Source : BBC NEWS

বৈরুতের দক্ষিণ উপশহরে ইসরায়েলি বিমান হামলার ছবি

ছবির উৎস, AFP via Getty Images

এক ঘন্টা আগে

লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হেজবুল্লাহর ড্রোন উৎপাদন কেন্দ্রকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয় বলে দাবি ইসরায়েলের।

বৃহস্পতিবার রাতে, মুসলিমদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ঈদুল আযহার ঠিক আগের রাতে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

এর পরই বৈরুত নগরীতে হেজবুল্লাহর ঘাঁটি থাকা এলাকার বেশ কয়েকটি ভবন খালি করার সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।

এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহর একটি ইউনিট শনাক্ত করেছে। যেখানে ভূগর্ভে “হাজার হাজার” ড্রোন তৈরি করা হচ্ছে, যার অর্থায়ন করছে “ইরানি সন্ত্রাসীরা”।

গত ছয় মাস ধরে ইসরায়েল এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও এই হামলার ঘটনা ঘটলো।

এই হামলার “তীব্র নিন্দা” জানিয়েছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাওয়াফ সালাম।

সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, “আমি মনে করি এগুলো আমাদের মাতৃভূমি, এর নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনীতির উপর একটি পদ্ধতিগত এবং ইচ্ছাকৃত আক্রমণ, বিশেষ করে ছুটির দিন এবং পর্যটন মৌসুমের ঠিক আগে।”

ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ

ছবির উৎস, NurPhoto via Getty Images

নিরাপত্তা সতর্কতা জারির পর, জনবহুল ওই এলাকার ব্যস্ত সড়ক থেকে হাজার হাজার মানুষ যানবাহন রেখেই পালিয়ে যায়। যাতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এরপরই আকাশে দেখা যায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী।

লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন এই হামলাকে “আন্তর্জাতিক চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” বলে বর্ণনা করেছেন এবং “একটি পবিত্র ধর্মীয় উৎসবের ঠিক আগে” এটি সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

লেবাননে জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়কারীর কার্যালয় সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছে, “ঈদুল আজহার ঠিক আগে চালানো এই হামলাগুলো নতুন করে আতঙ্ক ও ভয়ের সৃষ্টি করেছে”।

“বিরোধ বা হুমকি” মোকাবিলা এবং “অপ্রয়োজনীয় এবং বিপজ্জনক উত্তেজনা” রোধে কূটনীতির গুরুত্বের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন লেবাননে জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়কারী জিনাইন হেনিস।

সেনাবাহিনীর “নিখুঁত হামলা চালানোর” প্রশংসা করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। তিনি বলেন, ইসরায়েল লেবাননের সরকারকে “যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন এবং সমস্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিরোধের জন্য সরাসরি দায়ী” বলে মনে করে।

সেনাবাহিনী বলছে, ড্রোনের “ব্যাপক ব্যবহার” হেজবুল্লাহকে ইসরাইলে এত হামলা চালানোর সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এই কার্যকলাপকে “ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে সমঝোতার স্পষ্ট লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন

ছবির উৎস, AFP via Getty Images

এখনো এই হামলার বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেনি হেজবুল্লাহ।

এই হামলার এক ঘণ্টা আগে দাহিহ এলাকার হাদাথ, হারেত হেরিক এবং বোর্জ এল-বারাজনেহের আশেপাশের বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি মুখপাত্র, আভিচায় আদরাই।

“আপনারা হেজবুল্লাহর অবকাঠামোর পাশে আছেন” এমন একটি লেখা তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। যেখানে নির্দিষ্ট ভবনগুলো চিহ্নিত করার জন্য একটি মানচিত্রও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

২০২৩-২৪ থেকে ১৩ মাস ধরে ইসরায়েল এবং ইরান-সমর্থিত হেজবুল্লাহর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত অব্যাহত ছিল। যা অক্টোবরে দক্ষিণ লেবাননে তীব্র ইসরায়েলি বোমা হামলা এবং স্থল আক্রমণের মাধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছায়।

লেবাননের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় দেশটির প্রায় চার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। যার মধ্যে অনেক বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে। এছাড়া ১২ লাখেরও বেশি বাসিন্দাকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ৮০ জনেরও বেশি সৈন্য এবং ৪৭ জন বেসামরিক নাগরিক যুদ্ধে নিহত হয়েছে।

ইসরায়েল বলছে, সীমান্তের কাছাকাছি থাকা হেজবুল্লাহর স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপ জরুরি ছিল।

এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনও এটি থামাতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইসরায়েল সেনাবাহিনীর ঘোষিত লক্ষ্য ছিল, বিভিন্ন সময় গোষ্ঠী আক্রমণের শিকার হয়ে, দেশটির উত্তরাঞ্চলের সম্প্রদায়গুলো থেকে বাস্তুচ্যুত প্রায় ৬০ হাজার বাসিন্দাকে নিজ দেশে ফিরে আসার সুযোগ করে দেওয়া।

ধ্বংস হওয়া ভবনটি দেখছেন বাসিন্দারা

ছবির উৎস, Anadolu via Getty Images

নভেম্বরের শেষের দিকে হেজবুল্লাহকে বাদ রেখেই ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ইসরায়েল তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয় এবং লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননের পুলিশিং দায়িত্ব গ্রহণ করে।

চুক্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এর প্রতিশ্রুতিগুলো “আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসরায়েল বা লেবাননকে তাদের আত্মরক্ষার সহজাত অধিকার প্রয়োগ থেকে বিরত রাখে না।”

বৃহস্পতিবরের এই হামলার পর, লেবাননের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতী পর্যবেক্ষণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির সাথে তাদের সহযোগিতা আংশিকভাবে স্থগিত করার হুমকি দিয়েছে।

যুদ্ধবিরতিতে একমত হওয়ার পর থেকে কয়েক মাস ধরেই লেবাননে হেজবুল্লাহর সাথে সম্পর্কিত লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল।

এপ্রিল মাসে, ইসরায়েল দাহিহ অঞ্চলে হেজবুল্লাহর “নির্ভুল-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র” ভাণ্ডারে আক্রমণ করেছিল।

একই মাসের শুরুতে, লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একই ধরনের হামলায় হেজবুল্লাহর একজন কর্মকর্তা এবং আরও তিনজন নিহত হন।

লেবানন সরকার বলছে, এই হামলাগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি স্থানে ইসরায়েলি সৈন্যদের ধারাবাহিক অবস্থান, যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করার পরের দিনই ইসরায়েলি অবস্থানগুলোয় রকেট নিক্ষেপ করে হেজবুল্লাহ।

এরপর থেকেই ইসরায়েল এবং হেজবুল্লাহর মধ্যে লড়াই আরও তীব্র হয়। কারণ হেজবুল্লাহ দাবি করেছিল, গাজার ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতেই তারা এই হামলা চালিয়েছে।