Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Reuters
এক ঘন্টা আগে
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার বড় ধরনের হামলায় “খুশি নন” বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভ্লাদিমির পুতিনের এই হামলা “বন্ধ করা উচিত” বলে উল্লেখ করলেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে কি না তা তিনি বলেননি।
বুধবার রাতভর কিয়েভে রাশিয়ার হামলার খবর পাওয়া গেছে। এসব হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছে। গত জুলাইয়ের পর এটাই কিয়েভে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা বলে দাবি করা হচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে উভয় পক্ষের ওপর “অনেক চাপ দিচ্ছেন”।
গত বছর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনি প্রচারণার অংশ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, বিজয়ী হলে দ্রুতই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম হবেন।
তবে দুই দেশের মধ্যে শান্তি চুক্তির বিষয়ে যখন আলাপ চলছিল তার মধ্যেই নতুন করে এই অস্থিরতা তৈরি হলো।
সচরাচর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা না করলেও ট্রুথ সোশ্যালের একটি পোস্টে কিয়েভে হামলার প্রতি ইঙ্গিত করে ট্রাম্প লিখেছেন, “প্রয়োজন ছিল না এবং সময়টা খুব খারাপ। ভ্লাদিমির, থামুন!”
সম্ভাব্য শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার দখলদারিত্ব মেনে নেওয়ার জন্য ইউক্রেন ও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ওপর যখন চাপ বাড়ছে তার মধ্যেই এই হামলা হয়েছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ আজ মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ছবির উৎস, Getty Images
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী ইয়োনাস গার স্তোরের পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন যে “কারো প্রতি তার আনুগত্য নেই “, তিনি শুধু “জীবন বাঁচানোর তাগিদের প্রতি আনুগত”।
পুতিনের বিষয়ে উদ্বেগের কথা স্বীকার করে ট্রাম্প বলেছেন তিনি, চুক্তি হয় কি না তা দেখার জন্য তিনি এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে দেখবেন, সঙ্গে এটাও যোগ করেন যে– বোমা হামলা বন্ধ না হলে “অনেক কিছুই ঘটবে”।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার হামলার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে গেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানের সময় তিনি বলেন, আমার মনে হয়েছে যে একটি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে রাশিয়ার প্রতি আরও কঠোর হতে পারতো যুক্তরাষ্ট্র।
জেলেনস্কি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে রাশিয়ার ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করা হলে আমাদের অবস্থান আরও ঘনিষ্ঠ করতে সক্ষম হবো।”
তিনি কোনো ছাড় দিতে ইচ্ছুক কি না– জানতে চাওয়া হলে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার সাথে আলোচনার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত, এটি একটি “বিশাল আপস” এবং “যুদ্ধবিরতি অবশ্যই প্রথম পদক্ষেপ”।
“যদি রাশিয়া বলে যে তারা যুদ্ধবিরতি করতে প্রস্তুত, তবে তাকে অবশ্যই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে জোরালো হামলা বন্ধ করতে হবে। ইউক্রেনীয়দের ধৈর্য হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ আমরাই আক্রমণের শিকার হচ্ছি, অন্য কেউ নয়,” তিনি যোগ করেছেন।

ছবির উৎস, Getty Images
সিবিএস-এর ফেস দ্য নেশন টিভি অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, “আমরা কেবল সামরিক লক্ষ্যবস্তু বা বেসামরিক যেসব এলাকা সামরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোকেই নিশানা করি।”
তবে ল্যাভরভ তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি।
তিনি যোগ করেছেন মার্কিন প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তিতে সম্মত হওয়ার জন্য কিছু উপাদানকে “ঠিকঠাক” করে নিতে হবে।
কিয়েভের ওপর হামলার আগে, এই সপ্তাহেই ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে সম্পর্কে আবারও টানাপোড়েন দেখা গিয়েছিল। কারণ শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে তাদের কিছু এলাকা ছাড় দেওয়ার পরামর্শ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বুধবার, ট্রাম্প দাবি করেছিলেন যে যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চুক্তি “খুব কাছাকাছি” ছিল, তবে জেলেনস্কির মার্কিন শর্তাবলী মেনে নিতে অস্বীকার করা “সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করা ছাড়া কিছুই করবে না”।
ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে বলেছে যে তারা ক্রাইমিয়া ছাড়বে না, যে অঞ্চলটি ২০১৪ সালে রাশিয়া দখল করে নেয়।
বুধবার, মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স একটি শান্তি চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে বলেছিলেন, এটি দুই পক্ষকেই একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে বাধ্য করবে এবং “রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয়কেই কিছু কিছু অঞ্চল ছাড়তে হবে।”
ক্রাইমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বকে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছে কি না- এই সপ্তাহে হোয়াইট হাউসে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি কেবল যুদ্ধের সমাপ্তি দেখতে চান।
এক সময়ে ইউক্রেনের দখলে থাকা ক্রাইমিয়ার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দেওয়া মি. জেলেনস্কির পক্ষে রাজনৈতিকভাবে এমনিতেই সম্ভব না।
পাশাপাশি, এটি বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নীতিমালারও পরিপন্থি। আন্তর্জাতিক আইনে জোর দিয়ে বলা আছে, বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কোনো দেশ তার সীমান্ত সীমান্ত পরিবর্তন করতে পারবে না।

ছবির উৎস, EPA
বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, “আমরা তাদের চূড়ান্ত রূপরেখা দেখিয়েছি। তাদের উভয় পক্ষেরই সম্মতি প্রয়োজন। তবে গতরাতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কারণে যা যা ঘটেছে তা সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছে কেন এই যুদ্ধ শেষ হওয়া দরকার।”
জেলেনস্কি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার সঙ্গে দেখা করেন। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রামাফোসা বলেন, তিনি ইউক্রেনের চলমান সংঘাত নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং সংঘাতের সব পক্ষের সাথে কথা বলার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি যোগ করেন যে তিনি পুতিন এবং ট্রাম্প উভয়ের সাথে সংঘাত অবসানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কথা বলেছেন।
তবে ইউক্রেনের ভূখণ্ড রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়া উচিত কি না সে বিষয়ে যাননি রামাফোসা।
নভেম্বরে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যে অন্যতম ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন ইউক্রেন তার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সারি আরও লম্বা করতে আগ্রহী, বিশেষ করে আফ্রিকায় যেখানে অনেক দেশের রাশিয়ার সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকাও ওয়াশিংটনের সাথে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের শিকার হয়েছে, তাদের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং সাহায্য তহবিল প্রত্যাহার করা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, জোট নিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে তারা রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের একটি শান্তি চুক্তি হওয়ার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।