Source : BBC NEWS

শিশু নির্যাতন

ছবির উৎস, Getty Images

এক ঘন্টা আগে

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ হত্যা মামলার রায় দিয়েছে আদালত। প্রধান আসামী শিশুটির বোনের শ্বশুড় হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

মামলার বাকি তিন আসামি শিশুটির বোনের জামাতা সজীব শেখ, সজীবের ভাই রাতুল শেখ ও তাদের মা জাহেদা বেগম পেয়েছেন খালাস।

শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন বলে জানিয়েছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম মুকুল।

তবে এই রায়ে সন্তুষ্ট নয় শিশুটির পরিবার। এর বিরুদ্ধে তারা আপিল করবে বলে জানিয়েছে।

শিশুটির মা স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, বাকি তিন আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি চান তারা। কারণ তারা আলামত নষ্টের চেষ্টা করেছে, হুমকি দিয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌঁসুলি দলের বিশেষ উপদেষ্টা (স্পেশাল প্রসিকিউটোরিয়াল অ্যাডভাইজার) এহসানুল হক সমাজী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ”প্রধান আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে বাকি তিনজনকে খালাস দেয়ায় সন্তুষ্ট নই। কেন তাদের খালাস দেয়া হয়েছে, সেটা পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আমরা বুঝতে পারবো। এরপর সেটা পর্যালোচনা করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।”

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে চার আসামিকে কারাগার থেকে মাগুরার বিচারিক আদালতে নেওয়া হয়।

মাগুরার শিশু নিপীড়নের ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছিল। প্রতিবাদে রাস্তায় নামে বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষ।

উল্লেখ্য, মার্চ মাসের শুরুতে মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে সে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয় বলে পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ ওঠে।

আটদিন হাসপাতালে অচেতন থাকার পর ১৩ই মার্চ বৃহস্পতিবার শেষপর্যন্ত মৃত্যু হয় শিশুটির।

সেই সময় বিক্ষুব্ধ লোকজন অভিযুক্তদের বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।

আরও পড়তে পারেন
প্রধান আসামী শিশুটির বোনের শ্বশুড় হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

ছবির উৎস, Shamim Khan

কী ঘটেছিল শিশুটির সঙ্গে

পুলিশ ও পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মার্চ মাসের শুরুতে শিশুটি মাগুরা শহরে তার বোনের শ্বশুর বাড়িতে বোনের কাছে বেড়াতে যায়।

ছয়ই মার্চ বেলা ১১টার কিছুক্ষণ পর শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসেন এক নারী। পরে জানা যায় ওই নারী তার বোনের শাশুড়ি। এরপর খবর পেয়ে শিশুটির মা হাসপাতালে আসেন।

হাসপাতালে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শিশুটির গলায় দাগ ও শরীরে বেশ কিছু জায়গায় আঁচড় দেখতে পান। চিকিৎসকদের উদ্ধৃত করে পুলিশ জানায়, শিশুটির যৌনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো।

অবস্থা ভালো নয় দেখে তখনি মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিনই সন্ধ্যায় তাকে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

শিশুটিকে ঢাকায় আনার পরপরই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছিলেন, তার শারীরিক অবস্থা ‘ক্রিটিক্যাল’।

সাতই মার্চ রাত থেকে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়। শিশুটির চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ডও কাজ শুরু করে।

পরে আট মার্চ তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ১৩ই মার্চ শিশুটির মৃত্যু হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৌঁসুলি দলের বিশেষ উপদেষ্টা (স্পেশাল প্রসিকিউটোরিয়াল অ্যাডভাইজার) এসসানুল হক সমাজী

ছবির উৎস, Shamim Khan

পরে ওইদিন সন্ধ্যায়ই তার মরদেহ দাফনের জন্য সামরিক হেলিকপ্টারে করে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে সরাসরি মাগুরায় নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে দাফন করা হয় তাকে।

গত ৮ই মার্চ শিশুটির মা চারজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন।

শুরু থেকেই চার আসামি অর্থাৎ শিশুটির বোনের স্বামী, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুর পুলিশ হেফাজতে ছিলেন। মামলা দায়েরের পর তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

আদালতে তোলার পর তাদের ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

১৩ই এপ্রিল মাগুরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

সেখানে হিটু শেখ ও জাহেদা বেগমের দুই ছেলে সজীব শেখ ও রাতুল শেখের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৫০৪ ধারা অনুযায়ী অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে জাহেদা বেগমের বিরুদ্ধে যারা অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, সত্য গোপন করে এবং আলামত নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ২৩শে এপ্রিল চার্জ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ২৭শে এপ্রিল থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়ে ৭ই মে অষ্টম কার্যদিবসের মধ্যে সাক্ষ্য পর্ব শেষ হয়। পরে ১২ ও ১৩ই মে যুক্তিতর্ক শেষে ১৭ই মে রায়ের দিন ধার্য করা হয়।

শিশুটিকে নিপীড়নের প্রতিবাদে ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত সাতই মার্চ শুক্রবার সড়ক অবরোধ ও থানার সামনে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা।

পরে আটই মার্চ রাতে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নের বিচার ও কঠোর শাস্তি দাবি করেন।

ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।