Source : BBC NEWS

ওয়াশিংটনের ঘটনাস্থল

ছবির উৎস, ALEX WROBLEWSKI/AFP via Getty Images

১১ মিনিট আগে

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি ইহুদি জাদুঘরের কাছে গুলিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুইজন কর্মী নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতদের মধ্যে একজন পুরুষ ও অপরজন নারী।

যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির সংবাদ সহযোগী সিবিএস জানিয়েছে, ক্যাপিটাল ইহুদি জাদুঘরে একটি অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।

মার্কিন পুলিশ এই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে এলিয়াস রদ্রিগেজ নামের এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তাকে আটক করেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরের বাসিন্দা।

হামলার ঘটনাটি ঘটে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ৯টা ০৫ মিনিটের দিকে। নিহতদের পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটকের পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রধান ক্রিস্টি নোয়েম এই ‘নৃশংস অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন এবং ঘটনাটিকে ইহুদি-বিদ্বেষপ্রসূত (অ্যান্টি সেমেটিক) বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি তার নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্র্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেছেন, “এই ভয়াবহ ডিসি হত্যাকাণ্ড স্পষ্টতই ইহুদি-বিদ্বেষের কারণে ঘটেছে, এখনই বন্ধ হওয়া উচিত! ঘৃণা ও উগ্রবাদের যুক্তরাষ্ট্রে কোনো স্থান নেই।”

ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ প্রধান পামেলা স্মিথ

অনুষ্ঠান থেকে বের হবার পর গুলি

অন্যদিকে, জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত এই ঘটনাকে ‘নৃশংস ইহুদি-বিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি দূতাবাসের মুখপাত্র তাল নাইম কোহেন ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার) বার্তায় একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

তিনি লিখেছেন, “ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটাল ইহুদি জাদুঘরে একটি ইহুদি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বের হওয়ার সময় ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখি যে তারা হামলাকারীকে আটক করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইসরায়েলের প্রতিনিধি ও ইহুদি সম্প্রদায়কে রক্ষা করবে।”

ঘটনার রাতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের আয়োজক, আমেরিকান জিউইশ (ইহুদি) কমিটির বোর্ড সদস্য জোজো কালিন বলেন, “আমি নিহত দম্পতিকে চিনতাম না, কিন্তু আমার এক ধরণের অপরাধবোধ কাজ করছে। আমার আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের কারণে তারা সেখানে গিয়েছিলেন, আর তাদের জীবন চলে গেছে, এটা ভেবে আমি অপরাধবোধে ভুগছি”। মি. কালিন নিজে গুলির ঘটনা প্রত্যক্ষ করেননি বা গুলির শব্দও শোনেননি।

উল্লেখ্য, ওই অনুষ্ঠানটি মূলত গাজার মানুষের জন্য কীভাবে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করা যায়, তার ওপরই কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

জোজো কালিন বলেন, ” ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি উভয়েরই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রাপ্য, আর আমরা ঠিক এই বিষয়েই আলোচনা করছিলাম, এটা খুবই মর্মান্তিক যে এরপরই এমন ঘৃণাত্মক হামলা ঘটলো।”

জোজো কালিন

হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

ওয়াশিংটনের পুলিশ এক সংবাদ সম্মেলনে এলিয়াস রদ্রিগেজকে হামলার ঘটনায় একমাত্র সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ৩০ বছর বয়সী শিকাগোর এই ব্যক্তিকে ঘটনার আগে জাদুঘরের বাইরে ‘এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি’ করতে দেখা গেছে। সে চারজনের একটি দলের কাছে গিয়ে একটি হ্যান্ডগান বের করে এবং দুজন ভুক্তভোগীকে গুলি করে। রদ্রিগেজকে বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে ।

ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ প্রধান পামেলা স্মিথ জানিয়েছেন, পুলিশি হেফাজতে থাকার সময় সন্দেহভাজন এলিয়াস রদ্রিগেজ “ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি প্যালেস্টাইন” স্লোগান দিচ্ছিল। এফবিআইয়ের ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসের সহকারী পরিচালক স্টিভ জেনসেন বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘সম্ভাব্য সন্ত্রাসের যোগসূত্র’ এবং হামলার উদ্দেশ্য ‘হেট ক্রাইম’ ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি এই হামলাকে ‘নৃশংস’ বলে অভিহিত করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ইয়েখিয়েল লেইটার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, নিহত দুজন ছিলেন তরুণ দম্পতি, যারা খুব শিগগিরই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতেন।

ছেলেটি এই সপ্তাহে একটি আংটি কিনেছিল, আগামী সপ্তাহে জেরুজালেমে তার প্রেমিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল,” বলেন লেইটার।