Source : BBC NEWS

হাতকড়া

ছবির উৎস, Getty Images

এক ঘন্টা আগে

মেঘনা নদীতে জাহাজে সাত খুনের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় গ্রেফতার জাহাজের কর্মচারী আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফানই সবকটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‍্যাব।

র‍্যাব বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আকাশ মণ্ডল ইরফান জানিয়েছেন, জাহাজের মাস্টারের ওপর থাকা ক্ষোভের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।

বুধবার কুমিল্লা র‍্যাব ১১-এর মেজর সাকিব হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।

সোমবার চাঁদপুরে হাইমচরের মাঝিরচর এলাকায় এমভি-আল বাখেরা নামক সারবাহী একটি জাহাজে সাত খুনের ওই ঘটনা প্রকাশ পেলে সেটি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।

প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার কারণ বা সূত্র না পাওয়ায় এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বেশ ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়।

এর অন্যতম কারণ সারবাহী জাহাজটি থেকে কিছু খোয়া যায়নি- বলে জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ফলে ঠিক কী উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটনা হয়েছে তা আন্দাজ করা যায়নি।

ওই ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় আরো একজন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে, এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, এবং বাগেরহাটের চিতলমারী এলাকা থেকে আকাশ মণ্ডল ওরফে ইরফান নামে একজনকে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

র‍্যাব জানিয়েছে, আকাশ মণ্ডল ওই জাহাজে একজন লস্কর হিসাবে চাকরি করতেন।

আকাশ মণ্ডলের দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মেজর সাকিব হোসেন জানিয়েছেন, “জাহাজের মাস্টারের ওপর ‘পূর্ব ক্ষোভের কারণেই’ খাবারের সাথে ‘চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে’ এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।”

আরো পড়তে পারেন
মেঘনা নদীতে এই জাহাজ থেকেই মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়

হত্যাকাণ্ড নিয়ে যা বলেছে র‍্যাব

মেজর সাকিব হোসেন জানিয়েছেন, তার (আকাশ মণ্ডল) উদ্দেশ্য ছিল জাহাজের মাস্টারকে হত্যা করা।

“এবং হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পর যখন সে বুঝতে পারে যে, সে পালিয়ে গেলে অন্যান্য ক্রুরা তার সম্বন্ধে তথ্য দিয়ে দিবে, তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে ক্রমান্বয়ে বাকি সদস্যদেরকে হত্যার চেষ্টা করে।”

গত ২৩শে ডিসেম্বর চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে থেমে থাকা ওই জাহাজে চাঞ্চল্যকর ওই ঘটনা ঘটে।

পরদিন, অর্থাৎ গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে এ বিষয়ক একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

ঘটনার দিন প্রথমে ওই জাহাজ থেকে পাঁচ জনের মরদেহ এবং গুরুতর আহত অবস্থায় আরও তিনজনকে উদ্ধার করা হয়।

পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দু’জন মারা যান।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনের পর র‍্যাব থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়েছে, যেখানে আকাশ মণ্ডলের ক্ষোভের কারণ বা যুক্তির আরো কিছু বর্ণনা আছে।

হাত রক্তের ফোঁটা

ছবির উৎস, Getty Images

সংবাদ সম্মেলনে মেজর সাকিব হোসেন জানিয়েছেন, আকাশ মণ্ডল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবকে বলেছেন, তিনি প্রায় আট মাস যাবৎ ওই জাহাজে চাকরি করছেন।

“কিন্তু জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময় মতো পেতো না এবং বিভিন্ন ধরনের বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার একাই ভোগ করতো।”

“তিনি (আকাশ মণ্ডল) আরও বলেন যে, জাহাজের মাস্টার সকল কর্মচারীর উপর বিনা কারণে রাগারাগি করতো এবং কারোর উপর নাখোশ হলে তাকে কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতো, এমনকি তাদের বকেয়া বেতনও দিতো না।”

এ ব্যাপারে তিনি জাহাজের সবাইকে প্রতিবাদ করতে বললে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতো না বলে আকাশ মণ্ডল জানিয়েছেন।

জাহাজের মাস্টারের কথিত এহেন কার্যকলাপের কারণেই আকাশ মণ্ডলের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই ক্ষোভ থেকে তাকে (মাস্টারতে) উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করে বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

মেজর সাকিব হোসেন বলেছেন, “পরিকল্পনা অনুযায়ী আনুমানিক ১৮ই ডিসেম্বর গ্রেফতারকৃত আকাশ মণ্ডল তিন পাতা ঘুমের ঔষধ কিনে নিজের কাছে রেখে দেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজে রাতের খাবারের তরকারীর মধ্যে তিনি তা মিশিয়ে দেন।”

র‍্যাব

ছবির উৎস, AP

র‍্যাব কর্মকর্তা মি. হোসেন বলেছেন, শুধুমাত্র সুকানি জুয়েল এবং আকাশ মণ্ডল ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে তাদের কেবিনে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরে রাত আনুমানিক দুইটায় সাহারা বিকন এলাকায় আরও আট-দশটি জাহাজের সাথে তাদের জাহাজটি নোঙ্গর করা হয়।

“পরবর্তীতে সুকানি জুয়েল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আকাশ মণ্ডল তার পরিকল্পনা মোতাবেক আনুমানিক রাত তিনটায় প্রথমে মাস্টারকে জাহাজে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

পরবর্তীতে সে চিন্তা ভাবনা করে যে, জাহাজে থাকা বাকিরা জেনে গেলে সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা পড়বে। তাই সে একে একে সবাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।”

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব কর্মকর্তা মি. হোসেন বলেছেন, পরবর্তীতে আনুমানিক ভোর পাঁচটায় সকল জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেলে আকাশ মণ্ডল নিজেই জাহাজ চালাতে থাকে।

“এবং এক পর্যায়ে মাঝিরচর নামক এলাকায় জাহাজটি আটকা পড়লে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ট্রলারে বাজার করার কথা বলে উঠে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় বাগেরহাট থেকে র‍্যাব আকাশ মণ্ডলকে গ্রেফতার করে।