Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Anadolu/Getty Images
২৩ মিনিট আগে
গাজায় হামাসকে পরাজিত করা এবং সেখানে থাকা ইসরায়েলি বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে বড় ধরনের একটি সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ তাদের হিব্রু ভাষার পরিচালিত এক্স (সাবেক টুইটার) একাউন্টে এক পোস্টে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটস’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করছে। যার লক্ষ্য গাজার কৌশলগত এলাকার দখল নেয়া।
গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় আড়াইশো জন নিহত হয়েছেন।
দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত মার্চ মাস থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “গাজায় অনেক মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।”
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের হিব্রু ভাষার একাউন্ট থেকে যে পোস্টটি দিয়েছে, সেখানে এই অভিযানের একটি নাম দিলেও ইংরেজি ভাষার পোস্টে এই অভিযানের নাম ব্যবহার করেনি।
সেখানে তারা বলেছে, “যতক্ষণ পর্যন্ত হামাস হুমকি না হয়ে ওঠে এবং তাদের কাছে থাকা সব জিম্মি মুক্ত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের অভিযান বন্ধ করবো না।”
এই পোস্টে আরও দাবি করা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় ১৫০টিরও বেশি “সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে” হামলা চালানো হয়েছে।
গাজায় পুনরায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে এবং অবরোধ প্রত্যাহারে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ার পরও ইসরায়েল হামলা আরো বাড়িয়েছে এবং সীমান্তে সাঁজোয়া বাহিনীও মোতায়েন করেছে। এরপরেই এই অভিযান শুরু হওয়া মানে এতদিনের সকল কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল বলেছে, ‘অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটস’ এটি একটি বাইবেলের যোদ্ধার নামে রাখা।

ছবির উৎস, Getty Images
এই অভিযানের লক্ষ্য হচ্ছে, গাজার দক্ষিণে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া, ত্রাণ কার্যক্রমের ওপর হামাসের নিয়ন্ত্রণ ঠেকানো এবং হামাসকে প্রতিহত করা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন, ইসরায়েল গাজায় “তীব্র আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার উদ্দেশ্য ওই এলাকা তাদের দখলে রাখা।
তবে ইসরায়েলি সরকার এটিও বলেছিল যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই অভিযান শুরু হবে না। শুক্রবারই ট্রাম্প সফর শেষে মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার র্টুক বলেছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে।
তিনি বলেন, “এই সর্বশেষ বোমাবর্ষণ, বাসিন্দাদের জোরপূর্বক স্থানান্তর, বিভিন্ন এলাকাগুলোকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করা এবং মানবিক সহায়তা না ঢুকতে দেওয়া—সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে গাজায় একটি স্থায়ী জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে, যা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী এবং জাতিগত নিধনের সমতুল্য।”
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই পরিস্থিতি নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’।

ছবির উৎস, Getty Images
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে কর্মরত ব্রিটিশ সার্জন ভিক্টোরিয়া রোজ বিবিসি রেডিও ফোর-এর অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, এই পরিস্থিতি সামাল দিতে তার দল ক্লান্ত এবং সবারই ওজন যথেষ্ট পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, “শিশুরা খুবই রোগাক্রান্ত, আমাদের এখানে অনেক ছোট বাচ্চা রয়েছে যাদের দাঁত পড়ে গেছে”।
“তাদের অনেকের শরীরে বড় ধরনের পোড়া ক্ষত রয়েছে এবং এমন অপুষ্টির কারণে অনেক বেশি সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের অনেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছে”, যোগ করেন তিনি।
সোমবার জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গাজার জনগোষ্ঠী বর্তমানে “চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে” রয়েছে।
যদিও ইসরায়েলি সরকার বারবার দাবি করে আসছে, গাজায় কোন খাদ্য সংকট নেই।
২০২৩ সালের সাতই অক্টোবর হামাসের হামলায় ১২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। এরপরই ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এখনো হামাসের কাছে ৫৭ জন জিম্মি রয়েছে।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে।