Source : BBC NEWS

গাজায় ধ্বংসস্তূপের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন দুই নারী

ছবির উৎস, Getty Images

হামাস শেষ মুহূর্তে চুক্তিতে পরিবর্তন আনতে চাইছে এমন অভিযোগ তুলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনে মন্ত্রিসভার ভোট পিছিয়ে দিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় এই ভোটাভুটি হওয়ার কথা ছিল।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, একটি ‘অমীমাংসিত বিষয়ের’ সমাধান করা হচ্ছে এবং রবিবার যুদ্ধবিরতি শুরুর ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী।

ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা মাসের পর মাস আলোচনার মধ্য দিয়ে চুক্তিতে সম্মত হলেও সরকার এবং নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদনের আগ পর্যন্ত এটি কার্যকর করা যাবে না।

চুক্তির ব্যাপারে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে হামাস।

তবে বিবিসি জানতে পেরেছে যে, তারা চুক্তির অধীনে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির যে তালিকা করা হয়েছে তাতে তাদের কিছু সদস্যের নাম যুক্ত করার চেষ্টা করছিল।

বুধবার চুক্তির ঘোষণার আসার পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৮০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার কথা জানায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই হামলার পর ভোট পেছানোর খবর আসে।

বৃহস্পতিবার সকালে বৈঠকটি শুরুর নির্ধারিত সময়ের কয়েক ঘণ্টা আগে নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “শেষ মুহূর্তের সুবিধা আদায়ের চেষ্টা” করছে সংগঠনটি।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, হামাস ‘চুক্তির সকল বিষয়ে’ সম্মত না হওয়া পর্যন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক আহ্বান করা হবে না।

ব্লিঙ্কেন বলছেন, এমন একটি ‘চ্যালেঞ্জিং’ পরিস্থিতিতে এই বিলম্ব অপ্রত্যাশিত নয়।

যুক্তরাষ্ট্র আত্মবিশ্বাসী যে চুক্তিটি রবিবার থেকে কার্যকর হবে এবং তারপর থেকে যুদ্ধবিরতি স্থায়িত্ব পাবে, বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আরো পড়তে পারেন:
বিধ্বস্ত ভবনে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন

ছবির উৎস, Getty Images

ইসরায়েলি গণমাধ্যম বলছে, আলোচিত সমস্যাটির সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে এবং শুক্রবার চুক্তি অনুমোদনের জন্য বৈঠকে বসার কথা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের। যদিও এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি।

মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্য চুক্তিটিকে সমর্থন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে বৃহস্পতিবার রাতে নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির বলেন, যদি চুক্তিটি অনুমোদিত হয় তার ডানপন্থী দল জিউইশ পাওয়ার নেতানিয়াহুর সরকার থেকে সরে দাঁড়াবে।

তিনি সরকারে থাকা অপর কট্টর-ডানপন্থী দল রিলিজিয়াস জায়নিস্ট পার্টির নেতা ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মতরিচকেও তার সাথে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরায়েলের সংসদে এই দলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ওহাদ তাল বিবিসি রেডিও ফোরকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, চুক্তির কারণে তারা নেতানিয়াহুর সরকার ছেড়ে যাবেন কি না তা নিয়ে তাদের মধ্যে ‘বিতর্ক’ চলছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে চুক্তিটিকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ হিসেবে উল্লেখ করে মি. বেন-গাভির বলেন, এটি “যুদ্ধের অর্জনগুলোকে মুছে ফেলবে”।

অবশ্য চুক্তিটি অনুমোদিত হয়ে গেলেও তার দল ওতজমা ইহুদিত বা জিউইশ পাওয়ার সরকার উৎখাতের কোনো চেষ্টা করবে না বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তামন্ত্রী।

নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির

ছবির উৎস, EPA

এদিকে, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তা ঘোষিত চুক্তির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন তাদের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

ওই কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, হামাসের প্রতিনিধি দলের প্রধান খলিল আল-হায়া আনুষ্ঠানিকভাবে কাতার এবং মিশরকে চুক্তির সমস্ত শর্তের অনুমোদন সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

তবে বিবিসির গাজা সংবাদদাতা রুশদি আবুয়ালোফ জানতে পেরেছেন, হামাস চুক্তির অধীনে মুক্তি পাওয়া বন্দিদের তালিকায় এক বা দুইজন প্রতীকী সদস্যের নাম যুক্ত করার চেষ্টা করছিল।

চুক্তির প্রথম পর্যায় সম্পাদন হবে ছয় সপ্তাহ মেয়াদে।

এসময় ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে ৩৩ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে যার মধ্যে নারী, শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা রয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনারা গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে পূর্ব দিকে সরে যাবে।

বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তখন তাদের বাড়িঘরে ফিরে আসতে শুরু করবে এবং ত্রাণ সহায়তা নিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক এই অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি পাবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য আলোচনা শুরু হবে ১৬তম দিনে।

এর মধ্য দিয়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি, ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং ‘স্থায়ী শান্তি’ পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখবে।

তৃতীয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়টির জন্য কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। এতে অবশিষ্ট জিম্মিদের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনা এবং গাজার পুনর্গঠনের বিষয় জড়িত।

আরো পড়তে পারেন:
যুদ্ধবিরতি চুক্তির খবর আসার পর তেলআবিবের রাস্তায় নেমে আসেন ইসরায়েলিরা

ছবির উৎস, Getty Images

হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল হায়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পর্কে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।

এতে বলেছেন, যুদ্ধের সময় গাজায় দুর্ভোগের জন্য ইসরায়েলকে “মাফ করবে না” দলটি।

খলিল আল হায়া বলেছেন, “সকল ভুক্তভোগী, প্রতিটি রক্তের ফোঁটা, দুঃখ ও নিপীড়নের প্রতিটি অশ্রুর পক্ষে আমরা বলি, আমরা ভুলবো না এবং আমরা ক্ষমা করবো না।”

ইসরায়েল এ অঞ্চলে তাদের সামরিক অভিযানের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বলেও জানান তিনি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালানোর পর এই সহিংসতার শুরু। হামাস যোদ্ধারা প্রায় ১২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়।

এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

তাদের ২৩ লাখ জনগোষ্ঠির বেশিরভাগই এই যুদ্ধে আশ্রয় হারিয়েছে। গাজায় খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও নিরাপদ আশ্রয়ের গভীর সংকট তৈরি হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হাতে এখনও তাদের ৯৪ জন নাগরিক জিম্মি আছেন। এদের মধ্যে ৬০ জন এখনো জীবিত এবং ৩৪ জন মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে।