Source : BBC NEWS

ছবির উৎস, Getty Images
নিষিদ্ধ ঘোষিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (মাওবাদী) সর্বোচ্চ নেতা, দলটির সাধারণ সম্পাদক নাম্বালা কেশব রাও, ওরফে বাসবরাজু-সহ ২৭ জন মাওবাদী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ বুধবার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
মধ্য ভারতীয় রাজ্য ছত্তিশগড়ের বস্তার অঞ্চলে ৫০ ঘণ্টা ধরে এই অপারেশন চলেছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় শর্মা।
ওই অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
মাওবাদীদের তরফে অবশ্য তাদের সর্বোচ্চ নেতার নিহত হওয়ার কথা এখনো স্বীকার করা হয়নি।
প্রায় ৭০ বছর বয়সী বাসবরাজু ভারতের মাওবাদী সংগঠনগুলোর সর্বোচ্চ নেতাদের মধ্যে দ্বিতীয়, যিনি নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলেন বলে জানানো হলো।
এর আগে, ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে সিপিআই (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দত্ত ওরফে জওহর বিহার রাজ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা গিয়েছিলেন।
ভারতে মাওবাদী রাজনীতির জন্মদাতা বলে পরিচিত এবং সিপিআই (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক চারু মজুমদার ১৯৭২ সালের ২৮শে জুলাই কলকাতা পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন মারা গিয়েছিলেন। তার পরিবার এবং দল অবশ্য অভিযোগ করে থাকে যে অত্যন্ত অসুস্থ মি. মজুমদারকে প্রয়োজনীয় ওষুধ না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল পুলিশ।

ছবির উৎস, Getty Images
‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’
বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগেই নিরাপত্তা বাহিনীর ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’ নামের একটি অভিযান শেষ হয়েছে, যাতে ৩১ জন সন্দেহভাজন মাওবাদী নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করা হয়।
ওই অভিযানটিকেই এযাবতকালের মধ্যে সবথেকে বড় ‘মাওবাদী-বিরোধী’ অভিযান বলে নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করেছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট’ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও মহারাষ্ট্রে ৫৪ জন মাওবাদীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৮৪ জন আত্মসমর্পণ করেছেন।
মাওবাদীদের মোট ২১৪টি ডেরা এবং বাংকারও ধ্বংস করা হয়। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি ৪০০ এরও বেশি বোমা, প্রচুর বিস্ফোরক এবং প্রায় ১২ হাজার কিলোগ্রাম খাদ্যসামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি নিরাপত্তা বাহিনীর।
ছত্তিশগড়ে বিবিসির সংবাদদাতা আলোক পুতুল বলছেন, “বুধবারের ঘটনা নিয়ে বিজেপির সরকার আসার পর থেকে গত ১৫-১৬ মাসে সাড়ে চারশোরও বেশি সন্দেহভাজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন।”
এছাড়াও পুলিশের দাবি যে ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে ৭০০-এরও বেশি মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন।
বস্তারে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল সুন্দররাজ পি বলছেন, “২০২৪ সালে যেভাবে নিরাপত্তা বাহিনী মাওবাদীদের বিরুদ্ধে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ অভিযান চালিয়েছে, তার গতি ২০২৫ সালে আরও বেড়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে মাওবাদী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নিহত হয়েছেন। এটা আমাদের জন্য একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা।”

ছবির উৎস, ALOK PUTUL
কেন এখন মাওবাদী-বিরোধী অভিযান?
মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান শুরু হয় ২০০৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে।
তৎকালীন মনমোহন সিং সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম ছত্তিশগড়ে গিয়ে ঘোষণা করে এসেছিলেন ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’ নামের ওই অভিযানের কথা।
তার অনেক আগে থেকেই মাওবাদীদের সব থেকে দুর্ভেদ্য ঘাঁটি বলে পরিচিতি ছত্তিশগড়ের দণ্ডকারণ্য এলাকায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রবেশ অসম্ভব ছিল। ওই এলাকার প্রবেশ পথ বলে পরিচিতি আবুঝমাড় শহরের পরেই যেন ছিল অলিখিত আন্তর্জাতিক সীমান্ত।
তার ভেতর চলত মাওবাদী পার্টিরই ‘জনাতনা সরকার’ অর্থাৎ জনগণের সরকারের সমান্তরাল প্রশাসন।
তবে ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’ শুরু হওয়ার পর থেকেই সেখানে ধীরে ধীরে প্রবেশ করার ব্যবস্থা করতে থাকে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো।
বিবিসির তেলুগু বিভাগের সম্পাদক জিএস রামমোহন বলছিলেন, “কংগ্রেস আমল থেকেই ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনী ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে শুরু করে। ওই অঞ্চলে রাস্তাঘাট বানানো শুরু করে সরকার যাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা চলাচল করতে পারেন। বাহিনীর শিবির গড়া হতে থাকে, অন্যদিকে অন্যান্য পরিকাঠামোও গড়া হতে থাকে আদিবাসী এলাকাগুলোয়। আবার মাওবাদী পার্টিতে অনুপ্রবেশ ঘটানো হতে থাকে চরবৃত্তির জন্য।”
তার কথায়, কংগ্রেসের একটা নীতি ছিল যে মাওবাদীরা যাতে শুধু দণ্ডকারণ্য এলাকাতেই আবদ্ধ হয়ে পড়ে। অন্ধ্র প্রদেশ বা তেলেঙ্গানায় তাদের কাজকর্ম চালালে তা শিল্পে বিনিয়োগের জন্য অনুপযুক্ত হবে, এই ভাবনা ছিল কংগ্রেসের।
তবে বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারে ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের নীতিটা সম্পূর্ণ বদলে যায়।
“প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মনমোহন সিং যদিও মাওবাদীদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সবথেকে বড় হুমকি বলেছিলেন, তবে কংগ্রেস মাওবাদীদের বিষয়টাকে আর্থ-সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখত। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে নীতিতে আমূল পরিবর্তন হয়।”
“তারা মাওবাদীদের সমস্যা পুরোপুরি নিরাপত্তার হুমকি বলে তাদের সমূলে উৎপাটিত করার নীতি নেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তো ৩১শে মার্চ ২০২৬ এর মধ্যে মাওবাদীদের সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার ডেডলাইনও দিয়ে রেখেছেন,” বলছিলেন মি. রামমোহন।
ছত্তিশগড়ে ২০২৩ সালে বিজেপি আবারও সরকারে ফিরে আসে। তার পর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম দ্রুত বাড়তে থাকে।
বিবিসির আলোক পুতুল বলছিলেন, “বস্তার এলাকায় গত বছর নিরাপত্তা বাহিনী ২৮টি নতুন শিবির খুলেছে। অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন যে ওই বছর ২৮৭ জন মাওবাদী মারা গেছেন এবং প্রায় এক হাজার গ্রেফতার হয়েছেন ও ৮৩৭ জন আত্মসমর্পণ করেছে।”
এই একই সময়ে মাওবাদী পার্টিও দুর্বল হয়েছে ক্রমাগত। তাদের দলে নতুন সদস্য হওয়া কমেছে, সাধারণ মানুষের মধ্যেও তাদের সমর্থন কমেছে।

কে এই বাসবরাজু?
ভারতের দুটি মাওবাদী গোষ্ঠী – পিপলস ওয়ার গ্রুপ বা জনযুদ্ধ গোষ্ঠী এবং মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার বা এমসিসি মিশে গিয়ে ২০০৪ সালের বর্তমানের সিপিআই (মাওবাদী) গড়ে ওঠে।
জনযুদ্ধ গোষ্ঠী মূলত অন্ধ্র প্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে এবং এমসিসি পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারে তাদের নিজ নিজ সংগঠন চালাতো।
নতুন একীভূত সিপিআই (মাওবাদী)-এর প্রথম সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর প্রধান মুপাল্লা লক্ষণ রাও ওরফে গণপতি। তারপরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ছিলেন বাসবরাজু।
মি. গণপতির অপর ঘনিষ্ঠতম সহযোগীদের মধ্যে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে পরিচিত মাওবাদী নেতা কিষেণজী। এরা সকলেই মাওবাদী পার্টির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি – পলিটব্যুরোর সদস্য ছিলেন।
ছত্তিশগড়ে বিবিসির সংবাদদাতা আলোক পুতুল জানাচ্ছেন, নতুন দল গঠিত হওয়ার বছর পাঁচেকের মধ্যে ২০০৯ সালে পলিটব্যুরো এক সদস্য কোবাড গান্ধী এবং তার পরের বছর নারায়ণ সান্যাল ওরফে বিজয়দা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মি. বাসবরাজুর দায়িত্ব বাড়ছিল।
তারপরেই সিপিআই (মাওবাদী)-এর মুখপাত্র চেরুকুরি রাজকুমার ওরফে আজাদ ২০১০ সালে এবং ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাওবাদী পার্টির সর্বোচ্চ নেতা কিষেণজী পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
তারপর থেকেই সাধারণ সম্পাদক মি. গণপতির পরেই স্থান হয় মি. বাসবরাজুর।
সিপিআই (মাওবাদী) সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অসুস্থতার কারণে মি. গণপতি সরে যাওয়ার পরে ২০১৮ সালে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাসবরাজুর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল।

ছবির উৎস, CG Khabar
প্রকৌশলী থেকে শীর্ষ মাওবাদী
সিপিআই (মাওবাদী)-এর নিহত সাধারণ সম্পাদক মি. বাসবরাজু ছাত্রাবস্থা থেকেই মাওবাদী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
বিবিসির তেলুগু বিভাগ জানাচ্ছে, অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশের যে অঞ্চলটি ৭০ এর দশক থেকেই মাওবাদী আন্দোলনের জন্য পরিচিত, সেই শ্রীকাকুলামের একটি ছোট গ্রামে ১৯৫৫ সালে জন্ম হয় নাম্বালা কেশব রাওয়ের। পরবর্তীতে তিনিই ছদ্মনাম নেন বাসবরাজু।
তার বাবা ছিলেন শিক্ষক। কেশব রাও ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। তার বড় ভাই দিল্লিশ্বরা রাও আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার বন্দরের চেয়ারম্যান ছিলেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে তিনি ভর্তি হন ওয়ারাঙ্গলের রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। বড়ভাই দিল্লিশ্বরা রাওয়ের মতো মি. কেশব রাও-ও ভলিবল আর কাবাডি খেলতেন।
ওই কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর প্রবাদপ্রতিম নেতা কোন্ডাপল্লী সিতারামাইরার। কেশব রাও পার্টিতে যোগ দেন ১৯৭৬ সালে।
কয়েক বছর পরে যখন দল সিদ্ধান্ত নেয় যে গেরিলা এলাকা গড়ে তোলা হবে, তখন মি. রাওকে একটি এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সেই সময়েই এক আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন তিনি। তারপরের ৪৫ বছরে আর কখনও গ্রেফতার হননি তিনি।
যদিও দলে তার সতীর্থদের কাছ থেকে বিবিসি তেলুগু জানতে পেরেছে যে ১৯৮৭ সালে একবার পুলিশ তার নাগাল পেয়ে গিয়েছিল। তবে তিনি পালিয়ে যেতে সমর্থ হন। সেবছরই পুলিশ বাহিনীর ওপরে প্রথম গেরিলা হামলা হয় তার নেতৃত্বে।
ওই বছরই এবং ১৯৮৯ সালে বর্তমান ছত্তিশগড় রাজ্যের দণ্ডকারণ্য এলাকায় প্রাক্তন তামিল টাইগার সদস্যরা গেরিলা প্রশিক্ষণ দেন মাওবাদীদের। মি. কেশব রাও ওরফে বাসবরাজু সেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
তারপর থেকে তিনি নিজে অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, দণ্ডকারণ্য, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে কয়েকশো মাওবাদীকে গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

ছবির উৎস, Alok Putul
মাথার দাম দেড় কোটি টাকা
মাওবাদী পার্টি তৈরি হওয়ার অনেক আগে থেকেই, ২০০১ সালে জনযুদ্ধ গোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশনের প্রধান নির্বাচিত হন মি. বাসবরাজু।
এই মিলিটারি কমিশনই ভারতের মাওবাদী পার্টির সব ধরনের সশস্ত্র কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
ছত্তিশগড়ে বিবিসি-র সংবাদদাতা আলোক পুতুল বলছেন, মাওবাদী পার্টির নানা দলিল দস্তাবেজ থেকে জানা যায়–– ১৯৯৪-৯৫ সালেই জনযুদ্ধ গোষ্ঠী গেরিলা স্কোয়াড তৈরি করে ফেলেছিল। কিন্তু ১৯৯৯ সালে কেন্দ্রীয়ভাবে গেরিলা স্কোয়াড ভেঙে দিয়ে স্থানীয় গেরিলা গোষ্ঠী তেরি করা হয়।
মি. বাসবরাজুর নেতৃত্বে পরের বছর, ২০০০ সালে পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি বা পিএলজিএ গঠিত হয়। শুধু ১০-১২ জনের গেরিলা স্কোয়াড আর নয়, সেনাবাহিনীর আদলে গড়ে তোলা হয় প্লাটুন, কোম্পানি ও ব্যাটালিয়ন।
এরই মধ্যে দেশের নানা প্রান্তে বড় বড় মাওবাদী হামলার পেছনে মূল মাথা হিসেবে উঠে আসে মি. বাসবরাজুর নাম। বিভিন্ন রাজ্য সরকার ও নানা কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলো তার সম্বন্ধে তথ্য দিতে পারলে পুরষ্কারের কথা ঘোষণা করতে থাকে।
মাত্র গত মাসেই ছত্তিশগড় সরকার ঘোষণা করে যে মাওবাদী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোর সদস্যদের ধরতে পারলে প্রত্যেকের জন্য এক কোটি টাকা করে দেওয়া হবে।
জাতীয় সন্ত্রাস দমন এজেন্সি এনআইএ এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো ও সব রাজ্য সরকারগুলোর মিলিত পুরষ্কারের ঘোষণা যদি ধরা হয় তাহলে মি. বাসবরাজুর মাথা দাম দাঁড়িয়েছে ভারতীয় টাকায় দেড় কোটিরও বেশি।

ছবির উৎস, CG Khabar
মাওবাদীদের ‘শেষের শুরু’?
একদিকে সর্বোচ্চ নেতার নিহত হওয়া, বড় সংখ্যায় অন্য গেরিলা সদস্যদের মারা যাওয়া বা পুলিশের হাতে ধরা পড়া অথবা আত্মসমর্পণের ফলে মাওবাদী পার্টি সাম্প্রতিককালে অতি দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন যে এটাই কি তাহলে মাওবাদীদের ‘শেষের শুরু’?
বিবিসি তেলুগুর সম্পাদক জিএস রামমোহন বলছিলেন, “মাওবাদীরা যে বুধবার সর্বোচ্চ নেতা নিহত হওয়ার পরে দুর্বল হয়ে পড়বে, বিষয়টা তা নয়। যদিও এটা খুবই বড় একটা ধাক্কা তাদের পক্ষে। তবে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা আগে থেকেই শুরু হয়েছে।”
“একটা সময় ছিল যখন তেলেঙ্গানা অঞ্চলে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। মাওবাদীরা তাই জনসমর্থন পেত। তবে অন্ধ্র প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এনটি রামা রাওয়ের আমল থেকেই একদিকে আদিবাসী এলাকাগুলোতে পরিকাঠামো উন্নয়ন চালিয়েছে সরকার, আবার আদিবাসীদের মধ্যে নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প নিয়ে গেছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে মাওবাদীদের জনসমর্থনের ওপরে।”
“আদিবাসী জনগণ বলুন বা শহুরে মধ্যবিত্ত যুবসমাজ – মাওবাদীদের দলে বহুদিন ধরেই নতুন সদস্যরা যোগ দেন না আর। কিছু অন্ধ বিশ্বাসীর কথা আলাদা। তাই মাওবাদীরা পায়ের তলায় জমি অনেকদিন ধরেই হারাতে শুরু করেছিল,” ব্যাখ্যা করছিলেন মি. রামমোহন।
তার কথায়, “নিরাপত্তাবাহিনীর চাপ যে বাড়ছে, সেটা মাওবাদীরা খুব ভালো করেই টের পাচ্ছিল। কী হতে যাচ্ছে, এটা বুঝেই তারা বারবার নানা ভাবে শান্তি আলোচনার কথা বলছিল।”
তবে সর্বোচ্চ নেতা নিহত হওয়ায় একটা প্রতীকী ধাক্কা নিঃসন্দেহে খাবে মাওবাদী পার্টি, এমনটাই মনে করেন তিনি।
বিবিসির আলোক পুতুল আবার মনে করেন, “সর্বোচ্চ নেতা নিহত হওয়ার থেকেও মাওবাদীদের এখন বড় চিন্তা হলো তারা সংগঠনটাই আদৌ ধরে রাখতে পারবে কি-না। যদিও দলটির ১৮ জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মধ্যে ১২ জন এখনও জীবিত। পলিটব্যুরোরও ১১ জন সদস্য বেঁচে আছেন।”
অন্যদিকে বস্তারের স্থানীয় সাংবাদিক বিকাশ তিওয়ারি বিবিসিকে বলেছেন, “মাওবাদী সংগঠন দুর্বল হয়েছে ঠিকই, তাদের কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন, তাদের প্রভাবিত অনেক এলাকা নিরাপত্তা বাহিনী দখল করে নিয়েছে। কিন্তু মাওবাদীরা তাদের শেষ পর্যায়ে পৌঁছিয়ে গেছে, এটা এখনো বলে দেওয়া অনুচিত হবে।”
“নিষিদ্ধ সংগঠনটির একটা নিজস্ব সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা আছে, যেখানে একজন মারা যাওয়ার পরে বা সরে যাওয়ার পরে অন্য একজন দায়িত্ব নিয়ে নেয়,” বলেন তিনি।