলেই বয়কট করার কথা ভাবা হচ্ছে না। দলনেত্রী আমাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে রণনীতি ঠিক করে দিয়েছেন। আমরা তাই প্রতিহত করার কথা বলছি, প্রতিরোধ করার কথা বলছি”।







