Source : BBC NEWS

হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে নিজ ডেস্কে বসে আছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, মাঝে পোস্টারে গোল্ডেন ডোমের ছবি।

ছবির উৎস, Reuters

এক ঘন্টা আগে

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার ভবিষ্যৎ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘গোল্ডেন ডোম’ তার প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই “সম্পূর্ণভাবে চালু” হয়ে যাবে।

প্রথম ধাপে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, পুরো প্রকল্পের মোট ব্যয় প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার হবে বলে তিনি ধারণা করছেন। তবে কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেছেন, এর প্রকৃত খরচ চূড়ান্ত পর্যায়ে কমপক্ষে এর তিন গুণ হতে পারে।

এই পরিকল্পনায় স্থল, সমুদ্র এবং মহাকাশ জুড়ে ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের’ প্রযুক্তির একটি নেটওয়ার্ক থাকবে। এর মূল অংশ হবে মহাকাশভিত্তিক ইন্টারসেপ্টর ও সেন্সর – যা শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম হবে।

গোল্ডেন ডোম বিদ্যমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হলেও আরও বিভিন্ন বাড়তি সংযোজন থাকবে। বর্তমান সময়ে ক্রমাগত বাড়তে থাকা অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা হুমকি, উদাহরণস্বরূপ রাশিয়া বা চীনের দিক থেকে সম্ভাব্য হুমকির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে।

আরো পড়তে পারেন:

গোল্ডেন ডোম কীভাবে কাজ করবে এবং আয়রন ডোমের সাথে পার্থক্য কোথায়?

ট্রাম্পের পরিকল্পনাটি আংশিকভাবে ইসরায়েলের আয়রন ডোম থেকে অনুপ্রাণিত। আয়রন ডোম রাডার প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে এবং ধ্বংস করে। ২০১১ সাল থেকে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

তবে গোল্ডেন ডোম সে তুলনায় বহুগুণ বড় হবে এবং এটি আরও বিশাল পরিসরে বিভিন্ন ধরনের হুমকির মোকাবেলা করার মতো করে ডিজাইন করা হবে।

এটি শত শত স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহের একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবে। এরকম ব্যবস্থা আগে খুবই ব্যয়বহুল ছিল, তবে এখন তা আরও বাস্তবসম্মত সম্ভাবনার পর্যায়ে চলে এসেছে।

“রোনাল্ড রিগান বহু বছর আগে এটা চেয়েছিলেন, কিন্তু তখন প্রযুক্তি ছিল না,” উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি ১৯৮০-এর দশকে রিগান প্রস্তাবিত মহাকাশ-ভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা “স্টার ওয়ার্স” নামে পরিচিত, সে প্রসঙ্গে বলছিলেন।

গোল্ডেন ডোম “পৃথিবীর অপর প্রান্ত বা মহাকাশ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রও আটকাতে পারবে,” বলে দাবি করেন ট্রাম্প।

এটি এমনভাবে তৈরি করা হবে যেন ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে পারে, যার মধ্যে শব্দের গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম হাইপারসনিক অস্ত্রও রয়েছে।

এছাড়া “ফ্র্যাকশনাল অরবিটাল বম্বার্ডমেন্ট সিস্টেম” বা ফোবস যা মহাকাশ থেকে ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম, সেগুলো থেকেও সুরক্ষা দেয়ার মতো করে প্রস্তুত করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার অন সাইবার অ্যান্ড টেকনোলজি ইনোভেশনের সিনিয়র ডিরেক্টর, অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল মার্ক মন্টগোমেরি বিবিসিকে বলেন গোল্ডেন ডোম “তিন বা চারটি গ্রুপে বিভক্ত শত শত স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করবে”।

বিবিসির নিউজডে প্রোগ্রামে তিনি জানান, “প্রথমে থাকবে শত শত স্যাটেলাইট যা উৎক্ষেপণ পর্যায় শনাক্ত করবে। এরপর থাকবে এমন সিরিজ যা ট্র্যাকিং করবে এবং ফায়ারিং নিয়ন্ত্রণের কাজ করবে। এবং সবশেষে থাকবে অস্ত্র বহনকারী এনগেজমেন্ট স্যাটেলাইট, যেগুলো মূলত গতিশীল অস্ত্র বা শত্রুর ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার জন্য”।

ট্রাম্পের মেয়াদে কি গোল্ডেন ডোম তৈরি সম্ভব?

গোল্ডেন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মানচিত্রের সামনে ট্রাম্প

ছবির উৎস, Getty Images

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিরক্ষা সম্পাদক শশাঙ্ক জোশি বিবিসিকে বলেন, মার্কিন সেনাবাহিনী এই পরিকল্পনাকে খুবই গুরুত্বের সাথে নেবে, তবে এটি ট্রাম্পের মেয়াদে সম্পন্ন হবে এমন চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়। এবং এটির বিশাল খরচ মার্কিন প্রতিরক্ষা বাজেটের বড় একটি অংশ শুষে নেবে।

প্রাক্তন অ্যাডমিরাল মন্টগোমেরিও একমত যে “এই মিশন বা প্রকল্প পুরোপুরি সঠিকভাবে বাস্তবায়নে পাঁচ থেকে দশ বছর লাগতে পারে”।

তবে তিনি আরও বলেন, “আগামী তিন বছরের মধ্যেই কিছু ব্যবস্থা হবে যা আমাদের আরও নিরাপদ করবে, তাতে সন্দেহ নেই”। কিন্তু ‘১০০% সুরক্ষিত সিস্টেম’ ট্রাম্পের মেয়াদে তৈরি সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

মার্কিন কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (যারা কংগ্রেসকে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ দেয়) বলেছে, শুধুমাত্র মহাকাশভিত্তিক অংশগুলোর খরচই ২০ বছরে ৫৪২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।

কে তৈরি করবে গোল্ডেন ডোম?

স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গেটলাইন

ছবির উৎস, Reuters

মার্কিন স্পেস ফোর্সের জেনারেল মাইকেল গেটলাইনকে এই মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের গোল্ডেন ডোম প্রকল্পের নেতৃত্বে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে, তিনি স্পেস ফোর্সের মহাকাশ অভিযানের ভাইস চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর এই শাখাটি “ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতা, মহাকাশ ডোমেন সচেতনতা, ন্যাভিগেশন, যোগাযোগ ও মহাকাশ ইলেকট্রনিক যুদ্ধের” দায়িত্ব পালন করে।

গুয়েটলিন, একজন ফোর স্টার জেনারেল যাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প “একজন অত্যন্ত প্রতিভাবান ব্যক্তি” হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যার মহাকাশ এবং ক্ষেপণাস্ত্র সনাক্তকরণের উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা রয়েছে। কারণ তিনি আগে স্পেস সিস্টেমস কমান্ডের প্রধান এবং রিমোট সেন্সিং সিস্টেমের ডিরেক্টর ছিলেন।

আমেরিকার ওকলাহোমা রাজ্যে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা এবং ১৯৯১ সালে ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীতে যোগ দেন।

বিবিসি বাংলার অন্যান্য খবর:

রাশিয়া ও চীন কী বলছে গোল্ডেন ডোম নিয়ে?

গোল্ডেন ডোম মূলত রাশিয়া ও চীনের ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর জন্য তৈরি করা হচ্ছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির একটি সাম্প্রতিক ব্রিফিং ডকুমেন্টে বলা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি “পরিসর ও সংবেদনশীলতা, দুই দিক থেকেই বাড়বে”। এবং রাশিয়া-চীন উভয় দেশের ক্ষেত্রে অভিযোগ করা হয়েছে যে তারা মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় দুর্বলতার জায়গা কাজে লাগাতে সক্রিয়ভাবে সিস্টেম ডিজাইনের চেষ্টা করছে।

চীন ও রাশিয়া উভয়ই এই উদ্যোগকে “গভীরভাবে অস্থিতিশীল” বলে সমালোচনা করেছে।

এ মাসের শুরুতে রাশিয়া ও চীনের মধ্যে আলোচনার পর প্রকাশিত ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা “স্পষ্টভাবে মহাকাশে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য অস্ত্রাগারের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করবে।”

তবে পরে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, এটি “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম বিষয়” এবং এটি পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আবার আলোচনা শুরু করার পথ খুলতে পারে।

অন্যদিকে চীন বলেছে, এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে হুমকিতে ফেলবে, কারণ এটি মহাকাশে সামরিকীকরণ বাড়াবে এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি তৈরি করবে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বুধবার বলেন, গোল্ডেন ডোম “সরাসরি মহাকাশে যুদ্ধক্ষমতা বড় পরিসরে বাড়ানোর কথা বলছে… এবং এর মধ্যে তীব্র আক্রমণাত্মক দিকও রয়েছে, যা মহাকাশ শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহারের নীতির পরিপন্থী।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে এই পরিকল্পনা পরিত্যাগ করার আহ্বান জানান।

কানাডা কি গোল্ডেন ডোমে যোগ দেবে?

ওভাল অফিসে পরিকল্পনা ঘোষণা করার সময় ট্রাম্প বলেন, কানাডা এই ব্যবস্থায় যোগ দিতে চেয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির অফিস থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তিনি ও তার মন্ত্রীরা মার্কিন সরকারের সঙ্গে একটি নতুন নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করছেন।

তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “NORAD (নর্থ আমেরিকান এয়ারোস্পেস ডিফেন্স কমান্ড) ও সংশ্লিষ্ট উদ্যোগগুলো যেমন গোল্ডেন ডোম তাদের এই আলোচনায় থাকবে।”

এই বছরের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন সফরের সময় কানাডার তৎকালীন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার বলেন, কানাডা এই প্রকল্পে যোগ দিতে আগ্রহী। তিনি বলেন, এটি “যৌক্তিক” এবং দেশের “জাতীয় স্বার্থের” জন্য প্রয়োজন।