Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, UAE Cricket Official
২৪ মিনিট আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণে এই পরাজয় বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক অস্বস্তিকর অধ্যায় হয়ে রইল।
সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ে ৮৪ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দল। শেষ পর্যন্ত ১৬২ রানে পৌঁছালেও আমিরাতের আলিশান শরাফুর অপরাজিত ৬৮ রানে সিরিজ হাতছাড়া করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে পারভেজ হোসেন ইমনের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ জয় পেলেও বাকি দুই ম্যাচে ব্যর্থতার চিত্রটা পরিষ্কার ছিল।
দ্বিতীয় ম্যাচে আমিরাত ২০৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করে জয় তুলে নেয়, যা আমিরাতের ক্রিকেট দলটির জন্য ঐতিহাসিক, আবার উল্টোদিকে বাংলাদেশের জন্য একটা বড় ধাক্কা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হারে দলের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনায় বড়সড় ঘাটতির প্রমাণ মিলেছে। অনেকে বলছেন বাংলাদেশের ফিল্ডিং দেখে মনে হয়েছে দলের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাব রয়েছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ২০২১ সালে বিশ্বকাপের মঞ্চে স্কটল্যান্ড, ২০১৪ সালে বিশ্বকাপে হংকং-এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ হেরেছে।
এছাড়া ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে হারের ইতিহাস আছে এবং আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সহযোগী দেশ ছিল তখনও নানা ইভেন্টে বাংলাদেশ হেরেছে।
তবে তখন এক ম্যাচ হারতো বাংলাদেশ; ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং ২০২৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে হারলো সিরিজ।

ছবির উৎস, UAE Cricket Official
লিটন দাসের অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই সিরিজটা প্রাথমিকভাবে ছিল দুই ম্যাচের, মূলত পাকিস্তানের বিপক্ষে আসন্ন টি-২০ সিরিজের প্রস্তুতি হিসেবেই দেখা হচ্ছিল একে।
এরপর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ আমিরাতের বোর্ডের সাথে আলাপ করে এক ম্যাচ বাড়িয়ে নেন, ফলাফল বাংলাদেশের জন্য হিতে বিপরীত।
অবশ্য ক্রিকেট সমর্থকরা বলছেন, এটাই ভালো, বাংলাদেশ দল নিয়ে যে আশাবাদ চর্চা করা হয় সেখানে বাস্তবতা ভিন্ন এটুকু প্রমাণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন লিটন দাসের অধিনায়কত্ব নিয়ে, চাপ নেয়ার ক্ষমতা নিয়ে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট সাংবাদিক মাজহার মিথুন বলেন, “লিটন দাস যদি অধিনায়ক না হয়ে শুধু ব্যাটার হিসেবে খেলতেন, সেটাই দলের জন্য ভালো হতো। অধিনায়কত্বের চাপ তার ব্যাটিং-এ ছাপ ফেলে এটা স্পষ্ট।”
তিনি উল্লেখ করেছেন, “যেভাবে আউট হয়েছেন তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ যেভাবে ব্যাট করছেন তিনি। এর আগের ম্যাচে ৩২ বল টিকে ছিলেন ক্রিজে, কিন্তু কখনোই তাকে স্বস্তিতে মনে হয়নি। একটা অদৃশ্য চাপ টের পাওয়া যাচ্ছিল।”
বাংলাদেশের ক্রিকেট বিশ্লেষক ও ঘরোয়া ক্রিকেটার সৈয়দ আবিদ হুসেইন সামি নিজের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “লিটন যেভাবে আউট হয়েছেন তা ছিল দৃষ্টিকটু। তার শটের পেছনে কোনো যুক্তি বা ভাবনা ছিল না। ভেতরের দিকে আসা বল, পা ছিল কভারের দিকে তাক করা। আপনার পায়ের পজিশন থাকবে সোজা। ব্যাটে বলে লাগানোর সময় তার হেড পজিশন ছিল অন্যদিকে।”
“চোখ একদিকে, শরীরের ভারসাম্য একদিকে, আর শট খেলছেন আরেকদিকে”- এই ধরনের খুব সাধারণ ভুল এই বয়সী এক ব্যাটারের থেকে আশা করেন না বলছেন মি. সামি।
লিটন দাস দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে হারের পর শিশিরের ওপর দায় চাপিয়েছেন, বাংলাদেশের ক্রীড়া লেখক আরিফুল ইসলাম রনি এটাকে হাস্যকর বলছেন, “বোলিং বাজে হয়েছে এটা মাথায় গেঁথে নিতে হবে।”
এটা ভারত বা অস্ট্রেলিয়া না যে শিশিরের কথা বললেই দায়মুক্তি হয়ে যাবে- বলছেন মি. রনি।
ম্যাচ শেষে লিটন দাস বলছেন এই হার, অবশ্যই প্রত্যাশিত নয়। “আমরা যখন এখানে এসেছি, সবসময় জিততেই চেয়েছি।”
এই পরাজয়কে “জীবনের অংশ” বলছেন লিটন কুমার দাস।
তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান নাজমূল আবেদিন ফাহিম দ্বিতীয় ম্যাচে হারের পরে বলেছেন, “অনেক সময় দুই পা সামনে আগানোর সময় এক পা পেছাতে হয়।”
তিনি মনে করেন, এই সিরিজে বাংলাদেশ মূলত প্রস্তুতি নিতেই এসেছে তাই একাদশে নানা রকম পরীক্ষা চালানো হয়েছে, তাই এমন হারে “বিব্রত নন” বলেই জানাচ্ছেন তিনি।
“আমাদের জেতা উচিত, সন্দেহ নেই। তবে এটা একটা প্রক্রিয়া, কিছুটা হলেও আমাদের মনোযোগ ঠিক জায়গায় আসবে,” বলছিলেন নাজমূল আবেদিন ফাহিম।

ছবির উৎস, Getty Images
যেভাবে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে হারলো বাংলাদেশ
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ৭ উইকেটে হেরে সিরিজ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। এই পরাজয়ের মাধ্যমে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় আমিরাত।
টস হেরে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। শুরুতেই টপ অর্ডারে ধস নামে।
৮৪ রানের মধ্যে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ বড় বিপর্যয়ে পড়ে। এরপর জাকের আলির ৩৪ বলে ৪১ রানের লড়াকু ইনিংস ও হাসান মাহমুদের ১৫ বলে ২৬ রানের ক্যামিও ইনিংসে ভর করে ১৬২ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।
আমিরাতের হায়দার আলি চার ওভারে ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শুরুটা ছিল পরিকল্পিত।
১৪ রানের মাথায় প্রথম উইকেটের পতন ঘটলেও কখনোই আরব আমিরাতের ব্যাটারদের অপ্রস্তুত বা অস্বস্তিতে মনে হয়নি।
একপ্রান্তে অবিচল থাকেন ওপেনার আলিশান শরাফু। তিনি ৪৭ বলে ৬৮ রান করে অপরাজিত থাকেন, যেখানে ছিল ৫টি চার ও ৩টি ছয়।
আসিফ খান ২৬ বলে ৪১ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন।
ক্রিকেট জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন
বাংলাদেশ আসলে একটা ইউনিট হিসেবেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এই সিরিজে, যেমন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস, যিনি আসলে একটা বাজে ফর্ম কাটাচ্ছেন, শেষ ৬ ম্যাচে ২০ রান পার করেছেন মাত্র একবার।
হায়দার আলির রাউন্ড দ্য উইকেট বলে প্যাডল সুইপ করতে গিয়ে আউট হন লিটন, একে তো ফর্ম নেই তার ওপর প্রতিপক্ষের সেরা বোলারের স্ট্যাম্প লাইনের বলে এভাবে সুইপ করতে যাওয়াকে অনেকটা ‘হেলাফেলা’ই বলছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট সাংবাদিক ও বিশ্লেষক দেব চৌধুরী।
তিনি শেখ মাহেদি হাসানকে পাঁচ নম্বরে নামানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
দেব চৌধুরী বলেন, “যিনি বা যারা মনে করছেন শেখ মাহেদিকে চার বা পাঁচ নম্বরে খেলালে তিনি সফল হবেন, তাদের ক্রিকেটীয় জ্ঞান নিয়ে আমার সিরিয়াস সন্দেহ আছে।”
নামের পাশে অলরাউন্ডার থাকলেও শেখ মেহেদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই পদের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি, বাংলাদেশের হয়ে টি-২০ ফরম্যাটে তিনি সাত বা আট নম্বরে নামেন, স্ট্রাইক রেট ১০০-এরও নিচে ৯৮।
কিন্তু তাকে ধরে নেয়া হয় হার্ড হিটার ব্যাটার হিসেবে, এখন পর্যন্ত ৪০ ইনিংস ব্যাট করে তিনি ১২ গড়ে কখনো ৩০ রানও অতিক্রম করতে পারেননি বাংলাদেশের হয়ে।
দেব চৌধুরী বেশ কড়াভাবেই বলেছেন, “আরব আমিরাতের সেমি প্রফেশনাল ক্রিকেটাররা যখন বাংলাদেশের আট লাখ টাকা বেতন পাওয়া ক্রিকেটারদের ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচ হারিয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে তখন তাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতেই হবে।”

ছবির উৎস, UAE Cricket Official
‘দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা’ নেই
বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন এমন কথা হরহামেশাই শোনা যায় সমর্থকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, তাদের মাঝেও কেউ কেউ আছেন চরম দুর্দিনেও সব ম্যাচ দেখেন দেশে খেলা হলে ঢাকা থেকে সিলেট বা চট্টগ্রামে গিয়ে ম্যাচ দেখেন, তেমনি একজন সমর্থক উদয় সিনা।
উদয় বলেন, “এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে পরিস্থিতি প্রতিটা খেলোয়াড়ের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।”
“একটা উদারহণ আপনাকে দেই, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৮ তারিখ থেকে খেলা, ৫টা থেকে ৩টায় নামানো হয়েছে ম্যাচ। কারণ আগামী মাসে ঈদ আছে, বাংলাদেশে এসে পরিবারের সাথে ঈদ করার জন্যই এই সিরিজে ম্যাচ কমানো হয়েছে।”
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর সংবাদেও এই বক্তব্য পাওয়া গেছে যে ক্রিকেটারদের অনুরোধেই পাকিস্তান সিরিজে ম্যাচ কমানো হয়েছে যাতে তারা দেশে ফিরে ঈদ করতে পারেন।
ফিউচার ট্যুর প্লান- এফটিপি অনুযায়ী, বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের তিনটি ওয়ানডে ও তিনটি টি২০ খেলার কথা ছিল। পরে আলোচনা করে পাঁচটি টি-২০ খেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল বিশ্বকাপ মাথায় রেখে, সেটাও কমিয়ে তিনটি টি-২০ খেলবে এখন দুই দল।
উদয় বলেন, “বাংলাদেশের অনেক পেশাজীবী আছেন যারা দেশে থেকেই পরিবারের সাথে ঈদ করতে পারেন না, ক্রিকেটারদের জন্য তো এটা আরও সহজ ব্যাপার হওয়ার কথা।”
এখানেই ‘দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার’ প্রশ্ন আসে।
অথচ সামনের বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ টি-২০ বিশ্বকাপ খেলতে যাবে। তার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সিরিজ হেরে, পাকিস্তানের সাথে ম্যাচ কমিয়ে কেমন প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে সেটা নিয়েই মূলত প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষক ও সমর্থকরা।
একজন দর্শক তো আরেক কাঠি সরেশ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “ভক্তদের উচিত ভোক্তা অধিকার আইনে ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে মামলা করা।”