Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Reuters
৫৫ মিনিট আগে
জায়নবাদীদের সঙ্গে ইরান কখনোই আপস করবে না বলে জানিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করতে বলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি।
“আমরা জায়নবাদীদের প্রতি কোনো দয়া দেখাবো না,” পোস্টে বলেছেন খামেনি।
তার এমন হুঁশিয়ারির মধ্যেই ইরানে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
এ দফায় তেহরানের কাছে একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে বলে ইরানি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
এছাড়া তেহরানের ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ও ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
এদিকে, মঙ্গলবার রাতে ইরানও নতুন করে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে। হামলার আগে তেল আভিভের বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেন ইরানি কর্মকর্তারা।
এ দফায় ইসরায়েলি বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ‘ফাত্তাহ-১’ নামের হাইপারসনিক মিসাইল ছোড়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীও (আইডিএফ) বলেছে, তারা ইরান থেকে নতুন করে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে।
হামলা প্রতিহত করতে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তারা।
এ নিয়ে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ষষ্ঠ দিনে গড়ালো।
অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা গুলোতে হামলা চালানোর কথা ভাবছেন বলে জানা যাচ্ছে।
গত চারদিনে বিভিন্ন বিমানঘাঁটি থেকে অন্তত ৩০টি যুদ্ধবিমান ইউরোপের বিভিন্ন এলাকায় সরিয়ে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ছবির উৎস, Instagram/g.lockaviation
ইরানে হামলার কথা ভাবছেন ট্রাম্প
ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা গুলোতে হামলা চালানোর কথা ভাবছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসি’র অংশীদার গণমাধ্যম সিবিএস নিউজের খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, ফোর্ডোর মতো গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোয় হামলা চালানো হতে পারে।
একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ বলছে, হামলার বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টারা ইরানে হামলার ব্যাপারে এখনো “পুরোপুরিভাবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি”।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের একটি বিমানঘাঁটি থেকে কয়েকটি মার্কিন যুদ্ধবিমান উড়াল দিয়েছে।
স্থানীয় একজন আলোকচিত্রীর তোলা ছবিতে দেখা গেছে, পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত রয়্যাল এয়ার ফোর্স লেকেনহিথ বিমানঘাঁটি থেকে কিছু এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান উড়াল দিচ্ছে।
এর মধ্যে জ্বালানি সরবরাহকারী একটি ট্যাংকার বিমানও ছিল।

ছবির উৎস, Getty Images
হাইপারসনিক ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ
মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে ‘ফাত্তাহ-১’ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান।
চলমান সংঘাতে এই প্রথম ‘ফাত্তাহ-১’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার কথা স্বীকার করেছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড।
এর আগে, ২০২৪ সালের পহেলা অক্টোবর ইরান যখন ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল, তখনো তারা বেশ কয়েকটি ‘ফাত্তাহ-১’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল।
তার আগের বছর ওই ক্ষেপণাস্ত্রটির সফল পরীক্ষা চালিয়েছিল ইরান। তারপর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করেন ”ফাত্তাহ-১’।
ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড এই ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ‘ইসরায়েল বিধ্বংসী’ বলে উল্লেখ করে থাকে।
এটি চারশ সেকেন্ডে তেল আবিবে পৌঁছাতে সক্ষম বলে দাবি করেছেন ইরানি কর্মকর্তারা।
ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের পক্ষ থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটিকে ‘হাইপারসনিক’ হিসেবে দাবি করলেও সামরিক বিশ্লেষকদের অনেকেই এ বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
অতি উচ্চগতির হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে এমন গতিতে আঘাত হানতে পারে যে, বর্তমান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা প্রতিহত করতে পারে না।
এমনকি এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মাঝপথেও হামলার দিক পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়।

ছবির উৎস, EPA
প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র গত তিন-চারদিনে আমেরিকার বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে অন্তত ৩০টি যুদ্ধবিমান ইউরোপে সরিয়ে এনেছে।
এগুলোর গতিপথের ওপর নজর রাখা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের তথ্য পর্যালোচনার পর বিবিসি ভেরিফাই বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।
ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোরের তথ্য অনুযায়ী, এই ট্যাংকারগুলোর মধ্যে অন্তত সাতটি কেসি-১৩৫ স্পেন, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে অবস্থিত বিভিন্ন মার্কিন বিমানঘাঁটিতে থেমেছে।
তাদের এ পদক্ষেপ আদৌ মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতের কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যাংকার বিমানগুলোর স্থানান্তর করা ‘একেবারেই স্বাভাবিক নয়’।
রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলছেন, সামনের দিনগুলোতে ওই অঞ্চলে ‘তীব্র সামরিক অভিযানে সহায়তার লক্ষ্যে’ পূর্বপ্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিমানগুলো মোতায়েন করা হয়েছে বলে ‘জোরাল আভাস’ পাওয়া যাচ্ছে।
বিবিসি ভেরিফাই যে সাতটি ট্যাংকার জেটের গতিপথ পর্যালোচনা করেছে, সেগুলো ইউরোপের ঘাঁটিতে নামার পরও বিভিন্ন দিকে গেছে।
মঙ্গলবার বিকালে সিসিলির পূর্ব দিকে এগুলোকে উড়তে দেখা গেছে বলে ফ্লাইট ট্র্যাকিংয়ের তথ্যে দেখা যাচ্ছে।
আয়ারল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল মার্ক মেলেট বলছেন, এসব ট্যাংকারগুলো ইরানকে ভয় দেখাতেও মোতায়েন করা হতে পারে।

ছবির উৎস, Instagram/g.lockaviation
‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’
ইরানকে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মঙ্গলবার রাতে সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে তিনি “নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের” বিষয়টি উল্লেখ করেন।
এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির বিষয়ে ইঙ্গিত করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমরা ঠিক জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন।”
“তিনি সহজ লক্ষ্যবস্তু, কিন্তু সেখানে নিরাপদ – আমরা তাকে বের করে (হত্যা!) আনবো না, অন্তত এখনই নয়,” যোগ করেন মি. ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, “কিন্তু আমরা চাই না বেসামরিক নাগরিক বা আমেরিকান সৈন্যদের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ হোক। আমাদের ধৈর্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।”
এর কিছুক্ষণ আগে আরেক পোস্টে তিনি বলেন, “ইরানের আকাশসীমা আমাদের নিয়ন্ত্রণে।”